দুর্গাপুর উপজেলা (নেত্রকোনা): সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''দুর্গাপুর উপজেলা (নেত্রকোনা জেলা)'''  আয়তন: ২৭৯.২৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৫৭ থেকে ২৫°১২ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°২৮ থেকে ৯০°৪৭ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে নেত্রকোনা সদর ও পূর্বধলা উপজেলা, পূর্বে কলমাকান্দা উপজেলা, পশ্চিমে ধোবাউড়া উপজেলা। উপজেলার উত্তর অংশে গারো পাহাড় ও উপত্যকা অবস্থিত।
'''দুর্গাপুর উপজেলা (নেত্রকোনা জেলা)'''  আয়তন: ২৭৯.২৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৫৭ থেকে ২৫°১২ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°২৮ থেকে ৯০°৪৭ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে নেত্রকোনা সদর ও পূর্বধলা উপজেলা, পূর্বে কলমাকান্দা উপজেলা, পশ্চিমে ধোবাউড়া উপজেলা। উপজেলার উত্তর অংশে গারো পাহাড় ও উপত্যকা অবস্থিত।


''জনসংখ্যা'' ১৯৮৩২৬; পুরুষ ১০০৬২৩, মহিলা ৯৭৭০৩। মুসলিম ১৭৫৭৫৩, হিন্দু ১৩১৯৫, বৌদ্ধ ৯১৬১, খ্রিস্টান ৪১ এবং অন্যান্য ১৭৬। এ উপজেলায় গারো ও হাজং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
''জনসংখ্যা'' ২২৪৮৭৩; পুরুষ ১১১৬৯১, মহিলা ১১৩১৮২। মুসলিম ২০২৬১৩, হিন্দু ১৩২১০, বৌদ্ধ , খ্রিস্টান ৮৭৩৭ এবং অন্যান্য ৩০৬। এ উপজেলায় গারো ও হাজং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।


''জলাশয়'' প্রধান নদী: কংস, সোমেশ্বরী ও পুরাতন সোমেশ্বরী এবং চিনাকুড়ি বিল ও চিতলী বিল উল্লেখযোগ্য।
''জলাশয়'' প্রধান নদী: কংস, সোমেশ্বরী ও পুরাতন সোমেশ্বরী এবং চিনাকুড়ি বিল ও চিতলী বিল উল্লেখযোগ্য।
১৬ নং লাইন: ১৬ নং লাইন:
| শহর  || গ্রাম || শহর  || গ্রাম
| শহর  || গ্রাম || শহর  || গ্রাম
|-  
|-  
| ১ || ৭ || ১৩৪  || ২০৫  || ২২৬৬১  || ১৭৫৬৬৫  || ৭১০  || ৫২.৩ || ৩১.
| ১ || ৭ || ১২৯ || ২১০ || ২৬৬৩৪ || ১৯৮২৩৯ || ৮০৫ || ৫২.৩ (২০০১) || ৩৬.
|}
|}
{| class="table table-bordered table-hover"
{| class="table table-bordered table-hover"
২৪ নং লাইন: ২৪ নং লাইন:
| আয়তন (বর্গ কিমি)  || ওয়ার্ড  || মহল্লা  || লোকসংখ্যা  || ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)  || শিক্ষার হার (%)  
| আয়তন (বর্গ কিমি)  || ওয়ার্ড  || মহল্লা  || লোকসংখ্যা  || ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)  || শিক্ষার হার (%)  
|-  
|-  
| ১০.২৫ || ৯ || ২৭  || ২০৫৫০  || ২০০৫ || ৫৪.
| ১০.২৫ (২০০১) || ৯ || ২৮ || ২৪৩০৬ || ২০০৫ (২০০১) || ৬০.
|-  
|}
| পৌরসভার বাইরে উপজেলা শহর  
 
