চৌধুরী, ভূপতিভূষণ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Image:ChowdhuryBhupatiBhusan.jpg|thumb|400px|right|ভূপতিভূষণ চৌধুরী]]
'''চৌধুরী, ভূপতিভূষণ''' (১৯৩০-১৯৮০)  ব্যবসায়ী, রাজনীতিক। ভূপতিভূষণ চৌধুরী ওরফে মানিক চৌধুরী ১৯৩০ সালের ১৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার হাবিলাসন্দ্বীপ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ধীরেন্দ্রলাল চৌধুরী এবং মাতা যশোদাবালা চৌধুরী। তিনি ১৯৪৬ সালে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও ১৯৪৮ সালে কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজ থেকে আই.এ পাস করেন। বঙ্গবাসী কলেজে অধ্যায়নকালে তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন।
'''চৌধুরী, ভূপতিভূষণ''' (১৯৩০-১৯৮০)  ব্যবসায়ী, রাজনীতিক। ভূপতিভূষণ চৌধুরী ওরফে মানিক চৌধুরী ১৯৩০ সালের ১৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার হাবিলাসন্দ্বীপ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ধীরেন্দ্রলাল চৌধুরী এবং মাতা যশোদাবালা চৌধুরী। তিনি ১৯৪৬ সালে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও ১৯৪৮ সালে কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজ থেকে আই.এ পাস করেন। বঙ্গবাসী কলেজে অধ্যায়নকালে তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন।


দেশভাগের পর তিনি চট্টগ্রামে এসে ব্যবসা শুরু করেন। অচিরেই তিনি চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন।  ১৯৫৪ সালে তিনি  আওয়ামী লীগে যোগ দেন।। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন।  ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম জেলা শাখার কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। ষাটের দশকের প্রথমদিকে তিনি এমএ  আজিজ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ চট্টগ্রামে ‘নিউ এজেন্সি’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এ প্রতিষ্ঠান থেকে যে আয় হতো তার সিংহভাগ ব্যয় করা হতো আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাজে। ১৯৬৬ সালে সরকার দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ ঘোষণা করলে ছয়দফা আন্দোলনের পক্ষে প্রচারণা চালানোর জন্য আবদুল গাফফার চৌধুরীর সম্পাদনায় দৈনিক আওয়াজ নামে যে পত্রিকা বের হয় বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মানিক চৌধুরী এই পত্রিকার জন্য অর্থ যোগান দেওয়ার দায়িত্ব নেন।
দেশভাগের পর তিনি চট্টগ্রামে এসে ব্যবসা শুরু করেন। অচিরেই তিনি চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন।  ১৯৫৪ সালে তিনি  আওয়ামী লীগে যোগ দেন।। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন।  ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম জেলা শাখার কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। ষাটের দশকের প্রথমদিকে তিনি এমএ  আজিজ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ চট্টগ্রামে ‘নিউ এজেন্সি’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এ প্রতিষ্ঠান থেকে যে আয় হতো তার সিংহভাগ ব্যয় করা হতো আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাজে। ১৯৬৬ সালে সরকার দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ ঘোষণা করলে ছয়দফা আন্দোলনের পক্ষে প্রচারণা চালানোর জন্য আবদুল গাফফার চৌধুরীর সম্পাদনায় দৈনিক আওয়াজ নামে যে পত্রিকা বের হয় বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মানিক চৌধুরী এই পত্রিকার জন্য অর্থ যোগান দেওয়ার দায়িত্ব নেন।
[[Image:ChowdhuryBhupatiBhusan.jpg|thumb|400px|right|ভূপতিভূষণ চৌধুরী]]


