জাহাঙ্গীর, বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(fix: image tag)
 
(Text replacement - "\[মুয়ায্যম হুসায়ন খান\]" to "[মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]")
 
(একজন ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:Banglapedia]]
[[Category:Banglapedia]]
'''জাহাঙ্গীর'''''', ''''''বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন'''  (১৯৪৯-১৯৭১)  সামরিক বাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোরের অফিসার, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ। ১৯৪৯ সালের ৭ মার্চ  বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার রহিমগঞ্জ গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা আব্দুল মোতালেব হাওলাদার ছিলেন মরমী গানের প্রতি আসক্ত এক সংসার বিবাগী ব্যক্তিত্ব। মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর মুলাদির পাতারচর প্রাইমারী স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তিনি ১৯৬৪ সালে মুলাদি মাহমুদজান পাইলট হাইস্কুল থেকে এস.এস.সি এবং ১৯৬৬ সালে বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচ.এস.সি পাশ করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে  পরিসংখ্যান বিভাগে বি.এস-সি অর্নাস ক্লাশে ভর্তি হন।
'''জাহাঙ্গীর, বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন'''  (১৯৪৯-১৯৭১)  সামরিক বাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোরের অফিসার, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ। ১৯৪৯ সালের ৭ মার্চ  বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার রহিমগঞ্জ গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা আব্দুল মোতালেব হাওলাদার ছিলেন মরমী গানের প্রতি আসক্ত এক সংসার বিবাগী ব্যক্তিত্ব। মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর মুলাদির পাতারচর প্রাইমারী স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তিনি ১৯৬৪ সালে মুলাদি মাহমুদজান পাইলট হাইস্কুল থেকে এস.এস.সি এবং ১৯৬৬ সালে বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচ.এস.সি পাশ করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে  পরিসংখ্যান বিভাগে বি.এস-সি অর্নাস ক্লাশে ভর্তি হন।


[[Image:JahangirBirSresthaMahiuddin.jpg|thumb|400px|right|বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর]]
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ১৯৬৭ সালে ১৫তম শর্ট সার্ভিস কোর্সে প্রশিক্ষণার্থী অফিসার ক্যাডেট নির্বাচিত হন এবং কাকুলে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৮  সালে ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে কমিশন্ড পদ লাভ করে তিনি ১৭৩ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নে যোগ দেন। তিনি ১৯৬৮ সালের ৩ ডিসেম্বর লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি লাভ করেন। মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ১৯৬৯-৭০ সালে রিসালপুরে মিলিটারি কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে বেসিক কোর্স ট্রেনিং এবং পরে ইনফ্যান্ট্রি স্কুল অব ট্যাক্টিক্র্  থেকে অফিসার উইপন ও ডব্লিউ কোর্স-১৩ সমাপ্ত করেন। ১৯৭০ সালের ৩০ আগষ্ট তিনি ক্যাপ্টেন পদে উন্নীত হন।  
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ১৯৬৭ সালে ১৫তম শর্ট সার্ভিস কোর্সে প্রশিক্ষণার্থী অফিসার ক্যাডেট নির্বাচিত হন এবং কাকুলে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৮  সালে ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে কমিশন্ড পদ লাভ করে তিনি ১৭৩ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নে যোগ দেন। তিনি ১৯৬৮ সালের ৩ ডিসেম্বর লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি লাভ করেন। মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ১৯৬৯-৭০ সালে রিসালপুরে মিলিটারি কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে বেসিক কোর্স ট্রেনিং এবং পরে ইনফ্যান্ট্রি স্কুল অব ট্যাক্টিক্র্  থেকে অফিসার উইপন ও ডব্লিউ কোর্স-১৩ সমাপ্ত করেন। ১৯৭০ সালের ৩০ আগষ্ট তিনি ক্যাপ্টেন পদে উন্নীত হন।  


