জাতীয় আয়: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''জাতীয় আয়'''  কোনো একটা নির্দিষ্ট সময় (সাধারণত এক বছরে) দেশে উৎপাদিত দ্রব্য এবং সেবাসমূহের মোট মূল্যমান। জাতীয় আয়ের পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন ধারণা হচ্ছে যথাক্রমে: মোট জাতীয় উৎপাদন (জিএনপি), নীট জাতীয় উৎপাদন (এনএনপি), জাতীয় আয় (এনআই), ব্যক্তিগত আয় এবং ব্যয়যোগ্য আয়। একটি সাধারণ নির্দেশক হিসেবে জাতীয় আয় একটি দেশের সম্পদ ব্যবহারের দক্ষতার পর্যায় সম্পর্কে ধারণা দেয়।
'''জাতীয় আয়''' কোনো একটা নির্দিষ্ট সময় (সাধারণত এক বছরে) দেশে উৎপাদিত দ্রব্য এবং সেবাসমূহের মোট মূল্যমান। জাতীয় আয়ের পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন ধারণা হচ্ছে যথাক্রমে: মোট জাতীয় উৎপাদন (জিএনপি), নীট জাতীয় উৎপাদন (এনএনপি), জাতীয় আয় (এনআই), ব্যক্তিগত আয় এবং ব্যয়যোগ্য আয়। একটি সাধারণ নির্দেশক হিসেবে জাতীয় আয় একটি দেশের সম্পদ ব্যবহারের দক্ষতার পর্যায় সম্পর্কে ধারণা দেয়।


করাচিতে জাতীয় পরিসংখ্যান অফিস (সিএসও) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ শতকের পঞ্চাশের দশকের প্রথমার্ধে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের জাতীয় আয়ের হিসাব প্রাক্কলন আরম্ভ করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে সিএসও কিছু খাতের জন্য উৎপাদনের উপাদান ব্যয়ভিত্তিক নীট জাতীয় উৎপাদন, কোনো কোনো খাতের জন্য নীট মূল্যসংযোজন ভিত্তিক পরিমাপন এবং উৎপাদনের বিভিন্ন উপাদান হিসাব করে পুঞ্জীভূত আয় প্রাক্কলনের পরোক্ষ পদ্ধতির মাধ্যমে জাতীয় আয় হিসাব চালু করে। কিছু ক্ষেত্রে ব্যয় পদ্ধতিও ব্যবহার করা হয়। কিন্তু উপাত্তসমূহ ছিল অপর্যাপ্ত এবং এতে বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক কার্যক্রম জাতীয় আয়ের আওতার বাইরে থেকে যায়। পরবর্তীকালে জাতীয় আয়ের প্রাক্কলন পদ্ধতি পুনর্বিন্যাসের জন্য ১৯৬৫ সালে গঠিত পাকিস্তান জাতীয় আয় কমিশন বাস্তব অনুপাত ও সহগ ব্যবহারের মাধ্যমে জাতীয় আয় পরিমাপের অধিকতর প্রায়োগিক পদ্ধতি সুপারিশ করে। ১৯৪৯-৫০ সালে পূর্ব পাকিস্তানে স্থির বাজারমূল্যে জিএনপি দাঁড়ায় ১১.৫৭ বিলিয়ন টাকা এবং ১৯৫৪-৫৫ সালে দাঁড়ায় ১৩.২৯ বিলিয়ন টাকা। এ দুই বছরে মাথাপিছু জাতীয় আয় ছিল যথাক্রমে ২৬৭ টাকা এবং ২৭১ টাকা। বাংলাদেশে জাতীয় আয় প্রাক্কলনের পদ্ধতি মূলত পাকিস্তান আমলের মতো একই থেকে যায় এবং  [[বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস|বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো]] (বিবিএস)কে জাতীয় আয় পরিমাপের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ব্যুরো প্রথম দিকে ১৯৬৮ সালে জাতিসংঘ পরিসংখ্যান অফিস (আনসো) কর্তৃক প্রকাশিত জাতীয় হিসাব ব্যবস্থা (এসএনএ) ম্যানুয়েলের সংশোধিত সংস্করণ ব্যবহার করে। ১৯৭৫ সালের পর বিবিএস চলতি ও স্থির মূল্যে (১৯৭২-৭৩) শিল্পজাত জিডিপি প্রাক্কলন সম্পর্কিত ব্যাপক গণনাভিত্তিক একটি মিশ্র ব্যবস্থা অনুসরণ করে। বিবিএস কর্তৃক জাতীয় আয় প্রাক্কলনের এ পদ্ধতি মূলত উৎপাদনের পরিমাপের ওপর ভিত্তি করে গঠিত বলে এটি উৎপাদন পদ্ধতি নামেও পরিচিত। এ পদ্ধতির অধীনে অর্থনীতিকে এগারোটি খাতে বিভক্ত করা হয় এবং প্রতিটি খাতের জন্য বাজার দরে মূল্যসংযোজন হিসাব করা হয় প্রকৃত মূল্য থেকে, অথবা উপাত্ত অপ্রতুল হলে, আরোপিত হিসাবের মাধ্যমে।
করাচিতে জাতীয় পরিসংখ্যান অফিস (সিএসও) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ শতকের পঞ্চাশের দশকের প্রথমার্ধে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের জাতীয় আয়ের হিসাব প্রাক্কলন আরম্ভ করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে সিএসও কিছু খাতের জন্য উৎপাদনের উপাদান ব্যয়ভিত্তিক নীট জাতীয় উৎপাদন, কোনো কোনো খাতের জন্য নীট মূল্যসংযোজন ভিত্তিক পরিমাপন এবং উৎপাদনের বিভিন্ন উপাদান হিসাব করে পুঞ্জীভূত আয় প্রাক্কলনের পরোক্ষ পদ্ধতির মাধ্যমে জাতীয় আয় হিসাব চালু করে। কিছু ক্ষেত্রে ব্যয় পদ্ধতিও ব্যবহার করা হয়। কিন্তু উপাত্তসমূহ ছিল অপর্যাপ্ত এবং এতে বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক কার্যক্রম জাতীয় আয়ের আওতার বাইরে থেকে যায়। পরবর্তীকালে জাতীয় আয়ের প্রাক্কলন পদ্ধতি পুনর্বিন্যাসের জন্য ১৯৬৫ সালে গঠিত পাকিস্তান জাতীয় আয় কমিশন বাস্তব অনুপাত ও সহগ ব্যবহারের মাধ্যমে জাতীয় আয় পরিমাপের অধিকতর প্রায়োগিক পদ্ধতি সুপারিশ করে। ১৯৪৯-৫০ সালে পূর্ব পাকিস্তানে স্থির বাজারমূল্যে জিএনপি দাঁড়ায় ১১.৫৭ বিলিয়ন টাকা এবং ১৯৫৪-৫৫ সালে দাঁড়ায় ১৩.২৯ বিলিয়ন টাকা। এ দুই বছরে মাথাপিছু জাতীয় আয় ছিল যথাক্রমে ২৬৭ টাকা এবং ২৭১ টাকা। বাংলাদেশে জাতীয় আয় প্রাক্কলনের পদ্ধতি মূলত পাকিস্তান আমলের মতো একই থেকে যায় এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)কে জাতীয় আয় পরিমাপের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ব্যুরো প্রথম দিকে ১৯৬৮ সালে জাতিসংঘ পরিসংখ্যান অফিস (আনসো) কর্তৃক প্রকাশিত জাতীয় হিসাব ব্যবস্থা (এসএনএ) ম্যানুয়েলের সংশোধিত সংস্করণ ব্যবহার করে। ১৯৭৫ সালের পর বিবিএস চলতি ও স্থির মূল্যে (১৯৭২-৭৩) শিল্পজাত জিডিপি প্রাক্কলন সম্পর্কিত ব্যাপক গণনাভিত্তিক একটি মিশ্র ব্যবস্থা অনুসরণ করে। বিবিএস কর্তৃক জাতীয় আয় প্রাক্কলনের এ পদ্ধতি মূলত উৎপাদনের পরিমাপের ওপর ভিত্তি করে গঠিত বলে এটি উৎপাদন পদ্ধতি নামেও পরিচিত। এ পদ্ধতির অধীনে অর্থনীতিকে এগারোটি খাতে বিভক্ত করা হয় এবং প্রতিটি খাতের জন্য বাজার দরে মূল্যসংযোজন হিসাব করা হয় প্রকৃত মূল্য থেকে, অথবা উপাত্ত অপ্রতুল হলে, আরোপিত হিসাবের মাধ্যমে।


