দাস, ব্রজেন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:Banglapedia]]
[[Category:Banglapedia]]
'''দাস'''''', ''''''ব্রজেন''' (১৯২৭-১৯৯৮)  ইংলিশ চ্যানেল সাঁতরিয়ে অতিক্রমের গৌরবের অধিকারী দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সাঁতারু। তিনি ১৯২৭ সালের ৯ ডিসেম্বর মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরের অন্তর্গত কুচিয়ামোড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে পড়ালেখা শেষ করে তিনি ১৯৪৬ সালে ঢাকার কে.এল জুবিলি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং কোলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে আই.এ এবং বি.এ পাস করেন।  
'''দাস, ব্রজেন''' (১৯২৭-১৯৯৮)  ইংলিশ চ্যানেল সাঁতরিয়ে অতিক্রমের গৌরবের অধিকারী দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সাঁতারু। তিনি ১৯২৭ সালের ৯ ডিসেম্বর মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরের অন্তর্গত কুচিয়ামোড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে পড়ালেখা শেষ করে তিনি ১৯৪৬ সালে ঢাকার কে.এল জুবিলি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং কোলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে আই.এ এবং বি.এ পাস করেন।  


ব্রজেন দাস ছেলেবেলা থেকেই সাঁতারে পারদর্শী ছিলেন। তিনি সাঁতার চর্চা করতেন বুড়িগঙ্গা নদীতে। শিক্ষাজীবন শেষে ঢাকায় ফিরে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ক্রীড়া ফেডারেশনকে বার্ষিক সাঁতার প্রতিযোগিতা চালু করতে উদ্বুদ্ধ করেন। এরকম একটি প্রতিযোগিতা প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালে। এটি সহ দেশের উল্লেখযোগ্য প্রায় সকল সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ব্রজেন দাস নিজেকে একজন সেরা সাঁতারু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি ১৯৫৮ সালে অনুষ্ঠিত ইংলিশ চ্যানেল সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আমন্ত্রিত হন। এতে সাড়া দিয়ে তিনি শীতলক্ষ্যা এবং উন্মত্ত মেঘনায় সাঁতার চর্চা করে নিজেকে তৈরি করেন এবং একসময় নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত সাঁতরিয়ে অতিক্রম করেন। তখনকার দিনে স্টিম শিপ এ দূরত্ব অতিক্রম করতে প্রায় আড়াই ঘণ্টা সময় নিত। # #[[Image:দাস, ব্রজেন_html_88407781.png]]
[[Image:DasBrojen.jpg|thumb|400px|right|ব্রজেন দাস]]
 
ব্রজেন দাস ছেলেবেলা থেকেই সাঁতারে পারদর্শী ছিলেন। তিনি সাঁতার চর্চা করতেন বুড়িগঙ্গা নদীতে। শিক্ষাজীবন শেষে ঢাকায় ফিরে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ক্রীড়া ফেডারেশনকে বার্ষিক সাঁতার প্রতিযোগিতা চালু করতে উদ্বুদ্ধ করেন। এরকম একটি প্রতিযোগিতা প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালে। এটি সহ দেশের উল্লেখযোগ্য প্রায় সকল সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ব্রজেন দাস নিজেকে একজন সেরা সাঁতারু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি ১৯৫৮ সালে অনুষ্ঠিত ইংলিশ চ্যানেল সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আমন্ত্রিত হন। এতে সাড়া দিয়ে তিনি শীতলক্ষ্যা এবং উন্মত্ত মেঘনায় সাঁতার চর্চা করে নিজেকে তৈরি করেন এবং একসময় নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত সাঁতরিয়ে অতিক্রম করেন। তখনকার দিনে স্টিম শিপ এ দূরত্ব অতিক্রম করতে প্রায় আড়াই ঘণ্টা সময় নিত।
[[Image:DasBrojen.jpg]]
 
