দায়ভাগ

দায়ভাগ হিন্দুদের উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইনগ্রন্থ। খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতকে  জীমূতবাহন এটি রচনা করেন। স্মৃতিশাস্ত্রের বিষয়কে প্রধান যে-তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে, তার মধ্যে একটি হলো ব্যবহার বা আইন। এ ব্যবহার অংশে বর্ণিত দায় অর্থাৎ সম্পদের উত্তরাধিকার বিষয় নিয়েই দায়ভাগ রচিত।

স্মৃতিশাস্ত্রের উত্তরাধিকার সংক্রান্ত যাজ্ঞবল্ক্যস্মৃতির মিতাক্ষরা টীকাকে এক সময় সমগ্র ভারতে সর্বাপেক্ষা প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসেবে স্বীকার করা হতো। কিন্তু নব্যস্মৃতির যুগে বঙ্গে এ বিষয়ে মিতাক্ষরার সঙ্গে পার্থক্যের সৃষ্টি হয়। এ পার্থক্যের সূত্র ধরেই জীমূতবাহন দায়ভাগ রচনা করেন। মিতাক্ষরার সঙ্গে দায়ভাগের মৌল পার্থক্য হলো: মিতাক্ষরামতে জন্মমাত্রই পুত্র পূর্বপুরুষের সম্পদে পিতার সমান অংশীদার হয়, কিন্তু দায়ভাগমতে পিতা স্বেচ্ছায় দান না করলে অথবা পিতার মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত পুত্রের ওই সম্পদে অধিকার জন্মে না। দায়ভাগে এ পৈতৃক সম্পত্তির বিভাগ, বিবিধ প্রকার পুত্র, উত্তরাধিকার ও উত্তরাধিকারীদের ক্রম, স্ত্রীধন, অবিভাজ্য সম্পদ প্রভৃতি সংক্রান্ত বিধি-বিধান আলোচিত হয়েছে।

বাংলাদেশে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন এখনও দায়ভাগ অনুসারেই পরিচালিত হয়ে থাকে। গ্রন্থটি এক সময় এতই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল যে, এর ওপর অনেকগুলি টীকা-টিপ্পনী রচিত হয়েছিল। টীকাকাররা হলেন শ্রীনাথ আচার্যচূড়ামণি (দায়ভাগটিপ্পনী, ১৫শ-১৬শ শতক),  রঘুনন্দন (দায়ভাগটীকা, ১৫শ-১৬শ শতক), শ্রীকৃষ্ণ তর্কালঙ্কার (দায়ভাগটীকা, ১৮শ শতক) প্রমুখ।   [দুলাল ভৌমিক]