[[পরিকল্পনা কমিশন|পরিকল্পনা কমিশন]] দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (১৯৮০-৮৫) সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন পরীক্ষা ও প্রাক্কলনকে সহায়তা করার লক্ষ্যে ১৯৭৬-৭৭ সালে ৪৭ খাতবিশিষ্ট একটি উপাদান-উৎপাদন (input-output) ছক প্রণয়ন করেছে। ছকটি হালনাগাদকরণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে কমিশন প্রতিবছর এ সকল খাতে আয়ের প্রাক্কলনের ভিত্তিতে স্থির বাজারমূল্যে জিডিপি প্রাক্কলনের কাজ অব্যাহত রাখে। বিবিএস-এর মতো না করে, পরিকল্পনা কমিশন প্রথমে একটি বছরে স্থির উৎপাদন ব্যয়ে জিডিপির প্রাক্কলন তৈরি করে এবং এরপর মুদ্রাস্ফীতি সমন্বয়কারী সূচকের মাধ্যমে একে চলতি মূল্যে প্রাক্কলনে পরিণত করে। অবশ্য, বিবিএস-ও প্রতিবছর তার নিজস্ব প্রাক্কলন তৈরি করতে থাকে এবং এ সকল প্রাক্কলন পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রস্ত্ততি এবং সাহায্যদাতা কনসোর্টিয়ামের বৈঠকের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চূড়ান্তকরণ ও বিদেশি সাহায্যের জন্য পর্যালোচনা কার্যে ব্যবহার করা হয়। উৎপাদনের উপাদানসমূহের চলতি বাজারদরের ভিত্তিতে বিবিএস-এর প্রাক্কলনসমূহ তৈরি করার পর মুদ্রাস্ফীতি সমন্বয়ের সূচক দ্বারা সেগুলির মান স্থির মূল্যে গণ্য হিসাবে পরিণত করা হয়। চলতি ও স্থিরমূল্যের ওপর ভিত্তি করে প্রস্ত্তত জিডিপির প্রাক্কলন-উৎপাদন পদ্ধতি অনুসরণে তৈরি হয় এবং ১৯৮৮-৮৯ সাল পর্যন্ত জিডিপির স্থিরমূল্যে প্রাক্কলনের জন্য ১৯৭২-৭৩ সালকে ভিত্তিবছর হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ১৯৮৮-৮৯ সালে ভিত্তিবছর পরিবর্তন করে ১৯৮৪-৮৫ কে নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে ১৯৯৫-৯৬ সালকে ভিত্তি বছর ধরে স্থিরমূল্যে জিডিপি নির্ণয় করা হচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশন দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (১৯৮০-৮৫) সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন পরীক্ষা ও প্রাক্কলনকে সহায়তা করার লক্ষ্যে ১৯৭৬-৭৭ সালে ৪৭ খাতবিশিষ্ট একটি উপাদান-উৎপাদন (input-output) ছক প্রণয়ন করে। ছকটি হালনাগাদকরণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে কমিশন প্রতিবছর এ সকল খাতে আয়ের প্রাক্কলনের ভিত্তিতে স্থির বাজারমূল্যে জিডিপি প্রাক্কলনের কাজ অব্যাহত রাখে। বিবিএস-এর মতো না করে, পরিকল্পনা কমিশন প্রথমে একটি বছরে স্থির উৎপাদন ব্যয়ে জিডিপির প্রাক্কলন তৈরি করে এবং এরপর মুদ্রাস্ফীতি সমন্বয়কারী সূচকের মাধ্যমে একে চলতি মূল্যে প্রাক্কলনে পরিণত করে। অবশ্য, বিবিএস-ও প্রতিবছর তার নিজস্ব প্রাক্কলন তৈরি করতে থাকে এবং এ সকল প্রাক্কলন পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রস্ত্ততি এবং সাহায্যদাতা কনসোর্টিয়ামের বৈঠকের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চূড়ান্তকরণ ও বিদেশি সাহায্যের জন্য পর্যালোচনা কার্যে ব্যবহার করা হয়। উৎপাদনের উপাদানসমূহের চলতি বাজারদরের ভিত্তিতে বিবিএস-এর প্রাক্কলনসমূহ তৈরি করার পর মুদ্রাস্ফীতি সমন্বয়ের সূচক দ্বারা সেগুলির মান স্থির মূল্যে গণ্য হিসাবে পরিণত করা হয়। চলতি ও স্থিরমূল্যের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুত জিডিপির প্রাক্কলন-উৎপাদন পদ্ধতি অনুসরণে তৈরি হয় এবং ১৯৮৮-৮৯ সাল পর্যন্ত জিডিপির স্থিরমূল্যে প্রাক্কলনের জন্য ১৯৭২-৭৩ সালকে ভিত্তিবছর হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ১৯৮৮-৮৯ সালে ভিত্তিবছর পরিবর্তন করে ১৯৮৪-৮৫ কে নির্ধারণ করা হয়। এরপর ভিত্তিবছর যথাক্রমে ১৯৯৫-৯৬, ২০০৫-০৬ এবং সর্বশেষ ২০১৫-১৬ ভিত্তিবছর নির্ধারিত হয়েছে।


জিডিপি গণনার জন্য গৃহীত ব্যয়সমূহ ছয়টি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত; যেমন, বেসরকারি চূড়ান্ত ভোগ ব্যয়, সরকারি চূড়ান্ত ভোগ ব্যয়, মজুত মালামালে পরিবর্তন, গঠিত মোট স্থির মূলধন, পণ্য ও সেবার রপ্তানি এবং পণ্য ও সেবার আমদানি। বিবিএস এবং পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক জাতীয় আয় পরিমাপের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতির ব্যবহার সাময়িক বিবেচনায় জিডিপির মূল্যে গরমিল সৃষ্টি করে। প্রকাশনার ভিন্ন সময় এবং ভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে একই বছরের জন্য প্রাক্কলন পরিমাণও প্রবৃদ্ধির ভিন্ন ভিন্ন অঙ্ক প্রদর্শন করে।
জিডিপি গণনার জন্য গৃহীত ব্যয়সমূহ ছয়টি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত; যেমন, বেসরকারি চূড়ান্ত ভোগ ব্যয়, সরকারি চূড়ান্ত ভোগ ব্যয়, মজুত মালামালে পরিবর্তন, গঠিত মোট স্থির মূলধন, পণ্য ও সেবার রপ্তানি এবং পণ্য ও সেবার আমদানি। বিবিএস এবং পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক জাতীয় আয় পরিমাপের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতির ব্যবহার সাময়িক বিবেচনায় জিডিপির মূল্যে গরমিল ভিন্নতা সৃষ্টি করে। প্রকাশনার ভিন্ন সময় এবং ভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে একই বছরের জন্য প্রাক্কলন পরিমাণও প্রবৃদ্ধির ভিন্ন ভিন্ন অঙ্ক প্রদর্শন করে।


