জিয়া, বেগম খালেদা

বেগম খালেদা জিয়া

জিয়া, বেগম খালেদা  বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী (১৯৯১-১৯৯৬, ২০০১-২০০৬) এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপার্সন। বেগম খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুর জেলার জলপাইগুঁড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ইস্কান্দর মজুমদার ব্যবসা উপলক্ষে জলপাইগুঁড়িতে বসবাস করতেন। তাঁর আদি নিবাস ছিল ফেনী জেলার ফুলগাজী থানায়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর জলপাইগুড়িতে চা ব্যবসা ছেড়ে তিনি দিনাজপুর শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। দিনাজপুর মিশনারী স্কুলে খালেদা জিয়া প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন এবং পরে ১৯৬০ সালে দিনাজপুর গালর্স হাইস্কুল থেকে এস.এস.সি পাস করেন। ওই  বছরই তৎকালীন ক্যাপ্টেন এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। খালেদা জিয়া ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়াশোনা অব্যাহত রাখেন এবং এরপর তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে তাঁর স্বামীর কর্মস্থলে গমন করেন।

১৯৭১ সালের মার্চ মাসে মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে চট্টগ্রামে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে মেজর পদে কর্মরত জিয়াউর রহমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং পরে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অধীনে ‘জেড’ ফোর্সের অধিনায়কত্ব লাভ করেন। খালেদা জিয়াকে তখন পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর হেফাজতে নেয়া হয় এবং ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের পর তিনি মুক্তিলাভ করেন।

১৯৮১ সালের ৩০মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নির্মম হত্যাকান্ডের পর তাঁর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কঠিন সংকটের সম্মুখীন হয়। দলের তৎকালীন চেয়ারম্যান এবং দেশের রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এইচ.এম এরশাদ এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করেন এবং ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ দেশে সামরিক আইন জারি করেন।

দলের এ সংকটকালে ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে খালেদা জিয়া দলের সহসভাপতি এবং ১৯৮৪ সালের ১০ মে চেয়ারপার্সন পদে নির্বাচিত হন। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ১৯৮৩ সালে সাতদলীয় জোট গঠন করে জেনারেল এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়। এরশাদের স্বৈরশাসন অবসানের লক্ষ্যে পরিচালিত ৯ বছরের দীর্ঘ সংগ্রামে খালেদা জিয়া অবৈধ সরকারের সঙ্গে কোনোপ্রকার আপস করেন নি। বিভিন্ন সময়ে নিষেধাজ্ঞামূলক আইনের দ্বারা তাঁর স্বাধীন গতিবিধিকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছিল। আট বছরে সাত বার তাঁকে অন্তরীণ করা সত্ত্বেও খালেদা জিয়া জেনারেল এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলনে ক্রমাগত চাপ অব্যাহত রাখেন।

অবশেষে খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সম্মিলিত জোট কর্তৃক সংগঠিত গণঅভ্যুত্থানের মুখে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে নির্বাচিত হয়। খালেদা জিয়া সংসদ নির্বাচনে পাঁচটি নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবগুলি আসনেই বিজয়ী হন।

১৯৯১ সালের ২০ মার্চ খালেদা জিয়া দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। খালেদা জিয়ার উদ্যোগে রাষ্ট্রপতি-শাসিত থেকে সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় উত্তরণের লক্ষ্যে ১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট জাতীয় সংসদে সংবিধানের ঐতিহাসিক দ্বাদশ সংশোধনী বিল পাস হয়। সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার অধীনে খালেদা জিয়া ১৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনরায় শপথ গ্রহণ করেন।

বেগম খালেদা জিয়ার সরকার প্রথম মেয়াদে শিক্ষাক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করে। সেসময়ে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন, দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীদের বিনা বেতনে লেখাপড়ার সুযোগ প্রদান, ছাত্রীদের জন্য উপবৃত্তি প্রবর্তন এবং শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চালু হয়। তাঁর সময়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি দেশব্যাপী একটি সামাজিক আন্দোলনে রূপ নেয়। তাঁর সরকারই যমুনা বহুমুখী সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থাকে (সার্ক) আরও গতিশীল করার ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখেন।