# #ব্রজেন দাস


ইংলিশ চ্যানেল সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার অব্যবহিত পূর্বে ব্রজেন দাস ভূমধ্যসাগরে কাপ্রি থেকে নেপ্লস সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এই প্রতিযোগিতায় অর্জিত অভিজ্ঞতা ও সাফল্য সাঁতরিয়ে সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার জন্য তাঁর আত্মবিশ্বাস সুদৃঢ় করে। ইংলিশ চ্যানেল সাঁতার প্রতিযোগিতায় ২৩টি বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগী অংশ নেয়। সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রতিযোগী ছিলেন ব্রজেন দাস। এই সাঁতার শুরু হয়েছিল ১৯৫৮ সালের ১৮ আগস্ট মধ্যরাতে, এবং তা শেষ হয় পরদিন শেষ বিকেলে। অনেকেই ক্লান্ত হয়ে মাঝপথেই ক্ষান্ত দিলেও ব্রজেন দাস সংকল্পে অটুট থেকে অগ্রগামীদের একজন হয়ে সাঁতার শেষ করেন এবং ইতিহাসে নিজের নাম লেখান।  
ইংলিশ চ্যানেল সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার অব্যবহিত পূর্বে ব্রজেন দাস ভূমধ্যসাগরে কাপ্রি থেকে নেপ্লস সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এই প্রতিযোগিতায় অর্জিত অভিজ্ঞতা ও সাফল্য সাঁতরিয়ে সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার জন্য তাঁর আত্মবিশ্বাস সুদৃঢ় করে। ইংলিশ চ্যানেল সাঁতার প্রতিযোগিতায় ২৩টি বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগী অংশ নেয়। সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রতিযোগী ছিলেন ব্রজেন দাস। এই সাঁতার শুরু হয়েছিল ১৯৫৮ সালের ১৮ আগস্ট মধ্যরাতে, এবং তা শেষ হয় পরদিন শেষ বিকেলে। অনেকেই ক্লান্ত হয়ে মাঝপথেই ক্ষান্ত দিলেও ব্রজেন দাস সংকল্পে অটুট থেকে অগ্রগামীদের একজন হয়ে সাঁতার শেষ করেন এবং ইতিহাসে নিজের নাম লেখান।  


১৯৫৮ থেকে ১৯৬১ এই তিন বছরে ব্রজেন দাস সর্বমোট ছয়বার ইংলিশ চ্যানেল সাঁতরিয়ে অতিক্রম করেন। ১৯৬১ সালের অভিযানে তিনি সময় নেন সাড়ে দশ ঘণ্টা। এর পূর্বে ইংলিশ চ্যানেল সাঁতরিয়ে অতিক্রম করার সর্বনিম্ন রেকর্ড সময় ছিল ১০ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট। ব্রজেন দাস ১৯৭৬ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার এবং ১৯৯৯ সালে স্বাধীনতা পদকে  (মরণোত্তর) ভূষিত হন। তাঁর মৃত্যু হয় ১৯৯৮ সালের ১ জুন।  [এস.এম মাহফুজুর রহমান]
১৯৫৮ থেকে ১৯৬১ এই তিন বছরে ব্রজেন দাস সর্বমোট ছয়বার ইংলিশ চ্যানেল সাঁতরিয়ে অতিক্রম করেন। ১৯৬১ সালের অভিযানে তিনি সময় নেন সাড়ে দশ ঘণ্টা। এর পূর্বে ইংলিশ চ্যানেল সাঁতরিয়ে অতিক্রম করার সর্বনিম্ন রেকর্ড সময় ছিল ১০ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট। ব্রজেন দাস ১৯৭৬ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার এবং ১৯৯৯ সালে স্বাধীনতা পদকে  (মরণোত্তর) ভূষিত হন। তাঁর মৃত্যু হয় ১৯৯৮ সালের ১ জুন।  [এস.এম মাহফুজুর রহমান]
Back to: [[Untitled Document1]]
<!-- imported from file: দাস, ব্রজেন.html-->
[[en:Das, Brojen]]