ঐ শতকের আশির দশকে উৎপাদন এবং জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতি উভয়ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার ১০ মার্চ ১৯৮৮ সালে একটি জাতীয় আয় কমিশন প্রতিষ্ঠা করে। এ কমিশন দেশি এবং বিদেশি বিশেষজ্ঞগণ কর্তৃক প্রস্ত্ততকৃত সকল প্রতিবেদন মূল্যায়ন করে। এসব প্রতিবেদন আইএমএফ, ইউএনডিপি, এসকাপ ও অন্যান্য সংস্থার আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশে জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতিসমূহ এবং জাতীয় আয় পরিমাপের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গভীরভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রণীত হয়। উক্ত প্রতিবেদনসমূহ পর্যালোচনা করে এবং উপাত্তের পর্যাপ্ততা ও তা সংগ্রহের প্রক্রিয়া বিবেচনা করে কমিশন জাতীয় আয় গণনা পদ্ধতির ওপর একটি নিজস্ব প্রতিবেদন প্রস্ত্তত করে। ১৯৯০-এর ২২ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদনটি সরকারের নিকট পেশ করা হয়। পর্যায়ক্রমে তিন বছরে বাস্তবায়নযোগ্য প্রতিবেদনের প্রধান সুপারিশসমূহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল বিবিএস-এর পুনর্গঠন, এর জনশক্তির দক্ষতা ও যোগ্যতা উন্নয়নের মাধ্যমে একে শক্তিশালীকরণ এবং বিবিএসকে যথাযথ দায়িত্ব অর্পণ। কমিশন ১৯৮৬ সালের  [[আদমশুমারি|আদমশুমারি]] এর মাধ্যমে প্রাপ্ত কাঠামো ব্যবহার করে অকৃষি পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের নমুনা জরিপ সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দেয়। এছাড়া, বেসরকারি খাতে ভোগ, বছরের শেষে উৎপাদনকারী, ব্যবসায়ী ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক ইউনিটের হাতে পড়ে থাকা স্টকের বছরান্ত তথ্য এবং বেসরকারি খাতের সঞ্চয়ের ওপর তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণেরও পরামর্শ দেয়। জাতিসংঘ পরিসংখ্যান বিভাগের সহায়তায় বিবিএস ধাপে ধাপে এসএনএ-১৯৯৩ প্রচলনের একটি কর্মসূচি চালু করে।
ঐ শতকের আশির দশকে উৎপাদন এবং জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতি উভয়ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার ১০ মার্চ ১৯৮৮ সালে একটি জাতীয় আয় কমিশন প্রতিষ্ঠা করে। এ কমিশন দেশি এবং বিদেশি বিশেষজ্ঞগণ কর্তৃক প্রস্তুকৃত সকল প্রতিবেদন মূল্যায়ন করে। এসব প্রতিবেদন আইএমএফ, ইউএনডিপি, এসকাপ ও অন্যান্য সংস্থার আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশে জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতিসমূহ এবং জাতীয় আয় পরিমাপের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গভীরভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রণীত হয়। উক্ত প্রতিবেদনসমূহ পর্যালোচনা করে এবং উপাত্তের পর্যাপ্ততা ও তা সংগ্রহের প্রক্রিয়া বিবেচনা করে কমিশন জাতীয় আয় গণনা পদ্ধতির ওপর একটি নিজস্ব প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। ১৯৯০-এর ২২ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদনটি সরকারের নিকট পেশ করা হয়। পর্যায়ক্রমে তিন বছরে বাস্তবায়নযোগ্য প্রতিবেদনের প্রধান সুপারিশসমূহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল বিবিএস-এর পুনর্গঠন, এর জনশক্তির দক্ষতা ও যোগ্যতা উন্নয়নের মাধ্যমে একে শক্তিশালীকরণ এবং বিবিএসকে যথাযথ দায়িত্ব অর্পণ। কমিশন ১৯৮৬ সালের আদমশুমারি এর মাধ্যমে প্রাপ্ত কাঠামো ব্যবহার করে অকৃষি পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের নমুনা জরিপ সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দেয়। এছাড়া, বেসরকারি খাতে ভোগ, বছরের শেষে উৎপাদনকারী, ব্যবসায়ী ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক ইউনিটের হাতে পড়ে থাকা স্টকের বছরান্ত তথ্য এবং বেসরকারি খাতের সঞ্চয়ের ওপর তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণেরও পরামর্শ দেয়। জাতিসংঘ পরিসংখ্যান বিভাগের সহায়তায় বিবিএস ধাপে ধাপে এসএনএ-১৯৯৩ প্রচলনের একটি কর্মসূচি চালু করে।


১৯৭২-৭৩ থেকে ১৯৯১-৯২ পর্যন্ত কুড়ি বছর সময় ধরে বিবিএস বাংলাদেশের জন্য এর নিজস্ব জাতীয় হিসাব কাঠামো ব্যবহার করে ১১টি শিল্প বা প্রচলিত খাতের জন্য মূল্যসংযোজন গণনা করে। এগুলি হচ্ছে শস্য, পশুসম্পদ,  [[বনায়ন|বনায়ন]] ও মৎস্যের সমন্বয়ে কৃষিখাত; খনি ও পাথর অনুসন্ধান; বৃহৎ ও ক্ষুদ্র উপখাতের সমন্বয়ে উৎপাদন খাত; নির্মাণ; বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি এবং স্বাস্যহ সেবা; সংগঠিত ও অসংগঠিত সড়ক, বিমান ও নৌ পরিবহণ, যোগাযোগ এবং গুদামের মতো উপখাতসহ গুদামজাতকরণ ও যোগাযোগ; বাণিজ্য; গৃহায়ণ; সরকারি প্রশাসন ও প্রতিরক্ষা; ব্যাংকিং ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং জীবন ও সাধারণ বীমা; শিক্ষা, চিকিৎসা, আইন পেশা, ব্যক্তিগত শুশ্রূষা, ধর্মীয় সেবা, শান্তি ও বিনোদন এবং গৃহস্থালি ও অন্যান্য সেবাসহ পেশাগত ও বিবিধ সেবা। সরকারের বাজেট ও হিসাবে পদ্ধতির সাথে সঙ্গতি রেখে জিডিপি প্রাক্কলনসমূহ প্রস্ত্তত করা হয় আর্থিক বছরের ভিত্তিতে (জুলাই-জুন মেয়াদকালের জন্য), [[পঞ্জিকা|পঞ্জিকা]] বছরের ভিত্তিতে নয়।
১৯৭২-৭৩ থেকে ১৯৯১-৯২ পর্যন্ত কুড়ি বছর সময় ধরে বিবিএস বাংলাদেশের জন্য এর নিজস্ব জাতীয় হিসাব কাঠামো ব্যবহার করে ১১টি শিল্প বা প্রচলিত খাতের জন্য মূল্যসংযোজন গণনা করে। এগুলি হচ্ছে শস্য, পশুসম্পদ, বনায়ন ও মৎস্যের সমন্বয়ে কৃষিখাত; খনি ও পাথর অনুসন্ধান; বৃহৎ ও ক্ষুদ্র উপখাতের সমন্বয়ে উৎপাদন খাত; নির্মাণ; বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি এবং স্বাস্যহ সেবা; সংগঠিত ও অসংগঠিত সড়ক, বিমান ও নৌ পরিবহণ, যোগাযোগ এবং গুদামের মতো উপখাতসহ গুদামজাতকরণ ও যোগাযোগ; বাণিজ্য; গৃহায়ণ; সরকারি প্রশাসন ও প্রতিরক্ষা; ব্যাংকিং ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং জীবন ও সাধারণ বীমা; শিক্ষা, চিকিৎসা, আইন পেশা, ব্যক্তিগত শুশ্রূষা, ধর্মীয় সেবা, শান্তি ও বিনোদন এবং গৃহস্থালি ও অন্যান্য সেবাসহ পেশাগত ও বিবিধ সেবা। সরকারের বাজেট ও হিসাবে পদ্ধতির সাথে সঙ্গতি রেখে জিডিপি প্রাক্কলনসমূহ প্রস্ত্তত করা হয় আর্থিক বছরের ভিত্তিতে (জুলাই-জুন মেয়াদকালের জন্য), পঞ্জিকা বছরের ভিত্তিতে নয়।