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জয়যুক্ত হওয়ার পর খালেদা জিয়া দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হন। অবশ্য অন্যান্য প্রধান রাজনৈতিক দল এ নির্বাচন বর্জন করেছিল। উদ্ভূত রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের লক্ষ্যে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার জন্য নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানে সন্নিবেশিত করে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি আওয়ামী লীগের নিকট পরাজিত হয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে (১৯৯৬-২০০১) সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর বিচারপতি লতিফুর রহমানের নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার-দলীয় জোট সংসদে দুই-তৃতীয়াংশেরও অধিক আসনে বিজয়ী হয়। ২০০১ সালের ১০ অক্টোবর খালেদা জিয়া তৃতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়ার তৃতীয় মেয়াদের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল: রপ্তানি আয় ও বিদেশ থেকে প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিটেন্স দ্রুত বৃদ্ধি, শিল্প ও টেলিযোগাযোগ খাতের দ্রুত বিকাশ, সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বমুখী ধারা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নকল্পে অপারেশন ক্লিন হার্ট ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) গঠন এবং জেএমবি ও হুজিসহ ইসলামী মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে  সর্বাত্বক অভিযান। মেয়াদ শেষে তিনি ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার দল বিএনপি মাত্র ৩০টি আসনে জয়ী হয়। ২০০৭-০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে তাঁর বিরুদ্ধে কয়েকটি দুর্নীতির মামলা রুজু করে তাঁকে প্রায় একবছর কারাবন্দী রাখা হয়। বর্তমান জাতীয় সংসদে খালেদা জিয়া বিরোধী দলীয় নেত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।

শাসনকালীন সাফল্য ১৯৯১ সালের ২০ মার্চ খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথবারের মতো শপথ নেওয়ার ৩৯ দিনের মাথায় শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস দক্ষিণ বাংলাদেশের একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আঘাত হানে। ত্রাণ ও পুনর্বাসন সামগ্রীর অপ্রতুলতা সত্ত্বেও সরকার দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিকে দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করে। খালেদা সরকারের প্রথম মেয়াদে মূল্যস্ফীতির হারকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনা এবং শিল্প ও কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা হয়। খালেদা সরকার দায়িত্ব গ্রহণের কিছুদিনের মধ্যেই ১৯৯১ সালে একটি নতুন শিল্পনীতি ঘোষণা করা হয়, যার মাধ্যমে বেসরকারি বৈদেশিক বিনিয়োগ ও ব্যক্তিখাতের দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটে, বিশেষত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে। এতে কোনোপ্রকার বাধানিষেধ ছাড়াই শতভাগ বিদেশি মালিকানা ও যৌথ বিনিয়োগের সুযোগ করে দেওয়া হয়। খালেদা সরকার পশুসম্পদ খাতকে সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতা দান করে, যার ফলে দেশব্যাপী অসংখ্য গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগীর খামার গড়ে ওঠে। এসময় দেশে প্রথমবারের মতো বৈদেশিক মুদ্রাকে আংশিক বিনিময়যোগ্য করা হয় এবং বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণও সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। দেশের উন্নয়ন বাজেটে বিদেশি সহায়তার উপর নির্ভরশীলতা হ্রাসে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেয়া হয়। এর ফলে পাঁচ বছরে উন্নয়ন বাজেটে দেশিয় সম্পদের হিস্যা ২১ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪০ শতাংশে দাঁড়ায়। ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে দেশে প্রথমবারের মতো উৎপাদন ও আমদানি পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর প্রবর্তন করা হয়, যার মাধ্যমে রাজস্ব আহরণের নতুন দুয়ার উন্মুক্ত হয়। পাশাপাশি, সরকারের মুক্ত-বাজার ও বাণিজ্যিক উদারিকরণ নীতিমালার অংশ হিসেবে আমদানি পর্যায়ে ব্যাপক হারে শুল্ক হ্রাস করা হয়।

