তুলা উন্নয়ন বোড

তুলা উন্নয়ন বোর্ড তুলাচাষ পুনঃপ্রবর্তন ও উন্নয়নের উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালে স্থাপিত একটি প্রতিষ্ঠান। প্রথম দিকে বোর্ড তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য কাজ করতে পারে নি। অবশ্য ১৯৭৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নতুন প্রজাতির বীজ আনার পর দেশে তুলার চাষ জোরদার হয় এবং ১৯৮৩-৮৪ সালে উৎপাদন মাত্রা ৩০,০০০ বেলে পৌঁছে। আমদানিকৃত বীজের অবক্ষয়, গুণগত মানের অবনতি এবং বিপণনের অভাবে কয়েক বছর পর উৎপাদন কমে ১২,০০০ বেলে দাঁড়ায়। প্রাচীনকাল থেকেই বাংলা ছিল তুলা চাষের জন্য প্রসিদ্ধ। সতেরো শতকের ফরাসি পর্যটক ফ্রাঁসোয়া বার্নিয়ার বাংলার তুলার সঙ্গে মিশরের তুলার তুলনা করে মন্তব্য করেন যে বাংলার তুলা মিশরের তুলার চেয়ে গুণগতভাবে অনেক উন্নতমানের, কিন্তু ঔপনিবেশিক শাসনের ফলে বাংলায় তুলাচাষ ক্রমশ বিলুপ্ত হয়ে যায়।

দেশে তৎকালীন কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধীনে প্রথম তুলা গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট নামে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পুনর্গঠনের পর অপ্রধান অাঁশ ও তামাক শাখাকে (Minor Fibre and Tobacco Division) উদ্ভিদ-প্রজনন বিভাগের অধীনে আনা হয়। বর্তমানে তুলা গবেষণাকে নিম্নলিখিত লক্ষ্যপূরণের উদ্দেশ্যে শক্তিশালী করা হয়েছে ১. দেশের জন্য বাণিজ্যিক জাতগুলির প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য মূল্যায়ন এবং স্থানীয় ও প্রবর্তিত জার্মপ্লাজমের উপযোগিতা নির্ধারণ; ২. বর্তমান চাহিদা পূরণের জন্য একটি প্রজনন ও নির্বাচন কার্যক্রম প্রতিষ্ঠা; ৩. সর্বোত্তম চাষাবাদের প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সরবরাহের জন্য কৃষিতাত্ত্বিক গবেষণা; ৪. কীটপতঙ্গের আক্রমণের সময় ও পরিসর নির্ধারণ এবং উপযুক্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা উদ্ভাবন; এবং ৫. তুলার রোগনির্ণয় এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা উন্নয়ন। জয়দেবপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কেন্দ্রীয় খামার, যশোরের আঞ্চলিক স্টেশন, রংপুরের মহীগঞ্জে কৃষি স্টেশন এবং গাজীপুরের শ্রীপুরে কেন্দ্রীয় তুলাবীজ উৎপাদন কেন্দ্রে এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

পুনর্গঠন ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সঙ্গে গবেষণা সুবিধাদি একত্রীকরণের পর ঢাকায় খামারবাড়িতে প্রধান কার্যালয়সহ তুলা উন্নয়ন বোর্ড-এর কয়েকটি সম্প্রসারণ ও গবেষণা ইউনিট গঠিত হয়েছে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, যশোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, রংপুর, বগুড়া, রাজশাহী, পাবনা, ঠাকুরগাঁও, রাঙ্গামাটি, বান্দরবন ও খাগড়াছড়িতে অবস্থিত বিভাগীয় ও আঞ্চলিক কার্যালয়গুলির মাধ্যমে এ সম্প্রসারণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

বর্তমানে যেসব কেন্দ্রে প্রজনন, কৃষিতত্ত্ব, মাটির উর্বরতা, কীটতত্ত্ব ও রোগতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম চলছে সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কেন্দ্রীয় তুলা গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও বীজ উৎপাদন কেন্দ্র, শ্রীপুর, গাজীপুর; আঞ্চলিক তুলা গবেষণা ও বীজ উৎপাদন কেন্দ্র, সদরপুর, দিনাজপুর; আঞ্চলিক তুলা গবেষণা ও বীজ উৎপাদন কেন্দ্র, জগদীশপুর, যশোর; তুলা গবেষণা কেন্দ্র, মহীগঞ্জ, রংপুর; এবং তুলা গবেষণা কেন্দ্র, বালাঘাটা, বান্দরবান। অধিকন্তু গবেষণা কেন্দ্রগুলিতে উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রযুক্তির যথাযথ পরীক্ষণও সেখানকার খামারে সম্পন্ন হয়।

নির্বাহী পরিচালক এ বোর্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বোর্ডের সম্প্রসারণ, গবেষণা ও বিপণন কার্যক্রমে উপ-পরিচালক, তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা, ইউনিট কর্মকর্তা ও গবেষকগণ (প্রধান খামার ব্যবস্থাপক, বিষয় বিশেষজ্ঞ) নির্বাহী পরিচালককে সহায়তা করেন।

তুলা উন্নয়ন বোর্ড এ পর্যন্ত ৮ জাতের তুলা উদ্ভাবন করেছে। এগুলি সিবি-১, সিবি-৩, সিবি-৫, সিবি-৭, এস আই/৯১/৬৪৬, এসএ/সিবি-১/৯৯, জেএ/সিবি-৫/৯৯ ও এভিএ। দেশে তুলাচাষ বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ৩৪,৬৪২ হেক্টরে পৌঁছেছে এবং বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৭৩,৭১০ বেল যা দেশের মোট চাহিদার প্রায় ১৬% পূরণ করতে পারে। [মোঃ শহীদুল ইসলাম]

আরও দেখুন তুলা।