ঠাকুর, সত্যেন্দ্রনাথ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:Banglapedia]]
[[Category:Banglapedia]]
'''ঠাকুর'''''', ''''''সত্যেন্দ্রনাথ '''(১৮৪২-১৯২৩)  লেখক, সাহিত্যিক ও প্রথম ভারতীয় সিভিলিয়ান। ১৮৪২ সালের ১ জুন কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে তাঁর জন্ম। তিনি ছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বিতীয় পুত্র এবং রবীন্দ্রনাথের অগ্রজ।
'''ঠাকুর, সত্যেন্দ্রনাথ''' (১৮৪২-১৯২৩)  লেখক, সাহিত্যিক ও প্রথম ভারতীয় সিভিলিয়ান। ১৮৪২ সালের ১ জুন কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে তাঁর জন্ম। তিনি ছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বিতীয় পুত্র এবং রবীন্দ্রনাথের অগ্রজ।


সত্যেন্দ্রনাথ নিজগৃহে ইংরেজি ও সংস্কৃত ভাষা শেখেন। ১৮৫৭ সালে তিনি হিন্দু স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করে প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যয়ন করেন। ১৮৫৯ সালে তিনি জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন এবং সুরেন্দ্রনাথ ও ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী নামে দুই কৃতী সন্তানের জনক হন।
সত্যেন্দ্রনাথ নিজগৃহে ইংরেজি ও সংস্কৃত ভাষা শেখেন। ১৮৫৭ সালে তিনি হিন্দু স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করে প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যয়ন করেন। ১৮৫৯ সালে তিনি জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন এবং সুরেন্দ্রনাথ ও ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী নামে দুই কৃতী সন্তানের জনক হন।
৬ নং লাইন: ৬ নং লাইন:
কলেজ জীবনেই সত্যেন্দ্রনাথ ব্রাহ্মসমাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং ১৮৬১ সালে কেশবচন্দ্রের সঙ্গে কৃষ্ণনগরে ব্রাহ্মধর্ম প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৮৬২ সালে তিনি সস্ত্রীক লন্ডন যান এবং ১৮৬৪ সালে আইসিএস হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৮৬৫ সালে আহমেদাবাদের অ্যাসিস্ট্যান্ট কালেক্টর ও ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তিনি কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। তাঁর পেশাগত জীবনের অধিকাংশ সময় কাটে পশ্চিম ভারতে (সাবেক বোম্বাই প্রদেশে) এবং শেষ পর্যায়ে সাতারা জেলার সেসন জজের পদ থেকে অবসর নিয়ে তিনি কলকাতায় প্রত্যাবর্তন করেন।
কলেজ জীবনেই সত্যেন্দ্রনাথ ব্রাহ্মসমাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং ১৮৬১ সালে কেশবচন্দ্রের সঙ্গে কৃষ্ণনগরে ব্রাহ্মধর্ম প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৮৬২ সালে তিনি সস্ত্রীক লন্ডন যান এবং ১৮৬৪ সালে আইসিএস হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৮৬৫ সালে আহমেদাবাদের অ্যাসিস্ট্যান্ট কালেক্টর ও ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তিনি কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। তাঁর পেশাগত জীবনের অধিকাংশ সময় কাটে পশ্চিম ভারতে (সাবেক বোম্বাই প্রদেশে) এবং শেষ পর্যায়ে সাতারা জেলার সেসন জজের পদ থেকে অবসর নিয়ে তিনি কলকাতায় প্রত্যাবর্তন করেন।


দেশবাসীর মধ্যে দেশাত্মবোধ ও স্বদেশানুরাগ উদ্দীপ্ত করার লক্ষ্যে সত্যেন্দ্রনাথ ১৮৬৭ সালের ১২ এপ্রিল চৈত্র সংক্রান্তির দিন কলকাতার বেলগাছিয়ায়  [[হিন্দু মেলা|হিন্দু মেলা]]র প্রবর্তন করেন। হিন্দুমেলার দ্বিতীয় অধিবেশনে জাতীয় ভাবধারায় সত্যেন্দ্রনাথ রচিত  [[১০২৭০০|দেশাত্মবোধক গান]] ‘মিলে সবে ভারতসন্তান’ বহুল প্রশংসিত হয়। ১৮৯৭ সালে তিনি নাটোরে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনের দশম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। ১৯০০ ও ১৯০১ সালে তিনি  [[১০৩৫১১|বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ]]এর সভাপতি নিযুক্ত হন। ১৯০৬ সালে আদি ব্রাহ্মসমাজের আচার্য ও ১৯০৭ সালে জেষ্ঠ্য ভ্রাতা দ্বিজেন্দ্রনাথের সঙ্গে আচার্য ও সভাপতি নির্বাচিত হন।  
দেশবাসীর মধ্যে দেশাত্মবোধ ও স্বদেশানুরাগ উদ্দীপ্ত করার লক্ষ্যে সত্যেন্দ্রনাথ ১৮৬৭ সালের ১২ এপ্রিল চৈত্র সংক্রান্তির দিন কলকাতার বেলগাছিয়ায়  [[হিন্দু মেলা|হিন্দু মেলা]]র প্রবর্তন করেন। হিন্দুমেলার দ্বিতীয় অধিবেশনে জাতীয় ভাবধারায় সত্যেন্দ্রনাথ রচিত [[দেশাত্মবোধক গান|দেশাত্মবোধক গান]] ‘মিলে সবে ভারতসন্তান’ বহুল প্রশংসিত হয়। ১৮৯৭ সালে তিনি নাটোরে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনের দশম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। ১৯০০ ও ১৯০১ সালে তিনি  [[বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ|বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ]]এর সভাপতি নিযুক্ত হন। ১৯০৬ সালে আদি ব্রাহ্মসমাজের আচার্য ও ১৯০৭ সালে জেষ্ঠ্য ভ্রাতা দ্বিজেন্দ্রনাথের সঙ্গে আচার্য ও সভাপতি নির্বাচিত হন।  