এসময়ে কৃষিজ উৎপাদন বৃদ্ধি ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে খাল-খনন কর্মসূচি পুনরায় চালু করা হয়। চতুর্থ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা মেয়াদে (১৯৯০-৯৫) শিক্ষা খাতের অনুকূলে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয় যার ৭০ শতাংশই ছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপ-খাতের জন্য। খালেদা সরকার একটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে এবং উচ্চ শিক্ষা উৎসাহিত করার জন্য ব্যক্তিখাতে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা অনুমোদন করে। দেশের মানুষকে দ্রুততম সময়ে স্বাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে একটি পৃথক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৯৩ সালের ১ জুলাই থেকে দেশব্যাপী প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়। দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে শিক্ষালাভে আগ্রহী করে তুলতে খালেদা সরকার ১৯৯৩ সালে ‘শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য’ কর্মসূচি চালু করে। পল্লী অঞ্চলে মেয়েদের মাধ্যমিক শিক্ষা অবৈতনিক করা হয় এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্রীদের জন্য দেশব্যাপী একটি উপবৃত্তি কর্মসূচি চালু করা হয়।

দেশের আইন ও বিধিবিধান অব্যাহতভাবে হাল-নাগাদ করার লক্ষ্যে খালেদা সরকার একটি স্থায়ী আইন কমিশন গঠন করে। দেশের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণেও নেওয়া হয় তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল: ১৯৯৪ সালের ১৬ অক্টোবর যমুনা বহুমুখী সেতুর ভৌত-নির্মাণ শুরু করা, মেঘনা-গোমতী সেতু নির্মাণের মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা, চট্ট্রগ্রামে একটি অত্যাধুনিক রেলস্টেশন নির্মাণ এবং চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য প্রকল্প গ্রহণ। এসময় বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি ও মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্পের প্রস্ত্ততিমূলক কাজ সম্পন্ন করা হয় এবং এগুলোর পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে চীনা ও কোরীয় সংস্থার সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৯৩ সালের এপ্রিলে সপ্তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন এবং প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সার্কের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর হয়। গণমাধ্যমে অবাধ স্বাধীনতা থাকায় এসময় দেশে প্রকাশিত সংবাদপত্রের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে পড়ে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবার সিএনএন ও বিবিসি’র মতো স্যাটেলাইট চ্যানেলকে সম্প্রচার করার সুযোগ দেওয়া হয় এবং এর ধারাবাহিকতায় অন্যান্য আন্তর্জাতিক স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলও দেশের আকাশসীমায় প্রবেশ করে। বাংলাদেশে মোবাইল টেলিফোনের যাত্রাও এসময়ে শুরু হয়।