|-  
{| class="table table-bordered table-hover"
|-
| colspan="9" | পৌরসভার বাইরে উপজেলা শহর  
|-
| আয়তন (বর্গ কিমি)  || মৌজা  || লোকসংখ্যা  || ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)  || শিক্ষার হার (%)  
| আয়তন (বর্গ কিমি)  || মৌজা  || লোকসংখ্যা  || ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)  || শিক্ষার হার (%)  
|-  
|-  
| ৯.১৭ || ২ || ২১১১  || ২৩০ || ১১৬৭
| ৯.১৭ (২০০১) || ২ || ২৩২৮ || ২৩০ (২০০১) || ৪১.০
|}
|}
{| class="table table-bordered table-hover"
{| class="table table-bordered table-hover"
৪০ নং লাইন: ৪৩ নং লাইন:
|  পুরুষ  || মহিলা
|  পুরুষ  || মহিলা
|-  
|-  
| কাকৈরগড়া ৭৭ || ৯৯৮৫  || ১৭৬১৩ || ১৭০৩৭  || ৩১.৯২
| কাকৈরগড়া ৭৭ || ৯৯৮৬ || ১৯৭০২ || ২০০৩৮ || ৩৭.
|-  
|-
| কুল্লাগড়া ৮৬ || ১০০৪১  || ৯৯৬২ || ৯৬১১  || ৩১.৯২
| কুল্লাগড়া ৮৬ || ৮৭৮৮ || ১১২৩২ || ১১৩০৫ || ৩৭.
|-  
|-
| গাঁওকান্দিয়া ৬৯ || ১১২৯৯  || ১৩৫৬৩ || ১৩২৭৮  || ২৯.০০
| গাঁওকান্দিয়া ৬৯ || ১১২৯৭ || ১৫১৩২ || ১৫০৬ || ৩০.
|-  
|-
| চন্ডিগড় ২৫ || ১২০২৮  || ১৭৫৫৩ || ১৭১০৬  || ২৬.৩৮
| চণ্ডিগড় ২৫ || ১২০২৯ || ১৯২৫৫ || ১৯৭৭০ || ৩৭.
|-  
|-
| দুর্গাপুর ৫১ || ১০৫৮১  || ১০৯৩৩ || ১০৬৮৭  || ২৯.৪০
| দুর্গাপুর ৫১ || ৯০৯৭ || ১১৬৬৬ || ১১৯৫২ || ৩৭.
|-  
|-
| বাকলজোড়া ১২ || ৯০৭৫  || ১২৮৪৩ || ১২৩৪৩  || ৩৬.১৯
| বাকলজোড়া ১২ || ৯০৭৬ || ১৩৬৩৩ || ১৩৯৫৫ || ৩৭.
|-  
|-
| বিরিশিরি ১৭ || ৬০০৫  || ৭৬৫০ || ৭৫৯৭  || ৩৫.৪৮
| বিরিশিরি ১৭ || ৫৪৫০ || ৮৭৭৩ || ৯০৮৫ || ৪৩.
|}
|}
''সূত্র'' আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
''সূত্র'' আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।


[[Image:DurgapurUpazilaNetrokona.jpg|thumb|400px|right]]
[[Image:DurgapurUpazilaNetrokona.jpg|thumb|400px|right]]
''প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদ''  মাসকান্দা গ্রামের প্রাচীন মসজিদ (সুলতানি আমল)।
''প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদ''  মাসকান্দা গ্রামের প্রাচীন মসজিদ (সুলতানি আমল)।


''ঐতিহাসিক ঘটনাবলি''  ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষপর্বে হাজংদের হাতির খেদায় বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করানোর প্রতিবাদে হাজং নেতা মনা সর্দারের নেতৃত্বে হাজং বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। এখানে ১৯৪২-৪৩ সালে কমরেড মণি সিংহের নেতৃত্বে টংক আন্দোলন পরিচালিত হয়। ১৯৪৬-৪৭ সালে তাঁর নেতৃত্বে তেভাগা আন্দোলন শুরু হয়। পরে এ আন্দোলন সারা পূর্ববঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া এ উপজেলায় সংঘটিত গারো বিদ্রোহ (১৮৪৮) উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে ২ জন পাকসেনা ও ১ জন রাজাকার এ উপজেলার গাঁওকান্দিয়া গ্রামের একটি বাড়িতে প্রবেশ করলে গ্রামবাসি তাদের হত্যা করে। পরবর্তীতে উক্ত ঘটনার জের ধরে পাকবাহিনী গ্রামের প্রায় শতাধিক নিরীহ লোককে একটি বাড়িতে আটকে রেখে পুড়িয়ে হত্যা করে।
''ঐতিহাসিক ঘটনা''  ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষপর্বে হাজংদের হাতির খেদায় বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করানোর প্রতিবাদে হাজং নেতা মনা সর্দারের নেতৃত্বে হাজংবিদ্রোহ সংঘটিত হয়। এখানে ১৯৪২-৪৩ সালে কমরেড মণি সিংহের নেতৃত্বে টংক আন্দোলন পরিচালিত হয়। ১৯৪৬-৪৭ সালে তাঁর নেতৃত্বে তেভাগা আন্দোলন শুরু হয়। পরে এ আন্দোলন সারা পূর্ববঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া এ উপজেলায় সংঘটিত গারো বিদ্রোহ (১৮৪৮) উল্লেখযোগ্য ঘটনা।  
 