সত্যেন্দ্রনাথ দেশের সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি স্ত্রীস্বাধীনতায় বিশ্বাস করতেন। এই চেতনা থেকে তিনি তাঁর পত্নী জ্ঞানদানন্দিনীকে বিলেতে নিয়ে পাশ্চাত্য মহিলাদের আদর্শে গড়ে তোলেন। তাঁর সহযোগিতায় জ্ঞানদানন্দিনী গৃহে  পর্দাপ্রথা ভাঙতে সক্ষম হন এবং ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে সর্বপ্রথম বড়লাটের আমন্ত্রণে গভর্নমেন্ট হাউসে উপস্থিত হন।  
সত্যেন্দ্রনাথ দেশের সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি স্ত্রীস্বাধীনতায় বিশ্বাস করতেন। এই চেতনা থেকে তিনি তাঁর পত্নী জ্ঞানদানন্দিনীকে বিলেতে নিয়ে পাশ্চাত্য মহিলাদের আদর্শে গড়ে তোলেন। তাঁর সহযোগিতায় জ্ঞানদানন্দিনী গৃহে  পর্দাপ্রথা ভাঙতে সক্ষম হন এবং ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে সর্বপ্রথম বড়লাটের আমন্ত্রণে গভর্নমেন্ট হাউসে উপস্থিত হন।  


সত্যেন্দ্রনাথ নয়টি বাংলা ও তিনটি ইংরেজি গ্রন্থ রচনা করেন। সে সবের মধ্যে সুশীলা ও বীরসিংহ নাটক (১৮৬৭), বোম্বাই চিত্র (১৮৮৮), নবরত্নমালা, স্ত্রীস্বাধীনতা, বৌদ্ধধর্ম (১৯০১), আমার বাল্যকথা ও বোম্বাই প্রয়াস (১৯১৫), ভারতবর্ষীয় ইংরেজ (১৯০৮), ''Raja Rammohan Roy'' ইত্যাদি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করে। এছাড়াও তাঁর কৃত তিলকের ভগবদ্গীতাভাষ্য,  [[১০১০১০|কালিদাস]]এর মেঘদূত এবং তুকারামের অভঙ্গের অনুবাদ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তিনি বেশকিছু  [[১০৪২৬৪|ব্রহ্মসঙ্গীত]] ও দেশাত্মবোধক গানও রচনা করেন এবং কিছুকাল  [[১০২৩৪৬|তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা]] সম্পাদনা করেন। ১৯২৩ সালের ৯ জানুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়।  [সমবারু চন্দ্র মহন্ত]
সত্যেন্দ্রনাথ নয়টি বাংলা ও তিনটি ইংরেজি গ্রন্থ রচনা করেন। সে সবের মধ্যে সুশীলা ও বীরসিংহ নাটক (১৮৬৭), বোম্বাই চিত্র (১৮৮৮), নবরত্নমালা, স্ত্রীস্বাধীনতা, বৌদ্ধধর্ম (১৯০১), আমার বাল্যকথা ও বোম্বাই প্রয়াস (১৯১৫), ভারতবর্ষীয় ইংরেজ (১৯০৮), ''Raja Rammohan Roy'' ইত্যাদি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করে। এছাড়াও তাঁর কৃত তিলকের ভগবদ্গীতাভাষ্য,  [[কালিদাস|কালিদাস]]এর মেঘদূত এবং তুকারামের অভঙ্গের অনুবাদ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তিনি বেশকিছু  [[ব্রহ্ম সঙ্গীত]|ব্রহ্ম সঙ্গীত]] ও দেশাত্মবোধক গানও রচনা করেন এবং কিছুকাল  [[তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা|তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা]] সম্পাদনা করেন। ১৯২৩ সালের ৯ জানুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়।  [সমবারু চন্দ্র মহন্ত]
 
