তারিখ-ই-ফিরুজশাহী (আফীফ): সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:Banglapedia]]
[[Category:Banglapedia]]
'''তারিখ-ই-ফিরুজশাহী .আফীফ'''''')  '''সুলতান [[ফিরুজশাহ তুগলক|ফিরুজশাহ তুগলক]]-এর রাজত্বকালের (১৩৫১-১৩৮৮ খ্রি.) বিস্তারিত বিবরণ সম্বলিত ইতিহাস গ্রন্থ। গ্রন্থটি রচনা করেন শামস-ই-সিরাজ আফীফ। তিনি এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবারের সদস্যগণ সুলতান আলাউদ্দীন খলজীর সময় থেকেই সুলতানদের অধীনে চাকরি করতেন বলে জানা যায়। আফীফের পিতা শামস আফীফ ফিরুজ শাহের রাজত্বকালে বিভিন্ন পদে, বিশেষত বাংলা অভিযানগুলিতে সুলতানের অধীনে চাকরি করেছেন বলে জানা যায়। শামস-ই-সিরাজ আফীফ ১৩৪২ খ্রিস্টাব্দে (অন্য একটি বিবরণ অনুসারে ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দে, সম্ভবত প্রথম তারিখটি সঠিক) জন্মগ্রহণ করেন। কাজেই তিনি ফিরুজ শাহের সম্পূর্ণ রাজত্বকাল দেখেছেন এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে লেখার সুযোগ পেয়েছেন। আফীফের ইতিহাস রচনার তারিখ জানা যায় না। তৈমুরের দিল্লি আক্রমণের (১৩৯৮ খ্রি.) কয়েক বছর পর এটি লেখা হয়েছিল এবং এর বিষয়বস্ত্ত পর্যালোচনা করলেও দেখা যায় যে, গ্রন্থটি পনেরো শতকের প্রথম দশকে লেখা হয়েছিল।  
'''তারিখ-ই-ফিরুজশাহী (আফীফ')''' সুলতান [[ফিরুজশাহ তুগলক|ফিরুজশাহ তুগলক]]-এর রাজত্বকালের (১৩৫১-১৩৮৮ খ্রি.) বিস্তারিত বিবরণ সম্বলিত ইতিহাস গ্রন্থ। গ্রন্থটি রচনা করেন শামস-ই-সিরাজ আফীফ। তিনি এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবারের সদস্যগণ সুলতান আলাউদ্দীন খলজীর সময় থেকেই সুলতানদের অধীনে চাকরি করতেন বলে জানা যায়। আফীফের পিতা শামস আফীফ ফিরুজ শাহের রাজত্বকালে বিভিন্ন পদে, বিশেষত বাংলা অভিযানগুলিতে সুলতানের অধীনে চাকরি করেছেন বলে জানা যায়। শামস-ই-সিরাজ আফীফ ১৩৪২ খ্রিস্টাব্দে (অন্য একটি বিবরণ অনুসারে ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দে, সম্ভবত প্রথম তারিখটি সঠিক) জন্মগ্রহণ করেন। কাজেই তিনি ফিরুজ শাহের সম্পূর্ণ রাজত্বকাল দেখেছেন এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে লেখার সুযোগ পেয়েছেন। আফীফের ইতিহাস রচনার তারিখ জানা যায় না। তৈমুরের দিল্লি আক্রমণের (১৩৯৮ খ্রি.) কয়েক বছর পর এটি লেখা হয়েছিল এবং এর বিষয়বস্ত্ত পর্যালোচনা করলেও দেখা যায় যে, গ্রন্থটি পনেরো শতকের প্রথম দশকে লেখা হয়েছিল।  