১৯৭১ সালে  [[১০৪৭৮০|মুক্তিযুদ্ধ]] চলাকালে মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সোয়াতের সাইদুর শরীফে ১৭৩ নম্বর ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে তিনি তাঁর তিনজন সহকর্মি ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন, ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার ও ক্যাপ্টেন আনাম সহ গোপনে ৩ জুলাই কর্মস্থল ত্যাগ করেন  এবং দুর্গম পার্বত্য এলাকা ও মুনাওয়ার তায়ী নদী অতিক্রম করে শিয়ালকোটের নিকটে সীমান্ত পার হন এবং মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।  
১৯৭১ সালে  [[মুক্তিযুদ্ধ|মুক্তিযুদ্ধ]] চলাকালে মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সোয়াতের সাইদুর শরীফে ১৭৩ নম্বর ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে তিনি তাঁর তিনজন সহকর্মি ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন, ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার ও ক্যাপ্টেন আনাম সহ গোপনে ৩ জুলাই কর্মস্থল ত্যাগ করেন  এবং দুর্গম পার্বত্য এলাকা ও মুনাওয়ার তায়ী নদী অতিক্রম করে শিয়ালকোটের নিকটে সীমান্ত পার হন এবং মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।  


<nowiki>#</nowiki> #[[Image:জাহাঙ্গীর, বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন_html_88407781.png]]
মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরকে ৭ নং সেক্টরের মেহেদিপুর (মালদহ জেলায়) সাবসেক্টরের কমান্ডার নিয়োগ করা হয়। এসময় লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান ৭ নং সেক্টরের সেক্টর-কমান্ডার ছিলেন। মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে কানসাট, আরগরার হাট ও শাহপুর সহ কয়েকটি সফল অভিযানে অসাধারণ নৈপুণ্য ও সাহসিকতার পরিচয় দেন। ফলে ডিসেম্বর মাসে রাজশাহীর চাঁপাইনববগঞ্জ দখলের জন্য তাঁকে একটি মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতৃত্ব দেয়া হয়।


[[Image:JahangirBirSresthaMahiuddin.jpg|thumb|400px]]
পাকবাহিনী ইতোমধ্যেই নবাবগঞ্জ শহর প্রতিরক্ষার জন্য মহানন্দা নদীর তীরে তিন কিলোমিটার এলাকা ব্যাপি বাঙ্কার নির্মাণ  করে রাখে। এ বাঙ্কারে ছিল পাঁচ ফুট গভীর গতায়াত পরিখা। লেফটেন্যান্ট কাইয়ুম, লেফটেন্যান্ট আউয়াল এবং জন পঞ্চাশেক মুক্তিযোদ্ধাসহ মহিউদ্দিন নওয়াবগঞ্জ শহরের পশ্চিমে বারঘরিয়া নামক স্থানে অবস্থান গ্রহণ করেন (১০ ডিসেম্বর)। ১৩ ডিসেম্বর প্রত্যূষে তিনি এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা সহ রেহাইচরের মধ্য দিয়ে নৌকাযোগে মহানন্দা নদী পার হন এবং অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে শত্রুর বেশ কয়েকটি বাঙ্কার দখল করে নেন। পাকিস্তানী বাহিনী তখন পশ্চাদপসরণ করে নওয়াবগঞ্জ শহরে অবস্থান নেয় এবং একটি দালানের ছাদ থেকে মেশিনগানে অনবরত গুলি চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের শহরাভিমুখে অগ্রযাত্রা ঠেকিয়ে রাখে। এই সংকটময় সময়ে মহিউদ্দিন শত্রুর মেশিনগান ধ্বংস করার পরিকল্পনা নেন। তিনি বা হাতে এসএমজি ও ডান হাতে একটি গ্রেনেড নিয়ে গোপনে ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে আসেন। হামাগুড়ি দিয়ে রাস্তা পার হয়ে তিনি দ্রুত মেশিনগানবাহী বাড়িটির দিকে ধাবিত হন। ত্বরিত গতিতে তিনি মেশিনগান বরাবর গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। বিস্ফোরিত গেনেডের আঘাতে মেশিনগানের স্থলটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়। অকস্মাৎ রাস্তার পাশের একটি দোতলা বাড়ি থেকে শত্রুর একটি গুলি তাঁর কপালে বিদ্ধ হয়, এবং সঙ্গে সঙ্গে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন (১৪ ডিসেম্বর)।


