ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ

ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ  একটি ঐতিহ্যবাহী আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯৬০ সালে পাকিস্তান সরকার ইংল্যান্ডের বিখ্যাত পাবলিক স্কুলের আদলে ঢাকার মোহাম্মদপুরে প্রায় ৫০ একর জায়গার ওপর ‘রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনার প্রাথমিক দায়িত্ব ছিল পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। ১৯৬২ সালে কেন্দ্রীয় সরকার স্কুলটি প্রাদেশিক সরকারের কাছে হস্তান্তর করে এবং পরিচালনার জন্য একটি বোর্ড গঠন করে। তখন থেকেই বিদ্যালয়টি একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছে। ১৯৬৭ সালে কেন্দ্রীয় সরকার পুনরায় বিদ্যালয়টির দায়িত্বভার গ্রহণ করে এবং এটিকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে উন্নীত করেন। এর নতুন নামকরণ করা হয় ‘ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ’। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালে স্কুলটি পরিচালনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে সভাপতি করে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ‘বোর্ড অব গভর্নরস’ গঠন করা হয়। বর্তমানে কলেজটি উক্ত বোর্ড অব গভর্নরস দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।

ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ

প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ৩টি শিক্ষাস্তর রয়েছে: প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক। তৃতীয় থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্ররা বাংলা-ইংরেজি উভয় মাধ্যমে পাঠ নিয়ে থাকে। কলেজে প্রভাতি ও দিবা দুটি শিফট চালু আছে। বর্তমানে কলেজের মোট ছাত্রসংখ্যা ৩৮০০ এবং শিক্ষকশিক্ষিকার সংখ্যা ১৭০।

২টি একাডেমিক ভবন, ১টি প্রশাসনিক ভবন, ৬টি ছাত্রাবাস, ৫টি শিক্ষকদের আবাসিক ভবন, ৩টি স্টাফ কোয়াটার, মসজিদ, হাসপাতাল, অডিটোরিয়াম, গার্ডিয়ান শেডসহ কলেজে মোট ২৫টি ভবন এবং ১২টি খেলার মাঠ রয়েছে। প্রায় ২০,০০০ পুস্তক সম্বলিত একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার, ২টি আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব এবং ৬টি বিজ্ঞান গবেষণাগার রয়েছে। ‘হাউজ’ নামে পরিচিত ছাত্রাবাসগুলিতে ৮০০ শিক্ষার্থী থাকতে পারে। ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের একাডেমিক রেজাল্ট অত্যান্ত ভাল। ভাল ফলাফলের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা কলেজটিকে ২০০৮ সালের ‘শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’ সম্মাননা দিয়েছে।

আবাসিক ছাত্রদের প্রাতঃকালীন শরীরচর্চা ও বৈকালিক  খেলাধুলা বাধ্যতামূলক। প্রত্যেক বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত হয় সপ্তাহব্যাপী বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছর বিজ্ঞান মেলা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও ভাষা প্রতিযোগ উৎসবের আয়োজন করে। এ উপলক্ষে প্রতিবছর কলেজ বার্ষিকী, বিজ্ঞান স্যুভেনির, বিতর্ক স্যুভেনির প্রকাশ করে। এছাড়া কলেজ আন্তঃহাউজ মঞ্চ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এতে হামদ-নাত, আযান-কিরাত, উপস্থিত বক্তৃতা, বিতর্ক, কুইজ, আবৃত্তি, অভিনয়, কৌতুক, গল্প বলা, নাট্যানুষ্ঠান, সঙ্গীতানুষ্ঠান, চিত্রাঙ্কন, মাটির কাজ, কাবিং, স্কাউটিং, নাট্যচর্চা, বিজ্ঞান ক্লাব, ডিবেটিং ক্লাব, ব্যান্ড শিক্ষা, জুনিয়র ক্যাডেট কোর প্রভৃতি সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে হাউজের ছাত্ররা একটি দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ করে।  [মোঃ কামরুজ্জামান খান]