দরিয়া-ই-নূর: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:Banglapedia]]
[[Category:Banglapedia]]
'''দরিয়া-ই-নূর'''  বিশ্বখ্যাত হীরক। এর শাব্দিক অর্থ সমুদ্রের আলো। কোহিনূরের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হীরকটি বাংলাদেশে প্রাপ্ত রত্নসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় আকৃতির এবং সবচেয়ে মূল্যবান। দরিয়া''-''''-''নূর-এর বহিরঙ্গ কার্নিসযুক্ত আয়তাকার। একটি স্বর্ণের বাজুবন্দের মধ্যখানে দরিয়া-ই-নূরকে বসানো হয়েছিলো। এর চারপাশে সংযুক্ত ছিল অপেক্ষাকৃত ছোট দশটি ডিম্বাকৃতির হীরক। মূল হীরকটির ওজন ২৬ ক্যারেট। ছোটগুলির প্রতিটি ৫ ক্যারেট করে। এ হিসেবে এগুলির সমন্বিত ওজন ৭৬ ক্যারেট। বিশেষ আকর্ষণীয় দরিয়া''-''ই''-''নূর হীরকটিও কোহিনূরের মত দক্ষিণ ভারতের খনিতে পাওয়া গিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
'''দরিয়া-ই-নূর'''  বিশ্বখ্যাত হীরক। এর শাব্দিক অর্থ সমুদ্রের আলো। কোহিনূরের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হীরকটি বাংলাদেশে প্রাপ্ত রত্নসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় আকৃতির এবং সবচেয়ে মূল্যবান। দরিয়া-ই-নূর-এর বহিরঙ্গ কার্নিসযুক্ত আয়তাকার। একটি স্বর্ণের বাজুবন্দের মধ্যখানে দরিয়া-ই-নূরকে বসানো হয়েছিলো। এর চারপাশে সংযুক্ত ছিল অপেক্ষাকৃত ছোট দশটি ডিম্বাকৃতির হীরক। মূল হীরকটির ওজন ২৬ ক্যারেট। ছোটগুলির প্রতিটি ৫ ক্যারেট করে। এ হিসেবে এগুলির সমন্বিত ওজন ৭৬ ক্যারেট। বিশেষ আকর্ষণীয় দরিয়া''-''ই''-''নূর হীরকটিও কোহিনূরের মত দক্ষিণ ভারতের খনিতে পাওয়া গিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।


দরিয়া''-''''-''নূর দীর্ঘদিন মারাঠা রাজাদের অধিকারে ছিল। পরে হায়দরাবাদের নওয়াব সিরাজুল মুলক এটিকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকায় ক্রয় করেন। পরবর্তী সময়ে কোহিনূরের মতোই এ হীরকটিও পারস্য সম্রাটের অধিকারে চলে যায় এবং সম্ভবত সেখানেই এর নামকরণ করা হয় দরিয়া-ই-নূর। অবশেষে দরিয়া-ই-নূর পাঞ্জাবের শাসক রণজিৎ সিংহের করায়ত্ত হয়। ১৮৪৯ সালে  [[ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি|ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি]] পাঞ্জাবের ওপর আধিপত্য স্থাপন করার পর কোহিনূর ও দরিয়া-ই-নূরসহ মহারাজ দিলীপ সিংহের খাজাঞ্চিখানার মূল্যবান দ্রব্য-সামগ্রী কোম্পানির অধিকারে চলে আসে। এ সময় দরিয়া-ই-নূরের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৬৩ হাজার টাকা।#[[Image:দরিয়া-ই-নূর_html_88407781.png]]
[[Image:Dariya_i_Noor.jpg|thumb|400px|right|দরিয়া-ই-নূর]]
 
দরিয়া-ই-নূর দীর্ঘদিন মারাঠা রাজাদের অধিকারে ছিল। পরে হায়দরাবাদের নওয়াব সিরাজুল মুলক এটিকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকায় ক্রয় করেন। পরবর্তী সময়ে কোহিনূরের মতোই এ হীরকটিও পারস্য সম্রাটের অধিকারে চলে যায় এবং সম্ভবত সেখানেই এর নামকরণ করা হয় দরিয়া-ই-নূর। অবশেষে দরিয়া-ই-নূর পাঞ্জাবের শাসক রণজিৎ সিংহের করায়ত্ত হয়। ১৮৪৯ সালে  [[ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি|ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি]] পাঞ্জাবের ওপর আধিপত্য স্থাপন করার পর কোহিনূর ও দরিয়া-ই-নূরসহ মহারাজ দিলীপ সিংহের খাজাঞ্চিখানার মূল্যবান দ্রব্য-সামগ্রী কোম্পানির অধিকারে চলে আসে। এ সময় দরিয়া-ই-নূরের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৬৩ হাজার টাকা।
[[Image:Dariya_i_Noor.jpg]]
 
#দরিয়া-ই-নূর


কোহিনূর রানী ভিক্টোরিয়াকে উপহার দেওয়া হয় এবং অন্যান্য মণিমুক্তা কোম্পানির নিকট থেকে যায়। ১৮৫০ সালে রানী ভিক্টোরিয়ার সম্মানে লন্ডনের হাইড পার্কে একটি প্রদর্শনী মেলার আয়োজন করা হয়েছিলো। এখানে কোহিনূরের পাশাপাশি প্রদর্শনের জন্য দরিয়া-ই-নূরসহ অনেক মূল্যবান মণি মাণিক্য প্রেরণ করা হয়। এ প্রদর্শনীতে দরিয়া-ই-নূরের আশানুরূপ দাম না ওঠায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, হীরকটি ভারতে ফেরত এনে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। ব্রিটিশ সরকারের অনুমোদনক্রমে কলকাতার হ্যামিল্টন অ্যান্ড কোম্পানি ১৮৫২ সালের নভেম্বরে দরিয়া-ই-নূরের নিলামের আয়োজন করে এবং ঢাকার নওয়াব  [[আলীমুল্লাহ, খাজা|খাজা আলীমুল্লাহ]] ৭৫ হাজার টাকায় এটি নিলামে ক্রয় করেন। ঢাকার নওয়াবগণ হীরকটি একটি বাজুবন্দে যুক্ত করে তা অলংকার হিসেবে ব্যবহার করতে থাকেন। হ্যামিল্টন অ্যান্ড কোম্পানির সহযোগিতায় ঢাকার নওয়াবদের সংগৃহীত বিভিন্ন রত্নসামগ্রীর একটি অ্যালবাম প্রকাশ করা হয়। এ অ্যালবামে দরিয়া-ই-নূর বিশেষ গুরুত্ব পায়। ১৮৮৭ সালে ভাইসরয় লর্ড  [[ডাফরিন, লর্ড|ডাফরিন]] ও লেডি ডাফরিন কলকাতার বালিগঞ্জের নওয়াব ভবনে দরিয়া-ই-নূর প্রত্যক্ষ করেন। ১৯০৮ সালে নওয়াব  [[সলিমুল্লাহ, খাজা|খাজা সলিমুল্লাহ]] দরিয়া-ই-নূর হীরকটি সরকারের নিকট বন্ধক রেখে যখন ঋণ গ্রহণ করেছিলেন তখন এর মূল্য নিরূপণ করা হয়েছিল ৫ লক্ষ টাকা। পরে ঋণ পরিশোধ করার জন্য সলিমুল্লাহ দরিয়া-ই-নূর বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। এ উদ্দেশ্যে হ্যামিল্টন অ্যান্ড কোম্পানির তত্ত্বাবধানে ১৯১১ সালে এটি ইংল্যান্ডে পাঠানো হয়। কিন্তু হীরকটি ইউরোপীয়দের তেমন আকৃষ্ট করতে পারে নি। সেখানে এর দাম ওঠে সর্বোচ্চ ১৫০০ পাউন্ড। এ অবস্থায় হীরকটিকে ফেরত এনে কলকাতায় হ্যামিল্টন অ্যান্ড কোম্পানির তত্ত্বাবধানে ১৯৪৮ সালে পর্যন্ত সংরক্ষণ করা হয়।  
কোহিনূর রানী ভিক্টোরিয়াকে উপহার দেওয়া হয় এবং অন্যান্য মণিমুক্তা কোম্পানির নিকট থেকে যায়। ১৮৫০ সালে রানী ভিক্টোরিয়ার সম্মানে লন্ডনের হাইড পার্কে একটি প্রদর্শনী মেলার আয়োজন করা হয়েছিলো। এখানে কোহিনূরের পাশাপাশি প্রদর্শনের জন্য দরিয়া-ই-নূরসহ অনেক মূল্যবান মণি মাণিক্য প্রেরণ করা হয়। এ প্রদর্শনীতে দরিয়া-ই-নূরের আশানুরূপ দাম না ওঠায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, হীরকটি ভারতে ফেরত এনে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। ব্রিটিশ সরকারের অনুমোদনক্রমে কলকাতার হ্যামিল্টন অ্যান্ড কোম্পানি ১৮৫২ সালের নভেম্বরে দরিয়া-ই-নূরের নিলামের আয়োজন করে এবং ঢাকার নওয়াব  [[আলীমুল্লাহ, খাজা|খাজা আলীমুল্লাহ]] ৭৫ হাজার টাকায় এটি নিলামে ক্রয় করেন। ঢাকার নওয়াবগণ হীরকটি একটি বাজুবন্দে যুক্ত করে তা অলংকার হিসেবে ব্যবহার করতে থাকেন। হ্যামিল্টন অ্যান্ড কোম্পানির সহযোগিতায় ঢাকার নওয়াবদের সংগৃহীত বিভিন্ন রত্নসামগ্রীর একটি অ্যালবাম প্রকাশ করা হয়। এ অ্যালবামে দরিয়া-ই-নূর বিশেষ গুরুত্ব পায়। ১৮৮৭ সালে ভাইসরয় লর্ড  [[ডাফরিন, লর্ড|ডাফরিন]] ও লেডি ডাফরিন কলকাতার বালিগঞ্জের নওয়াব ভবনে দরিয়া-ই-নূর প্রত্যক্ষ করেন। ১৯০৮ সালে নওয়াব  [[সলিমুল্লাহ, খাজা|খাজা সলিমুল্লাহ]] দরিয়া-ই-নূর হীরকটি সরকারের নিকট বন্ধক রেখে যখন ঋণ গ্রহণ করেছিলেন তখন এর মূল্য নিরূপণ করা হয়েছিল ৫ লক্ষ টাকা। পরে ঋণ পরিশোধ করার জন্য সলিমুল্লাহ দরিয়া-ই-নূর বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। এ উদ্দেশ্যে হ্যামিল্টন অ্যান্ড কোম্পানির তত্ত্বাবধানে ১৯১১ সালে এটি ইংল্যান্ডে পাঠানো হয়। কিন্তু হীরকটি ইউরোপীয়দের তেমন আকৃষ্ট করতে পারে নি। সেখানে এর দাম ওঠে সর্বোচ্চ ১৫০০ পাউন্ড। এ অবস্থায় হীরকটিকে ফেরত এনে কলকাতায় হ্যামিল্টন অ্যান্ড কোম্পানির তত্ত্বাবধানে ১৯৪৮ সালে পর্যন্ত সংরক্ষণ করা হয়।  