<!-- imported from file: ঠাকুর, সত্যেন্দ্রনাথ.html-->


[[en:Tagore, Satyendranath]]
[[en:Tagore, Satyendranath]]

১০:৪৫, ২২ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

ঠাকুর, সত্যেন্দ্রনাথ (১৮৪২-১৯২৩)  লেখক, সাহিত্যিক ও প্রথম ভারতীয় সিভিলিয়ান। ১৮৪২ সালের ১ জুন কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে তাঁর জন্ম। তিনি ছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বিতীয় পুত্র এবং রবীন্দ্রনাথের অগ্রজ।

সত্যেন্দ্রনাথ নিজগৃহে ইংরেজি ও সংস্কৃত ভাষা শেখেন। ১৮৫৭ সালে তিনি হিন্দু স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করে প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যয়ন করেন। ১৮৫৯ সালে তিনি জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন এবং সুরেন্দ্রনাথ ও ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী নামে দুই কৃতী সন্তানের জনক হন।

কলেজ জীবনেই সত্যেন্দ্রনাথ ব্রাহ্মসমাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং ১৮৬১ সালে কেশবচন্দ্রের সঙ্গে কৃষ্ণনগরে ব্রাহ্মধর্ম প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৮৬২ সালে তিনি সস্ত্রীক লন্ডন যান এবং ১৮৬৪ সালে আইসিএস হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৮৬৫ সালে আহমেদাবাদের অ্যাসিস্ট্যান্ট কালেক্টর ও ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তিনি কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। তাঁর পেশাগত জীবনের অধিকাংশ সময় কাটে পশ্চিম ভারতে (সাবেক বোম্বাই প্রদেশে) এবং শেষ পর্যায়ে সাতারা জেলার সেসন জজের পদ থেকে অবসর নিয়ে তিনি কলকাতায় প্রত্যাবর্তন করেন।

দেশবাসীর মধ্যে দেশাত্মবোধ ও স্বদেশানুরাগ উদ্দীপ্ত করার লক্ষ্যে সত্যেন্দ্রনাথ ১৮৬৭ সালের ১২ এপ্রিল চৈত্র সংক্রান্তির দিন কলকাতার বেলগাছিয়ায়  হিন্দু মেলার প্রবর্তন করেন। হিন্দুমেলার দ্বিতীয় অধিবেশনে জাতীয় ভাবধারায় সত্যেন্দ্রনাথ রচিত দেশাত্মবোধক গান ‘মিলে সবে ভারতসন্তান’ বহুল প্রশংসিত হয়। ১৮৯৭ সালে তিনি নাটোরে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনের দশম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। ১৯০০ ও ১৯০১ সালে তিনি  বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদএর সভাপতি নিযুক্ত হন। ১৯০৬ সালে আদি ব্রাহ্মসমাজের আচার্য ও ১৯০৭ সালে জেষ্ঠ্য ভ্রাতা দ্বিজেন্দ্রনাথের সঙ্গে আচার্য ও সভাপতি নির্বাচিত হন।

সত্যেন্দ্রনাথ দেশের সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি স্ত্রীস্বাধীনতায় বিশ্বাস করতেন। এই চেতনা থেকে তিনি তাঁর পত্নী জ্ঞানদানন্দিনীকে বিলেতে নিয়ে পাশ্চাত্য মহিলাদের আদর্শে গড়ে তোলেন। তাঁর সহযোগিতায় জ্ঞানদানন্দিনী গৃহে  পর্দাপ্রথা ভাঙতে সক্ষম হন এবং ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে সর্বপ্রথম বড়লাটের আমন্ত্রণে গভর্নমেন্ট হাউসে উপস্থিত হন।

সত্যেন্দ্রনাথ নয়টি বাংলা ও তিনটি ইংরেজি গ্রন্থ রচনা করেন। সে সবের মধ্যে সুশীলা ও বীরসিংহ নাটক (১৮৬৭), বোম্বাই চিত্র (১৮৮৮), নবরত্নমালা, স্ত্রীস্বাধীনতা, বৌদ্ধধর্ম (১৯০১), আমার বাল্যকথা ও বোম্বাই প্রয়াস (১৯১৫), ভারতবর্ষীয় ইংরেজ (১৯০৮), Raja Rammohan Roy ইত্যাদি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করে। এছাড়াও তাঁর কৃত তিলকের ভগবদ্গীতাভাষ্য,  কালিদাসএর মেঘদূত এবং তুকারামের অভঙ্গের অনুবাদ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তিনি বেশকিছু  [[ব্রহ্ম সঙ্গীত]|ব্রহ্ম সঙ্গীত]] ও দেশাত্মবোধক গানও রচনা করেন এবং কিছুকাল  তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ১৯২৩ সালের ৯ জানুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়।  [সমবারু চন্দ্র মহন্ত]