''মুক্তিযুদ্ধ''  ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে ২ জন পাকসেনা ও ১ জন রাজাকার এ উপজেলার গাঁওকান্দিয়া গ্রামের একটি বাড়িতে প্রবেশ করলে গ্রামবাসি তাদের হত্যা করে। পরবর্তীতে উক্ত ঘটনার জের ধরে পাকবাহিনী গ্রামের প্রায় শতাধিক নিরীহ লোককে একটি বাড়িতে আটকে রেখে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে। দুর্গাপুর উপজেলার ফারাংপাড়া, বাদামবাড়ি, বিরিশিরি-বিজয়পুর সড়ক প্রভৃতি স্থানে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়।


''ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান'' মসজিদ ২৬৭, মন্দির ১৮, গির্জা ৫।
''বিস্তারিত দেখুন''  দুর্গাপুর উপজেলা, ''বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ'', বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।
''ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান'' মসজিদ ২৬৭, মন্দির ১৮, গির্জা ৫।


''শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান''  গড় হার ৩৩.%; পুরুষ ৩৬.৩%, মহিলা ৩০.%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বিরিশিরি পিসিনল উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯২), বিরিশিরি মিশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৯), এসকেপিএস উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), গুজিরকোণা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৬), দুর্গাপুর এন্ট্রেন্স স্কুল (১৮৭৯), উপেন্দ্র বিদ্যাপীঠ (১৯১৩-১৪)।
''শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান'' গড় হার ৩৯.%; পুরুষ ৪০.৩%, মহিলা ৩৮.%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বিরিশিরি পিসিনল উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯২), বিরিশিরি মিশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৯), এসকেপিএস উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), গুজিরকোণা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৬), দুর্গাপুর এন্ট্রেন্স স্কুল (১৮৭৯), উপেন্দ্র বিদ্যাপীঠ (১৯১৩-১৪)।


''পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী''  ত্রৈমাসিক পত্র: একুশ শতকের স্রোত, সোমেশ্বরী, জলসিড়ি, মাটির সুবাস; গবেষণা পত্রিকা: জানিরা; মাসিকপত্র: আর্য প্রদীপ, কৌমুদী, আর্যপ্রভা (অবলুপ্ত); সাহিত্যপত্র: স্মৃতি কানন, সুসং বার্তা (অবলুপ্ত)।        
''পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী''  ত্রৈমাসিক পত্র: একুশ শতকের স্রোত, সোমেশ্বরী, জলসিড়ি, মাটির সুবাস; গবেষণা পত্রিকা: জানিরা; মাসিকপত্র: আর্য প্রদীপ, কৌমুদী, আর্যপ্রভা (অবলুপ্ত); সাহিত্যপত্র: স্মৃতি কানন, সুসং বার্তা (অবলুপ্ত)।        
৮১ নং লাইন: ৮৮ নং লাইন:
''প্রধান ফলফলাদি''  আম, কাঁঠাল, জাম।
''প্রধান ফলফলাদি''  আম, কাঁঠাল, জাম।


''যোগাযোগ বিশেষত্ব''  পাকারাস্তা ৭৬ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৬১.৭০ কিমি; নদীপথ ১৫ নটিক্যাল মাইল।
''যোগাযোগ বিশেষত্ব''  পাকারাস্তা ৬২.৯৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২২.১১, কাঁচারাস্তা ৩৮১.৩৫ কিমি।


''বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন'' গরু, ঘোড়া ও মহিষের গাড়ি।
''বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন'' গরু, ঘোড়া ও মহিষের গাড়ি।
৯৩ নং লাইন: ১০০ নং লাইন:
''প্রধান রপ্তানিদ্রব্য''  ধান, চিনামাটি।
''প্রধান রপ্তানিদ্রব্য''  ধান, চিনামাটি।


''বিদ্যুৎ ব্যবহার''  এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১২.০২৩% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
''বিদ্যুৎ ব্যবহার''  এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২২.% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।


''প্রাকৃতিক সম্পদ''  চিনামাটি, কাকর মাটি, নুড়িপাথর, কয়লা।
''প্রাকৃতিক সম্পদ'' চিনামাটি, কাকর মাটি, নূড়ীপাথর, কয়লা।


''পানীয়জলের উৎস'' নলকূপ ৮৭.৫৯%, ট্যাপ ০.৭৫%, পুকুর .১২% এবং অন্যান্য ১০.৫৪%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
''পানীয়জলের উৎস'' নলকূপ ৮৮.%, ট্যাপ ০.১% এবং অন্যান্য ১১.%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।  