বাংলাদেশে জাতীয় আয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন খাতের অবদান সম্পর্কিত পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে (সারণি দ্রষ্টব্য), সময়ের সাথে জাতীয় আয়ে কৃষির অবদান কমেছে। পক্ষান্তরে, পেশাগত ও বিবিধ সেবা এবং লোক প্রশাসন ও প্রতিরক্ষা খাতের অবদান উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেলেও বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যতীত অন্যান্য খাতে অবদান প্রায় স্থির থেকেছে। ১৯৭২-৮০ সালের মধ্যে উৎপাদন খাতের অবদান উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছিল কিন্তু পরবর্তীতে তা হ্রাস পেয়েছে। অধিকন্তু, নির্মাণ, গৃহায়ণ, ব্যবসায় সেবা এবং  [[পরিবহণ|পরিবহণ]] ও যোগাযোগের মতো খাতসমূহের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের একটি আপাত উচ্চ প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও ১৯৭২-৯৯ মেয়াদকালে জাতীয় আয়ে এ সকল খাতের অবদান সামান্যই বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশে জাতীয় আয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন খাতের অবদান সম্পর্কিত পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে (সারণি দ্রষ্টব্য), সময়ের সাথে জাতীয় আয়ে কৃষির অবদান কমেছে। পক্ষান্তরে, পেশাগত ও বিবিধ সেবা এবং লোক প্রশাসন ও প্রতিরক্ষা খাতের অবদান উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেলেও বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যতীত অন্যান্য খাতে অবদান প্রায় স্থির থেকেছে। ১৯৭২-৮০ সালের মধ্যে উৎপাদন খাতের অবদান উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছিল কিন্তু পরবর্তীতে তা হ্রাস পেয়েছে। অধিকন্তু, নির্মাণ, গৃহায়ণ, ব্যবসায় সেবা এবং পরিবহন ও যোগাযোগের মতো খাতসমূহের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের একটি আপাত উচ্চ প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও ১৯৭২-৯৯ মেয়াদকালে জাতীয় আয়ে এ সকল খাতের অবদান সামান্যই বৃদ্ধি পেয়েছে।


''সারণি'' জাতীয় আয়ে বিভিন্ন খাতের অবদান (%)।
ভৌত অবকাঠামোর (সড়ক, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ব্যাংক, বাজার, স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রসমূহের) উন্নয়ন গ্রামীণ পরিবারের আয়ের ওপর একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ১৬টি গ্রামের ওপর পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে যে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে শস্য আয় বেড়েছে ২৪%, মজুরি বেড়েছে ৯২% এবং পশুসম্পদ ও মৎস্য থেকে আয় বেড়েছে ৭৮%, অকৃষি ব্যবসায় থেকেও আয় বেড়েছে ১৭%।
{| class="table table-bordered table-hover"
 
''লেখচিত্র ১''  মাথাপিছু জাতীয় আয় (মার্কিন ডলারে) এর সাথে ভোগ ও সঞ্চয় ব্যয় প্রবণতা
 
[[Image:B_NationalIncomeFig-01.jpg|right|thumbnail|600px|''সূত্র'' বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি)]]
 
বাংলাদেশের জিডিপি চলতি মূল্যে ১৯৭২-৭৩ সালে ছিল ৪৯.৮৫ বিলিয়ন টাকা এবং ১৯৭৯-৮০ সালে তা চারগুণ বেড়ে যায়। ১৯৮৯-৯০ সালে তা পনের গুণ বাড়ে এবং ১৯৯৯-২০০০ সালে তা আটচল্লিশ গুণেরও বেশি বাড়ে। অবশ্য স্থির মূল্যে (১৯৮৪-৮৫) জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার চলতি মূল্যের চেয়ে অনেক ধীর ছিল বলে দেখা যায়। ১৯৭২-৭৩ সালে স্থির মূল্যে জিডিপির প্রাক্কলন করা হয় ২৬৪.৫৫ বিলিয়ন টাকা এবং ১৯৭৯-৮০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪১.৩ বিলিয়ন টাকা, ১৯৮৯-৯০ সালে ৪৯৭.৫৩ বিলিয়ন টাকা এবং ১৯৯৯-২০০০ সালে ২,০৪৯.৩০ বিলিয়ন টাকা। স্থির ও চলতি মূল্যে ১৯৭২ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে ৩০ বছরে দেশে সাধারণ মূল্যস্তর এ সময়ের মধ্যে কমপক্ষে ১০ গুণ এবং ২০২১ সাল পর্যন্ত ৫০ বছরে কমপক্ষে ৩৭ গুণ বেড়েছে। ২০০১-০২ অর্থবছর হতে মোট দেশজ উৎপাদন ও মাথাপিছু দেশজ উৎপাদন ও জাতীয় আয়ের ক্রমবর্ধমান ধারা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ২০০১ অর্থবছরে মাথাপিছু জাতীয় আয় ও মাথাপিছু জাতীয় উৎপাদনের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৩৬২ মার্কিন ডলার ও ৩৭৪ মার্কিন ডলার এবং ২০১১ অর্থবছরে ছিল যথাক্রমে ৮১৬ মার্কিন ডলার ও ৩৭৪ মার্কিন ডলার । ২০২১ অর্থবছরে মাথাপিছু জাতীয় আয় ২২০০ মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। এ সময়ে মাথাপিছু জাতীয় উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ২০৯৭ মার্কিন ডলার। বেসরকারীকরণ, বাজার ব্যবস্থা উদারীকরণ এবং বাজার ভিত্তিক বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের প্রচলনের ফলে ৯০ দশক থেকে দেশের অর্থনীতিতে গুণগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। ১৯৯০ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের ৮৭ ভাগ ভোগ ব্যয় এবং ১৭.৬ ভাগ (প্রবাসী আয়সহ) সঞ্চয় বা বিনিয়োগে ব্যয়িত হত। এ সময় মাথাপিছূ জাতীয় আয় ছিল বার্ষিক ৩৭৪ মার্কিন ডলার। মোট দেশজ উৎপাদন ও জাতীয় আয়ের পাশাপাশি পাথপিছু আয়-উৎপাদনও বাড়তে থাকে। এর ফলে মানুষের ব্যয় আচরণেও পরিবর্তন ঘটে। মোট আয়ের মধ্যে ভোগ প্রবণতা কমে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ প্রবণতা বাড়তে থাকে। ২০২১ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের ৭৫.৮ ভাগ ভোগ ব্যয় এবং ৩০.৪ ভাগ (প্রবাসী আয়সহ) সঞ্চয় বা বিনিয়োগে ব্যয়িত হয়েছে। জাতীয় আয় লেখচিত্র-১ থেকে বিষয়টি বোঝা যায়।
 
উন্নয়নের আর একটি নির্দেশক হল কৃষি থাতের উপর অধিক নির্ভরশীলতা হ্রাস এবং শিল্প ও সেবা খাতের অবদান বৃদ্ধি। ১৯৭৩ অর্থবছরে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের অবদান ছিল যথাক্রমে ৫৭.৯ ভাগ, ৯.৮ ভাগ ও ৩৫.৭ ভাগ এবং ১৯৯০ অর্থবছরে খাতভিত্তিক অবদান ছিল যথাক্রমে ২৮.৭ ভাগ, ১৩.১ ভাগ ও ৫৮.২ ভাগ। ২০২১ অর্থবছরে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের অবদান দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১২.১ ভাগ, ৩৩.৯ ভাগ ও ৫৪ ভাগ। থাতভিত্তিক অবদানের অন্তঃপরিবর্তনও অর্থনীতির গুণগত উন্নয়ন নির্দেশ করে যা জাতীয় আয় সারণি ১ থেকে বোঝা যায়।
 
