জৈব কৃষিব্যবস্থা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:Banglapedia]]
[[Category:Banglapedia]]
'''জৈব কৃষিব্যবস্থা''' (Organic Farming)  সাংশ্লেষিক সার ও  [[কীটনাশক|কীটনাশক]] ব্যবহারের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল না হয়ে শস্য উৎপাদনের এক প্রকার কৃষিব্যবস্থা। সম্পূর্ণরূপে জৈববস্ত্ত ব্যবহারের ওপর নির্ভরশীল কৃষিব্যবস্থাকে বর্তমানে ইকোলজিক্যাল কৃষিব্যবস্থা বলা হয়। ইকোলজিক্যাল বা জৈব কৃষিব্যবস্থায় পরিবেশের ওপর চিরাচরিত কৃষিব্যবস্থায় সৃষ্ট কিছু নেতিবাচক প্রভাব হ্রাসের সম্ভাবনা আছে। জৈব কৃষিব্যবস্থায় সাংশ্লেষিক সারের ব্যবহার হ্রাস বা সাংশ্লেষিক সার ব্যবহার না করার ফলে পরিবেশগত মারাত্মক ক্ষতি এবং বন্যপ্রাণীর ওপর বিরূপ প্রভাব হ্রাস করতে পারে। সাংশ্লেষিক সার মৃত্তিকার ভৌত, রাসায়নিক ও জৈব ধর্মাবলি উন্নত করে না কিন্তু এসব ধর্মের ওপর জৈববস্ত্তর অনুকূল প্রভাব রয়েছে। সুতরাং জৈববস্ত্তর ব্যবহার মৃত্তিকার উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে এবং সে সঙ্গে মৃত্তিকার উত্তম অবস্থা ধরে রাখতে প্রয়োজনীয়। সারা পৃথিবীব্যাপী বর্তমান সময়ে ব্যবহূত অতি পরিচিত জৈব বস্ত্তগুলো হলো জীবাণুসার, হিউমেট সার, শস্যের অবশেষ, সবুজ সার, গোয়ানো (এক প্রকার পাখির বিষ্ঠা), হাড়ের গুঁড়া, কম্পোস্ট, খামারজাত সার, মাছের গুঁড়া, মাছের বর্জ্য, তরল জৈব সার, নর্দমার আবর্জনা, স্লারি (slurry) ইত্যাদি। রাসায়নিক সার আগমনের পূর্বে বাংলাদেশের কৃষি সম্পূর্ণরূপে জৈব পদার্থ ব্যবহারের ওপর নির্ভরশীল ছিল। প্রাণিজ সার, শস্য অবশেষ এবং গৃহস্থালির বর্জ্য এ তিনটি প্রধান উৎস থেকে জৈব সার ব্যবহার করা হতো। কিন্তু রাসায়নিক সার ব্যতীত কৃষি কাজ অবাস্তব বলে মনে হয়। কারণ দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিতে উন্নতমানের কৃষি সামগ্রীর চেয়ে বরং অধিক খাদ্যের প্রয়োজন।
'''জৈব কৃষিব্যবস্থা''' (Organic Farming)  সাংশ্লেষিক সার ও [[কীটনাশক|কীটনাশক]] ব্যবহারের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল না হয়ে শস্য উৎপাদনের এক প্রকার কৃষিব্যবস্থা। সম্পূর্ণরূপে জৈববস্ত্ত ব্যবহারের ওপর নির্ভরশীল কৃষিব্যবস্থাকে বর্তমানে ইকোলজিক্যাল কৃষিব্যবস্থা বলা হয়। ইকোলজিক্যাল বা জৈব কৃষিব্যবস্থায় পরিবেশের ওপর চিরাচরিত কৃষিব্যবস্থায় সৃষ্ট কিছু নেতিবাচক প্রভাব হ্রাসের সম্ভাবনা আছে। জৈব কৃষিব্যবস্থায় সাংশ্লেষিক সারের ব্যবহার হ্রাস বা সাংশ্লেষিক সার ব্যবহার না করার ফলে পরিবেশগত মারাত্মক ক্ষতি এবং বন্যপ্রাণীর ওপর বিরূপ প্রভাব হ্রাস করতে পারে। সাংশ্লেষিক সার মৃত্তিকার ভৌত, রাসায়নিক ও জৈব ধর্মাবলি উন্নত করে না কিন্তু এসব ধর্মের ওপর জৈববস্ত্তর অনুকূল প্রভাব রয়েছে। সুতরাং জৈববস্ত্তর ব্যবহার মৃত্তিকার উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে এবং সে সঙ্গে মৃত্তিকার উত্তম অবস্থা ধরে রাখতে প্রয়োজনীয়। সারা পৃথিবীব্যাপী বর্তমান সময়ে ব্যবহূত অতি পরিচিত জৈব বস্ত্তগুলো হলো জীবাণুসার, হিউমেট সার, শস্যের অবশেষ, সবুজ সার, গোয়ানো (এক প্রকার পাখির বিষ্ঠা), হাড়ের গুঁড়া, কম্পোস্ট, খামারজাত সার, মাছের গুঁড়া, মাছের বর্জ্য, তরল জৈব সার, নর্দমার আবর্জনা, স্লারি (slurry) ইত্যাদি। রাসায়নিক সার আগমনের পূর্বে বাংলাদেশের কৃষি সম্পূর্ণরূপে জৈব পদার্থ ব্যবহারের ওপর নির্ভরশীল ছিল। প্রাণিজ সার, শস্য অবশেষ এবং গৃহস্থালির বর্জ্য এ তিনটি প্রধান উৎস থেকে জৈব সার ব্যবহার করা হতো। কিন্তু রাসায়নিক সার ব্যতীত কৃষি কাজ অবাস্তব বলে মনে হয়। কারণ দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিতে উন্নতমানের কৃষি সামগ্রীর চেয়ে বরং অধিক খাদ্যের প্রয়োজন।