[[en:Das, Brojen]]
[[en:Das, Brojen]]

০৫:০০, ১৩ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

দাস, ব্রজেন (১৯২৭-১৯৯৮)  ইংলিশ চ্যানেল সাঁতরিয়ে অতিক্রমের গৌরবের অধিকারী দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সাঁতারু। তিনি ১৯২৭ সালের ৯ ডিসেম্বর মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরের অন্তর্গত কুচিয়ামোড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে পড়ালেখা শেষ করে তিনি ১৯৪৬ সালে ঢাকার কে.এল জুবিলি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং কোলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে আই.এ এবং বি.এ পাস করেন।

ব্রজেন দাস

ব্রজেন দাস ছেলেবেলা থেকেই সাঁতারে পারদর্শী ছিলেন। তিনি সাঁতার চর্চা করতেন বুড়িগঙ্গা নদীতে। শিক্ষাজীবন শেষে ঢাকায় ফিরে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ক্রীড়া ফেডারেশনকে বার্ষিক সাঁতার প্রতিযোগিতা চালু করতে উদ্বুদ্ধ করেন। এরকম একটি প্রতিযোগিতা প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালে। এটি সহ দেশের উল্লেখযোগ্য প্রায় সকল সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ব্রজেন দাস নিজেকে একজন সেরা সাঁতারু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি ১৯৫৮ সালে অনুষ্ঠিত ইংলিশ চ্যানেল সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আমন্ত্রিত হন। এতে সাড়া দিয়ে তিনি শীতলক্ষ্যা এবং উন্মত্ত মেঘনায় সাঁতার চর্চা করে নিজেকে তৈরি করেন এবং একসময় নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত সাঁতরিয়ে অতিক্রম করেন। তখনকার দিনে স্টিম শিপ এ দূরত্ব অতিক্রম করতে প্রায় আড়াই ঘণ্টা সময় নিত।

ইংলিশ চ্যানেল সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার অব্যবহিত পূর্বে ব্রজেন দাস ভূমধ্যসাগরে কাপ্রি থেকে নেপ্লস সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এই প্রতিযোগিতায় অর্জিত অভিজ্ঞতা ও সাফল্য সাঁতরিয়ে সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার জন্য তাঁর আত্মবিশ্বাস সুদৃঢ় করে। ইংলিশ চ্যানেল সাঁতার প্রতিযোগিতায় ২৩টি বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগী অংশ নেয়। সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রতিযোগী ছিলেন ব্রজেন দাস। এই সাঁতার শুরু হয়েছিল ১৯৫৮ সালের ১৮ আগস্ট মধ্যরাতে, এবং তা শেষ হয় পরদিন শেষ বিকেলে। অনেকেই ক্লান্ত হয়ে মাঝপথেই ক্ষান্ত দিলেও ব্রজেন দাস সংকল্পে অটুট থেকে অগ্রগামীদের একজন হয়ে সাঁতার শেষ করেন এবং ইতিহাসে নিজের নাম লেখান।

১৯৫৮ থেকে ১৯৬১ এই তিন বছরে ব্রজেন দাস সর্বমোট ছয়বার ইংলিশ চ্যানেল সাঁতরিয়ে অতিক্রম করেন। ১৯৬১ সালের অভিযানে তিনি সময় নেন সাড়ে দশ ঘণ্টা। এর পূর্বে ইংলিশ চ্যানেল সাঁতরিয়ে অতিক্রম করার সর্বনিম্ন রেকর্ড সময় ছিল ১০ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট। ব্রজেন দাস ১৯৭৬ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার এবং ১৯৯৯ সালে স্বাধীনতা পদকে  (মরণোত্তর) ভূষিত হন। তাঁর মৃত্যু হয় ১৯৯৮ সালের ১ জুন।  [এস.এম মাহফুজুর রহমান]