দিনাজপুর জেলা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Robot: Automated text replacement (-'''''তথ্যসূত্র''''' +'''তথ্যসূত্র'''))
 
(হালনাগাদ)
 
(একজন ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:Banglapedia]]
[[Category:Banglapedia]]
'''দিনাজপুর জেলা''' (রংপুর বিভাগ)  আয়তন: ৩৪৩৭.৯৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°১০´ থেকে ২৬°০৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°২৩´ থেকে ৮৯°১৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলা, দক্ষিণে গাইবান্ধা ও জয়পুরহাট জেলা, পূর্বে নীলফামারী ও রংপুর জেলা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য।
'''দিনাজপুর জেলা''' (রংপুর বিভাগ)  আয়তন: ৩৪৪৪.৩০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°১০´ থেকে ২৬°০৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°২৩´ থেকে ৮৯°১৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলা, দক্ষিণে গাইবান্ধা ও জয়পুরহাট জেলা, পূর্বে নীলফামারী ও রংপুর জেলা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য।


''জনসংখ্যা'' ২৬৪২৮৫০; পুরুষ ১৩৬৩৮৯২, মহিলা ১২৭৮৯৫৮। মুসলিম ২০৫৭০৩০, হিন্দু ৫২১৯২৫, বৌদ্ধ ২৭৯৯৬, খ্রিস্টান ১০৯৩ এবং অন্যান্য ৩৪৮০৬। এ উপজেলায় সাঁওতাল, ওরাওঁ, মাহলী, মালপাহাড়ী, কোল প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
''জনসংখ্যা'' ২৯৯০১২৮; পুরুষ ১৫০৮৬৭০, মহিলা ১৪৮১৪৫৮। মুসলিম ২৩৩৩২৫৩, হিন্দু ৫৮৩৩১৩, বৌদ্ধ ৪৭৩, খ্রিস্টান ৩৭৪৮৮ এবং অন্যান্য ৩৫৬০১। এ উপজেলায় সাঁওতাল, ওরাওঁ, মাহলী, মালপাহাড়ী, কোল প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।


''জলাশয়'' প্রধান নদী: যমুনা, তুলসীগঙ্গা, পূনর্ভবা, আত্রাই।
''জলাশয়'' প্রধান নদী: যমুনা, তুলসীগঙ্গা, পূনর্ভবা, আত্রাই।


''প্রশাসন'' দিনাজপুর জেলা গঠিত হয় ১৭৮৬ সালে। এর পূর্বনাম ছিল ঘোড়াঘাট জেলা। ১৮৩৩-১৮৭০ সালে দিনাজপুরের বিভিন্ন অংশ পূর্ণিয়া, রংপুর ও রাজশাহীর অন্তর্ভুক্ত হয়। দিনাজপুরের দুটি মহকুমা ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় ১৯৮৪ সালে পৃথক জেলায় পরিণত হয়। জেলার তেরটি উপজেলার মধ্যে বীরগঞ্জ উপজেলা সর্ববৃহৎ (৪১৩ বর্গ কিমি) এবং এটি জেলার মোট আয়তনের ১২.০১% এলাকা জুড়ে অবস্থিত। জেলার সবচেয়ে ছোট উপজেলা হাকিমপুর (৯৯.৯২ বর্গ কিমি)।
''প্রশাসন'' দিনাজপুর জেলা গঠিত হয় ১৭৮৬ সালে। এর পূর্বনাম ছিল ঘোড়াঘাট জেলা। ১৮৩৩-১৮৭০ সালে দিনাজপুরের বিভিন্ন অংশ পূর্ণিয়া, রংপুর ও রাজশাহীর অন্তর্ভুক্ত হয়। দিনাজপুরের দুটি মহকুমা ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় ১৯৮৪ সালে পৃথক জেলায় পরিণত হয়। জেলার তেরটি উপজেলার মধ্যে বীরগঞ্জ উপজেলা সর্ববৃহৎ (৪১৩.১১ বর্গ কিমি) এবং এটি জেলার মোট আয়তনের ১২.০১% এলাকা জুড়ে অবস্থিত। জেলার সবচেয়ে ছোট উপজেলা হাকিমপুর (৯৯.৯২ বর্গ কিমি)।