''সারণি '' জাতীয় আয়ে বিভিন্ন খাতের অবদান (%)।
 
{|class="table table-bordered table-hover"
|-
|-
| খাত  || ১৯৭২-৭৩  || ১৯৭৯-৮০  || ১৯৮৯-৯০  || ১৯৯৮-৯৯
| খাত  || ১৯৭২-৭৩  || ১৯৭৯-৮০  || ১৯৮৯-৯০  || ১৯৯৮-৯৯ || ২০০৯-১০  || ২০১৯-২০  || ২০২০-২১
|-
|-
| কৃষি  || ৪৯.৫৭  || ৪১.২২  || ৩৬.৮৫  || ২৯.৩৪
| কৃষি ও বনায়ন || ৪৯.৫৭  || ৪১.২২  || ৩৬.৮৫  || ২৯.৩৪ || ১৪.৫৮  || ১২.৪৪  || ১২.১২
|-
|-
| খনি ও পাথর উত্তোলন  || -  || ০.০১  || ০.০১  || ০.০২
| খনি ও পাথর উত্তোলন  || -  || ০.০১  || ০.০১  || ০.০২ || ১.৬৬  || ১.৮১  || ১.৭০
|-
|-
| শিল্প  || ৭.৯১  || ১১.২৩  || ৮.৭৫  || ৯.০৫
| শিল্প (প্রক্রিয়াজাতকরণ) || ৭.৯১  || ১১.২৩  || ৮.৭৫  || ৯.০৫ || ১৬.৮৯  || ২১.৩৬  || ২০.৮৭
|-
|-
| নির্মাণ  || ৪.৩৯  || ৪.৭৫  || ৫.৮৪  || ৫.৯৫
| নির্মাণ  || ৪.৩৯  || ৪.৭৫  || ৫.৮৪  || ৫.৯৫ || ৬.৫০  || ৯.৪২  || ৯.৬৬
|-
|-
| বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও স্বাস্থ্যসেবা  || ০.২৬  || ০.৩১  ||  ১.২০ ||  ১.৬৫
| বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও স্বাস্থ্যসেবা  || ০.২৬  || ০.৩১  || ১.২০ || ১.৬৫  || ১.১০ || ১.৪৬ || ১.৫৮
|-
|-
| পরিবহণ, গুদামজাতকরণ ও যোগাযোগ  || ১০.৫২  || ১১.৫৫  || ১০.১৮  ||  ১০.৯৫
| পরিবহণ, গুদামজাতকরণ ও যোগাযোগ  || ১০.৫২  || ১১.৫৫  || ১০.১৮  || ১০.৯৫ || ১০.৫৭  || ৭.৬০  || ৭.৭৯
|-
|-
| বাণিজ্য  || ৭.৯৭  || ৯.৭৮  || ৮.৩৫  || ৯.০৫
| বাণিজ্য  || ৭.৯৭  || ৯.৭৮  || ৮.৩৫  || ৯.০৫ || ১৪.০০  || ১৪.৫৮  || ১৪.৫১
|-
|-
| গৃহায়ন || ৯.৪১  || ৮.৯৪  ||  ৯. ||  ৯.৩৫
| গৃহায়ন || ৯.৪১  || ৮.৯৪  || ৯.০ || ৯.৩৫  || ৭.১৫ || ৯.৪২ || ৯.৪৪
|-
|-
| লোকপ্রশাসন ও প্রতিরক্ষা   || ২.২৭  || ২.৮০  || ৪.৪৪  || ৫.৯৩
| লোকপ্রশাসন ও প্রতিরক্ষা || ২.২৭  || ২.৮০  || ৪.৪৪  || ৫.৯৩ || ৩.৩৪  || ৩.৫০  || ৩.৫০
|-
|-
| ব্যাংকিং ও বীমা  || ১.০৮  || ১.৫৮  || ২.০৫  || ১.৯১
| ব্যাংকিং ও বীমা  || ১.০৮  || ১.৫৮  || ২.০৫  || ১.৯১ || ৩.০৮  || ৩.৩৮  || ৩.৪৫
|-
|-
| পেশাগত ও বিবিধ সেবা  || ৬.৬২  || ৭.৮৩  || ১৩.৩৩  || ১৬.৮০
| পেশাগত ও বিবিধ সেবা  || ৬.৬২  || ৭.৮৩  || ১৩.৩৩  || ১৬.৮০ || ২১.১৩  || ১৪.৯৪  || ১৫.৩০
|}
|}
''সূত্র''  বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)


ভৌত অবকাঠামোর (সড়ক, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ব্যাংক, বাজার, স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রসমূহের) উন্নয়ন গ্রামীণ পরিবারের আয়ের ওপর একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ১৬টি গ্রামের ওপর পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে যে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে শস্য আয় বেড়েছে ২৪%, মজুরি বেড়েছে ৯২% এবং পশুসম্পদ ও মৎস্য থেকে আয় বেড়েছে ৭৮%, অকৃষি ব্যবসায় থেকেও আয় বেড়েছে ১৭%।
''লেখচিত্র ২'' বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা
 
[[Image:B_NationalIncomeFig-02.jpg|right|thumbnail|600px|''সূত্র'' বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি)]]
 
পরিশেষে সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকসমূহের প্রকৃতি ও প্রবণতা বিশ্লেষণ (জাতীয় আয় লেখচিত্র-২ দ্রষ্টব্য) থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কোভিড মহামারীর কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ছন্দপতন ঘটলেও বাংলাদেশের অর্থনীতি তার সহন সক্ষমতার পরিচয় দিতে পেরেছে। মহামারীকালীন পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী অর্থনীতি হিসেবে বাংলাদেশ তার অবস্থান নিশ্চিত করেছে। মহামারী পূর্ববর্তী প্রায় এক দশক ধরে মূল্যস্তর বৃদ্ধি শতকরা ৫-৬ ভাগের মধ্যে রেখে এবং রাজস্ব ঘাটতি জিডিপি’র ৫ ভাগের মধ্যে রেখে শতকরা ৬ ভাগের অধিক (২০১৯ অর্থবছরে সবোচ্চ ৮.২ ভাগ) হারে বাংলাদেশের অর্থনীতি বেড়ে চলেছে। দশকের বেশিরভাগ সময় বহিঃখাতে উদ্বৃত্ত ছিল। ২০২১ অর্থবছরে বহিঃখাতে জিডিপি’র ১.১ ভাগের মত ঘাটতি থাকলেও প্রায় ৭ মাসের আমদানি মূল্য পরিশেধের সক্ষমতার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চিতি বজায় ছিল।


বাংলাদেশের জিডিপি চলতি মূল্যে ১৯৭২-৭৩ সালে ছিল ৪৯.৮৫ বিলিয়ন টাকা এবং ১৯৭৯-৮০ সালে তা চারগুণ বেড়ে যায়। ১৯৮৯-৯০ সালে তা পনের গুণ বাড়ে এবং ১৯৯৯-২০০০ সালে তা আটচল্লিশ গুণেরও বেশি বাড়ে। অবশ্য স্থির মূল্যে (১৯৮৪-৮৫) জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার চলতি মূল্যের চেয়ে অনেক ধীর ছিল বলে দেখা যায়। ১৯৭২-৭৩ সালে স্থির মূল্যে জিডিপির প্রাক্কলন করা হয় ২৬৪.৫৫ বিলিয়ন টাকা এবং ১৯৭৯-৮০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪১.৩ বিলিয়ন টাকা, ১৯৮৯-৯০ সালে ৪৯৭.৫৩ বিলিয়ন টাকা এবং ১৯৯৯-২০০০ সালে ২,০৪৯.৩০ বিলিয়ন টাকা। স্থির ও চলতি মূল্যে ১৯৭২ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে ২৯ বছরে দেশে সাধারণ মূল্যস্তর এ সময়ের মধ্যে কমপক্ষে দশগুণ বেড়েছে। ২০০১-০২ অর্থবছর হতে মোট দেশজ উৎপাদন ও মাথাপিছু দেশজ উৎপাদন ও জাতীয় আয়ের ক্রমবর্ধমান ধারা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে মাথাপিছু জাতীয় আয় ৭০০ মার্কিন ডলার অতিক্রম করে। এ সময়ে মাথাপিছু জাতীয় উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৮০ মার্কিন ডলার। মোট দেশজ উৎপাদনে কৃষিখাতের অবদান দাঁড়ায় শতকরা ২০.১৬ ভাগ। তবে শিল্প ও সেবাখাতের অবদান উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ২০০৯-১০ অর্থবছরে জিডিপির শতকরা যথাক্রমে ২৯.৯৫ ও ৫০.০০ ভাগে দাঁড়িয়েছে। চলতি বাজার মূল্যে জিডিপি বিগত দশ বছরে গড়ে শতকরা ১৮ ভাগ হারে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১০ সালের জুন শেষে ৬,৯০৫.৭ বিলিয়ন টাকায় দাঁড়ায়। অবশ্য স্থিরমূল্যে উক্ত সময়ে গড়ে শতকরা ৬ ভাগ হারে বৃদ্ধি পেয়ে ৩,৬০৬.১ বিলিয়ন টাকায় দাঁড়ায়। বেসরকারিকরণ বিষয়ে বাস্তব পদক্ষেপ, সংস্কারের মাধ্যমে শিল্প বাণিজ্য খাতের উদারীকরণ, বিনিময় হার সহ বৈদেশিক খাতের বিধিনিষেধ শিথিলকরণ ও আধুনিকায়ন, বেসরকারি খাতের সুযোগসুবিধা বৃদ্ধিকরণ, বৈদেশিক মুদ্রার ক্রমবর্ধমান অন্তঃপ্রবাহ ইত্যাদি এ সময়ে জিডিপির প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। জাতীয় আয় প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ সময়ে ভোগ ও সঞ্চয়ের পরিমাণও সংগতিপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পায়। দেখা যায় উক্ত সময়ে ভোগের পরিমাণ গড়ে শতকরা ১৭ ভাগ হারে বৃদ্ধি পায়। তবে সঞ্চয়ের হার ভোগ বৃদ্ধির হারকে অতিক্রম করে যা এ সময়ে গড়ে শতকরা ২১ ভাগ হারে বৃদ্ধি পায়।  [আবুল কালাম আজাদ]
বাংলাদেশ এখনও স্বল্পোন্নত দেশের অন্তর্ভূক্ত হলেও বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনীতি সুস্থিতিশীল রয়েছে এবং সূচকসমূহের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে উন্নয়নের উচ্চতর ধাপে উন্নীত হতে পারবে।  [আবুল কালাম আজাদ]