ষাটের দশকের গোপন বিপ্লবী আন্দোলনে মানিক চৌধুরী জড়িত ছিলেন। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি মৌলিক গণতন্ত্রী সদস্য হিসেবে ফাতিমা জিন্নাহার পক্ষে ব্যাপক সাংগঠনিক তৎপরতা চালান। ১৯৬৬ সালে ৬-দফা প্রণীত হলে তিনি উক্ত দফার সমর্থনে জনমত আদায়ে সচেষ্ট হন। পাকিস্তান প্রতিরক্ষা আইনে সরকার তাঁকে ১৯৬৬ সালের ২০ মে রাতে গ্রেফতার করে। ১৯৬৭ সালের ২৩ জানুয়ারি তিনি জেল থেকে মুক্তি পান। তাঁকে পুনরায় ৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময়ে সরকার তাঁকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ১২ নং আসামী হিসেবে অভিযুক্ত করে। তিনি জেলে প্রচন্ড শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। উনসত্তুরের গণঅভূত্থানে তিনি মুক্তি লাভ করেন। কয়েক মাস পর জেনারেল ইয়াহিয়ার সামরিক সরকার তাঁকে পুনরায় গ্রেফতার করে। ১৯৭০ সালের শেষদিকে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান। ১৯৭১ সালের মার্চে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ইয়াহিয়া খানের বৈঠকের সময় মানিক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ এবং মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনের কাজে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন মানিক চৌধুরী। ১৯৭১ সালের এপ্রিলে তিনি কলকাতা গমন করেন। সেখানে তিনি আগরতলা, কলকাতা শরণার্থী শিবির ও মুক্তিযোদ্ধা শিবিরে কর্মতৎপরতা চালান।
ষাটের দশকের গোপন বিপ্লবী আন্দোলনে মানিক চৌধুরী জড়িত ছিলেন। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি মৌলিক গণতন্ত্রী সদস্য হিসেবে ফাতিমা জিন্নাহার পক্ষে ব্যাপক সাংগঠনিক তৎপরতা চালান। ১৯৬৬ সালে ৬-দফা প্রণীত হলে তিনি উক্ত দফার সমর্থনে জনমত আদায়ে সচেষ্ট হন। পাকিস্তান প্রতিরক্ষা আইনে সরকার তাঁকে ১৯৬৬ সালের ২০ মে রাতে গ্রেফতার করে। ১৯৬৭ সালের ২৩ জানুয়ারি তিনি জেল থেকে মুক্তি পান। তাঁকে পুনরায় ৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময়ে সরকার তাঁকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ১২ নং আসামী হিসেবে অভিযুক্ত করে। তিনি জেলে প্রচন্ড শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। উনসত্তুরের গণঅভূত্থানে তিনি মুক্তি লাভ করেন। কয়েক মাস পর জেনারেল ইয়াহিয়ার সামরিক সরকার তাঁকে পুনরায় গ্রেফতার করে। ১৯৭০ সালের শেষদিকে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান। ১৯৭১ সালের মার্চে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ইয়াহিয়া খানের বৈঠকের সময় মানিক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ এবং মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনের কাজে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন মানিক চৌধুরী। ১৯৭১ সালের এপ্রিলে তিনি কলকাতা গমন করেন। সেখানে তিনি আগরতলা, কলকাতা শরণার্থী শিবির ও মুক্তিযোদ্ধা শিবিরে কর্মতৎপরতা চালান।

০৭:০৭, ২৬ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

ভূপতিভূষণ চৌধুরী

চৌধুরী, ভূপতিভূষণ (১৯৩০-১৯৮০)  ব্যবসায়ী, রাজনীতিক। ভূপতিভূষণ চৌধুরী ওরফে মানিক চৌধুরী ১৯৩০ সালের ১৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার হাবিলাসন্দ্বীপ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ধীরেন্দ্রলাল চৌধুরী এবং মাতা যশোদাবালা চৌধুরী। তিনি ১৯৪৬ সালে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও ১৯৪৮ সালে কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজ থেকে আই.এ পাস করেন। বঙ্গবাসী কলেজে অধ্যায়নকালে তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন।