১৯১২ সালে সম্রাট পঞ্চম জর্জ ও রানী মেরী কলকাতা সফরে এলে হীরকটি দেখেন। খাজা সলিমুল্লাহর মৃত্যুর পর দরিয়া-ই-নূরকে  [[ঢাকা নওয়াব এস্টেট|ঢাকার নওয়াব এস্টেট]]এর কোর্ট অব ওয়ার্ডসের ম্যানেজারের তত্ত্বাবধানে এবং পাকিস্তান সৃষ্টির পর কলকাতা থেকে এনে ভারতীয় ইম্পেরিয়াল ব্যাঙ্কের ঢাকা শাখায় জমা রাখা হয়। বর্তমানে দরিয়া-ই-নূর সোনালী ব্যাংকের ভল্টে সংরক্ষিত রয়েছে। ১৯৮৫ সালে বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষায় হীরকটি অকৃত্রিম বলে প্রমাণিত হয়েছে।  [মোহাম্মদ আলমগীর]
১৯১২ সালে সম্রাট পঞ্চম জর্জ ও রানী মেরী কলকাতা সফরে এলে হীরকটি দেখেন। খাজা সলিমুল্লাহর মৃত্যুর পর দরিয়া-ই-নূরকে  [[ঢাকা নওয়াব এস্টেট|ঢাকার নওয়াব এস্টেট]]-এর কোর্ট অব ওয়ার্ডসের ম্যানেজারের তত্ত্বাবধানে এবং পাকিস্তান সৃষ্টির পর কলকাতা থেকে এনে ভারতীয় ইম্পেরিয়াল ব্যাঙ্কের ঢাকা শাখায় জমা রাখা হয়। বর্তমানে দরিয়া-ই-নূর সোনালী ব্যাংকের ভল্টে সংরক্ষিত রয়েছে। ১৯৮৫ সালে বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষায় হীরকটি অকৃত্রিম বলে প্রমাণিত হয়েছে।  [মোহাম্মদ আলমগীর]