ফিরুজ শাহের দুটি অভিযানই ব্যর্থ হয়েছিল। আফীফ এদুটি অভিযানের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। প্রথম অভিযানটি ছিল সুলতান ইলিয়াস শাহের বিরুদ্ধে এবং দ্বিতীয়টি ছিল ইলিয়াস শাহের পুত্র সিকান্দর শাহের বিরুদ্ধে। আফীফই একমাত্র নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি যিনি ফিরুজ শাহের দ্বিতীয় বাংলা অভিযানের কারণ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন যে, ইলিয়াস শাহের বিরুদ্ধে জয়লাভের পর (যদিও তিনি সে বিজয়ের ফলে কিছুই লাভ করেন নি) আপাতদৃষ্টিতে সন্তুষ্ট ফিরুজ শাহ প্রথম অভিযানের পর দিল্লি ফিরে এলে লখনৌতির ইলিয়াস শাহ সোনারগাঁয়ের সুলতান [[ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ|ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ]]'''-'''এর জামাতা জাফর খানকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করেন। সুলতান ফিরুজ শাহ জাফর খানকে মিত্ররূপে গ্রহণ করেন। যার ফলে [[লখনৌতি|লখনৌতি]] দখলের প্রত্যাশা পুনরুজ্জীবিত হয় এবং তিনি দ্বিতীয়বার বাংলা অভিযানের আদেশ দেন। আফীফের তারিখ''-''''-''ফিরুজশাহী থেকে আমরা এ তথ্যও পাই যে, ফিরুজ তুগলক [[একডালা|একডালা]] ও পান্ডুয়ার নতুন নামকরণ করেছিলেন যথাক্রমে আজাদপুর ও ফিরুজাবাদ। একডালা একটি বিখ্যাত দুর্গ।''' '''এখানে ফিরুজ শাহের অভিযানের সময়ে ইলিয়াস শাহ এবং [[সিকান্দর শাহ|সিকান্দর শাহ]] উভয়েই নিজেদেরকে সুরক্ষিতভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। আফীফ স্পষ্টভাবে বলেন যে, ফিরুজ তুগলক তাঁর নামানুসারে পান্ডুয়ার নতুন নামকরণ করেন ফিরুজাবাদ। কিন্তু তাঁর এ বক্তব্য সঠিক বলে মনে হয় না। কারণ, বাংলার সুলতান [[শামসুদ্দীন ফিরুজ শাহ|শামসুদ্দীন ফিরুজ শাহ]]'''-'''এর সময় থেকেই (১৩০১-১৩২২ খ্রি.), অর্থাৎ ফিরুজ শাহ তুগলকের বাংলা অভিযানের ত্রিশ বছরেরও আগে ফিরুজাবাদ নামটি মুদ্রায় দেখতে পাওয়া যায়। তবে গ্রন্থটি সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় লিখিত।  [আবদুল করিম]  
ফিরুজ শাহের দুটি অভিযানই ব্যর্থ হয়েছিল। আফীফ এদুটি অভিযানের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। প্রথম অভিযানটি ছিল সুলতান ইলিয়াস শাহের বিরুদ্ধে এবং দ্বিতীয়টি ছিল ইলিয়াস শাহের পুত্র সিকান্দর শাহের বিরুদ্ধে। আফীফই একমাত্র নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি যিনি ফিরুজ শাহের দ্বিতীয় বাংলা অভিযানের কারণ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন যে, ইলিয়াস শাহের বিরুদ্ধে জয়লাভের পর (যদিও তিনি সে বিজয়ের ফলে কিছুই লাভ করেন নি) আপাতদৃষ্টিতে সন্তুষ্ট ফিরুজ শাহ প্রথম অভিযানের পর দিল্লি ফিরে এলে লখনৌতির ইলিয়াস শাহ সোনারগাঁয়ের সুলতান [[ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ|ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ]]-এর জামাতা জাফর খানকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করেন। সুলতান ফিরুজ শাহ জাফর খানকে মিত্ররূপে গ্রহণ করেন। যার ফলে [[লখনৌতি|লখনৌতি]] দখলের প্রত্যাশা পুনরুজ্জীবিত হয় এবং তিনি দ্বিতীয়বার বাংলা অভিযানের আদেশ দেন। আফীফের তারিখ-ই-ফিরুজশাহী থেকে আমরা এ তথ্যও পাই যে, ফিরুজ তুগলক [[একডালা|একডালা]] ও পান্ডুয়ার নতুন নামকরণ করেছিলেন যথাক্রমে আজাদপুর ও ফিরুজাবাদ। একডালা একটি বিখ্যাত দুর্গ। এখানে ফিরুজ শাহের অভিযানের সময়ে ইলিয়াস শাহ এবং [[সিকান্দর শাহ|সিকান্দর শাহ]] উভয়েই নিজেদেরকে সুরক্ষিতভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। আফীফ স্পষ্টভাবে বলেন যে, ফিরুজ তুগলক তাঁর নামানুসারে পান্ডুয়ার নতুন নামকরণ করেন ফিরুজাবাদ। কিন্তু তাঁর এ বক্তব্য সঠিক বলে মনে হয় না। কারণ, বাংলার সুলতান [[শামসুদ্দীন ফিরুজ শাহ|শামসুদ্দীন ফিরুজ শাহ]]-এর সময় থেকেই (১৩০১-১৩২২ খ্রি.), অর্থাৎ ফিরুজ শাহ তুগলকের বাংলা অভিযানের ত্রিশ বছরেরও আগে ফিরুজাবাদ নামটি মুদ্রায় দেখতে পাওয়া যায়। তবে গ্রন্থটি সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় লিখিত।  [আবদুল করিম]  


'''গ্রন্থপঞ্জি'''  Shams Siraj Afif, ''Tarikh-i-Firuzshahi'', Bibliotheca Indica, 1890; Agha Mahdi Husain, ''The Tughlaq Dynasty'', Delhi 1976.
'''গ্রন্থপঞ্জি'''  Shams Siraj Afif, ''Tarikh-i-Firuzshahi'', Bibliotheca Indica, 1890; Agha Mahdi Husain, ''The Tughlaq Dynasty'', Delhi 1976.
Back to: [[Untitled Document1]]
<!-- imported from file: তারিখ-ই-ফিরুজশাহী (আফীফ).html-->