{| class="table table-bordered table-hover"
{| class="table table-bordered table-hover"
|-
|-
! colspan= "10" | জেলা
| colspan= "10" | জেলা
|-
|-
| rowspan= "2" | আয়তন(বর্গ কিমি)  || rowspan= "2" | উপজেলা  || rowspan= "2" | পৌরসভা  || rowspan= "2" | ইউনিয়ন  || rowspan= "2" | মৌজা  || rowspan= "2" | গ্রাম  || colspan= "2" | জনসংখ্যা || rowspan= "2" | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি)  || rowspan= "2" | শিক্ষার হার (%)
| rowspan= "2" | আয়তন (বর্গ কিমি)  || rowspan= "2" | উপজেলা  || rowspan= "2" | পৌরসভা  || rowspan= "2" | ইউনিয়ন  || rowspan= "2" | মৌজা  || rowspan= "2" | গ্রাম  || colspan= "2" | জনসংখ্যা || rowspan= "2" | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)  || rowspan= "2" | শিক্ষার হার (%)
|-
|-
| শহর  || গ্রাম  
| শহর  || গ্রাম  
|-
|-
| ৩৪৩৭.৯৮  || ১৩ || ৬  || ১০১ || ২০২০  || ২১৪৩  || ৩৭০৮৬৪  || ২২৭১৯৮৬  || ৭৬৯  || ৪৫.
| ৩৪৪৪.৩০ || ১৩ || || ১০১ || ১৯৭৪ || ২১৩১ || ৪৫৩৬৯৯ || ২৫৩৬৪২৯ || ৮৬৮ || ৫২.
 
|}
|}
{| class="table table-bordered table-hover"
{| class="table table-bordered table-hover"
|-  
|-  
| জেলার অন্যান্য তথ্য
| colspan= "10" | জেলার অন্যান্য তথ্য
 
|-  
|-  
| উপজেলা নাম  || আয়তন(বর্গ কিমি)  || পৌরসভা  || ইউনিয়ন  || মৌজা  || গ্রাম  || জনসংখ্যা || ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)  || শিক্ষার হার (%)
| উপজেলা নাম  || আয়তন (বর্গ কিমি)  || পৌরসভা  || ইউনিয়ন  || মৌজা  || গ্রাম  || জনসংখ্যা || ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)  || শিক্ষার হার (%)
 
|-
|-
| কাহারোল || ২০৫.৫৪  || - || ৬ || ১৫৩  || ১৫২ || ১৩৭৩১৫  || ৬৬৮  || ৪০.
| কাহারোল || ২০৫.৫৩ || - || ৬ || ১৫২ || ১৫২ || ১৫৪৪৩২  || ৭৫১ || ৫১.
 
|-
|-
| খানসামা || ১৭৯.৭২ || - || ৬ || ৫৭ || ৫৭ || ১৫০৭৯২  || ৮৩৯  || ৩৮.
| খানসামা || ১৭৯.৭২ || - || ৬ || ৫৭ || ৫৭ || ১৭১৭৬৪ || ৯৫৬ || ৪৭.
 
|-
|-
| ঘোড়াঘাট || ১৪৮.৬৭ || || ৪ || ১১৫  || ১১২  || ১০৩১১৯  || ৬৯৪  || ৩৯.
| ঘোড়াঘাট || ১৪৮.৬৭ || || ৪ || ১০৩ || ১০৩ || ১১৭৭৪০ || ৭৯২ || ৪৬.
 
|-
|-
| চিরিরবন্দর || ৩০৮.৬৮  || - || ১২ || ১৪৫  || ১৪১  || ২৬৫১৭৬  || ৮৫৯  || ৪৪.
| চিরিরবন্দর || ৩১২.৬৯ || - || ১২ || ১৪২ || ১৪২ || ২৯২৫০০ || ৯৩৫ || ৫২.
 
|-
|-
| দিনাজপুর সদর || ৩৫৪.৩৪  || ১ || ১০ || ২১১  || ২০৫  || ৪২৪৭৭৬  || ১১৯৯  || ৫৮.
| দিনাজপুর সদর || ৩৫৪.৭৩ || ১ || ১০ || ২০৭ || ২০৭ || ৪৮৪৫৯৭ || ১৩৬৬ || ৬৪.
 
|-
|-
| নবাবগঞ্জ || ৩১৪.৬৮ || - || ৯ || ২১২  || ২৮২  || ২০৪৩৫১  || ৬৪৯  || ৩৮.
| নবাবগঞ্জ || ৩১৪.৬৮ || - || ৯ || ২০৪ || ২৭২ || ২২৯৩৩৭ || ৭২৯ || ৪২.
 
|-
|-
| পার্বতীপুর || ৩৯৫.১০  || ১ || ১০ || ১৫৭  || ২২৯  || ৩২৫০৭০  || ৮২৩  || ৪৬.
| পার্বতীপুর || ৩৯৫.০৪ || ১ || ১০ || ১৫২ || ২৩০ || ৩৬৫১০৩ || ৯২৪ || ৫৩.
 
|-
|-
| ফুলবাড়ী || ২২৯.৫৫  || ১ || ৭ || ১৫৮  || ১৫১  || ১৫১৯৩৯  || ৬৬২  || ৪৮.
| ফুলবাড়ী || ২২৮.৪৯ || ১ || ৭ || ১৫১ || ১৫২ || ১৭৬০২৩ || ৭৭০ || ৫২.
 
|-
|-
| বিরল || ৩৫২.১৬  || - || ১০ || ২৪১  || ২৩৮  || ২৩১৪৭৬  || ৬৫৭  || ৩৯.
| বিরল || ৩৫৩.৯৮ || - || ১০ || ২৩৭ || ২৩৭ || ২৫৭৯২৫ || ৭২৯ || ৪৭.
 
|-
|-
| বিরামপুর || ২১১.৮১  || ১ || ৭ || ১৭১  || ১৬৯ || ১৫০৬২০  || ৭১১  || ৪৬.
| বিরামপুর || ২১২.৮৮ || ১ || ৭ || ১৫০ || ১৬৯ || ১৭০৮০৬  || ৮০২ || ৫১.
 
|-
|-
| বীরগঞ্জ || ৪১৩.০০  || || ১১ || ১৮৬ || ১৮৬  || ২৬৯৮৯৩  || ৬৫৩  || ৩৮.
| বীরগঞ্জ || ৪১৩.১১ || || ১১ || ১৮৬ || ১৮৭ || ৩১৭২৫৩ || ৭৬৮ || ৪৮.
 
|-
|-
| বোচাগঞ্জ || ২২৪.৮১  || ১ || ৬ || ১৪৪  || ১৪১ || ১৪৫২৯৫  || ৬৪৬  || ৫০.
| বোচাগঞ্জ || ২২৪.৭৯ || ১ || ৬ || ১৩৯ || ১৪১ || ১৬০০৪৯ || ৭১২ || ৫২.
 
|-
|-
| হাকিমপুর || ৯৯.৯২ || ১ || ৩ || ৬৯  || ৮০  || ৮৩০২৮  || ৮৩১  || ৪৭.
| হাকিমপুর || ৯৯.৯২ || ১ || ৩ || ৫৬ || ৮৩ || ৯২৫৯৯ || ৯২৭ || ৫৪.
|}
|}
''সূত্র'' আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
''সূত্র'' আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।


[[Image:দিনাজপুর জেলা_html_88407781.png]]
[[Image:DinajpurDistrict.jpg|thumb|400px|right]]