# #বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর
এতে হতোদ্যম না হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সন্ধ্যার দিকে শত্রুর অবস্থানের ওপর প্রচন্ড আক্রমণ চালায়। গভীর রাত পর্যন্ত এ আক্রমণ অব্যাহত ছিল। পাকসেনারা শেষপর্যন্ত  রাতের অন্ধকারে নওয়াবগঞ্জ শহর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ভোর রাতে মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের মৃতদেহ উদ্ধার করে তাঁকে  [[ছোট সোনা মসজিদ|ছোট সোনা মসজিদ]] প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়।


মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরকে ৭ নং সেক্টরের মেহেদিপুর (মালদহ জেলায়) সাবসেক্টরের কমান্ডার নিয়োগ করা হয়। এসময় লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান ৭ নং সেক্টরের সেক্টর-কমান্ডার ছিলেন। মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে কানসাট, আরগরার হাট ও শাহপুর সহ কয়েকটি সফল অভিযানে অসাধারণ নৈপুণ্য ও সাহসিকতার পরিচয় দেন। ফলে ডিসেম্বর মাসে রাজশাহীর চাঁপাই নওয়াবগঞ্জ দখলের জন্য তাঁকে একটি মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতৃত্ব দেয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা ও আত্মদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মানসূচক ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা এখনও তাঁর স্মৃতি বহন করছে। এগুলো হলো বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর কলেজ (বর্তমান স্বরূপনগরে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ), বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর গেট (ঢাকা সেনানিবাস), বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর হাইস্কুল (রহিমগঞ্জ), বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর সরণি (রাজশাহীর একটি সড়ক), বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর ফেরি (বিআইডব্লিউটিসি), বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর ক্লাব (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)।  [মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]
 
পাকবাহিনী ইতোমধ্যেই নওয়াবগঞ্জ শহর প্রতিরক্ষার জন্য মহানন্দা নদীর তীরে তিন কিলোমিটার এলাকা ব্যাপি বাঙ্কার নির্মাণ  করে রাখে। এ বাঙ্কারে ছিল পাঁচ ফুট গভীর গতায়াত পরিখা। লেফটেন্যান্ট কাইয়ুম, লেফটেন্যান্ট আউয়াল এবং জন পঞ্চাশেক মুক্তিযোদ্ধাসহ মহিউদ্দিন নওয়াবগঞ্জ শহরের পশ্চিমে বারঘরিয়া নামক স্থানে অবস্থান গ্রহণ করেন (১০ ডিসেম্বর)। ১৩ ডিসেম্বর প্রত্যূষে তিনি এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা সহ রেহাইচরের মধ্য দিয়ে নৌকাযোগে মহানন্দা নদী পার হন এবং অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে শত্রুর বেশ কয়েকটি বাঙ্কার দখল করে নেন। পাকিস্তানী বাহিনী তখন পশ্চাদপসরণ করে নওয়াবগঞ্জ শহরে অবস্থান নেয় এবং একটি দালানের ছাদ থেকে মেশিনগানে অনবরত গুলি চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের শহরাভিমুখে অগ্রযাত্রা ঠেকিয়ে রাখে। এই সংকটময় সময়ে মহিউদ্দিন শত্রুর মেশিনগান ধ্বংস করার পরিকল্পনা নেন। তিনি বা হাতে এসএমজি ও ডান হাতে একটি গ্রেনেড নিয়ে গোপনে ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে আসেন। হামাগুড়ি দিয়ে রাস্তা পার হয়ে তিনি দ্রুত মেশিনগানবাহী বাড়িটির দিকে ধাবিত হন। ত্বরিত গতিতে তিনি মেশিনগান বরাবর গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। বিস্ফোরিত গেনেডের আঘাতে মেশিনগানের স্থলটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়। অকস্মাৎ রাস্তার পাশের একটি দোতলা বাড়ি থেকে শত্রুর একটি গুলি তাঁর কপালে বিদ্ধ হয়, এবং সঙ্গে সঙ্গে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন (১৪ ডিসেম্বর)।
 
