ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট)  প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিষয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা শহর থেকে ৪০ কিমি উত্তরে গাজীপুর জেলার ঢাকা-জয়দেবপুর-শিমুলতলী রোডের পাশে ২০.২৯ একর জমির উপর এটি প্রতিষ্ঠিত। ১৯৮০ সালে ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ‘কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামে এর যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীকালে এর নাম পাল্টে রাখা হয় ‘ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ’। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৬ সালে ‘বাংলাদেশ ইনস্টিউট অব টেকনোলজি (বিআইটি)’ নামে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়। প্রকৌশল ও প্রযুক্তির বিভিন্নক্ষেত্রে অগ্রসরমান বিশ্বের সাথে সঙ্গতি রক্ষা ও সমতা অর্জন, জাতীয় পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা, আধুনিক জ্ঞানচর্চা ও পঠন-পাঠনের সুযোগ সৃষ্টি এবং সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০০৩ সালে পূর্বের বিআইটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করা হয় এবং নামকরণ করা হয় ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট)।

ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (একাডেমিক ভবন)

ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে বিএসসি ইঞ্জনিয়ারিং এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু আছে। চার বছর মেয়াদি স্নাতক কোর্স বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং-এ প্রতি বছরে ২টি সেমিস্টারে পাঠদান চলে। দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, পেশাগত পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে কোর্স কারিকুলাম যুগপোযোগী এবং বোধগম্য করার জন্য সিনিয়র তিন জন শিক্ষকের সমন্বয়ে গঠিত প্রত্যেক বিভাগে আছে একটি মনিটরিং কমিটি, যার প্রধান হলেন বিভাগের চেয়ারম্যান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাডেমিক বা ব্যক্তিগত সমস্যার পরামর্শক হিসেবে প্রত্যেক বিভাগে একজন সহকারী অধ্যাপক পদমর্যাদা সম্পন্ন শিক্ষক ছাত্র উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩টি অনুষদ রয়েছে: সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ম্যাকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। এ ৩টি অনুষদের অধীন ৯টি বিভাগ রয়েছে। এগুলি হলো: সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত, রসায়ন, পদার্থ ও মানবিক। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা পছন্দের বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। অন-লাইনে ভর্তি পরীক্ষার ফরম পূরণ করা যায়। বিভাগগুলিতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এবং এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু আছে। স্নাতকোত্তর শেষে শিক্ষার্থীদের এম.ফিল ও পিএইচ.ডি গবেষণার সুযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয়ভাবে এবং অনুষদভিত্তিক বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে। ডুয়েট জার্নাল নামে একটি ষান্মাসিক জার্নাল নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়।

একাডেমিক ভবনের চতুর্থ তলায় রয়েছে একটি কম্পিউটার সেন্টার। এখানে শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণের সুযোগ রয়েছে। লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক দ্বারা কম্পিউটারগুলি সংযুক্ত। রয়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা। কম্পিউটার সেন্টার হার্ডওয়ার ও সফটওয়ার সম্পর্কিত বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি কোর্স চালু করেছে। এছাড়া কম্পিউটার সেন্টার ইনফরমেশন টেকনোলজি সম্পর্কিত সেমিনারের আয়োজন করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থা সিন্ডিকেট। সবধরণের স্ট্যাট্যুট প্রণয়ন ও সংশোধন কাজ হয় সিনেটে। সিনেট বার্ষিক বাজেট অনুমোদন, শিক্ষা কার্যক্রমের সার্বিক পর্যালোচনা এবং উপাচার্য নিয়োগ দানের জন্য প্যানেল নির্বাচন করেন। ভাইস-চ্যান্সেলরসহ মোট সিন্ডিকেট সদস্য ১৫। এছাড়া ৪০ সদস্যবিশিষ্ট একাডেমিক কমিটি, ৬ সদস্যবিশিষ্ট অর্থ কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সাথে যুক্ত। নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হন রাষ্ট্রপতি।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮৫৮ এবং শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ১২৭। আবাসিক হলের সংখ্যা ৫টি। এর মধ্যে ছেলেদের ৪টি এবং মেয়েদের ১টি। হলগুলি হলো: ড. ফজলুর রহমান খান হল, ড. কুদরত-ই-খুদা হল, কাজী নজরুল ইসলাম হল, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হল এবং মাদাম কুরি হল। হলগুলিতে মোট ৮৯৬ জন শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয়  গ্রন্থাগারটি বেশ সমৃদ্ধ। এখানে অনেক দুষ্প্রাপ্য বই, জার্নাল ও অডিওভিজুয়াল সামগ্রী রয়েছে। গ্রন্থাগারের বই এবং জার্নালের সংখ্যা প্রায় ২৫,০০০। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারসহ প্রত্যেক বিভাগে ইন্টারনেট সুবিধা রয়েছে। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পাশাপাশি প্রত্যেক বিভাগে আছে আলাদা ল্যাব ও সেমিনার হল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রম যেমন  খেলাধুলা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত। এছাড়া শিক্ষার্থীদের পরিচালনায় বিভিন্ন সংগঠন রয়েছে। এগুলি হলো: ডুয়েট কম্পিউটার সোসাইটি, সেন্ট্রাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, অ্যাসোসিয়েশন ফর ইফরমেশন অ্যান্ড কমিউকেশন টেকনোলজি, কম্পিউটার ক্লাব, ডিবেটিং সোসাইটি, গ্রীণ ফর পিস, ফটোগ্রাফি অ্যান্ড আর্ট কালচার এসোসিয়েশন, ডুয়েট এক্সপ্লোরার ক্লাব প্রভৃতি।  [মোঃ আশিক ইকবাল]