'''গ্রন্থপঞ্জি '''Marchioness of Dufferin & Ava, ''Our Viceregal life in India, ''London, 1890; ''Illustrated Album of Oriental Jewellery from Dhaka Nawabs Collection'', Calcutta; Bhai Nahar Shing & Kirpal Shing (ed), ''History of Kohinoor, Darya-i-Noor & Taimur's Rub'', 1985; ''Old Documents and Records'', Deposited in Dhaka Nawab Court of Wards & Wakf Estate Office.
'''গ্রন্থপঞ্জি''' Marchioness of Dufferin and Ava, ''Our Viceregal life in India'', London, 1890; ''Illustrated Album of Oriental Jewellery from Dhaka Nawabs Collection'', Calcutta; Bhai Nahar Shing and Kirpal Shing (ed.), ''History of Kohinoor, Darya-i-Noor and Taimur's Rub'', 1985; ''Old Documents and Records'', Deposited in Dhaka Nawab Court of Wards and Wakf Estate Office.


[[en:Daria-i-Noor]]
[[en:Daria-i-Noor]]

০৭:০৮, ৭ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

দরিয়া-ই-নূর  বিশ্বখ্যাত হীরক। এর শাব্দিক অর্থ সমুদ্রের আলো। কোহিনূরের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হীরকটি বাংলাদেশে প্রাপ্ত রত্নসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় আকৃতির এবং সবচেয়ে মূল্যবান। দরিয়া-ই-নূর-এর বহিরঙ্গ কার্নিসযুক্ত আয়তাকার। একটি স্বর্ণের বাজুবন্দের মধ্যখানে দরিয়া-ই-নূরকে বসানো হয়েছিলো। এর চারপাশে সংযুক্ত ছিল অপেক্ষাকৃত ছোট দশটি ডিম্বাকৃতির হীরক। মূল হীরকটির ওজন ২৬ ক্যারেট। ছোটগুলির প্রতিটি ৫ ক্যারেট করে। এ হিসেবে এগুলির সমন্বিত ওজন ৭৬ ক্যারেট। বিশেষ আকর্ষণীয় দরিয়া--নূর হীরকটিও কোহিনূরের মত দক্ষিণ ভারতের খনিতে পাওয়া গিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।

দরিয়া-ই-নূর

দরিয়া-ই-নূর দীর্ঘদিন মারাঠা রাজাদের অধিকারে ছিল। পরে হায়দরাবাদের নওয়াব সিরাজুল মুলক এটিকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকায় ক্রয় করেন। পরবর্তী সময়ে কোহিনূরের মতোই এ হীরকটিও পারস্য সম্রাটের অধিকারে চলে যায় এবং সম্ভবত সেখানেই এর নামকরণ করা হয় দরিয়া-ই-নূর। অবশেষে দরিয়া-ই-নূর পাঞ্জাবের শাসক রণজিৎ সিংহের করায়ত্ত হয়। ১৮৪৯ সালে  ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পাঞ্জাবের ওপর আধিপত্য স্থাপন করার পর কোহিনূর ও দরিয়া-ই-নূরসহ মহারাজ দিলীপ সিংহের খাজাঞ্চিখানার মূল্যবান দ্রব্য-সামগ্রী কোম্পানির অধিকারে চলে আসে। এ সময় দরিয়া-ই-নূরের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৬৩ হাজার টাকা।