খালেদা জিয়ার প্রথম মেয়াদে গৃহীত কিছু উল্লেখযোগ্য প্রশাসনিক পদক্ষেপের মধ্যে ছিল: সরকারি চাকুরেদের বেতন ও ভাতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত জাতীয় বেতন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স-সীমা ২৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করা; পেনশন অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজতর করা এবং সরকারি চাকুরেদের মৃত্যুর ক্ষেত্রে বিধবা ও সন্তানদের জন্য আজীবন পেনশনের বিধান করা; শ্রমিকদের জন্য ১৭টি খাতে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ; বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুতা ও চোরাচালান হ্রাসে কোস্ট-গার্ড বাহিনী প্রতিষ্ঠা; দেশের শেয়ারবাজার তদারকির জন্য সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন গঠন। এসময়ে দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির দিক দিয়ে তৃতীয় খালেদা সরকার (২০০১-০৬) দেশের জন্য আরো ইতিবাচক ফলাফল নিয়ে আসে। ২০০২-০৬ সময়কালে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের উপরে থাকে। জনপ্রতি জাতীয় আয় ২০০০-০১ সালে ৩৭৪ মার্কিন ডলারের তুলনায় ২০০৫-০৬ সালে ৪৮২ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০০১ সালের ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০০৪-০৫ সালে ৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। বিদেশ থেকে প্রেরিত রেমিটেন্সের পরিমান পাঁচ বছরে প্রায় তিনগুণ বেড়ে ২০০৬ সালে ৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। ২০০৫ সাল থেকে তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী এমএফএ কোটা বাতিল হলেও খালেদা সরকারের দক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে দেশের তৈরি পোশাক খাতের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয় নি। সরকারের বিনিয়োগ-বান্ধব নীতি ও কৌশলের কারণে শিল্পখাতে যে অগ্রগতি অর্জিত হয় তার ফলে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মার্চেন্ট ব্যাংকার গোল্ডম্যান-স্যাক্স বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্রুত উদীয়মান ১১টি দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে, যাতে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীনের মতো দেশও অন্তর্ভূক্ত ছিল। ২০০২-০৬ সময়কালে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; ২০০৬ সালের মার্চ পর্যন্ত বিনিয়োগ বোর্ডে ৬২ হাজার কোটি টাকার ৯ হাজার শিল্প-প্রকল্প নিবন্ধিত হয়, যা পূর্ববর্তী পাঁচ বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ ছিল। এর ফলে ২০০৫-০৬ সালে জিডিপি’তে শিল্পখাতের অবদান ১৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যায় এবং শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশ অতিক্রম করে। ২০০৪-০৫ অর্থবছরে বন্ধ হয়ে যাওয়া ও লোকসানি আদমজী পাটকলের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের পাওনা টাকা পরিশোধের পর সেখানে একটি নতুন রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল চালু করা হয়।

জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহের সাথে সাযুজ্য রেখে খালেদা সরকার মধ্য-মেয়াদী পরিকল্পনা হিসেবে একটি ‘দারিদ্র নিরসন কৌশলপত্র’ প্রণয়ন করে। দারিদ্র নিরসনের জন্য বাজেট বরাদ্দের হার প্রতিবছরই বৃদ্ধি করা হয় এবং ২০০৬-০৭ অর্থবছরে এর হিস্যা দাঁড়ায় মোট বাজেটের ৫৬ শতাংশ। পল্লী অঞ্চলে অতি দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর দারিদ্র হ্রাসের জন্য সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি সম্প্রসারিত করে। দেশের উত্তরাঞ্চলে মঙ্গাপ্রবণ এলাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৫০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা হয়। চরাঞ্চলে বসবাসরত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অবস্থার উন্নয়নে ৫০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প (চর জীবিকায়ন কর্মসূচি) গ্রহণ করা হয়। এসময়ে দেশে দারিদ্রের হার ৯ শতাংশ হ্রাস পায়। সমাজের পশ্চাৎপদ ও অবহেলিত জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা মহিলাদের মাসিক ভাতা ও সুবিধাভোগীর সংখ্যা উভয়ই বৃদ্ধি করা হয়। বয়স্ক ভাতা ও ভাতাগ্রহীতার সংখ্যা উভয়ই বাড়ানো হয়। পরিবেশ সংরক্ষণেও খালেদা সরকার  কিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছিল। বিশ বছরের বেশি পুরনো বাস ও ট্রাককে রাস্তা থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয় এবং ২-স্ট্রোক ইঞ্জিনের ডিজেল-চালিত বেবী-ট্যাক্সি উঠিয়ে দিয়ে তাদের স্থলে ৪-স্ট্রোক ইঞ্জিন বিশিষ্ট সিএনজি চালিত বেবী-ট্যাক্সি রাস্তায় নামানো হয়। দেশব্যাপী পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন ও বিপণন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