[[Image:DinajpurDistrict.jpg]]
''মুক্তিযুদ্ধ''  ১৯৭১ সালে দিনাজপুর ৭ নং সেক্টরের অধীন ছিল। ২৯ মার্চ ফুলবাড়ি উপজেলার দিনাজপুর রোডে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর কয়েকটি গাড়ি, গোলাবারুদ, অস্ত্রশস্ত্রসহ বহু রসদপত্র দখল করে। ৮ এপ্রিল পার্বতীপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর, বাগবাড়ি ও পেয়াদাপাড়ায় পাকবাহিনী প্রায় ৩০০ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। ১৯ এপ্রিল পাকবাহিনী হাকিমপুর উপজেলার হিলি আক্রমণ করে। হাকিমপুর ছাতনীতে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। বিরামপুর উপজেলার কেটরা হাটে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকবাহিনীর লড়াইয়ে ৭ জন পাকসেনা নিহত এবং ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ২০ জুলাই পাকসেনারা নবাবগঞ্জ উপজেলার খয়েরগনি গ্রামে ২১ জন নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। তারা ১০ অক্টোবর নবাবগঞ্জ উপজেলার চড়ারহাটে ১৫৭ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। ১৩ নভেম্বর পাকবাহিনী বিরল উপজেলার বিজোড় ইউনিয়নের বহলায় ৩৭ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। ২১ নভেম্বর-১১ ডিসেম্বর হাকিমপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে প্রায় ৩৪৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বীরগঞ্জ উপজেলার ভাতগাঁও ব্রীজের পূর্বপাড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে প্রায় ৫০ জন পাকসেনা নিহত এবং পাকবাহিনীর দুটি ট্যাংক ধ্বংস হয়। লড়াইয়ে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৪ ডিসেম্বর সাধারন জনগণ বিরামপুর উপজেলার বেপারীটোলায় একটি জীপ আক্রমণ করে কয়েকজন পাকসেনাকে হত্যা করে। ১৫ ডিসেম্বর বগুলাখারীতে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এছাড়াও বিরল উপজেলার  বহবল দীঘিতে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে প্রায় ১০০ জন পাকসেনা নিহত হয়। কাহারোল উপজেলায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ১০ জন পাকসেনা ও ৭ জন নিরীহ বাঙালি নিহত হয়। জেলার বিভিন্ন স্থানে ৪টি বধ্যভূমি ও ৭টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে, ৫টি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে।


''মুক্তিযুদ্ধ'' ১৯৭১ সালে দিনাজপুর ৭ নং সেক্টরের অধীন ছিল। ২৯ মার্চ ফুলবাড়ী উপজেলার দিনাজপুর রোডে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর কয়েকটি গাড়ি, গোলাবারুদ, অস্ত্রশস্ত্রসহ বহু রসদপত্র দখল করে। ৮ এপ্রিল পার্বতীপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর, বাগবাড়ী ও পেয়াদাপাড়ায় পাকবাহিনী প্রায় ৩০০ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। ১৯ এপ্রিল পাকবাহিনী হাকিমপুর উপজেলার হিলি আক্রমণ করে। হাকিমপুর ছাতনীতে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। বিরামপুর উপজেলার কেটরা হাটে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকবাহিনীর লড়াইয়ে ৭ জন পাকসেনা নিহত এবং ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ২০ জুলাই পাকসেনারা নবাবগঞ্জ উপজেলার খয়েরগনি গ্রামে ২১ জন নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। তারা ১০ অক্টোবর নবাবগঞ্জ উপজেলার চড়ারহাটে ১৫৭ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। ১৩ নভেম্বর পাকবাহিনী বিরল উপজেলার বিজোড় ইউনিয়নের বহলায় ৩৭ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। ২১ নভেম্বর-১১ ডিসেম্বর হাকিমপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে প্রায় ৩৪৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বীরগঞ্জ উপজেলার ভাতগাঁও ব্রীজের পূর্বপাড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে প্রায় ৫০ জন পাকসেনা নিহত এবং পাকবাহিনীর দুটি ট্যাংক ধ্বংস হয়। লড়াইয়ে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৪ ডিসেম্বর সাধারন জনগণ বিরামপুর উপজেলার বেপারীটোলায় একটি জীপ আক্রমণ করে কয়েকজন পাকসেনাকে হত্যা করে। ১৫ ডিসেম্বর বগুলাখারীতে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এছাড়াও বিরল উপজেলার  বহবল দীঘিতে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে প্রায় ১০০ জন পাকসেনা নিহত হয়। কাহারোল উপজেলায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ১০ জন পাকসেনা ও ৭ জন নিরীহ বাঙালি নিহত হয়।
''শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান''  গড় হার ৫২.%; পুরুষ ৫৫.৭%, মহিলা ৪৯.১%। বিশ্ববিদ্যালয় ১, ভেটারনেরি কলেজ ১, কলেজ ১১৮, ভোকেশনাল ও অন্যান্য কেন্দ্র ১০, টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬১৭, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৭১৩, কমিউনিটি বিদ্যালয় ১১, এনজিও স্কুল ২৯, কেজি স্কুল ১০, মাদ্রাসা ৩৫১। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: দিনাজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পার্বতীপুর ডিগ্রী কলেজ (১৯৬৪), বিরল ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২), দাউদপুর ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২), হাকিমপুর ডিগ্রি কলেজ (১৯৮৪), উইলিয়াম কেরী নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল (১৭৯৯), দিনাজপুর জিলা স্কুল (১৮৫৪), দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৬৯), জুবিলি হাইস্কুল (১৮৮৭), মহারাজা গিরিজানাথ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), রাজারামপুর এসইউ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), মোল্লাপাড়া দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), পার্বতীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), রুদ্রানী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৫), সুজাপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), ফুলবাড়ী জিএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২০), পলাশবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২১), জ্ঞানাঙ্কুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৫), সারদেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৭), দিনাজপুর হাইস্কুল (১৯৩০), একইর মঙ্গলপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩০), কাহারোল হাইস্কুল (১৯৪০), হাবড়া উচ্চ  বিদ্যালয় (১৯৪২), রানীগঞ্জ দ্বিমুখি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৫), নুরুলহুদা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫১), নিউ পাকেরহাট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৯), বীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬২), মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৪২), জুড়াই ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৫২), ভবানীপুর ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা (১৯৭২)।
 
''মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন'' বধ্যভূমি ৪, গণকবর ৭, স্মৃতিসৌধ ৫।
 
শিক্ষার হার'', ''শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  গড় হার ৪৫.%; পুরুষ ৫১%, মহিলা ৪০%। বিশ্ববিদ্যালয় ১, ভেটারনেরি কলেজ ১, কলেজ ১১৮, ভোকেশনাল ও অন্যান্য কেন্দ্র ১০, টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬১৭, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৭১৩, কমিউনিটি বিদ্যালয় ১১, এনজিও স্কুল ২৯, কেজি স্কুল ১০, মাদ্রাসা ৩৫১। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: দিনাজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পার্বতীপুর ডিগ্রী কলেজ (১৯৬৪), বিরল ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২), দাউদপুর ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২), হাকিমপুর ডিগ্রি কলেজ (১৯৮৪), উইলিয়াম কেরী নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল (১৭৯৯), দিনাজপুর জিলা স্কুল (১৮৫৪), দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৬৯), জুবিলি হাইস্কুল (১৮৮৭), মহারাজা গিরিজানাথ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), রাজারামপুর এসইউ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), মোল্লাপাড়া দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), পার্বতীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), রুদ্রানী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৫), সুজাপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), ফুলবাড়ী জিএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২০), পলাশবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২১), জ্ঞানাঙ্কুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৫), সারদেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৭), দিনাজপুর হাইস্কুল (১৯৩০), একইর মঙ্গলপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩০), কাহারোল হাইস্কুল (১৯৪০), হাবড়া উচ্চ  বিদ্যালয় (১৯৪২), রানীগঞ্জ দ্বিমুখি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৫), নুরুলহুদা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫১), নিউ পাকেরহাট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৯), বীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬২), মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৪২), জুড়াই ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৫২), ভবানীপুর ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা (১৯৭২)।


''জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস'' কৃষি ৬৩.৯০%, অকৃষি শ্রমিক ৩.২৯%, শিল্প ০.৯০%, ব্যবসা ১২.৮৯%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৩৫%, চাকরি ৬.৫৮%, নির্মাণ ৩.৩৭%, ধর্মীয় সেবা ০.১৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২৩% এবং অন্যান্য ৫.৩২%।
''জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস'' কৃষি ৬৩.৯০%, অকৃষি শ্রমিক ৩.২৯%, শিল্প ০.৯০%, ব্যবসা ১২.৮৯%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৩৫%, চাকরি ৬.৫৮%, নির্মাণ ৩.৩৭%, ধর্মীয় সেবা ০.১৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২৩% এবং অন্যান্য ৫.৩২%।