কোহিনূর রানী ভিক্টোরিয়াকে উপহার দেওয়া হয় এবং অন্যান্য মণিমুক্তা কোম্পানির নিকট থেকে যায়। ১৮৫০ সালে রানী ভিক্টোরিয়ার সম্মানে লন্ডনের হাইড পার্কে একটি প্রদর্শনী মেলার আয়োজন করা হয়েছিলো। এখানে কোহিনূরের পাশাপাশি প্রদর্শনের জন্য দরিয়া-ই-নূরসহ অনেক মূল্যবান মণি মাণিক্য প্রেরণ করা হয়। এ প্রদর্শনীতে দরিয়া-ই-নূরের আশানুরূপ দাম না ওঠায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, হীরকটি ভারতে ফেরত এনে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। ব্রিটিশ সরকারের অনুমোদনক্রমে কলকাতার হ্যামিল্টন অ্যান্ড কোম্পানি ১৮৫২ সালের নভেম্বরে দরিয়া-ই-নূরের নিলামের আয়োজন করে এবং ঢাকার নওয়াব  খাজা আলীমুল্লাহ ৭৫ হাজার টাকায় এটি নিলামে ক্রয় করেন। ঢাকার নওয়াবগণ হীরকটি একটি বাজুবন্দে যুক্ত করে তা অলংকার হিসেবে ব্যবহার করতে থাকেন। হ্যামিল্টন অ্যান্ড কোম্পানির সহযোগিতায় ঢাকার নওয়াবদের সংগৃহীত বিভিন্ন রত্নসামগ্রীর একটি অ্যালবাম প্রকাশ করা হয়। এ অ্যালবামে দরিয়া-ই-নূর বিশেষ গুরুত্ব পায়। ১৮৮৭ সালে ভাইসরয় লর্ড  ডাফরিন ও লেডি ডাফরিন কলকাতার বালিগঞ্জের নওয়াব ভবনে দরিয়া-ই-নূর প্রত্যক্ষ করেন। ১৯০৮ সালে নওয়াব  খাজা সলিমুল্লাহ দরিয়া-ই-নূর হীরকটি সরকারের নিকট বন্ধক রেখে যখন ঋণ গ্রহণ করেছিলেন তখন এর মূল্য নিরূপণ করা হয়েছিল ৫ লক্ষ টাকা। পরে ঋণ পরিশোধ করার জন্য সলিমুল্লাহ দরিয়া-ই-নূর বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। এ উদ্দেশ্যে হ্যামিল্টন অ্যান্ড কোম্পানির তত্ত্বাবধানে ১৯১১ সালে এটি ইংল্যান্ডে পাঠানো হয়। কিন্তু হীরকটি ইউরোপীয়দের তেমন আকৃষ্ট করতে পারে নি। সেখানে এর দাম ওঠে সর্বোচ্চ ১৫০০ পাউন্ড। এ অবস্থায় হীরকটিকে ফেরত এনে কলকাতায় হ্যামিল্টন অ্যান্ড কোম্পানির তত্ত্বাবধানে ১৯৪৮ সালে পর্যন্ত সংরক্ষণ করা হয়।

১৯১২ সালে সম্রাট পঞ্চম জর্জ ও রানী মেরী কলকাতা সফরে এলে হীরকটি দেখেন। খাজা সলিমুল্লাহর মৃত্যুর পর দরিয়া-ই-নূরকে  ঢাকার নওয়াব এস্টেট-এর কোর্ট অব ওয়ার্ডসের ম্যানেজারের তত্ত্বাবধানে এবং পাকিস্তান সৃষ্টির পর কলকাতা থেকে এনে ভারতীয় ইম্পেরিয়াল ব্যাঙ্কের ঢাকা শাখায় জমা রাখা হয়। বর্তমানে দরিয়া-ই-নূর সোনালী ব্যাংকের ভল্টে সংরক্ষিত রয়েছে। ১৯৮৫ সালে বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষায় হীরকটি অকৃত্রিম বলে প্রমাণিত হয়েছে।  [মোহাম্মদ আলমগীর]

গ্রন্থপঞ্জি Marchioness of Dufferin and Ava, Our Viceregal life in India, London, 1890; Illustrated Album of Oriental Jewellery from Dhaka Nawabs Collection, Calcutta; Bhai Nahar Shing and Kirpal Shing (ed.), History of Kohinoor, Darya-i-Noor and Taimur's Rub, 1985; Old Documents and Records, Deposited in Dhaka Nawab Court of Wards and Wakf Estate Office.