[[en:National Income]]
[[en:National Income]]

১৭:২৪, ১৬ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

জাতীয় আয় কোনো একটা নির্দিষ্ট সময় (সাধারণত এক বছরে) দেশে উৎপাদিত দ্রব্য এবং সেবাসমূহের মোট মূল্যমান। জাতীয় আয়ের পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন ধারণা হচ্ছে যথাক্রমে: মোট জাতীয় উৎপাদন (জিএনপি), নীট জাতীয় উৎপাদন (এনএনপি), জাতীয় আয় (এনআই), ব্যক্তিগত আয় এবং ব্যয়যোগ্য আয়। একটি সাধারণ নির্দেশক হিসেবে জাতীয় আয় একটি দেশের সম্পদ ব্যবহারের দক্ষতার পর্যায় সম্পর্কে ধারণা দেয়।

করাচিতে জাতীয় পরিসংখ্যান অফিস (সিএসও) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ শতকের পঞ্চাশের দশকের প্রথমার্ধে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের জাতীয় আয়ের হিসাব প্রাক্কলন আরম্ভ করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে সিএসও কিছু খাতের জন্য উৎপাদনের উপাদান ব্যয়ভিত্তিক নীট জাতীয় উৎপাদন, কোনো কোনো খাতের জন্য নীট মূল্যসংযোজন ভিত্তিক পরিমাপন এবং উৎপাদনের বিভিন্ন উপাদান হিসাব করে পুঞ্জীভূত আয় প্রাক্কলনের পরোক্ষ পদ্ধতির মাধ্যমে জাতীয় আয় হিসাব চালু করে। কিছু ক্ষেত্রে ব্যয় পদ্ধতিও ব্যবহার করা হয়। কিন্তু উপাত্তসমূহ ছিল অপর্যাপ্ত এবং এতে বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক কার্যক্রম জাতীয় আয়ের আওতার বাইরে থেকে যায়। পরবর্তীকালে জাতীয় আয়ের প্রাক্কলন পদ্ধতি পুনর্বিন্যাসের জন্য ১৯৬৫ সালে গঠিত পাকিস্তান জাতীয় আয় কমিশন বাস্তব অনুপাত ও সহগ ব্যবহারের মাধ্যমে জাতীয় আয় পরিমাপের অধিকতর প্রায়োগিক পদ্ধতি সুপারিশ করে। ১৯৪৯-৫০ সালে পূর্ব পাকিস্তানে স্থির বাজারমূল্যে জিএনপি দাঁড়ায় ১১.৫৭ বিলিয়ন টাকা এবং ১৯৫৪-৫৫ সালে দাঁড়ায় ১৩.২৯ বিলিয়ন টাকা। এ দুই বছরে মাথাপিছু জাতীয় আয় ছিল যথাক্রমে ২৬৭ টাকা এবং ২৭১ টাকা। বাংলাদেশে জাতীয় আয় প্রাক্কলনের পদ্ধতি মূলত পাকিস্তান আমলের মতো একই থেকে যায় এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)কে জাতীয় আয় পরিমাপের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ব্যুরো প্রথম দিকে ১৯৬৮ সালে জাতিসংঘ পরিসংখ্যান অফিস (আনসো) কর্তৃক প্রকাশিত জাতীয় হিসাব ব্যবস্থা (এসএনএ) ম্যানুয়েলের সংশোধিত সংস্করণ ব্যবহার করে। ১৯৭৫ সালের পর বিবিএস চলতি ও স্থির মূল্যে (১৯৭২-৭৩) শিল্পজাত জিডিপি প্রাক্কলন সম্পর্কিত ব্যাপক গণনাভিত্তিক একটি মিশ্র ব্যবস্থা অনুসরণ করে। বিবিএস কর্তৃক জাতীয় আয় প্রাক্কলনের এ পদ্ধতি মূলত উৎপাদনের পরিমাপের ওপর ভিত্তি করে গঠিত বলে এটি উৎপাদন পদ্ধতি নামেও পরিচিত। এ পদ্ধতির অধীনে অর্থনীতিকে এগারোটি খাতে বিভক্ত করা হয় এবং প্রতিটি খাতের জন্য বাজার দরে মূল্যসংযোজন হিসাব করা হয় প্রকৃত মূল্য থেকে, অথবা উপাত্ত অপ্রতুল হলে, আরোপিত হিসাবের মাধ্যমে।

পরিকল্পনা কমিশন দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (১৯৮০-৮৫) সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন পরীক্ষা ও প্রাক্কলনকে সহায়তা করার লক্ষ্যে ১৯৭৬-৭৭ সালে ৪৭ খাতবিশিষ্ট একটি উপাদান-উৎপাদন (input-output) ছক প্রণয়ন করে। ছকটি হালনাগাদকরণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে কমিশন প্রতিবছর এ সকল খাতে আয়ের প্রাক্কলনের ভিত্তিতে স্থির বাজারমূল্যে জিডিপি প্রাক্কলনের কাজ অব্যাহত রাখে। বিবিএস-এর মতো না করে, পরিকল্পনা কমিশন প্রথমে একটি বছরে স্থির উৎপাদন ব্যয়ে জিডিপির প্রাক্কলন তৈরি করে এবং এরপর মুদ্রাস্ফীতি সমন্বয়কারী সূচকের মাধ্যমে একে চলতি মূল্যে প্রাক্কলনে পরিণত করে। অবশ্য, বিবিএস-ও প্রতিবছর তার নিজস্ব প্রাক্কলন তৈরি করতে থাকে এবং এ সকল প্রাক্কলন পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রস্ত্ততি এবং সাহায্যদাতা কনসোর্টিয়ামের বৈঠকের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চূড়ান্তকরণ ও বিদেশি সাহায্যের জন্য পর্যালোচনা কার্যে ব্যবহার করা হয়। উৎপাদনের উপাদানসমূহের চলতি বাজারদরের ভিত্তিতে বিবিএস-এর প্রাক্কলনসমূহ তৈরি করার পর মুদ্রাস্ফীতি সমন্বয়ের সূচক দ্বারা সেগুলির মান স্থির মূল্যে গণ্য হিসাবে পরিণত করা হয়। চলতি ও স্থিরমূল্যের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুত জিডিপির প্রাক্কলন-উৎপাদন পদ্ধতি অনুসরণে তৈরি হয় এবং ১৯৮৮-৮৯ সাল পর্যন্ত জিডিপির স্থিরমূল্যে প্রাক্কলনের জন্য ১৯৭২-৭৩ সালকে ভিত্তিবছর হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ১৯৮৮-৮৯ সালে ভিত্তিবছর পরিবর্তন করে ১৯৮৪-৮৫ কে নির্ধারণ করা হয়। এরপর ভিত্তিবছর যথাক্রমে ১৯৯৫-৯৬, ২০০৫-০৬ এবং সর্বশেষ ২০১৫-১৬ ভিত্তিবছর নির্ধারিত হয়েছে।