বাংলাদেশের মোট আবাদী এলাকার মধ্যে প্রায় ১৩% তিন ফসলী, ৫০% দো-ফসলী এবং বাদবাকি ৩৭% এলাকা এক ফসলী চাষের অন্তর্ভুক্ত। এসব মৃত্তিকাতে বোরো, আমন ও রবিশস্য আবাদ করা হয়। কৃষকদের মধ্যে অনেকেই কেবল রাসায়নিক সার, কেউ কেউ রাসায়নিক ও জৈব সার এবং কেউ কেউ কেবল জৈব সার ব্যবহার করছে। জৈব সারের মধ্যে খৈল, গৃহস্থালির বর্জ্য, খামার সার, খামারজাত সার এবং  [[কচুরিপানা|কচুরিপানা]] অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং বাংলাদেশের সার্বিক কৃষিব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল।
বাংলাদেশের মোট আবাদী এলাকার মধ্যে প্রায় ১৩% তিন ফসলী, ৫০% দো-ফসলী এবং বাদবাকি ৩৭% এলাকা এক ফসলী চাষের অন্তর্ভুক্ত। এসব মৃত্তিকাতে বোরো, আমন ও রবিশস্য আবাদ করা হয়। কৃষকদের মধ্যে অনেকেই কেবল রাসায়নিক সার, কেউ কেউ রাসায়নিক ও জৈব সার এবং কেউ কেউ কেবল জৈব সার ব্যবহার করছে। জৈব সারের মধ্যে খৈল, গৃহস্থালির বর্জ্য, খামার সার, খামারজাত সার এবং [[কচুরিপানা|কচুরিপানা]] অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং বাংলাদেশের সার্বিক কৃষিব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল।


সাংশ্লেষিক সার ও অন্যান্য রাসায়নিক বস্ত্তর অবিরত ব্যবহার মৃত্তিকার ধর্মাবলির ওপর ইতোমধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে এবং এর ফলে উৎপাদন মাত্রায় স্থবির বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিম্নমুখী হয়েছে। মৃত্তিকার স্বাভাবিক উৎপাদনশীলতা উদ্ধার করতে জৈব পদার্থ অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। অধিকন্তু, জৈব কৃষিব্যবস্থাকে  [[শাকসবজি|শাকসবজি]] ও উদ্যান শস্য উৎপাদনের জন্যও সম্প্রসারিত করা যেতে পারে।
সাংশ্লেষিক সার ও অন্যান্য রাসায়নিক বস্ত্তর অবিরত ব্যবহার মৃত্তিকার ধর্মাবলির ওপর ইতোমধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে এবং এর ফলে উৎপাদন মাত্রায় স্থবির বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিম্নমুখী হয়েছে। মৃত্তিকার স্বাভাবিক উৎপাদনশীলতা উদ্ধার করতে জৈব পদার্থ অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। অধিকন্তু, জৈব কৃষিব্যবস্থাকে  [[শাকসবজি|শাকসবজি]] ও উদ্যান শস্য উৎপাদনের জন্যও সম্প্রসারিত করা যেতে পারে। [সিরাজুল হক]
 