খালেদা সরকার শিক্ষাখাতেও কিছু সাফল্য অর্জন করে। প্রাথমিক স্কুলে ভর্তির হার ৯৭ শতাংশে উন্নীত করা হয়, ছাত্রীদের শিক্ষা দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক করা হয়, প্রায় দুই কোটি ছাত্রীকে শিক্ষা-উপবৃত্তির আওতায় আনা হয় এবং বিদ্যালয়সমূহে ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে লিঙ্গসমতা প্রতিষ্ঠিত হয়। মেয়েদের জন্য ২টি নতুন ক্যাডেট কলেজ ও ৩টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় চট্টগ্রামে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়। মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিকায়নের পাশাপাশি খালেদা সরকার কওমি মাদ্রাসাসমূহের ‘দাওরা’ সনদকে স্বীকৃতি দেয় এবং ফাজিল ও কামিল ডিগ্রিকে ব্যাচেলর্স ও মাস্টার্স ডিগ্রির সমতূল্য ঘোষণা করে। উচ্চশিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়, যেগুলোর বেশিরভাগই ছিল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত। অনেকগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়; বৃত্তিমূলক শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয় এবং দেশব্যাপী এধরণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫১ থেকে ৬৪টিতে উন্নীত করা হয়।

সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া ও এসংক্রান্ত অবকাঠামো উন্নয়নে খালেদা সরকার বেশ কয়েকটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। উপজেলা হাসপাতালগুলোতে শয্যাসংখ্যা ৩১ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়, নতুন জেলাশহরে শয্যাসংখ্যা ৫০ থেকে ১০০ এবং পুরনো জেলা শহরের হাসপাতাল ১০০ থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তাছাড়া কয়েকটি নতুন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালও প্রতিষ্ঠা করা হয়। সরকারি পদক্ষেপের কারণে দেশে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার ক্রমান্বয়ে হ্রাস পায়।

খালেদা সরকার টেলিযোগাযোগ খাত উন্নয়নের উপরও যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করে। তাঁর দায়িত্বগ্রহণের  সময়কার প্রায় ৭ লক্ষের তুলনায় মেয়াদশেষে দেশে সরকারি ফিক্সড ফোনের সংখ্যা ১২ লক্ষ বিশ হাজারে উন্নীত হয়। বেসরকারি ফিক্সড ফোন সেবাগ্রহীতার সংখ্যাও ২০০৬ সালে দেড় লক্ষ ছাড়িয়ে যায়। দেশের ৬৪টি জেলায় ডিজিটাল টেলিফোন এক্সচেঞ্জ স্থাপন করা হয় এবং উপজেলাগুলোকে ধাপে ধাপে ডিজিটাল টেলিফোন নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়। খালেদার শাসনকালে দেশে ফিক্সড ও মোবাইল টেলিফোনের মোট সংখ্যা দেড় কোটি ছাড়িয়ে যায়। টেলিফোন সংযোগ ও কলরেটের হার ব্যাপক হারে হ্রাস করা হয়। সাধারণ জনগণের কাছে ফিক্সড ফোন সহজলভ্য করতে ১৭টি বেসরকারি কোম্পানিকে ফিক্সড ফোন সেবা প্রদানের লাইসেন্স দেওয়া হয়। পাশাপাশি, সরকারি মালিকানাধীন টেলিটক কোম্পানিও সাধারণ জনগণকে মোবাইল টেলিফোন সেবা প্রদান করে। একটি সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে সংযুক্তির মাধ্যমে এসময়ে বাংলাদেশ বৈশ্বিক তথ্য মহাসড়কের সাথেও সংযুক্ত হয়। এর ফলে বৈদেশিক যোগাযোগ, উপাত্ত বিনিময় ও ইন্টারনেট যোগাযোগ দ্রুততর, সস্তা ও সহজলভ্য হয়।