পত্র''-''পত্রিকা ও সাময়িকী  দৈনিক: উত্তরা, প্রতিদিন, উত্তর বাংলা, তিস্তা, জনমত, উত্তরবঙ্গ, আজকের প্রতিভা, অন্তর কণ্ঠ, উত্তরাঞ্চল, সীমান্ত বার্তা, পত্রালাপ; সাপ্তাহিক: অতঃপর, আজকের বার্তা; মাসিক: নওরোজ (অবলুপ্ত)।
''পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী''  দৈনিক: উত্তরা, প্রতিদিন, উত্তর বাংলা, তিস্তা, জনমত, উত্তরবঙ্গ, আজকের প্রতিভা, অন্তর কণ্ঠ, উত্তরাঞ্চল, সীমান্ত বার্তা, পত্রালাপ; সাপ্তাহিক: অতঃপর, আজকের বার্তা; মাসিক: নওরোজ (অবলুপ্ত)।
 
''লোকসংস্কৃতি'' ভাওয়াইয়া গান, কীর্তন, পাঁচালী, মেয়েলি গীত, গোরক্ষনাথের গান, চড়কের গান, বাউল সংগীত, প্রবাদ প্রবচন, ছড়া, ছিলকা, হেয়ালী, ধাঁধাঁ, জারিগান উল্লেখযোগ্য।
 
''দর্শনীয় স্থান'' চেহেলগাজী মাযার, রাজবাড়ি, শুক সাগর, মাতা সাগর, রামসাগর দীঘি, আনন্দ সাগর (দিনাজপুর সদর); কান্তজী মন্দির (কাহারোল); স্বপ্নপুরী (নবাবগঞ্জ)।  [আহমদ হোসেন]


''আরও দেখুন'' সংশ্লিষ্ট উপজেলা।
''লোকসংস্কৃতি'' ভাওয়াইয়া গান, কীর্তন, পাঁচালী, মেয়েলি গীত, গোরক্ষনাথের গান, চড়কের গান, বাউল সংগীত, প্রবাদ প্রবচন, ছড়া, ছিলকা, হেয়ালী, ধাঁধাঁ, জারিগান উল্লেখযোগ্য।


'''তথ্যসূত্র'''   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; দিনাজপুর জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; দিনাজপুর জেলার উপজেলা সমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।
''দর্শনীয় স্থান'' চেহেলগাজী মাযার, রাজবাড়ি, শুক সাগর, মাতা সাগর, রামসাগর দীঘি, আনন্দ সাগর (দিনাজপুর সদর); কান্তজী মন্দির (কাহারোল); স্বপ্নপুরী (নবাবগঞ্জ)।  [আহমদ হোসেন]


<!-- imported from file: দিনাজপুর জেলা.html-->
''আরও দেখুন''  সংশ্লিষ্ট উপজেলা।


[[en:Dinajpur District]]
'''তথ্যসূত্র'''  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; দিনাজপুর জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; দিনাজপুর জেলার উপজেলা সমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।


[[en:Dinajpur District]]
[[en:Dinajpur District]]

১৮:০৮, ২৮ মে ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

দিনাজপুর জেলা (রংপুর বিভাগ)  আয়তন: ৩৪৪৪.৩০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°১০´ থেকে ২৬°০৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°২৩´ থেকে ৮৯°১৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলা, দক্ষিণে গাইবান্ধা ও জয়পুরহাট জেলা, পূর্বে নীলফামারী ও রংপুর জেলা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য।

জনসংখ্যা ২৯৯০১২৮; পুরুষ ১৫০৮৬৭০, মহিলা ১৪৮১৪৫৮। মুসলিম ২৩৩৩২৫৩, হিন্দু ৫৮৩৩১৩, বৌদ্ধ ৪৭৩, খ্রিস্টান ৩৭৪৮৮ এবং অন্যান্য ৩৫৬০১। এ উপজেলায় সাঁওতাল, ওরাওঁ, মাহলী, মালপাহাড়ী, কোল প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: যমুনা, তুলসীগঙ্গা, পূনর্ভবা, আত্রাই।

প্রশাসন দিনাজপুর জেলা গঠিত হয় ১৭৮৬ সালে। এর পূর্বনাম ছিল ঘোড়াঘাট জেলা। ১৮৩৩-১৮৭০ সালে দিনাজপুরের বিভিন্ন অংশ পূর্ণিয়া, রংপুর ও রাজশাহীর অন্তর্ভুক্ত হয়। দিনাজপুরের দুটি মহকুমা ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় ১৯৮৪ সালে পৃথক জেলায় পরিণত হয়। জেলার তেরটি উপজেলার মধ্যে বীরগঞ্জ উপজেলা সর্ববৃহৎ (৪১৩.১১ বর্গ কিমি) এবং এটি জেলার মোট আয়তনের ১২.০১% এলাকা জুড়ে অবস্থিত। জেলার সবচেয়ে ছোট উপজেলা হাকিমপুর (৯৯.৯২ বর্গ কিমি)।