জিডিপি গণনার জন্য গৃহীত ব্যয়সমূহ ছয়টি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত; যেমন, বেসরকারি চূড়ান্ত ভোগ ব্যয়, সরকারি চূড়ান্ত ভোগ ব্যয়, মজুত মালামালে পরিবর্তন, গঠিত মোট স্থির মূলধন, পণ্য ও সেবার রপ্তানি এবং পণ্য ও সেবার আমদানি। বিবিএস এবং পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক জাতীয় আয় পরিমাপের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতির ব্যবহার সাময়িক বিবেচনায় জিডিপির মূল্যে গরমিল ভিন্নতা সৃষ্টি করে। প্রকাশনার ভিন্ন সময় এবং ভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে একই বছরের জন্য প্রাক্কলন পরিমাণও প্রবৃদ্ধির ভিন্ন ভিন্ন অঙ্ক প্রদর্শন করে।

ঐ শতকের আশির দশকে উৎপাদন এবং জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতি উভয়ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার ১০ মার্চ ১৯৮৮ সালে একটি জাতীয় আয় কমিশন প্রতিষ্ঠা করে। এ কমিশন দেশি এবং বিদেশি বিশেষজ্ঞগণ কর্তৃক প্রস্তুকৃত সকল প্রতিবেদন মূল্যায়ন করে। এসব প্রতিবেদন আইএমএফ, ইউএনডিপি, এসকাপ ও অন্যান্য সংস্থার আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশে জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতিসমূহ এবং জাতীয় আয় পরিমাপের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গভীরভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রণীত হয়। উক্ত প্রতিবেদনসমূহ পর্যালোচনা করে এবং উপাত্তের পর্যাপ্ততা ও তা সংগ্রহের প্রক্রিয়া বিবেচনা করে কমিশন জাতীয় আয় গণনা পদ্ধতির ওপর একটি নিজস্ব প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। ১৯৯০-এর ২২ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদনটি সরকারের নিকট পেশ করা হয়। পর্যায়ক্রমে তিন বছরে বাস্তবায়নযোগ্য প্রতিবেদনের প্রধান সুপারিশসমূহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল বিবিএস-এর পুনর্গঠন, এর জনশক্তির দক্ষতা ও যোগ্যতা উন্নয়নের মাধ্যমে একে শক্তিশালীকরণ এবং বিবিএসকে যথাযথ দায়িত্ব অর্পণ। কমিশন ১৯৮৬ সালের আদমশুমারি এর মাধ্যমে প্রাপ্ত কাঠামো ব্যবহার করে অকৃষি পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের নমুনা জরিপ সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দেয়। এছাড়া, বেসরকারি খাতে ভোগ, বছরের শেষে উৎপাদনকারী, ব্যবসায়ী ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক ইউনিটের হাতে পড়ে থাকা স্টকের বছরান্ত তথ্য এবং বেসরকারি খাতের সঞ্চয়ের ওপর তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণেরও পরামর্শ দেয়। জাতিসংঘ পরিসংখ্যান বিভাগের সহায়তায় বিবিএস ধাপে ধাপে এসএনএ-১৯৯৩ প্রচলনের একটি কর্মসূচি চালু করে।

১৯৭২-৭৩ থেকে ১৯৯১-৯২ পর্যন্ত কুড়ি বছর সময় ধরে বিবিএস বাংলাদেশের জন্য এর নিজস্ব জাতীয় হিসাব কাঠামো ব্যবহার করে ১১টি শিল্প বা প্রচলিত খাতের জন্য মূল্যসংযোজন গণনা করে। এগুলি হচ্ছে শস্য, পশুসম্পদ, বনায়ন ও মৎস্যের সমন্বয়ে কৃষিখাত; খনি ও পাথর অনুসন্ধান; বৃহৎ ও ক্ষুদ্র উপখাতের সমন্বয়ে উৎপাদন খাত; নির্মাণ; বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি এবং স্বাস্যহ সেবা; সংগঠিত ও অসংগঠিত সড়ক, বিমান ও নৌ পরিবহণ, যোগাযোগ এবং গুদামের মতো উপখাতসহ গুদামজাতকরণ ও যোগাযোগ; বাণিজ্য; গৃহায়ণ; সরকারি প্রশাসন ও প্রতিরক্ষা; ব্যাংকিং ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং জীবন ও সাধারণ বীমা; শিক্ষা, চিকিৎসা, আইন পেশা, ব্যক্তিগত শুশ্রূষা, ধর্মীয় সেবা, শান্তি ও বিনোদন এবং গৃহস্থালি ও অন্যান্য সেবাসহ পেশাগত ও বিবিধ সেবা। সরকারের বাজেট ও হিসাবে পদ্ধতির সাথে সঙ্গতি রেখে জিডিপি প্রাক্কলনসমূহ প্রস্ত্তত করা হয় আর্থিক বছরের ভিত্তিতে (জুলাই-জুন মেয়াদকালের জন্য), পঞ্জিকা বছরের ভিত্তিতে নয়।

বাংলাদেশে জাতীয় আয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন খাতের অবদান সম্পর্কিত পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে (সারণি দ্রষ্টব্য), সময়ের সাথে জাতীয় আয়ে কৃষির অবদান কমেছে। পক্ষান্তরে, পেশাগত ও বিবিধ সেবা এবং লোক প্রশাসন ও প্রতিরক্ষা খাতের অবদান উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেলেও বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যতীত অন্যান্য খাতে অবদান প্রায় স্থির থেকেছে। ১৯৭২-৮০ সালের মধ্যে উৎপাদন খাতের অবদান উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছিল কিন্তু পরবর্তীতে তা হ্রাস পেয়েছে। অধিকন্তু, নির্মাণ, গৃহায়ণ, ব্যবসায় সেবা এবং পরিবহন ও যোগাযোগের মতো খাতসমূহের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের একটি আপাত উচ্চ প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও ১৯৭২-৯৯ মেয়াদকালে জাতীয় আয়ে এ সকল খাতের অবদান সামান্যই বৃদ্ধি পেয়েছে।

ভৌত অবকাঠামোর (সড়ক, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ব্যাংক, বাজার, স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রসমূহের) উন্নয়ন গ্রামীণ পরিবারের আয়ের ওপর একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ১৬টি গ্রামের ওপর পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে যে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে শস্য আয় বেড়েছে ২৪%, মজুরি বেড়েছে ৯২% এবং পশুসম্পদ ও মৎস্য থেকে আয় বেড়েছে ৭৮%, অকৃষি ব্যবসায় থেকেও আয় বেড়েছে ১৭%।

লেখচিত্র ১ মাথাপিছু জাতীয় আয় (মার্কিন ডলারে) এর সাথে ভোগ ও সঞ্চয় ব্যয় প্রবণতা

সূত্র বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি)