[সিরাজুল হক]
 
<!-- imported from file: জৈব কৃষিব্যবস্থা.html-->


[[en:Organic Farming]]
[[en:Organic Farming]]

১০:১৯, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

জৈব কৃষিব্যবস্থা (Organic Farming)  সাংশ্লেষিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল না হয়ে শস্য উৎপাদনের এক প্রকার কৃষিব্যবস্থা। সম্পূর্ণরূপে জৈববস্ত্ত ব্যবহারের ওপর নির্ভরশীল কৃষিব্যবস্থাকে বর্তমানে ইকোলজিক্যাল কৃষিব্যবস্থা বলা হয়। ইকোলজিক্যাল বা জৈব কৃষিব্যবস্থায় পরিবেশের ওপর চিরাচরিত কৃষিব্যবস্থায় সৃষ্ট কিছু নেতিবাচক প্রভাব হ্রাসের সম্ভাবনা আছে। জৈব কৃষিব্যবস্থায় সাংশ্লেষিক সারের ব্যবহার হ্রাস বা সাংশ্লেষিক সার ব্যবহার না করার ফলে পরিবেশগত মারাত্মক ক্ষতি এবং বন্যপ্রাণীর ওপর বিরূপ প্রভাব হ্রাস করতে পারে। সাংশ্লেষিক সার মৃত্তিকার ভৌত, রাসায়নিক ও জৈব ধর্মাবলি উন্নত করে না কিন্তু এসব ধর্মের ওপর জৈববস্ত্তর অনুকূল প্রভাব রয়েছে। সুতরাং জৈববস্ত্তর ব্যবহার মৃত্তিকার উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে এবং সে সঙ্গে মৃত্তিকার উত্তম অবস্থা ধরে রাখতে প্রয়োজনীয়। সারা পৃথিবীব্যাপী বর্তমান সময়ে ব্যবহূত অতি পরিচিত জৈব বস্ত্তগুলো হলো জীবাণুসার, হিউমেট সার, শস্যের অবশেষ, সবুজ সার, গোয়ানো (এক প্রকার পাখির বিষ্ঠা), হাড়ের গুঁড়া, কম্পোস্ট, খামারজাত সার, মাছের গুঁড়া, মাছের বর্জ্য, তরল জৈব সার, নর্দমার আবর্জনা, স্লারি (slurry) ইত্যাদি। রাসায়নিক সার আগমনের পূর্বে বাংলাদেশের কৃষি সম্পূর্ণরূপে জৈব পদার্থ ব্যবহারের ওপর নির্ভরশীল ছিল। প্রাণিজ সার, শস্য অবশেষ এবং গৃহস্থালির বর্জ্য এ তিনটি প্রধান উৎস থেকে জৈব সার ব্যবহার করা হতো। কিন্তু রাসায়নিক সার ব্যতীত কৃষি কাজ অবাস্তব বলে মনে হয়। কারণ দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিতে উন্নতমানের কৃষি সামগ্রীর চেয়ে বরং অধিক খাদ্যের প্রয়োজন।

বাংলাদেশের মোট আবাদী এলাকার মধ্যে প্রায় ১৩% তিন ফসলী, ৫০% দো-ফসলী এবং বাদবাকি ৩৭% এলাকা এক ফসলী চাষের অন্তর্ভুক্ত। এসব মৃত্তিকাতে বোরো, আমন ও রবিশস্য আবাদ করা হয়। কৃষকদের মধ্যে অনেকেই কেবল রাসায়নিক সার, কেউ কেউ রাসায়নিক ও জৈব সার এবং কেউ কেউ কেবল জৈব সার ব্যবহার করছে। জৈব সারের মধ্যে খৈল, গৃহস্থালির বর্জ্য, খামার সার, খামারজাত সার এবং কচুরিপানা অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং বাংলাদেশের সার্বিক কৃষিব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল।

সাংশ্লেষিক সার ও অন্যান্য রাসায়নিক বস্ত্তর অবিরত ব্যবহার মৃত্তিকার ধর্মাবলির ওপর ইতোমধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে এবং এর ফলে উৎপাদন মাত্রায় স্থবির বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিম্নমুখী হয়েছে। মৃত্তিকার স্বাভাবিক উৎপাদনশীলতা উদ্ধার করতে জৈব পদার্থ অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। অধিকন্তু, জৈব কৃষিব্যবস্থাকে  শাকসবজি ও উদ্যান শস্য উৎপাদনের জন্যও সম্প্রসারিত করা যেতে পারে। [সিরাজুল হক]