ডয়লী, চার্লস

ডয়লী, চার্লস (১৭৮১-১৮৪৫)  চিত্রকর। ভারতবর্ষে ছাপা ছবি নিয়ে যেসব সিভিলিয়ান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন তার মধ্যে ডয়লী অন্যতম। তাঁর চিত্রকর্মের প্রধান বিষয়বস্ত্ত ছিল ‘ভারতবর্ষ’।

কাটরা পাকুরতলী, ঢাকা: চার্লস ডয়লীর অাঁকা ছবি

ভারতে ১৭৮১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরে ডয়লীর জন্ম। তার পিতা ব্যারন স্যার জন হ্যাডলি ডয়লী ছিলেন মুর্শিদাবাদের নওয়াব বাবর আলীর দরবারে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রেসিডেন্ট। ডয়লী ১৭৮৫ সালে পরিবারের সঙ্গে ইংল্যান্ডে ফিরে যান এবং সেখানেই শিক্ষা লাভ করেন। ১৭৯৮ সালে ভারতে ফিরে তিনি কলকাতার কোর্ট অব আপিলের রেজিষ্ট্রারের সহকারী হিসেবে যোগদান করেন। ১৮০৩ সালে তিনি গভর্নর জেনারেলের অফিসে ‘কিপার অব দি রেকর্ডস’ হিসেবে নিযুক্ত হন।

১৮০৮ সালে তিনি প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদ লাভ করেন। এ সময়ে তাঁকে ঢাকার কালেক্টর হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। পরবর্তিতে তিনি কলকাতার সরকারি ও নগর শুল্কের কালেক্টর (১৮১৮), বিহারের আফিম এজেন্ট (১৮২১), পাটনার কমার্শিয়াল রেসিডেন্ট (১৮৩১) এবং সবশেষে বোর্ড অব কাস্টমস, সল্ট, অপিয়াম অ্যান্ড দি মেরিন বোর্ডের সিনিয়র মেম্বার (১৮৩৩) হিসেবে কাজ করেছেন। চল্লিশ বছর কোম্পানির চাকরি করার পর ভগ্নস্বাস্থ্যের জন্য বাধ্য হয়ে ১৮৩৮ সালে ডয়লী ভারতবর্ষ ত্যাগ করেন। পিতার মৃত্যুর পর ডয়লী ব্যারন হিসেবে অভিষিক্ত হন। নামের সঙ্গে ‘স্যার’ উপাধিও যুক্ত হয়। বাকি জীবনের অধিকাংশ সময়ই তিনি কাটিয়েছেন ইটালিতে এবং সেখানেই ১৮৪৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর অপুত্রক অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

ডয়লী ১৮০৮ থেকে ১৮১১ সাল পর্যন্ত ঢাকার কালেক্টর ছিলেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন ধরনের, বিশেষকরে মুগল ধ্বংসাবশেষসমূহের ছবি এuঁকছেন। ঢাকা বিষয়ক ড্রইংগুলি তিনি ফোলিয়ো আকারে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেন। ১৮২৩ সালে লন্ডন থেকে ডয়লীর ড্রইংগুলি এনগ্রেভিং করে ফোলিও আকারে প্রকাশিত হতে থাকে। প্রথম ফোলিওতে আছে চারটি, দ্বিতীয় এবং তৃতীয়তে আছে চার ও পাঁচটি এবং চতুর্থ ফোলিওতে আছে পাঁচটি ড্রইং। প্রতিটি ফোলিওর সঙ্গে ঢাকার সংক্ষিপ্ত একটি ঐতিহাসিক বিবরণও থাকত। এ বিবরণ লিখেছেন জেমস অ্যাটকিন্সন। আর খোদাই করেছিলেন ল্যান্ডসিয়ার। ফোলিওগুলি অ্যান্টিকুইটিজ অব ঢাকা (Antiquities of Dacca) নামে পরিচিত। এর সঙ্গে আছে সাম অ্যাকাউন্ট অব দি সিটি অব ঢাকা (Some Account of the City of Dhaka) নামে ঢাকার ইতিহাস সম্পর্কিত বিবরণ। একারণেই অ্যান্টিকুইটিজকে অনেক সময় বই হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এটি ঢাকার ইতিহাস রচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এ ড্রইংগুলি একটি বিশেষ সময়ে ঢাকার আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক দুর্দশার সাক্ষী হিসেবে গণ্য। [মুনতাসির মামুন]