দেশভাগের পর তিনি চট্টগ্রামে এসে ব্যবসা শুরু করেন। অচিরেই তিনি চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন।  ১৯৫৪ সালে তিনি  আওয়ামী লীগে যোগ দেন।। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন।  ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম জেলা শাখার কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। ষাটের দশকের প্রথমদিকে তিনি এমএ  আজিজ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ চট্টগ্রামে ‘নিউ এজেন্সি’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এ প্রতিষ্ঠান থেকে যে আয় হতো তার সিংহভাগ ব্যয় করা হতো আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাজে। ১৯৬৬ সালে সরকার দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ ঘোষণা করলে ছয়দফা আন্দোলনের পক্ষে প্রচারণা চালানোর জন্য আবদুল গাফফার চৌধুরীর সম্পাদনায় দৈনিক আওয়াজ নামে যে পত্রিকা বের হয় বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মানিক চৌধুরী এই পত্রিকার জন্য অর্থ যোগান দেওয়ার দায়িত্ব নেন।

ষাটের দশকের গোপন বিপ্লবী আন্দোলনে মানিক চৌধুরী জড়িত ছিলেন। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি মৌলিক গণতন্ত্রী সদস্য হিসেবে ফাতিমা জিন্নাহার পক্ষে ব্যাপক সাংগঠনিক তৎপরতা চালান। ১৯৬৬ সালে ৬-দফা প্রণীত হলে তিনি উক্ত দফার সমর্থনে জনমত আদায়ে সচেষ্ট হন। পাকিস্তান প্রতিরক্ষা আইনে সরকার তাঁকে ১৯৬৬ সালের ২০ মে রাতে গ্রেফতার করে। ১৯৬৭ সালের ২৩ জানুয়ারি তিনি জেল থেকে মুক্তি পান। তাঁকে পুনরায় ৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময়ে সরকার তাঁকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ১২ নং আসামী হিসেবে অভিযুক্ত করে। তিনি জেলে প্রচন্ড শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। উনসত্তুরের গণঅভূত্থানে তিনি মুক্তি লাভ করেন। কয়েক মাস পর জেনারেল ইয়াহিয়ার সামরিক সরকার তাঁকে পুনরায় গ্রেফতার করে। ১৯৭০ সালের শেষদিকে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান। ১৯৭১ সালের মার্চে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ইয়াহিয়া খানের বৈঠকের সময় মানিক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ এবং মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনের কাজে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন মানিক চৌধুরী। ১৯৭১ সালের এপ্রিলে তিনি কলকাতা গমন করেন। সেখানে তিনি আগরতলা, কলকাতা শরণার্থী শিবির ও মুক্তিযোদ্ধা শিবিরে কর্মতৎপরতা চালান।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মানিক চৌধুরীর রাজনৈতিক মতপার্থক্য ঘটে। তিনি ১৯৭৪ সালে হাজী দানেশের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়নে (জাগমুই) যোগ দেন।  ১৯৭৪ সালের ৩০ মার্চ তিনি উক্ত দলের পক্ষে লালদিঘি ময়দানে বক্তৃতা করেন। ১ এপ্রিল সরকার বিশেষ আইনে তাঁকে গ্রেফতার করে। ১৯৭৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট তাঁকে মুক্তি দিলেও সরকার জরুরি আইনে তাঁকে পুনরায় গ্রেফতার করে। জুন মাসে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলে এক সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় চার নেতার সঙ্গে তাঁকে ঢাকায় গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রাখা হয়। জাতীয় চার নেতার হত্যাকান্ডের পর তাঁকে চট্টগ্রাম জেলে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৮০ সালে তিনি মুক্তি লাভ করেন। চিকিৎসার জন্য নয়াদিল্লি যাবার পথে হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৩০ জুন কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়।

মানিক চৌধুরী নিজ এলাকায় হাবিলাসন্দীপ মহিলা উচ্চ বিদ্যালয় ও হাবিলাসন্দীপ উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। হুসাইন ছালেহ-নূর কলেজ প্রতিষ্ঠায়ও তাঁর অবদান ছিল। চরকানাই ফুলতলা থেকে হাবিলাসন্দীপ সড়কের নামকরণ করা হয় মানিক চৌধুরী সড়ক।  [মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল]