জলিল, মেজর মোহাম্মদ আবদুল: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''জলিল, মেজর মোহাম্মদ আবদুল '''(১৯৪২-১৯৮৯)  সামরিক কর্মকর্তা, রাজনীতিক। বরিশাল জেলার উজিরপুরে ১৯৪২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা জনাব আলী শিকদার ছিলেন একজন ক্ষুদে ব্যবসায়ী। এম.এ জলিল উজিরপুর ডব্লিউ বি ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন থেকে ১৯৫৯ সালে প্রবেশিকা এবং পাকিস্তানের মারী ইয়ং ক্যাডেট ইনস্টিটিউশন থেকে ১৯৬১ সালে আই.এ পাস করেন। আবদুল জলিল ১৯৬২ সালে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে ট্রেনী অফিসার হিসেবে যোগ দেন। সামরিক বাহিনীতে চাকুরিরত অবস্থায় তিনি বি.এ এবং ইতিহাসে এম.এ  ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি পান এবং ১৯৭০ সালে মেজর পদে উন্নীত হন।
[[Image:JalilMajorMA.jpg|thumb|400px|right|মেজর মোহাম্মদ আবদুল জলিল]]
'''জলিল, মেজর মোহাম্মদ আবদুল''' (১৯৪২-১৯৮৯)  সামরিক কর্মকর্তা, রাজনীতিক। বরিশাল জেলার উজিরপুরে ১৯৪২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা জনাব আলী শিকদার ছিলেন একজন ক্ষুদে ব্যবসায়ী। এম.এ জলিল উজিরপুর ডব্লিউ বি ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন থেকে ১৯৫৯ সালে প্রবেশিকা এবং পাকিস্তানের মারী ইয়ং ক্যাডেট ইনস্টিটিউশন থেকে ১৯৬১ সালে আই.এ পাস করেন। আবদুল জলিল ১৯৬২ সালে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে ট্রেনী অফিসার হিসেবে যোগ দেন। সামরিক বাহিনীতে চাকুরিরত অবস্থায় তিনি বি.এ এবং ইতিহাসে এম.এ  ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি পান এবং ১৯৭০ সালে মেজর পদে উন্নীত হন।


মুলতানে কর্মরত থাকাকালে তিনি ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ছুটি নিয়ে বরিশালে আসেন এবং পরে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তাঁকে ৯ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার নিয়োগ করা হয়। কিন্তু নভেম্বর মাসে তাঁকে এ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
মুলতানে কর্মরত থাকাকালে তিনি ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ছুটি নিয়ে বরিশালে আসেন এবং পরে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তাঁকে ৯ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার নিয়োগ করা হয়। কিন্তু নভেম্বর মাসে তাঁকে এ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।


১৯৭২ সালের অক্টোবর মাসে [[জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল|জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল]] (জাসদ) নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে মেজর জলিল অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। তিনি ছিলেন এ দলের যুগ্ম আহবায়ক। ২৬ ডিসেম্বর দলের কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। তাঁর নেতৃত্বে জাসদ দেশে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্যাপক কর্মকান্ড পরিচালনা করে এবং বরাবরই সরকারবিরোধী রাজনীতিতে সক্রিয় থাকে। মেজর জলিল ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কিন্তু কোনো আসনেই তিনি জয়লাভ করতে পারেন নি। ১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ দলীয় কর্মীদের নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ঘেরাও অভিযানকালে তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৭৫ সালের ৮ নভেম্বর তিনি মুক্তিলাভ করেন। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র এবং অবৈধ পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের প্রচেষ্টার অভিযোগে সামরিক সরকার কর্তৃক ২৫ নভেম্বর পুনরায় তিনি গ্রেফতার হন। বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনালে বিচারে ১৯৭৬ সালের ১৮ জুলাই তিনি যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হন। ১৯৮০ সালের ২৪ মার্চ তিনি মুক্তিলাভ করেন।
১৯৭২ সালের অক্টোবর মাসে [[জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল|জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল]] (জাসদ) নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে মেজর জলিল অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। তিনি ছিলেন এ দলের যুগ্ম আহবায়ক। ২৬ ডিসেম্বর দলের কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। তাঁর নেতৃত্বে জাসদ দেশে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্যাপক কর্মকান্ড পরিচালনা করে এবং বরাবরই সরকারবিরোধী রাজনীতিতে সক্রিয় থাকে। মেজর জলিল ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কিন্তু কোনো আসনেই তিনি জয়লাভ করতে পারেন নি। ১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ দলীয় কর্মীদের নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ঘেরাও অভিযানকালে তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৭৫ সালের ৮ নভেম্বর তিনি মুক্তিলাভ করেন। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র এবং অবৈধ পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের প্রচেষ্টার অভিযোগে সামরিক সরকার কর্তৃক ২৫ নভেম্বর পুনরায় তিনি গ্রেফতার হন। বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনালে বিচারে ১৯৭৬ সালের ১৮ জুলাই তিনি যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হন। ১৯৮০ সালের ২৪ মার্চ তিনি মুক্তিলাভ করেন।
[[Image:JalilMajorMA.jpg|thumb|400px|right|মেজর মোহাম্মদ আবদুল জলিল]]


জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, ওয়ার্কার্স পার্টি ও কৃষক-শ্রমিক সমাজবাদী দলের সমন্বয়ে গঠিত ত্রিদলীয় জোটের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মেজর জলিল ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের জাতীয় কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে দলের সভাপতির পদ থেকে অপসারিত হন। এরপর তিনি জাসদ ত্যাগ করে জাতীয় মুক্তি আন্দোলন নামে একটি নতুন দল গঠন করেন এবং এ দলের মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করেন।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, ওয়ার্কার্স পার্টি ও কৃষক-শ্রমিক সমাজবাদী দলের সমন্বয়ে গঠিত ত্রিদলীয় জোটের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মেজর জলিল ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের জাতীয় কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে দলের সভাপতির পদ থেকে অপসারিত হন। এরপর তিনি জাসদ ত্যাগ করে জাতীয় মুক্তি আন্দোলন নামে একটি নতুন দল গঠন করেন এবং এ দলের মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করেন।


লেখক হিসেবে মেজর জলিল উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। তাঁর রচিত রাজনীতি বিষয়ক গ্রন্থ: সীমাহীন সময় (১৯৭৬), দৃষ্টিভঙ্গী ও জীবন দর্শন, সূর্যোদয় (১৯৮২), অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা (১৯৮৯), Bangladesh Nationalist Movement for Unity : A Historical Necessity. তিনি ১৯৮৯ সালের ১৯ নভেম্বর পাকিস্তানের ইসলামাবাদে মৃত্যুবরণ করেন।
লেখক হিসেবে মেজর জলিল উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। তাঁর রচিত রাজনীতি বিষয়ক গ্রন্থ: সীমাহীন সময় (১৯৭৬), দৃষ্টিভঙ্গী ও জীবন দর্শন, সূর্যোদয় (১৯৮২), অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা (১৯৮৯), Bangladesh Nationalist Movement for Unity : A Historical Necessity. তিনি ১৯৮৯ সালের ১৯ নভেম্বর পাকিস্তানের ইসলামাবাদে মৃত্যুবরণ করেন। [মুয়ায্যম হুসায়ন খান]
 
[মুয়ায্যম হুসায়ন খান]


[[en:Jalil, Major Mohammad Abdul]]
[[en:Jalil, Major Mohammad Abdul]]

০৫:০১, ৪ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

মেজর মোহাম্মদ আবদুল জলিল

জলিল, মেজর মোহাম্মদ আবদুল (১৯৪২-১৯৮৯)  সামরিক কর্মকর্তা, রাজনীতিক। বরিশাল জেলার উজিরপুরে ১৯৪২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা জনাব আলী শিকদার ছিলেন একজন ক্ষুদে ব্যবসায়ী। এম.এ জলিল উজিরপুর ডব্লিউ বি ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন থেকে ১৯৫৯ সালে প্রবেশিকা এবং পাকিস্তানের মারী ইয়ং ক্যাডেট ইনস্টিটিউশন থেকে ১৯৬১ সালে আই.এ পাস করেন। আবদুল জলিল ১৯৬২ সালে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে ট্রেনী অফিসার হিসেবে যোগ দেন। সামরিক বাহিনীতে চাকুরিরত অবস্থায় তিনি বি.এ এবং ইতিহাসে এম.এ  ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি পান এবং ১৯৭০ সালে মেজর পদে উন্নীত হন।

মুলতানে কর্মরত থাকাকালে তিনি ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ছুটি নিয়ে বরিশালে আসেন এবং পরে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তাঁকে ৯ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার নিয়োগ করা হয়। কিন্তু নভেম্বর মাসে তাঁকে এ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

১৯৭২ সালের অক্টোবর মাসে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে মেজর জলিল অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। তিনি ছিলেন এ দলের যুগ্ম আহবায়ক। ২৬ ডিসেম্বর দলের কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। তাঁর নেতৃত্বে জাসদ দেশে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্যাপক কর্মকান্ড পরিচালনা করে এবং বরাবরই সরকারবিরোধী রাজনীতিতে সক্রিয় থাকে। মেজর জলিল ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কিন্তু কোনো আসনেই তিনি জয়লাভ করতে পারেন নি। ১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ দলীয় কর্মীদের নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ঘেরাও অভিযানকালে তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৭৫ সালের ৮ নভেম্বর তিনি মুক্তিলাভ করেন। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র এবং অবৈধ পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের প্রচেষ্টার অভিযোগে সামরিক সরকার কর্তৃক ২৫ নভেম্বর পুনরায় তিনি গ্রেফতার হন। বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনালে বিচারে ১৯৭৬ সালের ১৮ জুলাই তিনি যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হন। ১৯৮০ সালের ২৪ মার্চ তিনি মুক্তিলাভ করেন।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, ওয়ার্কার্স পার্টি ও কৃষক-শ্রমিক সমাজবাদী দলের সমন্বয়ে গঠিত ত্রিদলীয় জোটের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মেজর জলিল ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের জাতীয় কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে দলের সভাপতির পদ থেকে অপসারিত হন। এরপর তিনি জাসদ ত্যাগ করে জাতীয় মুক্তি আন্দোলন নামে একটি নতুন দল গঠন করেন এবং এ দলের মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করেন।

লেখক হিসেবে মেজর জলিল উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। তাঁর রচিত রাজনীতি বিষয়ক গ্রন্থ: সীমাহীন সময় (১৯৭৬), দৃষ্টিভঙ্গী ও জীবন দর্শন, সূর্যোদয় (১৯৮২), অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা (১৯৮৯), Bangladesh Nationalist Movement for Unity : A Historical Necessity. তিনি ১৯৮৯ সালের ১৯ নভেম্বর পাকিস্তানের ইসলামাবাদে মৃত্যুবরণ করেন। [মুয়ায্যম হুসায়ন খান]