''স্যানিটেশন ব্যবস্থা'' এ উপজেলার ১৬.৫৮% (গ্রামে ১৪.১০% ও শহরে ৩৬.৩১%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫৮.৮৭% (গ্রামে ৬০.৩৭% ও শহরে ৪৬.৯৫%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২৪.৫৫% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন   সুবিধা নেই।
''স্যানিটেশন ব্যবস্থা'' এ উপজেলার ৪৪.% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪২.% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৩.% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।


''স্বাস্থ্যকেন্দ্র''  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৭, ক্লিনিক ৩।
''স্বাস্থ্যকেন্দ্র''  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৭, ক্লিনিক ৩।
১০৭ নং লাইন: ১১৪ নং লাইন:
''এনজিও''  ব্র্যাক, কারিতাস, প্রশিকা, আশা, ওয়ার্ল্ডভিশন।  [সৈয়দ মারুফুজ্জামান]
''এনজিও''  ব্র্যাক, কারিতাস, প্রশিকা, আশা, ওয়ার্ল্ডভিশন।  [সৈয়দ মারুফুজ্জামান]


'''তথ্যসূত্র'''  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; দুর্গাপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।
'''তথ্যসূত্র'''  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; দুর্গাপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।


[[en:Durgapur Upazila (Netrokona District)]]
[[en:Durgapur Upazila (Netrokona District)]]

১৮:১৯, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

দুর্গাপুর উপজেলা (নেত্রকোনা জেলা)  আয়তন: ২৭৯.২৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৫৭ থেকে ২৫°১২ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°২৮ থেকে ৯০°৪৭ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে নেত্রকোনা সদর ও পূর্বধলা উপজেলা, পূর্বে কলমাকান্দা উপজেলা, পশ্চিমে ধোবাউড়া উপজেলা। উপজেলার উত্তর অংশে গারো পাহাড় ও উপত্যকা অবস্থিত।

জনসংখ্যা ২২৪৮৭৩; পুরুষ ১১১৬৯১, মহিলা ১১৩১৮২। মুসলিম ২০২৬১৩, হিন্দু ১৩২১০, বৌদ্ধ ৭, খ্রিস্টান ৮৭৩৭ এবং অন্যান্য ৩০৬। এ উপজেলায় গারো ও হাজং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: কংস, সোমেশ্বরী ও পুরাতন সোমেশ্বরী এবং চিনাকুড়ি বিল ও চিতলী বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন দুর্গাপুর থানা গঠিত হয় ১৮৭৪ সালে এবং থানা উপজেলায় রূপান্তরিত হয় ১৯৮২ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১২৯ ২১০ ২৬৬৩৪ ১৯৮২৩৯ ৮০৫ ৫২.৩ (২০০১) ৩৬.৮
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১০.২৫ (২০০১) ২৮ ২৪৩০৬ ২০০৫ (২০০১) ৬০.১
পৌরসভার বাইরে উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৯.১৭ (২০০১) ২৩২৮ ২৩০ (২০০১) ৪১.০
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কাকৈরগড়া ৭৭ ৯৯৮৬ ১৯৭০২ ২০০৩৮ ৩৭.০
কুল্লাগড়া ৮৬ ৮৭৮৮ ১১২৩২ ১১৩০৫ ৩৭.৪
গাঁওকান্দিয়া ৬৯ ১১২৯৭ ১৫১৩২ ১৫০৬ ৩০.৮
চণ্ডিগড় ২৫ ১২০২৯ ১৯২৫৫ ১৯৭৭০ ৩৭.২
দুর্গাপুর ৫১ ৯০৯৭ ১১৬৬৬ ১১৯৫২ ৩৭.১
বাকলজোড়া ১২ ৯০৭৬ ১৩৬৩৩ ১৩৯৫৫ ৩৭.৮
বিরিশিরি ১৭ ৫৪৫০ ৮৭৭৩ ৯০৮৫ ৪৩.৪

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদ  মাসকান্দা গ্রামের প্রাচীন মসজিদ (সুলতানি আমল)।