বাংলাদেশের জিডিপি চলতি মূল্যে ১৯৭২-৭৩ সালে ছিল ৪৯.৮৫ বিলিয়ন টাকা এবং ১৯৭৯-৮০ সালে তা চারগুণ বেড়ে যায়। ১৯৮৯-৯০ সালে তা পনের গুণ বাড়ে এবং ১৯৯৯-২০০০ সালে তা আটচল্লিশ গুণেরও বেশি বাড়ে। অবশ্য স্থির মূল্যে (১৯৮৪-৮৫) জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার চলতি মূল্যের চেয়ে অনেক ধীর ছিল বলে দেখা যায়। ১৯৭২-৭৩ সালে স্থির মূল্যে জিডিপির প্রাক্কলন করা হয় ২৬৪.৫৫ বিলিয়ন টাকা এবং ১৯৭৯-৮০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪১.৩ বিলিয়ন টাকা, ১৯৮৯-৯০ সালে ৪৯৭.৫৩ বিলিয়ন টাকা এবং ১৯৯৯-২০০০ সালে ২,০৪৯.৩০ বিলিয়ন টাকা। স্থির ও চলতি মূল্যে ১৯৭২ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে ৩০ বছরে দেশে সাধারণ মূল্যস্তর এ সময়ের মধ্যে কমপক্ষে ১০ গুণ এবং ২০২১ সাল পর্যন্ত ৫০ বছরে কমপক্ষে ৩৭ গুণ বেড়েছে। ২০০১-০২ অর্থবছর হতে মোট দেশজ উৎপাদন ও মাথাপিছু দেশজ উৎপাদন ও জাতীয় আয়ের ক্রমবর্ধমান ধারা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ২০০১ অর্থবছরে মাথাপিছু জাতীয় আয় ও মাথাপিছু জাতীয় উৎপাদনের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৩৬২ মার্কিন ডলার ও ৩৭৪ মার্কিন ডলার এবং ২০১১ অর্থবছরে ছিল যথাক্রমে ৮১৬ মার্কিন ডলার ও ৩৭৪ মার্কিন ডলার । ২০২১ অর্থবছরে মাথাপিছু জাতীয় আয় ২২০০ মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। এ সময়ে মাথাপিছু জাতীয় উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ২০৯৭ মার্কিন ডলার। বেসরকারীকরণ, বাজার ব্যবস্থা উদারীকরণ এবং বাজার ভিত্তিক বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের প্রচলনের ফলে ৯০ দশক থেকে দেশের অর্থনীতিতে গুণগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। ১৯৯০ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের ৮৭ ভাগ ভোগ ব্যয় এবং ১৭.৬ ভাগ (প্রবাসী আয়সহ) সঞ্চয় বা বিনিয়োগে ব্যয়িত হত। এ সময় মাথাপিছূ জাতীয় আয় ছিল বার্ষিক ৩৭৪ মার্কিন ডলার। মোট দেশজ উৎপাদন ও জাতীয় আয়ের পাশাপাশি পাথপিছু আয়-উৎপাদনও বাড়তে থাকে। এর ফলে মানুষের ব্যয় আচরণেও পরিবর্তন ঘটে। মোট আয়ের মধ্যে ভোগ প্রবণতা কমে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ প্রবণতা বাড়তে থাকে। ২০২১ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের ৭৫.৮ ভাগ ভোগ ব্যয় এবং ৩০.৪ ভাগ (প্রবাসী আয়সহ) সঞ্চয় বা বিনিয়োগে ব্যয়িত হয়েছে। জাতীয় আয় লেখচিত্র-১ থেকে বিষয়টি বোঝা যায়।

উন্নয়নের আর একটি নির্দেশক হল কৃষি থাতের উপর অধিক নির্ভরশীলতা হ্রাস এবং শিল্প ও সেবা খাতের অবদান বৃদ্ধি। ১৯৭৩ অর্থবছরে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের অবদান ছিল যথাক্রমে ৫৭.৯ ভাগ, ৯.৮ ভাগ ও ৩৫.৭ ভাগ এবং ১৯৯০ অর্থবছরে খাতভিত্তিক অবদান ছিল যথাক্রমে ২৮.৭ ভাগ, ১৩.১ ভাগ ও ৫৮.২ ভাগ। ২০২১ অর্থবছরে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের অবদান দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১২.১ ভাগ, ৩৩.৯ ভাগ ও ৫৪ ভাগ। থাতভিত্তিক অবদানের অন্তঃপরিবর্তনও অর্থনীতির গুণগত উন্নয়ন নির্দেশ করে যা জাতীয় আয় সারণি ১ থেকে বোঝা যায়।

সারণি ১ জাতীয় আয়ে বিভিন্ন খাতের অবদান (%)।

খাত ১৯৭২-৭৩ ১৯৭৯-৮০ ১৯৮৯-৯০ ১৯৯৮-৯৯ ২০০৯-১০ ২০১৯-২০ ২০২০-২১
কৃষি ও বনায়ন ৪৯.৫৭ ৪১.২২ ৩৬.৮৫ ২৯.৩৪ ১৪.৫৮ ১২.৪৪ ১২.১২
খনি ও পাথর উত্তোলন - ০.০১ ০.০১ ০.০২ ১.৬৬ ১.৮১ ১.৭০
শিল্প (প্রক্রিয়াজাতকরণ) ৭.৯১ ১১.২৩ ৮.৭৫ ৯.০৫ ১৬.৮৯ ২১.৩৬ ২০.৮৭
নির্মাণ ৪.৩৯ ৪.৭৫ ৫.৮৪ ৫.৯৫ ৬.৫০ ৯.৪২ ৯.৬৬
বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও স্বাস্থ্যসেবা ০.২৬ ০.৩১ ১.২০ ১.৬৫ ১.১০ ১.৪৬ ১.৫৮
পরিবহণ, গুদামজাতকরণ ও যোগাযোগ ১০.৫২ ১১.৫৫ ১০.১৮ ১০.৯৫ ১০.৫৭ ৭.৬০ ৭.৭৯
বাণিজ্য ৭.৯৭ ৯.৭৮ ৮.৩৫ ৯.০৫ ১৪.০০ ১৪.৫৮ ১৪.৫১
গৃহায়ন ৯.৪১ ৮.৯৪ ৯.০ ৯.৩৫ ৭.১৫ ৯.৪২ ৯.৪৪
লোকপ্রশাসন ও প্রতিরক্ষা ২.২৭ ২.৮০ ৪.৪৪ ৫.৯৩ ৩.৩৪ ৩.৫০ ৩.৫০
ব্যাংকিং ও বীমা ১.০৮ ১.৫৮ ২.০৫ ১.৯১ ৩.০৮ ৩.৩৮ ৩.৪৫
পেশাগত ও বিবিধ সেবা ৬.৬২ ৭.৮৩ ১৩.৩৩ ১৬.৮০ ২১.১৩ ১৪.৯৪ ১৫.৩০

সূত্র বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)

লেখচিত্র ২ বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা

সূত্র বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি)

পরিশেষে সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকসমূহের প্রকৃতি ও প্রবণতা বিশ্লেষণ (জাতীয় আয় লেখচিত্র-২ দ্রষ্টব্য) থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কোভিড মহামারীর কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ছন্দপতন ঘটলেও বাংলাদেশের অর্থনীতি তার সহন সক্ষমতার পরিচয় দিতে পেরেছে। মহামারীকালীন পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী অর্থনীতি হিসেবে বাংলাদেশ তার অবস্থান নিশ্চিত করেছে। মহামারী পূর্ববর্তী প্রায় এক দশক ধরে মূল্যস্তর বৃদ্ধি শতকরা ৫-৬ ভাগের মধ্যে রেখে এবং রাজস্ব ঘাটতি জিডিপি’র ৫ ভাগের মধ্যে রেখে শতকরা ৬ ভাগের অধিক (২০১৯ অর্থবছরে সবোচ্চ ৮.২ ভাগ) হারে বাংলাদেশের অর্থনীতি বেড়ে চলেছে। দশকের বেশিরভাগ সময় বহিঃখাতে উদ্বৃত্ত ছিল। ২০২১ অর্থবছরে বহিঃখাতে জিডিপি’র ১.১ ভাগের মত ঘাটতি থাকলেও প্রায় ৭ মাসের আমদানি মূল্য পরিশেধের সক্ষমতার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চিতি বজায় ছিল।

বাংলাদেশ এখনও স্বল্পোন্নত দেশের অন্তর্ভূক্ত হলেও বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনীতি সুস্থিতিশীল রয়েছে এবং সূচকসমূহের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে উন্নয়নের উচ্চতর ধাপে উন্নীত হতে পারবে। [আবুল কালাম আজাদ]