জেলা
আয়তন (বর্গ কিমি) উপজেলা পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম
৩৪৪৪.৩০ ১৩ ১০১ ১৯৭৪ ২১৩১ ৪৫৩৬৯৯ ২৫৩৬৪২৯ ৮৬৮ ৫২.৪
জেলার অন্যান্য তথ্য
উপজেলা নাম আয়তন (বর্গ কিমি) পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
কাহারোল ২০৫.৫৩ - ১৫২ ১৫২ ১৫৪৪৩২ ৭৫১ ৫১.৩
খানসামা ১৭৯.৭২ - ৫৭ ৫৭ ১৭১৭৬৪ ৯৫৬ ৪৭.৫
ঘোড়াঘাট ১৪৮.৬৭ ১০৩ ১০৩ ১১৭৭৪০ ৭৯২ ৪৬.০
চিরিরবন্দর ৩১২.৬৯ - ১২ ১৪২ ১৪২ ২৯২৫০০ ৯৩৫ ৫২.৯
দিনাজপুর সদর ৩৫৪.৭৩ ১০ ২০৭ ২০৭ ৪৮৪৫৯৭ ১৩৬৬ ৬৪.৩
নবাবগঞ্জ ৩১৪.৬৮ - ২০৪ ২৭২ ২২৯৩৩৭ ৭২৯ ৪২.৮
পার্বতীপুর ৩৯৫.০৪ ১০ ১৫২ ২৩০ ৩৬৫১০৩ ৯২৪ ৫৩.৯
ফুলবাড়ী ২২৮.৪৯ ১৫১ ১৫২ ১৭৬০২৩ ৭৭০ ৫২.৬
বিরল ৩৫৩.৯৮ - ১০ ২৩৭ ২৩৭ ২৫৭৯২৫ ৭২৯ ৪৭.৩
বিরামপুর ২১২.৮৮ ১৫০ ১৬৯ ১৭০৮০৬ ৮০২ ৫১.৬
বীরগঞ্জ ৪১৩.১১ ১১ ১৮৬ ১৮৭ ৩১৭২৫৩ ৭৬৮ ৪৮.১
বোচাগঞ্জ ২২৪.৭৯ ১৩৯ ১৪১ ১৬০০৪৯ ৭১২ ৫২.৬
হাকিমপুর ৯৯.৯২ ৫৬ ৮৩ ৯২৫৯৯ ৯২৭ ৫৪.৭