ঐতিহাসিক ঘটনা ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষপর্বে হাজংদের হাতির খেদায় বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করানোর প্রতিবাদে হাজং নেতা মনা সর্দারের নেতৃত্বে হাজংবিদ্রোহ সংঘটিত হয়। এখানে ১৯৪২-৪৩ সালে কমরেড মণি সিংহের নেতৃত্বে টংক আন্দোলন পরিচালিত হয়। ১৯৪৬-৪৭ সালে তাঁর নেতৃত্বে তেভাগা আন্দোলন শুরু হয়। পরে এ আন্দোলন সারা পূর্ববঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া এ উপজেলায় সংঘটিত গারো বিদ্রোহ (১৮৪৮) উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে ২ জন পাকসেনা ও ১ জন রাজাকার এ উপজেলার গাঁওকান্দিয়া গ্রামের একটি বাড়িতে প্রবেশ করলে গ্রামবাসি তাদের হত্যা করে। পরবর্তীতে উক্ত ঘটনার জের ধরে পাকবাহিনী গ্রামের প্রায় শতাধিক নিরীহ লোককে একটি বাড়িতে আটকে রেখে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে। দুর্গাপুর উপজেলার ফারাংপাড়া, বাদামবাড়ি, বিরিশিরি-বিজয়পুর সড়ক প্রভৃতি স্থানে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়।

বিস্তারিত দেখুন দুর্গাপুর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৬৭, মন্দির ১৮, গির্জা ৫।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৯.৫%; পুরুষ ৪০.৩%, মহিলা ৩৮.৭%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বিরিশিরি পিসিনল উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯২), বিরিশিরি মিশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৯), এসকেপিএস উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), গুজিরকোণা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৬), দুর্গাপুর এন্ট্রেন্স স্কুল (১৮৭৯), উপেন্দ্র বিদ্যাপীঠ (১৯১৩-১৪)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী  ত্রৈমাসিক পত্র: একুশ শতকের স্রোত, সোমেশ্বরী, জলসিড়ি, মাটির সুবাস; গবেষণা পত্রিকা: জানিরা; মাসিকপত্র: আর্য প্রদীপ, কৌমুদী, আর্যপ্রভা (অবলুপ্ত); সাহিত্যপত্র: স্মৃতি কানন, সুসং বার্তা (অবলুপ্ত)।      

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩, ক্লাব ৪০, সিনেমা হল ১, মহিলা সংগঠন ১, খেলার মাঠ ১৪, নাট্যমঞ্চ ২, নাট্যদল ৩।

বিশেষ আকর্ষণ  বিরিশিরি উপজাতীয় কালচারাল একাডেমি, বিজয়পুর সাদা মাটির খনি, দুর্গাপুর শহীদ স্মৃতিসৌধ, রাশিমনি স্মৃতিসৌধ, রাণীখং ক্যাথলিক চার্চ, গারো ব্যাপ্টিস্ট কনভেনশন ক্যাম্পাস, মনসাপাড়া এডভেনটিস্ট ও সেমিনার।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৩.০১%, অকৃষি শ্রমিক ৩.০৪%, শিল্প ০.৪৭%, ব্যবসা ৯.৮৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.০২%, চাকরি ৩.২১%, নির্মাণ ০.৬০%, ধর্মীয় সেবা ০.২০%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৩২% এবং অন্যান্য ৮.৩০%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৭.১৫%, ভূমিহীন ৪২.৮৫%। শহরে ৩৫.৩১% এবং গ্রামে ৫৯.৯১% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, সরিষা, চিনাবাদাম, ভুট্টা, তুলা শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিসি, খেসারি, কলাই, মিষ্টি  আলু, অড়হর।

প্রধান ফলফলাদি  আম, কাঁঠাল, জাম।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৬২.৯৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২২.১১, কাঁচারাস্তা ৩৮১.৩৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন গরু, ঘোড়া ও মহিষের গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা বরফকল, আটাকল, স’মিল ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প, সূচিশিল্প, কাঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৮, মেলা ৩। দুর্গাপুর হাট, ঝাঞ্জাইল হাট, শিবগঞ্জহাট, গুজিরকোণ হাট, উৎরাইল হাট, লক্ষ্মীপুর হাট, কাপাসটিয়া হাট, শংকরপুর হাট, চন্ডিপুর হাট এবং চৈত্রসংক্রান্তির মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, চিনামাটি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২২.০% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ চিনামাটি, কাকর মাটি, নূড়ীপাথর, কয়লা।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৮.৬%, ট্যাপ ০.১% এবং অন্যান্য ১১.৩%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪৪.৫% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪২.৩% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৩.২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৭, ক্লিনিক ৩।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৮৯৭ সালের ১২ জুন ভূমিকম্পে উপজেলায় অনেক প্রাণহানির ঘটনাসহ ভূপৃষ্ঠের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে এবং বেশসংখ্যক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়।

এনজিও ব্র্যাক, কারিতাস, প্রশিকা, আশা, ওয়ার্ল্ডভিশন।  [সৈয়দ মারুফুজ্জামান]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; দুর্গাপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।