এতে হতোদ্যম না হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সন্ধ্যার দিকে শত্রুর অবস্থানের ওপর প্রচন্ড আক্রমণ চালায়। গভীর রাত পর্যন্ত এ আক্রমণ অব্যাহত ছিল। পাকসেনারা শেষপর্যন্ত  রাতের অন্ধকারে নওয়াবগঞ্জ শহর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ভোর রাতে মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের মৃতদেহ উদ্ধার করে তাঁকে  [[১০১৯১৭|ছোট সোনা মসজিদ]] প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়।
 
মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা ও আত্মদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মানসূচক ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা এখনও তাঁর স্মৃতি বহন করছে। এগুলো হলো বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর কলেজ (বর্তমান স্বরূপনগরে, চাঁপাই নওয়াবগঞ্জ), বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর গেট (ঢাকা সেনানিবাস), বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর হাইস্কুল (রহিমগঞ্জ), বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর সরণি (রাজশাহীর একটি সড়ক), বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর ফেরি (বিআইডব্লিউটিসি), বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর ক্লাব (চাঁপাই নওয়াবগঞ্জ)।  [মুয়ায্যম হুসায়ন খান]
 
<!-- imported from file: জাহাঙ্গীর, বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন.html-->


[[en:Jahangir, Birsrestha Mahiuddin]]
[[en:Jahangir, Birsrestha Mahiuddin]]

১৬:২০, ১৭ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

জাহাঙ্গীর, বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন  (১৯৪৯-১৯৭১)  সামরিক বাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোরের অফিসার, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ। ১৯৪৯ সালের ৭ মার্চ  বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার রহিমগঞ্জ গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা আব্দুল মোতালেব হাওলাদার ছিলেন মরমী গানের প্রতি আসক্ত এক সংসার বিবাগী ব্যক্তিত্ব। মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর মুলাদির পাতারচর প্রাইমারী স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তিনি ১৯৬৪ সালে মুলাদি মাহমুদজান পাইলট হাইস্কুল থেকে এস.এস.সি এবং ১৯৬৬ সালে বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচ.এস.সি পাশ করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে  পরিসংখ্যান বিভাগে বি.এস-সি অর্নাস ক্লাশে ভর্তি হন।

বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর

বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ১৯৬৭ সালে ১৫তম শর্ট সার্ভিস কোর্সে প্রশিক্ষণার্থী অফিসার ক্যাডেট নির্বাচিত হন এবং কাকুলে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৮  সালে ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে কমিশন্ড পদ লাভ করে তিনি ১৭৩ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নে যোগ দেন। তিনি ১৯৬৮ সালের ৩ ডিসেম্বর লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি লাভ করেন। মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ১৯৬৯-৭০ সালে রিসালপুরে মিলিটারি কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে বেসিক কোর্স ট্রেনিং এবং পরে ইনফ্যান্ট্রি স্কুল অব ট্যাক্টিক্র্  থেকে অফিসার উইপন ও ডব্লিউ কোর্স-১৩ সমাপ্ত করেন। ১৯৭০ সালের ৩০ আগষ্ট তিনি ক্যাপ্টেন পদে উন্নীত হন।

১৯৭১ সালে  মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সোয়াতের সাইদুর শরীফে ১৭৩ নম্বর ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে তিনি তাঁর তিনজন সহকর্মি ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন, ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার ও ক্যাপ্টেন আনাম সহ গোপনে ৩ জুলাই কর্মস্থল ত্যাগ করেন  এবং দুর্গম পার্বত্য এলাকা ও মুনাওয়ার তায়ী নদী অতিক্রম করে শিয়ালকোটের নিকটে সীমান্ত পার হন এবং মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।

মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরকে ৭ নং সেক্টরের মেহেদিপুর (মালদহ জেলায়) সাবসেক্টরের কমান্ডার নিয়োগ করা হয়। এসময় লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান ৭ নং সেক্টরের সেক্টর-কমান্ডার ছিলেন। মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে কানসাট, আরগরার হাট ও শাহপুর সহ কয়েকটি সফল অভিযানে অসাধারণ নৈপুণ্য ও সাহসিকতার পরিচয় দেন। ফলে ডিসেম্বর মাসে রাজশাহীর চাঁপাইনববগঞ্জ দখলের জন্য তাঁকে একটি মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতৃত্ব দেয়া হয়।

পাকবাহিনী ইতোমধ্যেই নবাবগঞ্জ শহর প্রতিরক্ষার জন্য মহানন্দা নদীর তীরে তিন কিলোমিটার এলাকা ব্যাপি বাঙ্কার নির্মাণ  করে রাখে। এ বাঙ্কারে ছিল পাঁচ ফুট গভীর গতায়াত পরিখা। লেফটেন্যান্ট কাইয়ুম, লেফটেন্যান্ট আউয়াল এবং জন পঞ্চাশেক মুক্তিযোদ্ধাসহ মহিউদ্দিন নওয়াবগঞ্জ শহরের পশ্চিমে বারঘরিয়া নামক স্থানে অবস্থান গ্রহণ করেন (১০ ডিসেম্বর)। ১৩ ডিসেম্বর প্রত্যূষে তিনি এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা সহ রেহাইচরের মধ্য দিয়ে নৌকাযোগে মহানন্দা নদী পার হন এবং অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে শত্রুর বেশ কয়েকটি বাঙ্কার দখল করে নেন। পাকিস্তানী বাহিনী তখন পশ্চাদপসরণ করে নওয়াবগঞ্জ শহরে অবস্থান নেয় এবং একটি দালানের ছাদ থেকে মেশিনগানে অনবরত গুলি চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের শহরাভিমুখে অগ্রযাত্রা ঠেকিয়ে রাখে। এই সংকটময় সময়ে মহিউদ্দিন শত্রুর মেশিনগান ধ্বংস করার পরিকল্পনা নেন। তিনি বা হাতে এসএমজি ও ডান হাতে একটি গ্রেনেড নিয়ে গোপনে ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে আসেন। হামাগুড়ি দিয়ে রাস্তা পার হয়ে তিনি দ্রুত মেশিনগানবাহী বাড়িটির দিকে ধাবিত হন। ত্বরিত গতিতে তিনি মেশিনগান বরাবর গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। বিস্ফোরিত গেনেডের আঘাতে মেশিনগানের স্থলটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়। অকস্মাৎ রাস্তার পাশের একটি দোতলা বাড়ি থেকে শত্রুর একটি গুলি তাঁর কপালে বিদ্ধ হয়, এবং সঙ্গে সঙ্গে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন (১৪ ডিসেম্বর)।

এতে হতোদ্যম না হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সন্ধ্যার দিকে শত্রুর অবস্থানের ওপর প্রচন্ড আক্রমণ চালায়। গভীর রাত পর্যন্ত এ আক্রমণ অব্যাহত ছিল। পাকসেনারা শেষপর্যন্ত  রাতের অন্ধকারে নওয়াবগঞ্জ শহর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ভোর রাতে মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের মৃতদেহ উদ্ধার করে তাঁকে  ছোট সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা ও আত্মদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মানসূচক ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা এখনও তাঁর স্মৃতি বহন করছে। এগুলো হলো বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর কলেজ (বর্তমান স্বরূপনগরে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ), বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর গেট (ঢাকা সেনানিবাস), বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর হাইস্কুল (রহিমগঞ্জ), বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর সরণি (রাজশাহীর একটি সড়ক), বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর ফেরি (বিআইডব্লিউটিসি), বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর ক্লাব (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)।  [মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]