যদিও বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধিতে খালেদা সরকার তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেয় নি, এসময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য দেশে ৮৯ হাজার কিলোমিটার নতুন ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপন করা হয়। বিদ্যুৎ গ্রাহকের হার এসময়ে ৭৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৯৭ লক্ষ ছাড়িয়ে যায়। কড়াকড়ি আরোপের কারণে বিদ্যুৎ খাতে সিস্টেম লস ২৮ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২২ শতাংশে নেমে আসে। প্রায় ৫০ হাজার গ্রাম পল্লী বিদ্যুতায়নের আওতায় চলে আসে। খালেদা জিয়া সরকার ১৫টি  নতুন উপজেলা সৃষ্টি করে, যার ফলে উপজেলার সংখ্যা ৪৮০তে উন্নীত হয়। সরকার প্রথমবারের মতো কর ন্যায়পালের পদটিও সৃষ্টি করে।

খালেদা জিয়ার সরকারের তৃতীয় মেয়াদে ঢাকা ও ত্রিপুরার আগরতলার মধ্যে সরাসরি বাস সার্ভিস চালু হয় এবং ঢাকা কোলকাতার মধ্যে সরাসরি ট্রেন চলাচলের বিষয়টিও চূড়ান্ত করা হয়। তাছাড়া এসময়ে যমুনা সেতুর উপর দিয়ে দেশের পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। এ সময়ে নির্মিত কিছু উল্লেখযোগ্য সেতুর মধ্যে ছিল: ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে শিকারপুর ও দ্বারিকা সেতু, পদ্মা নদীর উপর ফকির লালন শাহ (পাকশী) সেতু, খুলনা-মংলা মহাসড়কে রূপসা নদীর উপর খান জাহান আলী সেতু, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে আড়িয়াল খাঁ নদীর উপর হাজী শরীয়তউল্লাহ সেতু, হেমায়েতপুর-সিঙ্গাইর সড়কে ধলেশ্বরী সেতু, মধুমতি নদীর উপর মোল্লারহাট সেতু, ঢাকার বাবুবাজারে দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু, কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারি সড়কের উপর ধরলা সেতু, ডাকাতিয়া নদীর উপর চাঁদপুর সেতু এবং কুশিয়ারা নদীর উপর ফেঞ্চুগঞ্জ সেতু। কুয়েত সরকারের আর্থিক সহায়তায় খালেদা সরকার আরেকটি যে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন তা ছিল চট্টগ্রামের তৃতীয় কর্ণফুলী বা শাহ আমানত সেতু।

খালেদা জিয়ার সরকার জাতীয় সংসদে আইন পাশের মাধ্যমে দুর্নীতি দমন ব্যুরোর পরিবর্তে দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করে। তবে তাঁর মেয়াদকালে কমিশনের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা কখনোই বিতর্কের উর্ধ্বে ছিল না। নিষ্ক্রিয়তার কারণে কমিশনকে প্রায়শই সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। তাঁর সরকারের আরেকটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ ছিল ২০০৫ সালে সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা। তবে তাঁর আমলে আমলাতন্ত্রের উচ্চ পর্যায়ে পদোন্নতি বারংবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। রাজনৈতিক কারণে জ্যেষ্ঠতা ভঙ্গেরও প্রচুর অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছিল।

খালেদা জিয়ার তৃতীয় মেয়াদে বাংলাদেশ জাতিসংঘের ১৩টি অঙ্গ-প্রতিষ্ঠানের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল: জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ, শান্তি-নির্মাণ কমিশন ও জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ। তাছাড়া এসময়ে বাংলাদেশকে আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের সদস্য করা হয়। ২০০৫ সালে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের পর তিনি এই সংস্থার চেয়ারপার্সন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সর্বোচ্চ সংখ্যক সৈন্য প্রেরণ করে বিশ্বব্যাপী শান্তি-উদ্যোগেও বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর লড়াইয়ে বাংলাদেশ তখন সর্বাত্মক সমর্থন প্রদান করে। একই সময়ে বাংলাদেশ বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর সাথেও পারস্পরিক কল্যাণকর সম্পর্ক দৃঢ়তর করার প্রয়াস চালায়। অতীতের মতো এই সরকারও জোটনিরপেক্ষ ও স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতির ভিত্তিতে একটি উদার ও গণতান্ত্রিক মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরতে প্রয়াসী হয়। [হেলাল উদ্দিন আহমেদ]