জুরাছড়ি উপজেলা

জুরাইছড়ি উপজেলা (রাঙ্গামাটি জেলা)  আয়তন: ৬০৬.০৫ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°২৭´ থেকে ২২°৪৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°১৯´ থেকে ৯২°৩৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বরকল উপজেলা, দক্ষিণে বিলাইছড়ি উপজেলা (চট্টগ্রাম), পূর্বে মিজোরাম (ভারত), পশ্চিমে রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৭৭৮৬; পুরুষ ১৪৮৩৯, মহিলা ১২৯৪৭। মুসলিম ১২৬৫, হিন্দু ১৩২, বৌদ্ধ ২৬২৭৯, খ্রিস্টান ৯০ এবং অন্যান্য ২০।

জলাশয় প্রধান নদী: কর্ণফুলি, সলক।

প্রশাসন থানা গঠিত হয় ১৯৭৬ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১১ ১০৫ ৫৮৯৫ ২১৮৯১ ৪৬ ৫৪.৯ ৪৪.৫
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কি.মি) শিক্ষার হার (%)
৬৯.৯৩ ৫৮৯৫ ৮৪ ৫৪.৯
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
জুরাছড়ি ৫৭ ২৩০৪০ ৪৭৩৯ ৪১৯৫ ৫৩.৯
ডুমডুমিয়া ৩৮ ৭৮০৮০ ৩৮০৯ ৩৪৩৬ ২৪.১
বনজুগি ছড়া ১৯ ১০২৪০ ৩১৯৯ ২৫০৬ ৬৭.৪
মইডাং৭৬ ৩৮৪০০ ৩০৯২ ২৮১০ ৪১.১

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের জুলাই-এর শেষদিকে স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় কিছুসংখ্যক পাকসেনা জুরাছড়ি উপজেলায় প্রবেশ করে এবং লেবারপাড়ায় একটি ক্যাম্প স্থাপন করে। তবে স্থানীয় অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বিচক্ষণ কৌশলের কারণে পাকসেনা ও তাদের দোসরবৃন্দ উপজেলায় হত্যা, লুন্ঠন ও নির্যাতন করতে পারেনি। ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের শেষের দিকে বরকলে পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে মিত্রবাহিনীর যুদ্ধ হয় এবং এই যুদ্ধ জুরাছড়ি পর্যন্ত এগিয়ে আসে। ডিসেম্বরের শুরুতে যক্ষাবাজারে পাকবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হয়। উভয় ক্ষেত্রেই পাকবাহিনী মিত্রবাহিনীর হাতে পরাভূত হয় এবং ১২ ডিসেম্বর জুরাছড়ি মুক্ত হয়।

বিস্তারিত দেখুন জুরাছড়ি উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৬, মন্দির ২, গির্জা ২, প্যাগোডা ২৮।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৬.৮%; পুরুষ ৫৮.৬%, মহিলা ৩২.৯%।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ১২, মহিলা সংগঠন ৪।

দর্শনীয় স্থান বানাতাইংগাচুগ্ পাহাড়, জুরাইছড়ি রাজবন বিহার।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৮৩.৪৭%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৩৬%, ব্যবসা ৫.৩০%, চাকরি ৪.২১%, নির্মাণ ০.০৬%, ধর্মীয় সেবা ০.০৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৪৬% এবং অন্যান্য ২.০৬%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬২.৫৯% এবং ভূমিহীন ৩৭.৪১%। শহরে ৬১.৩০% এবং গ্রামে ৬২.৯৬% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আখ, ভুট্টা, ডাল, তুলা, তামাক, আলু, আদা, হলুদ।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, লেবু, নারিকেল, আনারস, পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ২৫।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১২ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২২ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৯৫ কিমি।

কুটিরশিল্প লৌহশিল্প ১, পেটেন্ট খাদ্য জাতীয় কুটির শিল্প ৭, বাঁশ, বেত ও কাঠের কাজ ২০, তাঁতশিল্প ১২৬।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৬। যক্ষ্মা বাজার, শিলছড়ি বাজার, ফকিরাছড়ি বাজার  উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  কলা, তুলা, আদা, হলুদ, কাঁঠাল।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লী-বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৩.৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ২৯.৪%, ট্যাপ ২.৭% এবং অন্যান্য ৬৭.৯%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৭.১% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫৬.৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৬.৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ, ১৯৭৪ সালের বন্যা, ১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিল ঘূর্ণিঝড়ে বহু লোকের প্রাণহানি ঘটে এবং সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক।  [গৌতম চন্দ্র মোদক]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; জুরাইছড়ি উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।