জববার, নওয়াব আবদুল: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''জববার, নওয়াব আবদুল '''(১৮৩৭-১৯১৮)  সরকারি কর্মকর্তা, সমাজসেবক। তিনি বর্ধমান জেলার পারহাটি গ্রামে তাঁর নানার বাড়িতে ১৮৩৭ সালের ২৪ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস ছিল বর্ধমানের কাশিয়ারা (বর্তমানে কাসেমনগর) গ্রামে। পিতা খান বাহাদুর গোলাম আসগর ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সরকারের বিচার বিভাগের প্রধান সদর আমিন। আবদুল জববার বর্ধমান রাজ স্কুলে রামতনু লাহিড়ীর ছাত্র এবং সেখান থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন। পরে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে বি.এ পড়েন। পিতার মৃত্যুর কারণে তিনি ১৮৫৭ সালে লেখাপড়া ছাড়তে বাধ্য হন এবং ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন।
'''জববার, নওয়াব আবদুল '''(১৮৩৭-১৯১৮)  সরকারি কর্মকর্তা, সমাজসেবক। তিনি বর্ধমান জেলার পারহাটি গ্রামে তাঁর নানার বাড়িতে ১৮৩৭ সালের ২৪ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস ছিল বর্ধমানের কাশিয়ারা (বর্তমানে কাসেমনগর) গ্রামে। পিতা খান বাহাদুর গোলাম আসগর ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সরকারের বিচার বিভাগের প্রধান সদর আমিন। আবদুল জববার বর্ধমান রাজ স্কুলে রামতনু লাহিড়ীর ছাত্র এবং সেখান থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন। পরে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে বি.এ পড়েন। পিতার মৃত্যুর কারণে তিনি ১৮৫৭ সালে লেখাপড়া ছাড়তে বাধ্য হন এবং ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন।


আবদুল জববার ১৮৮৯ থেকে ১৮৯৪ সাল পর্যন্ত কলকাতায় প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দাযিত্ব পালন করেন। ১৮৯৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে ‘খান বাহাদুর’ ও সি,আই,ই এবং পরে ‘নওয়াব’ উপাধি প্রদান করে। তিনি বঙ্গীয় আইন পরিষদে তিনবার- ১৮৮৪, ১৮৮৬, ১৮৯৩ সালে সদস্য হিসেবে মনোনীত হন।
আবদুল জববার ১৮৮৯ থেকে ১৮৯৪ সাল পর্যন্ত কলকাতায় প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দাযিত্ব পালন করেন। ১৮৯৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে ‘খান বাহাদুর’ ও সি.আই.ই এবং পরে ‘নওয়াব’ উপাধি প্রদান করে। তিনি বঙ্গীয় আইন পরিষদে তিনবার- ১৮৮৪, ১৮৮৬, ১৮৯৩ সালে সদস্য হিসেবে মনোনীত হন।


সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর আবদুল জববার ভুপালের মুখ্যমন্ত্রী (১৮৯৭-১৯০২) নিযুক্ত হন, সেখানে তিনি জনকল্যাণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে খ্যাতি অর্জন করেন। ঊনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে স্থাপিত অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন। তিনি বাংলাসহ সমগ্র ভারতের মুসলমানের প্রথম সংগঠন [[সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন|সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন]]-এর সদস্য ছিলেন। নওয়াব [[ফোর্ট উইলিয়ম|আবদুল লতিফ]]''' '''এর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এবং তিনি [[মোহামেডান লিটারেরি সোসাইটি|মোহামেডান লিটারেরি সোসাইটি]] এর একজন অন্যতম নেতা ছিলেন। ১৯০০ সালে তিনি উক্ত সোসাইটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর আবদুল জববার ভুপালের মুখ্যমন্ত্রী (১৮৯৭-১৯০২) নিযুক্ত হন, সেখানে তিনি জনকল্যাণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে খ্যাতি অর্জন করেন। ঊনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে স্থাপিত অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন। তিনি বাংলাসহ সমগ্র ভারতের মুসলমানের প্রথম সংগঠন [[সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন|সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন]]-এর সদস্য ছিলেন। নওয়াব [[লতিফ, নওয়াব আবদুল|আবদুল লতিফ]] এর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এবং তিনি [[মোহামেডান লিটারেরি সোসাইটি|মোহামেডান লিটারেরি সোসাইটি]] এর একজন অন্যতম নেতা ছিলেন। ১৯০০ সালে তিনি উক্ত সোসাইটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।


