টঙ্গিবাড়ী উপজেলা

টঙ্গিবাড়ী উপজেলা (মুন্সিগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ১৪০.৯১ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°২৪´ থেকে ২৩°৩৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং  ৯০°২৪´ থেকে ৯০°৩১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে নারায়ণগঞ্জ সদর, দক্ষিণে নড়িয়াজাজিরা উপজেলা, পূর্বে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা, পশ্চিমে লৌহজংসিরাজদিখাঁন উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৯৭১৭৩; পুরুষ ৯৮১২০, মহিলা ৯৯০৫৩। মুসলিম ১৮১৯৪৪, হিন্দু ১৫২০৮, বৌদ্ধ ১, খ্রিস্টান ১৮ এবং অন্যান্য ২।

জলাশয় প্রধান নদী: পদ্মা, ইছামতি।

প্রশাসন টঙ্গিবাড়ী থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১২ ১০২ ১৫১ ১৭৭০৬ ১৭৯৪৬৭ ১৩৯৯ ৬৮.৫ ৫৬.০
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৭.৭৪ ১৭৭০৬ ২২৮৮ ৬৮.৫
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আউটশাহী ২৩ ২৫৬১ ৮৮৬০ ৯১৯৭ ৬০.৭
আড়িয়ল ১৫ ৪০১৭ ১৪৭৫৮ ১৪৫৪০ ৫৩.৩
আবদুল্লাপুর ১১ ৮৩৪ ৮২২৭ ৮১৪৪ ৬১.৫
কাঠাদিয়া শিমুলিয়া ৭৯ ১৯২২ ৭০৭১ ৭০৫১ ৫৭.০
কামারখারা ৭১ ২৪৭১ ৮৮৭৬ ৯৫০২ ৫৬.১
দিঘির পাড় ৪৭ ৯২৬৮ ৪০০৯ ৪২৪৪ ৪২.১
ধিপুর ৩৯ ২৫৬১ ৭৯১৭ ৮০৮১ ৫৭.৯
পাঁচগাঁও ৮৭ ৩০৯৪ ৭১৮০ ৭০৮৬ ৫৬.৩
বেতকা ৩১ ২২০৮ ৯৩৫৭ ৯২৮৩ ৬২.২
যশলং ৬৩ ২৩৫৫ ১০৪৫৭ ১০২৭৩ ৫৩.৯
সোনারং টঙ্গিবাড়ী ৯৪ ১৭২০ ৯০৩৪ ৯৫৭৯ ৬৬.৫
হাসাইল বানারি ৫৫ ৪০৪৬ ২৩৭৪ ২০৭৩ ৩৪.৬

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ কষ্টি পাথরের মূর্তি (বর্তমানে জাতীয় জাদুঘরে রক্ষিত), প্রাচীন মঠ ও মন্দির (কালীবাড়ি), সোনারং জোড়ামন্দির।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আব্দুল্লাপুর ইউনিয়নে পালের বাড়ি নামক স্থানে পাকসেনারা ১৫ জন গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যা করে। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে মুক্তিযোদ্ধারা টঙ্গিবাড়ী থানা আক্রমণ করে প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ হস্তগত করে। উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ১টি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন টঙ্গিবাড়ী উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৯।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩০৫, মন্দির ১৬। উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান: আবদুল্লাপুর জামে মসজিদ, বেতকা জামে মসজিদ, পুড়ার সাততলা মিনার মসজিদ, ফজু শাহের দরগাহ।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৭.১%; পুরুষ ৫৬.৬%, মহিলা ৫৭.৬%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: স্বর্ণগ্রাম আর এন উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৮), আব্দুল্লাপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৯), সোনারং পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০০), আউটশাহী রাধানাথ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০১), বানারী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০১), দিঘিরপাড় এ সি ইনস্টিটিউশন (১৯০২), পাইকপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৪), ব্রাহ্মণভিটা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), আড়িয়ল স্বর্ণময়ী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৪৮, সাংস্কৃতিক সংগঠন ২, সিনেমা হল ৩।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪২.০৮%, অকৃষি শ্রমিক ২.৯৮%, শিল্প ১.০১%, ব্যবসা ২৪.৩৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৯৩%, চাকরি ৭.০১%, নির্মাণ ১.৯২%, ধর্মীয় সেবা ০.২৩%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৫.৪৮% এবং অন্যান্য ১১.০৩%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৫.৮৪%, ভূমিহীন ৫৪.১০%। শহরে ৫২.৮৪% এবং গ্রামে ৪৫.২৪% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, আলু, পান, করলা, টমেটো।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি গম, তিল, ডাল।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১০৩ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৪৬ কিমি; নৌপথ ৪৬ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন গরুর গাড়ি, পাল্কি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁত শিল্প, পাটি শিল্প, বাঁশ, বেত ও কাঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৮। টঙ্গিবাড়ী হাট, বেতকা হাট, সুবচনী হাট, দিঘিরপাড় হাট, আবদুল্লাপুর বাজার, পাঁচগাঁও বাজার, দিঘলী বাজার উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   পান, পাট, আলু, কলা, শাকসবজি, চট, সুতা।

বিদ্যুৎ ব্যবহার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচীর আওতাধীন। তবে ৯১.৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯১.৮%, ট্যাপ ১.৪%, অন্যান্য ৬.৮%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক পাওয়া গেছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা ৮৪.৫% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৪.৩% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১.২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৫, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১১, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৫, ক্লিনিক ১।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, কেয়ার, প্রশিকা।  [মাসুমা সুলতানা চম্পা]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; টঙ্গিবাড়ী উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।