জামালপুর সদর উপজেলা

জামালপুর সদর উপজেলা (জামালপুর জেলা) আয়তন: ৫০৮.৮০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৪২´ থেকে ২৪°৫৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৫২´ থেকে ৯০°১২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে শেরপুর সদর এবং নকলা উপজেলা, দক্ষিণে মধুপুর, ধনবাড়ী ও মুক্তাগাছা উপজেলা, পূর্বে মুক্তাগাছা ও ময়মনসিংহ সদর উপজেলা, পশ্চিমে মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলা।

জনসংখ্যা ৬১৫০৭২; পুরুষ ৩০১৯১২, মহিলা ৩১৩১৬০। মুসলিম ৬০৩২৩০, হিন্দু ১১৩৩৬, বৌদ্ধ ২, খ্রিস্টান ২৯৪ এবং অন্যান্য ২১০। এ উপজেলায় গারো, কোচ প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, বানার, মাদারদহ। বামুনজি বিল, শিংগার বিল, চাতাল বিল, বুবিল বিল ও রাওহা বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন জামালপুর সদর থানা গঠিত হয় ১৮৫৩ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে। পৌরসভা গঠিত হয় ১৮৬৯ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৫ ২৫৩ ৩৬৫ ১৫০১৭২ ৪৬৪৯০০ ১২০৯ ৫৫.৫ (২০০১) ৪১.৯
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৫৩.২৮ (২০০১) ১২ ৭৬ ১৪২৭৬৪ ২২৭০ (২০০১) ৬২.১
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১.৮৮ (২০০১) ৭৪০৮ ৩৮১৪ (২০০১) ৬৫.৮
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
ইটাইল ২৩ ৬৩৭১ ১১৯৫৮ ১২৬৮১ ৪০.৭
কেন্দুয়া ৩৫ ৭২৮৪ ১৭২৪২ ১৮১২৯ ৪৭.৫
ঘোড়াধাপ ১৭ ৭৪২৩ ১৪১২৩ ১৪৭০৯ ৪৬.৮
তিতপল্লা ৮৯ ৭৬৪৯ ১৫৫৬৬ ১৬৫১০ ৪৫.৯
তুলসির চর ৯৫ ৯৮২২ ১৩৫৫৪ ১৩৬১৮ ৩৫.৫
দিগপাইথ ১৯ ৬৪৮৫ ১৫৯১৬ ১৬৯৪১ ৩৭.১
নারুন্দি ৫৩ ৬৬৮৪ ১৪৪৮৬ ১৫০৫৮ ৪৪.৩
বাঁশচড়া ১৩ ৮৯৪৮ ১৪৩৫৮ ১৫০৭৭ ৪৩.৮
মেশ্টা ৪৭ ৭২৫০ ১৫৮০৬ ১৬৮১৮ ৪৩.৫
রশীদপুর ৬৫ ৬৮৬১ ১৩৭৬২ ১৪৬২২ ৩৫.৫
রানাগাছা ৫৯ ৭৪০২ ১৯০৩১ ২০৪৪০ ৪৮.৭
লক্ষ্মীরচর ৪১ ৬৪২৪ ১৩৬৮৪ ১৩৮১০ ৩২.৯
শরীফপুর ৭৭ ৭৯৫১ ২১০৬২ ২১৯০৫ ৪৫.৭
শাহবাজপুর ৭১ ৮৬১৫ ১৭৬০৬ ১৮৪৬৩ ৪০.৫
শ্রীপুর ৮৩ ৭৫২৭ ১২৩৪০ ১৩০৩৩ ৩৮.৮