[[en:Tarikh-i-Firuzshahi1]]
[[en:Tarikh-i-Firuzshahi1]]

১০:২৮, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

তারিখ-ই-ফিরুজশাহী (আফীফ') সুলতান ফিরুজশাহ তুগলক-এর রাজত্বকালের (১৩৫১-১৩৮৮ খ্রি.) বিস্তারিত বিবরণ সম্বলিত ইতিহাস গ্রন্থ। গ্রন্থটি রচনা করেন শামস-ই-সিরাজ আফীফ। তিনি এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবারের সদস্যগণ সুলতান আলাউদ্দীন খলজীর সময় থেকেই সুলতানদের অধীনে চাকরি করতেন বলে জানা যায়। আফীফের পিতা শামস আফীফ ফিরুজ শাহের রাজত্বকালে বিভিন্ন পদে, বিশেষত বাংলা অভিযানগুলিতে সুলতানের অধীনে চাকরি করেছেন বলে জানা যায়। শামস-ই-সিরাজ আফীফ ১৩৪২ খ্রিস্টাব্দে (অন্য একটি বিবরণ অনুসারে ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দে, সম্ভবত প্রথম তারিখটি সঠিক) জন্মগ্রহণ করেন। কাজেই তিনি ফিরুজ শাহের সম্পূর্ণ রাজত্বকাল দেখেছেন এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে লেখার সুযোগ পেয়েছেন। আফীফের ইতিহাস রচনার তারিখ জানা যায় না। তৈমুরের দিল্লি আক্রমণের (১৩৯৮ খ্রি.) কয়েক বছর পর এটি লেখা হয়েছিল এবং এর বিষয়বস্ত্ত পর্যালোচনা করলেও দেখা যায় যে, গ্রন্থটি পনেরো শতকের প্রথম দশকে লেখা হয়েছিল।

ফিরুজ শাহের দুটি অভিযানই ব্যর্থ হয়েছিল। আফীফ এদুটি অভিযানের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। প্রথম অভিযানটি ছিল সুলতান ইলিয়াস শাহের বিরুদ্ধে এবং দ্বিতীয়টি ছিল ইলিয়াস শাহের পুত্র সিকান্দর শাহের বিরুদ্ধে। আফীফই একমাত্র নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি যিনি ফিরুজ শাহের দ্বিতীয় বাংলা অভিযানের কারণ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন যে, ইলিয়াস শাহের বিরুদ্ধে জয়লাভের পর (যদিও তিনি সে বিজয়ের ফলে কিছুই লাভ করেন নি) আপাতদৃষ্টিতে সন্তুষ্ট ফিরুজ শাহ প্রথম অভিযানের পর দিল্লি ফিরে এলে লখনৌতির ইলিয়াস শাহ সোনারগাঁয়ের সুলতান ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ-এর জামাতা জাফর খানকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করেন। সুলতান ফিরুজ শাহ জাফর খানকে মিত্ররূপে গ্রহণ করেন। যার ফলে লখনৌতি দখলের প্রত্যাশা পুনরুজ্জীবিত হয় এবং তিনি দ্বিতীয়বার বাংলা অভিযানের আদেশ দেন। আফীফের তারিখ-ই-ফিরুজশাহী থেকে আমরা এ তথ্যও পাই যে, ফিরুজ তুগলক একডালা ও পান্ডুয়ার নতুন নামকরণ করেছিলেন যথাক্রমে আজাদপুর ও ফিরুজাবাদ। একডালা একটি বিখ্যাত দুর্গ। এখানে ফিরুজ শাহের অভিযানের সময়ে ইলিয়াস শাহ এবং সিকান্দর শাহ উভয়েই নিজেদেরকে সুরক্ষিতভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। আফীফ স্পষ্টভাবে বলেন যে, ফিরুজ তুগলক তাঁর নামানুসারে পান্ডুয়ার নতুন নামকরণ করেন ফিরুজাবাদ। কিন্তু তাঁর এ বক্তব্য সঠিক বলে মনে হয় না। কারণ, বাংলার সুলতান শামসুদ্দীন ফিরুজ শাহ-এর সময় থেকেই (১৩০১-১৩২২ খ্রি.), অর্থাৎ ফিরুজ শাহ তুগলকের বাংলা অভিযানের ত্রিশ বছরেরও আগে ফিরুজাবাদ নামটি মুদ্রায় দেখতে পাওয়া যায়। তবে গ্রন্থটি সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় লিখিত।  [আবদুল করিম]

গ্রন্থপঞ্জি  Shams Siraj Afif, Tarikh-i-Firuzshahi, Bibliotheca Indica, 1890; Agha Mahdi Husain, The Tughlaq Dynasty, Delhi 1976.