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে দিনাজপুর ৭ নং সেক্টরের অধীন ছিল। ২৯ মার্চ ফুলবাড়ি উপজেলার দিনাজপুর রোডে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর কয়েকটি গাড়ি, গোলাবারুদ, অস্ত্রশস্ত্রসহ বহু রসদপত্র দখল করে। ৮ এপ্রিল পার্বতীপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর, বাগবাড়ি ও পেয়াদাপাড়ায় পাকবাহিনী প্রায় ৩০০ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। ১৯ এপ্রিল পাকবাহিনী হাকিমপুর উপজেলার হিলি আক্রমণ করে। হাকিমপুর ছাতনীতে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। বিরামপুর উপজেলার কেটরা হাটে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকবাহিনীর লড়াইয়ে ৭ জন পাকসেনা নিহত এবং ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ২০ জুলাই পাকসেনারা নবাবগঞ্জ উপজেলার খয়েরগনি গ্রামে ২১ জন নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। তারা ১০ অক্টোবর নবাবগঞ্জ উপজেলার চড়ারহাটে ১৫৭ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। ১৩ নভেম্বর পাকবাহিনী বিরল উপজেলার বিজোড় ইউনিয়নের বহলায় ৩৭ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। ২১ নভেম্বর-১১ ডিসেম্বর হাকিমপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে প্রায় ৩৪৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বীরগঞ্জ উপজেলার ভাতগাঁও ব্রীজের পূর্বপাড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে প্রায় ৫০ জন পাকসেনা নিহত এবং পাকবাহিনীর দুটি ট্যাংক ধ্বংস হয়। লড়াইয়ে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৪ ডিসেম্বর সাধারন জনগণ বিরামপুর উপজেলার বেপারীটোলায় একটি জীপ আক্রমণ করে কয়েকজন পাকসেনাকে হত্যা করে। ১৫ ডিসেম্বর বগুলাখারীতে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এছাড়াও বিরল উপজেলার বহবল দীঘিতে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে প্রায় ১০০ জন পাকসেনা নিহত হয়। কাহারোল উপজেলায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ১০ জন পাকসেনা ও ৭ জন নিরীহ বাঙালি নিহত হয়। জেলার বিভিন্ন স্থানে ৪টি বধ্যভূমি ও ৭টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে, ৫টি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  গড় হার ৫২.৪%; পুরুষ ৫৫.৭%, মহিলা ৪৯.১%। বিশ্ববিদ্যালয় ১, ভেটারনেরি কলেজ ১, কলেজ ১১৮, ভোকেশনাল ও অন্যান্য কেন্দ্র ১০, টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬১৭, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৭১৩, কমিউনিটি বিদ্যালয় ১১, এনজিও স্কুল ২৯, কেজি স্কুল ১০, মাদ্রাসা ৩৫১। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: দিনাজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পার্বতীপুর ডিগ্রী কলেজ (১৯৬৪), বিরল ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২), দাউদপুর ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২), হাকিমপুর ডিগ্রি কলেজ (১৯৮৪), উইলিয়াম কেরী নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল (১৭৯৯), দিনাজপুর জিলা স্কুল (১৮৫৪), দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৬৯), জুবিলি হাইস্কুল (১৮৮৭), মহারাজা গিরিজানাথ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), রাজারামপুর এসইউ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), মোল্লাপাড়া দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), পার্বতীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), রুদ্রানী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৫), সুজাপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), ফুলবাড়ী জিএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২০), পলাশবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২১), জ্ঞানাঙ্কুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৫), সারদেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৭), দিনাজপুর হাইস্কুল (১৯৩০), একইর মঙ্গলপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩০), কাহারোল হাইস্কুল (১৯৪০), হাবড়া উচ্চ  বিদ্যালয় (১৯৪২), রানীগঞ্জ দ্বিমুখি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৫), নুরুলহুদা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫১), নিউ পাকেরহাট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৯), বীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬২), মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৪২), জুড়াই ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৫২), ভবানীপুর ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা (১৯৭২)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৩.৯০%, অকৃষি শ্রমিক ৩.২৯%, শিল্প ০.৯০%, ব্যবসা ১২.৮৯%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৩৫%, চাকরি ৬.৫৮%, নির্মাণ ৩.৩৭%, ধর্মীয় সেবা ০.১৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২৩% এবং অন্যান্য ৫.৩২%।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী  দৈনিক: উত্তরা, প্রতিদিন, উত্তর বাংলা, তিস্তা, জনমত, উত্তরবঙ্গ, আজকের প্রতিভা, অন্তর কণ্ঠ, উত্তরাঞ্চল, সীমান্ত বার্তা, পত্রালাপ; সাপ্তাহিক: অতঃপর, আজকের বার্তা; মাসিক: নওরোজ (অবলুপ্ত)।

লোকসংস্কৃতি ভাওয়াইয়া গান, কীর্তন, পাঁচালী, মেয়েলি গীত, গোরক্ষনাথের গান, চড়কের গান, বাউল সংগীত, প্রবাদ প্রবচন, ছড়া, ছিলকা, হেয়ালী, ধাঁধাঁ, জারিগান উল্লেখযোগ্য।

দর্শনীয় স্থান চেহেলগাজী মাযার, রাজবাড়ি, শুক সাগর, মাতা সাগর, রামসাগর দীঘি, আনন্দ সাগর (দিনাজপুর সদর); কান্তজী মন্দির (কাহারোল); স্বপ্নপুরী (নবাবগঞ্জ)।  [আহমদ হোসেন]

আরও দেখুন সংশ্লিষ্ট উপজেলা।

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; দিনাজপুর জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; দিনাজপুর জেলার উপজেলা সমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।