দক্ষিণ আফ্রিকায় মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে যে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন হয়, তার সমর্থনে  সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর নেতৃত্বে কলকাতা টাউন হলে একটি সভার আয়োজন করা হয়। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন আবদুল জববার।
দক্ষিণ আফ্রিকায় মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে যে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন হয়, তার সমর্থনে  সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর নেতৃত্বে কলকাতা টাউন হলে একটি সভার আয়োজন করা হয়। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন আবদুল জববার।
১২ নং লাইন: ১২ নং লাইন:
১৮৯৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম ছাত্রদের জন্য টেইলর হোস্টেল স্থাপিত হয়। ১৯০৮ সালে তিনি মুসলিম ছাত্রদের পক্ষে একটি নতুন হোস্টেলের জন্য আন্দোলন শুরু করেন। কারণ টেইলর হোস্টেলের চারদিকের পরিবেশ ছিল অস্বাস্থ্যকর এবং সেখানে মুসলিম ছাত্রদের নিবাসনের ব্যবস্থা ছিল অপর্যাপ্ত। এর ফলে সরকার এবং জনগণের সহযোগিতায় স্মিথলেনের তালতলায় বেকার হোস্টেল প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৮৯৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম ছাত্রদের জন্য টেইলর হোস্টেল স্থাপিত হয়। ১৯০৮ সালে তিনি মুসলিম ছাত্রদের পক্ষে একটি নতুন হোস্টেলের জন্য আন্দোলন শুরু করেন। কারণ টেইলর হোস্টেলের চারদিকের পরিবেশ ছিল অস্বাস্থ্যকর এবং সেখানে মুসলিম ছাত্রদের নিবাসনের ব্যবস্থা ছিল অপর্যাপ্ত। এর ফলে সরকার এবং জনগণের সহযোগিতায় স্মিথলেনের তালতলায় বেকার হোস্টেল প্রতিষ্ঠিত হয়।


ব্যক্তি গতভাবে আবদুল জববার সমকালীন রাজনীতির প্রতি অনেকটা উদাসীন ছিলেন। যদিও তাঁর আমলেই ন্যাশনাল কংগ্রেস ও[[মুসলিম লীগ|মুসলিম লীগ]] প্রতিষ্ঠিত হয় এবং উভয় দলের নেতৃত্বে অনেক রাজনৈতিক আন্দোলন পরিচালিত হয়, কিন্তু উভয় দলের রাজনীতিতেই তিনি নিরাসক্তি প্রকাশ করেন।
ব্যক্তি গতভাবে আবদুল জববার সমকালীন রাজনীতির প্রতি অনেকটা উদাসীন ছিলেন। যদিও তাঁর আমলেই ন্যাশনাল কংগ্রেস ও [[মুসলিম লীগ|মুসলিম লীগ]] প্রতিষ্ঠিত হয় এবং উভয় দলের নেতৃত্বে অনেক রাজনৈতিক আন্দোলন পরিচালিত হয়, কিন্তু উভয় দলের রাজনীতিতেই তিনি নিরাসক্তি প্রকাশ করেন।


১৯১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি আবদুল জববার এর মৃত্যু হয়।  [বদরুদ্দিন উমর]
১৯১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি আবদুল জববার এর মৃত্যু হয়।  [বদরুদ্দিন উমর]


[[en:Jabbar, Nawab Abdul]]
[[en:Jabbar, Nawab Abdul]]

