তৈফুর, সৈয়দ মোহাম্মদ

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২০:৫০, ২১ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (fix: image tag)

তৈফুর', 'সৈয়দ মোহাম্মদ (১৮৮৫-১৯৭২)  লেখক, প্রাচীন নিদর্শনাদির সংগ্রাহক, ঐতিহাসিক এবং বাংলাদেশে নারী শিক্ষার অগ্রপথিক। তিনি ১৮৮৫ সালের ৩ জুন ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সৈয়দ আবদুল আজিজ এবং পিতামহ মীর গোলাম মুস্তাফা আল হুসেনী ছিলেন সোনারগাঁও-এর জমিদার। তৈফুর নিজেকে সোনারগাঁও-এর বিখ্যাত দরবেশ  ইবরাহিম দানিশমান্দ এর বংশধর বলে দাবি করতেন। তিনি ঢাকা ও কলকাতার মাদ্রাসায় শিক্ষা লাভ করেন। বাংলা, ইংরেজি, উর্দু ও ফারসি ভাষায় তিনি সমভাবে পারদর্শী ছিলেন। ১৯০৯ সালে তিনি সহকারী রেজিস্ট্রার পদে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। কর্মজীবনে বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র তিনি চাকরি করেছেন। ১৯৪২ সালে কলকাতার রেজিস্ট্রার হিসেবে তিনি অবসর নেন। ১৯৪১ সালে ইংরেজ সরকার তাঁকে ‘খান সাহেব’ উপাধি প্রদান করে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় তৈফুর তাঁর এ উপাধি প্রত্যাখ্যান করেন।

ঢাকার অভিজাত সমাজে তৈফুর একজন বিদ্বান ব্যক্তিরূপে সমাদৃত ছিলেন। তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে যেমন ইডেন কলেজের মেম্বার ডাইরেক্টর, ঢাকার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের সদস্য, জগন্নাথ কলেজের ডাইরেক্টর এবং ঢাকা ইম্প্রুভমেন্ট ট্রাস্টের সদস্যরূপে দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকা জাদুঘরের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই তিনি এর সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন এবং তিনি ছিলেন এ জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের একজন সদস্য। তিনি তাঁর বহু ব্যক্তিগত সংগ্রহ জাদুঘরে দান করেন। এগুলির মধ্যে রয়েছে ২০৯টি প্রাচীন ও মুগল মুদ্রা, প্রত্নসামগ্রী এবং পূর্ব ভারত হতে প্রাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র। তিনি ছিলেন এশিয়াটিক সোসাইটি অব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। দুর্লভ কিছু গ্রন্থ এবং আরবি ও ফারসি পান্ডুলিপি তিনি এশিয়াটিক সোসাইটিকে দান করেন। #চিত্র:তৈফুর, সৈয়দ মোহাম্মদ html 88407781.png

  1. সৈয়দ মোহাম্মদ তৈফুর

১৯৫২ সালে এস.এম তৈফুর-এর Glimpses of Old Dhaka' গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। এটি ঢাকার ঐতিহাসিক বিবর্তনের ওপর গবেষণামূলক একটি গ্রন্থ। তিনি ইংরেজিতে ‘ Dacca ’কে ‘ Dhaka ’ হিসেবে প্রচলনের অন্যতম উদ্যোক্তা। তৈফুরের মৃত্যুর কয়েক বছর পর ১৯৮২ সালে এ বানানই ঢাকার ইংরেজি বানান হিসেবে গৃহীত হয়।

তৈফুর ছিলেন নারী শিক্ষা ও নারী অধিকার আদায়ের অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি সর্বতোভাবে তাঁর তিন কন্যা লুলু বিলকিস বানু, লায়লা আরজুমান্দ বানু এবং মালকা বানুকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ এবং বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করেন। এ ঘটনা ছিল তৎকালীন যুগে নারীদের কঠোর সামাজিক বিচ্ছিন্নতার মধ্যেও এক ব্যতিক্রমী প্রয়াস।

তৈফুরের সহধর্মিনী সারা তৈফুরও নারী মুক্তির আদর্শে সমান বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি নিজে স্বাধীনভাবে একজন সমাজকর্মী ও লেখিকারূপে কাজ করেন। দেশ বিভাগের অব্যবহিত পূর্বে ইংরেজ সরকার তাঁকে ‘কাইজার-ই-হিন্দ’ পদকে ভূষিত করে। সৈয়দ মোহাম্মদ তৈফুর ৮৭ বছর বয়সে ১৯৭২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।  [শাহনাজ হুদা]