তজুমদ্দিন উপজেলা

তজুমদ্দিন উপজেলা (ভোলা জেলা)  আয়তন: ৫১২.৯১ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°২১´ থেকে ২২°৩৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৪৭´ থেকে  ৯১°০১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে দৌলতখান উপজেলা, দক্ষিণে মেঘনা নদী, লালমোহন ও মনপুরা উপজেলা, পূর্বে মেঘনা নদী, হাতিয়া উপজেলা, পশ্চিমে বোরহানউদ্দিন উপজেলা।

জনসংখ্যা ১২৬৯৪০; পুরুষ ৬৫১৩৯, মহিলা ৬১৮০১। মুসলিম ১১৮৯৩৪, হিন্দু ৮০০০, বৌদ্ধ ১, খ্রিস্টান ৪ এবং অন্যান্য ১।

জলাশয় শাহবাজপুর চ্যানেল, মেঘনা ও বেতুয়া নদী এবং কোড়ালিয়ার বিল উল্লেখযোগ্য। এ উপজেলার প্রায় অর্ধেক অংশ জুড়ে শাহবাজপুর চ্যানেল অবস্থিত।

প্রশাসন তজমুদ্দিন থানা গঠিত হয় ২৮ আগস্ট ১৯২৮ এবং উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৪ মার্চ ১৯৮৩।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৩৬ ৭৫ ২০৯৪১ ১০৫৯৯৯ ২৪৭ ৪৪.২ ৪২.৭
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২০.৩৯ ২০৯৪১ ১০২৭ ৪৪.২
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
চাঁচড়া ৩৮ ১১০৮৮ ৬৩৭৬ ৬০৭৭ ৩৫.৪
চাঁদপুর ৫৭ ৯১৬৭ ২২০৫৫ ২০৭৫২ ৪১.৮
বড় মালঞ্চ ১৯ ১০৭১৫ ৪০৪৫ ৩৭৯৮ ৩৭.৭
শম্ভুপুর ৮৫ ৮৮৬৮ ১৭৪৪১ ১৭৩৩৯ ৪৪.৬
সোনাপুর ৭৬ ২০০৭৯ ১৫২২২ ১৩৮৩৫ ৪৭.৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। মুক্তিবাহিনীর সাথে পাকবাহিনীর বিভিন্ন লড়াইয়ে ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

বিস্তারিত দেখুন তজুমদ্দিন উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ১৫৬, মন্দির ৩০, মাযার ৪, মঠ ৫।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  গড় হার ৪২.৯%; পুরুষ ৪৪.৬%, মহিলা ৪১.১%। কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৭, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০৪, কিন্ডার গার্টেন ২, মাদ্রাসা ৭৭। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: তজুমদ্দিন ডিগ্রি কলেজ (১৯৮৯), চাঁদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫২), ফজিলাতুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয় (১৯৭২), শম্ভুপুর হাইস্কুল, চাঁদপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৪৩), দেবীপুর মাদ্রাসা (১৯১০)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ১০, সিনেমা হল ২, খেলার মাঠ ৭, এতিমখানা ৯, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ১, সমবায় সমিতি ৩০১, মহিলা সংগঠন ৬২।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৪.১৫%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৯৭%, শিল্প ০.২১%, ব্যবসা ৯.০৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৬৬%, চাকরি ৪.০৩%, নির্মাণ ০.৫৭%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২২% এবং অন্যান্য ৫.৭৭%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৮.৪৩%, ভূমিহীন ৪১.৫৭%। শহরে ৫৮.৮৩% এবং গ্রামে ৫৮.৩৬% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, ডাল, সরিষা, আখ, চিনাবাদাম।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি স্থানীয় কয়েক ধরনের ধান ও সবজি।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপে, জলপাই, নারিকেল, বাতাবি লেবু, সুপারী।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৭, গবাদিপশু ২১, হাঁস-মুরগি ৪১।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৭৬.৯১ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৯.০৩, কাঁচারাস্তা ১৫৮.৯৭ কিমি; নৌপথ ৪১ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ফ্লাওয়ার মিল, রাইস মিল, স’মিল, আইস ফ্যাক্টরি।

কুটিরশিল্প পাটশিল্প, বাঁশের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা শশীগঞ্জ হাট, খাসের হাট (উত্তর), খাসের হাট (দক্ষিণ), ইয়াসিনগঞ্জ হাট, ছোট ডাউরী হাট এবং ভুবনঠাকুরের মেলা ও শম্ভুপুর মেলা।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য চিনাবাদাম, নারিকেল, সুপারি, আলু।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৪.০% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.৭%, ট্যাপ ০.২% এবং অন্যান্য ৩.১%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭১.৮% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৫.২% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩.০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ১, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ২, পশু হাসপাতাল ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে এ উপজেলায় প্রায় বাইশ হাজার লোক প্রাণ হারায় এবং সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এছাড়াও ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল বন্যায় এ অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটে।

এনজিও ব্র্যাক, আশা।  [বিধুভূষণ রায়]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; তজমুদ্দিন উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।