১০:৩৫, ১ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

জববার, নওয়াব আবদুল (১৮৩৭-১৯১৮)  সরকারি কর্মকর্তা, সমাজসেবক। তিনি বর্ধমান জেলার পারহাটি গ্রামে তাঁর নানার বাড়িতে ১৮৩৭ সালের ২৪ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস ছিল বর্ধমানের কাশিয়ারা (বর্তমানে কাসেমনগর) গ্রামে। পিতা খান বাহাদুর গোলাম আসগর ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সরকারের বিচার বিভাগের প্রধান সদর আমিন। আবদুল জববার বর্ধমান রাজ স্কুলে রামতনু লাহিড়ীর ছাত্র এবং সেখান থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন। পরে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে বি.এ পড়েন। পিতার মৃত্যুর কারণে তিনি ১৮৫৭ সালে লেখাপড়া ছাড়তে বাধ্য হন এবং ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন।

আবদুল জববার ১৮৮৯ থেকে ১৮৯৪ সাল পর্যন্ত কলকাতায় প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দাযিত্ব পালন করেন। ১৮৯৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে ‘খান বাহাদুর’ ও সি.আই.ই এবং পরে ‘নওয়াব’ উপাধি প্রদান করে। তিনি বঙ্গীয় আইন পরিষদে তিনবার- ১৮৮৪, ১৮৮৬, ১৮৯৩ সালে সদস্য হিসেবে মনোনীত হন।

সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর আবদুল জববার ভুপালের মুখ্যমন্ত্রী (১৮৯৭-১৯০২) নিযুক্ত হন, সেখানে তিনি জনকল্যাণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে খ্যাতি অর্জন করেন। ঊনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে স্থাপিত অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন। তিনি বাংলাসহ সমগ্র ভারতের মুসলমানের প্রথম সংগঠন সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন-এর সদস্য ছিলেন। নওয়াব আবদুল লতিফ এর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এবং তিনি মোহামেডান লিটারেরি সোসাইটি এর একজন অন্যতম নেতা ছিলেন। ১৯০০ সালে তিনি উক্ত সোসাইটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

দক্ষিণ আফ্রিকায় মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে যে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন হয়, তার সমর্থনে  সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর নেতৃত্বে কলকাতা টাউন হলে একটি সভার আয়োজন করা হয়। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন আবদুল জববার।

আবদুল জববার ইংরেজি শিক্ষাসহ অপরাপর মুসলিম স্বার্থ এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহী ছিলেন, যদিও নারী শিক্ষার ব্যাপারে ততটা উৎসাহী ছিলেন না। তাঁর মতে মেয়েদের উচিত ঘরে বসে লেখাপড়া করা। মুসলিম নারী শিক্ষার ব্যাপারে নিজের মত প্রচারের জন্য আবদুল জববার উর্দুতে দ’ুটি বই লেখেন। তিনি বাংলা ভাষায় মুসলিম ধর্ম পরিচয় নামে একটি বই লেখেন।

১৮৯৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম ছাত্রদের জন্য টেইলর হোস্টেল স্থাপিত হয়। ১৯০৮ সালে তিনি মুসলিম ছাত্রদের পক্ষে একটি নতুন হোস্টেলের জন্য আন্দোলন শুরু করেন। কারণ টেইলর হোস্টেলের চারদিকের পরিবেশ ছিল অস্বাস্থ্যকর এবং সেখানে মুসলিম ছাত্রদের নিবাসনের ব্যবস্থা ছিল অপর্যাপ্ত। এর ফলে সরকার এবং জনগণের সহযোগিতায় স্মিথলেনের তালতলায় বেকার হোস্টেল প্রতিষ্ঠিত হয়।

ব্যক্তি গতভাবে আবদুল জববার সমকালীন রাজনীতির প্রতি অনেকটা উদাসীন ছিলেন। যদিও তাঁর আমলেই ন্যাশনাল কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং উভয় দলের নেতৃত্বে অনেক রাজনৈতিক আন্দোলন পরিচালিত হয়, কিন্তু উভয় দলের রাজনীতিতেই তিনি নিরাসক্তি প্রকাশ করেন।

১৯১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি আবদুল জববার এর মৃত্যু হয়।  [বদরুদ্দিন উমর]