তারা মসজিদ

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২০:৫০, ২১ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (fix: image tag)

তারা মসজিদ পুরাতন ঢাকার আরমানিটোলার আবুল খয়রাত রোডে অবস্থিত। আদি তারা মসজিদের কোনো তারিখযুক্ত শিলালিপি নেই। তবে জানা যায় যে, (সূত্রঃ এস.এম তৈফুর, ১৯৫৬) এ মসজিদের নির্মাতা মির্জা গোলাম পীরের পূর্বপুরুষ ঢাকায় এসে ‘মহল্লা আলে আবু সাইয়েদ’ বা বর্তমান আরমানিটোলায় বসবাস শুরু করেন। তারা মসজিদটি মির্জা গোলাম পীর নির্মাণ করেছিলেন বলে মসজিদটি মির্জা সাহেবের মসজিদ বলেও অভিহিত হয়ে থাকে। মির্জা গোলাম পীরের মৃত্যু হয় ১৮৬০ সালে; তাই এ মসজিদের নির্মাণকাল উনিশ শতকের প্রারম্ভে ছিল বলে প্রতীয়মান হয়ে থাকে।

তারা মসজিদ আদিতে ছিল দৈর্ঘ্যে ১০.০৬ মিটার এবং প্রস্থে ৪.০৪ মিটার। জুল্লার পূর্ব দেয়ালে ৩টি প্রবেশপথের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা করে পশ্চিম দেয়ালে ছিল তিনটি মিহরাব। কেন্দ্রীয় মিহরাব দুপার্শ্বের মিহরাবদ্বয় অপেক্ষা বড়। মসজিদের কেন্দ্রীয় গম্বুজটিও ছিল দুপার্শ্বের দুটি গম্বুজ অপেক্ষা উঁচু এবং তুলনামূলকভাবে বড় আকৃতির। কেন্দ্রীয় গম্বুজ নির্মাণে বর্গকে বৃত্তে রূপান্তরের মাধ্যম হিসেবে খিলান ভিত্তিক ‘স্কুইঞ্চ’ পদ্ধতি অনুসৃত হয়েছে।

আদি তারা মসজিদ বর্তমান তারা মসজিদের ন্যায় নকশালংকারে সমৃদ্ধ ছিল না। পশ্চাতের ভগ্ন ও নগ্ন দেয়াল তার সাক্ষ্য বহন করছে। এ মসজিদের দরজাগুলির মধ্যে দক্ষিণ দিকের তিনটি দরজাই প্রাচীন। ১৯২৬ সালে আলীজান ব্যাপারী বহু অর্থ ব্যয় করে মসজিদটির পূর্বপার্শ্বে বারান্দা সংযুক্ত করে মসজিদের আকৃতি বৃদ্ধি করেন। এতে কেবল প্রস্থের দিক বর্ধিত হয়। চারটি স্তম্ভোপরি পাঁচটি খিলানে মসজিদের সম্মুখভাগ গঠিত হয় এবং প্রস্থে ৩.৯৯ মিটার সম্প্রসারিত করায় তারা মসজিদের প্রস্থ দাঁড়ায় একেবারে দ্বিগুণ অর্থাৎ ৭.৯৮ মিটার। এ সময়ের সম্প্রসারণে মসজিদের মূল ভূমিনকশায় কোনোরূপ পরিবর্তন আনা হয়নি। তবে বিভিন্ন নকশার রঙিন চকচকে টালির সংযোজন করা হয়।

# #চিত্র:তারা মসজিদ html 88407781.png

  1.  #তারা মসজিদ,আরমানিটোলা, ঢাকা

১৯৮৭ সালে তিন গম্বুজের তারা মসজিদকে পাঁচ গম্বুজের মসজিদে রূপান্তর করা হলে মসজিদটি দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধি পায়। অবশ্য প্রস্থে কোনোরূপ পরিবর্তন করা হয় নি। বর্তমানে সম্প্রসারিত মসজিদের দৈর্ঘ্য ২১.৩৪ মিটার এবং প্রস্থ ৭.৯৮ মিটার। পাঁচ গম্বুজের মসজিদে পরিবর্তন করার প্রয়োজনে একটি মিহরাব ভেঙ্গে ফেলা হয় এবং দুটি নতুন গম্বুজ ও তিনটি নতুন মিহরাব যুক্ত করা হয়। মসজিদের জুল্লায় প্রবেশের জন্য পাঁচটি খিলানবিশিষ্ট পথ সৃষ্ট করা হয়েছে। এ খিলানগুলি বহু খাঁজবিশিষ্ট এবং চারটি অষ্টভুজাকৃতির স্তম্ভ হতে উত্থিত। মসজিদের অভ্যন্তরে ও বাইরে সম্পূর্ণরূপে মোজাইক নকশা করা। এ গাত্রালংকারে চিনামাটির প্লেট, পেয়ালা ইত্যাদির ছোট ভগ্নাংশ ও কাঁচের টুকরা ব্যবহূত হয়েছে। এ পদ্ধতিকে ‘চিনি টিকরী’ বা চিনি দানার কাজ বলা হয়। ফুলদানি, ফুলের ঝাড়, গোলাপ ফুল, এক বৃন্তে একটি ফুল, চাঁদ, তারা, নক্ষত্র ও আরবি ক্যালিগ্রাফিক লিপি মসজিদের গাত্রনকশায় বিধৃত হয়েছে। এ মসজিদের অলংকরণ জুল্লার অভ্যন্তরে ফুলদানি থেকে উত্থিত ফুলগাছ, খিলান শীর্ষে পেন্ডেন্টিভের উপর ও দেয়ালগাত্রে বিশেষ প্রাধান্য পেয়েছে। বারান্দায় গাত্রালংকারে জাপানের বিখ্যাত ‘ফুজিসান’-এর দৃশ্যসম্বলিত গ্লেস টাইল উল্লেখযোগ্য। ‘ফাসাদ’ এর কেন্দ্রে আরবি লিপি সম্বলিত সূক্ষ্ম অর্ধচন্দ্র ও তারার অলংকরণ স্থান পেয়েছে। বৃত্তাকার শ্বেত-শুভ্র গম্বুজগুলিতে বসানো হয়েছে নীল রঙের অসংখ্য তারা বা নক্ষত্র। সমগ্র নকশায় সর্বাধিক প্রাধান্য পেয়েছে তারার ‘মোটিফ’; তাই মসজিদটি তারা মসজিদ নামে খ্যাত।  [আয়শা বেগম]