টেবিল টেনিস

টেবিল টেনিস  অন্য নাম পিংপং বা গোসিমা (টেবিল টেনিস খেলার বিশেষ সরঞ্জাম সরবরাহকারী ব্যবসায়ীদের দেওয়া নাম)। ৯ ফুট লম্বা, ৫ ফুট চওড়া ও ২.৫ ফুট উঁচু টেবিলে খেলা হয়। এ খেলায় ব্যবহূত সেলুলয়েড বলের ব্যাস দেড় ইঞ্চি ও ওজন ১/১০ আউন্স, র‌্যাকেট ৩ ইঞ্চি হাতল এবং তার সঙ্গে ৩.২৫ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের গোলাকার অংশ জোড়ানো কাঠের বৈঠার মতো। টেবিলের উপর আড়াআড়িভাবে ৬ ইঞ্চি উঁচু একটি জাল খাটিয়ে তাকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। সম্ভবত উনিশ শতকে প্রচলিত এ খেলাটি সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডে জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯০৫-১৯১০ সালের মধ্যে ইউরোপের অনেকগুলি দেশে টেবিল টেনিস খেলা ছড়িয়ে পড়ে। পরবতীকালে এশিয়ার চীন, জাপান, কোরিয়াসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই এ খেলা যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯২৬ সালের জানুয়ারি মাসে জার্মানিতে ইন্টারন্যাশনাল টেবিল টেনিস ফেডারেশন (ITTF) গঠিত হয়। ১৯২৮ সালে বিশ্ব টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অলিম্পিকেও টেবিল টেনিস অন্তর্ভুক্ত হয়।

বাংলাদেশে টেবিল টেনিস সামগ্রিকভাবে জনপ্রিয় খেলা হিসেবে সুপরিচিত না হলেও দেশের স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এ খেলা অত্যন্ত জনপ্রিয়। কম জায়গার প্রয়োজন হয় বলে এটি পারিবারিক খেলা হিসেবেও বেশ সমাদৃত। মাত্র দুইজন খেলোয়াড় এবং একটি খেলার টেবিল, ব্যাট, বল ও নেট হলেই এ খেলা শুরু করা যায়। বিশ শতকের পঞ্চাশের দশক থেকে বাংলাদেশে টেবিল টেনিস খেলা হলেও তখন তার পরিসর ছিল খুবই সীমিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে মাঝে-মধ্যে দু-একটা টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হতো। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্তভাবে অনুষ্ঠিত টেবিল টেনিস খেলাকে সংগঠিত করার উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালে  গঠিত হয় বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশন। একই বছর এটি এশিয়ান ও ওয়ার্ল্ড টেবিল টেনিস ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত হয়।

ফুটবল ও ক্রিকেটের পরই সর্বাধিকসংখ্যক জেলা দল টেবিল টেনিস জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করে। ১৯৯৯ সালে ৩৬টি জেলা দল জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করে। ফেডারেশনের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ, মহানগরী প্রিমিয়ার ডিভিশন, প্রথম ডিভিশন ও মহিলা ডিভিশনের ক্লাব লীগ, জাতীয় স্কুল প্রতিযোগিতা, বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতা, আমন্ত্রণমূলক প্রতিযোগিতা, কয়েকটি প্রাইজ মানি প্রতিযোগিতা প্রভৃতি। ফেডারেশন ছাড়াও কয়েকটি বেসরকারি সংগঠন ব্যাপক আকারের টেবিল টেনিস টুর্নামেন্ট আয়োজন করে। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, স্বামীবাগ টেবিল টেনিস সংস্থা এবং  ঢাকা ক্লাব বড় ধরনের টেবিল টেনিস টুর্নামেন্ট আয়োজন করে থাকে।

টেবিল টেনিসে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে বেশ সাফল্যও অর্জন করেছে। ১৯৯৭ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম সার্ক ও আসিয়ান দেশসমূহের ১২টি দেশের মধ্যে জুনিয়র প্রতিযোগিতায় বালক দলগত বিভাগে তৃতীয় স্থান অধিকার করে। ১৯৯৩, ১৯৯৫ ও ১৯৯৭ সালের সাফ গেমসে পুরুষ দলগত বিভাগে ব্রোঞ্জ পদক লাভ করে। ১৯৮৩ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান জুনিয়র্স চ্যাম্পিয়নশিপে একক বিভাগে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে। ১৯৯৭ সালে সাফ গেমস পুরুষ একক বিভাগে ব্রোঞ্জ পদক লাভ করে। এছাড়া ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সাফল্যের সঙ্গে টেবিল টেনিস এশিয়া কাপ টুর্নামেন্টের আয়োজন করে।

প্রিমিয়ার ডিভিশনে অংশগ্রহণকারী ক্লাবসমূহের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ বিমান, আরমানিটোলা জে.এস ওয়ারী ক্লাব, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, ইন্টার স্পোর্টস, স্বামীবাগ বয়েজ, এজাক্স, ইঞ্জিনিয়ার্স ক্লাব। প্রথম বিভাগে অংশগ্রহণকারী দলসমূহের মধ্যে রয়েছে দিলকুশা এসি, উত্তরা ক্লাব, ওরকা, মোহাম্মদপুর বয়েজ ক্লাব, মনসুর স্পোর্টিং ক্লাব, ইয়াং প্যাগাসাস, পূর্বাচল পরিষদ প্রভৃতি।  [গোফরান ফারুকী]