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ হযরত শাহ্ জামালের (রঃ) মাযার, দয়াময়ী মন্দির, রাধানাথ জিউর মন্দির।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ৭ জুন পাকবাহিনী বাউশী স্পেশাল ট্রেন থেকে কয়েকজন লোককে ওয়াপদা ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায় এবং ২১ জুন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে শ্মশান ঘাটে ৯জন লোককে হত্যা করে। ২৫শে জুন তারিখে উপজেলার নরুন্দি রেললাইনে এবং আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে নান্দিনায় পাকসেনা ও রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে ৯ ডিসেম্বর জামালপুর সদরে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুজিব বাহিনী ও মিত্রবাহিনীর এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ২৩৫ জন পাকসেনা নিহত হয় ও যৌথবাহিনীর হাতে ৬১ জন পাকসেনা বন্দি হয়। উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ১টি গণকবর ও ১টি বধ্যভূমি রয়েছে; ১টি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন জামালপুর সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৭৮২, মন্দির ১৬, গির্জা ৭, প্যাগোডা ১, তীর্থস্থান ১।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৭.০%; পুরুষ ৪৯.৬%, মহিলা ৪৪.৫%। বিশ্ববিদ্যালয় ৫, কলেজ ২, মাধ্যামিক বিদ্যালয় ৮, ভোকেশনাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ১। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সরকারি আশেক মাহ্মুদ কলেজ (১৯৪৬), সরকারি জাহেদা সফির মহিলা কলেজ (১৯৬৭), জামালপুর জিলা স্কুল (১৮৮১), জামালপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮২), সিংহজানী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০১), সিংহজানী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), কৈডোলা শাহবাজপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২০), বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৪), শ্রীরামপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৭), রশিদপুর এন ইউ ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৩০), নান্দিনা মহারাণী হেমন্ত কুমারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৫)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী  দৈনিক: জনবাংলা, পল্লীর আলো; সাপ্তাহিক: সচেতন কণ্ঠ, পূর্বকথা, জামালপুর সংবাদ, জনক, জামালপুর সাতদিন, জগৎ, নবতান, ঝিনাই, ঊর্মি বাংলা, সাপ্তাহিক জামালপুর বার্তা, সাপ্তাহিক কালাকাল, মুক্ত আলো, পল্লীবাণী; সাহিত্য পত্রিকা: পাতায় পাতায়, লোক, ঋদ্ধি, ছন্দে ঝিনাই।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১০, ক্লাব ৬৭, সিনেমা হল ৪, নাট্যমঞ্চ ১, যাত্রাদল ১০, নাট্যদল ১৩, মহিলা সংগঠন ১০, খেলার মাঠ ৫৮।

দর্শনীয় স্থান নান্দিনার শোলাকুড়ি পাহাড়, শ্রীপুরের রানীপুকুর দিঘি, চন্দ্রার হরিশচন্দ্রের দিঘি।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৭.৪৮%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৫১%, শিল্প ০.৮১%, ব্যবসা ১৩.৪৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৭৫%, চাকরি ৭.৮০%, নির্মাণ ১.৮৪%, ধর্মীয় সেবা ০.১৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৪৫% এবং অন্যান্য ৯.৭৩%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৫.৭৬%, ভূমিহীন ৪৪.২৪%। শহরে ৪১.৩৭% এবং গ্রামে ৫৯.৬১% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, আলু, বেগুন, পিঁয়াজ, রসুন, পান, তুত, সরিষা, আখ, মিষ্টি আলু।

বিলুপ্ত ও বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  তিল, কাউন, তিসি, অড়হর।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপে, কুল, আতা, আনারস।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৫০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১০৩ কিমি, কাঁচারাস্তা ৭৪৩ কিমি; নৌপথ ৩৫ কিমি; রেলপথ ৪৬ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা রাসায়নিক শিল্প, সার কারখানা, মসলা শিল্প, চাল কল, আটা কল, তেল কল, আইসক্রিম ফ্যাক্টরি, চিড়া কল, ছাপাখানা প্রভৃতি।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, হস্তশিল্প, বিড়িশিল্প, প্লাস্টিক সামগ্রী, চুড়িশিল্প, খেলনা সামগ্রী, কাঁচশিল্প।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৫২, মেলা ২। নান্দিনা বাজার, আনন্দগঞ্জ বাজার, নারুন্দি বাজার, কেন্দুয়া বাজার ও হাজীপুর বাজার এবং দয়াময়ী মেলা, গোপালপুর মেলা,  নারুন্দিতে চৈত্র সংক্রান্তির মেলা ও উপজেলা সদরে অষ্টমীর মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  পাট, চামড়া, রসুন, পিঁয়াজ, পান, বেগুন, আনারস, আলু।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫০.০% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয় জলের উৎস নলকূপ ৯৬.১%, ট্যাপ ০.১% এবং অন্যান্য ৩.৮%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৫৩.৮% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৮.৪% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৭.৮% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র সরকারি হাসপাতাল ১, রেলওয়ে হাসপাতাল ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১০, কমিউনিটি ক্লিনিক ৬০, মাতৃসদন কেন্দ্র ১, ডায়াবেটিস হাসপাতাল ১, কুষ্ঠ ক্লিনিক ১, টিবি ক্লিনিক ১, ডেন্টাল ক্লিনিক ১, চক্ষু হাসপাতাল ১, প্রাইভেট হেলথ কমপ্লেক্স ৩, দাতব্য চিকিৎসালয় ১।

এনজিও আশা, ব্র্যাক, এফএইচডি, গউস, বৃক্ষ রোপণ, এআরডি, সমাজ প্রগতি সংস্থা, আর.বি.সি, প্রগ্রেস।  [এম.এ রহিম তালুকদার]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; জামালপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।