চৌধুরী, বিনোদ বিহারী

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৬:২২, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ ("right|thumbnail|200px|বিনোদ বিহারী চৌধুরী '''চৌধুরী, বিনোদ বিহারী''' (১৯১১-২০১৩) ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী কর্মী, বিপ্লবী সূর্যসেনের সহযোদ্ধা। বিনোদ বিহারী চৌধুরী ১৯..." দিয়ে পাতা তৈরি)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
বিনোদ বিহারী চৌধুরী

চৌধুরী, বিনোদ বিহারী (১৯১১-২০১৩) ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী কর্মী, বিপ্লবী সূর্যসেনের সহযোদ্ধা। বিনোদ বিহারী চৌধুরী ১৯১১ সালের ১০ই জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী থানার উত্তর ভুর্ষি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা কামিনী চৌধুরী ছিলেন পেশায় উকিল এবং মা রামা চৌধুরী ছিলেন গৃহিনী। তাঁর স্ত্রীর নাম বিভা দাশ চৌধুরী। তাদের ছিল একমাত্র পুত্র সন্তান, নাম বিবেকান্দ্র চৌধুরী।

চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানার রাঙ্গামাটিয়া বোর্ড স্কুলে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়েছিল। সেখান থেকে তিনি ফটিকছড়ির প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ ফটিকছড়ি করোনেশন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, বোয়ালখালীর পি.সি সেন সারোয়ারতলি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম কলেজে পড়াশোনা করেন। বিনোদ বিহারী চৌধুরী ১৯২৭ সালে সারোয়াতলী স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে বিপ্লবী দলের সদস্য হন ও মাস্টারদা সূর্যসেন, রামকৃষ্ণ বিশ্বাস ও তারেকশ্বর দস্তিদার প্রমুখ বিপ্লবী নেতার ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসেন। ১৯২৯ সালে সারোয়ারতলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এন্ট্রান্স পাস করেন। লাভ করেন রায়সাহেব বৃত্তি। এরপর ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র থাকাকালে তিনি ১৯৩০ সালে ১৮ই এপ্রিল সূর্যসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করতে যান। ২২শে এপ্রিল জালালাবাদ পাহাড়ে যুদ্ধে অংশ নিয়ে আহত হন। এরপর আত্মগোপনে যান। ৩ বছর ফেরারিজীবন কাটিয়ে ধরা পড়েন ও ৫ বছর বিনা বিচারে বিভিন্ন বন্দি শিবিরে কাটান। ভারতের রাজপুতনা দেউলি ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি অবস্থায় ১৯৩৪ সালে প্রথম বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৩৬ সালে ডিস্টিংশনসহ চট্টগ্রাম কলেজ থেকে বি.এ পাস করেন। ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক গৃহবন্দী অবস্থায় ১৯৩৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এম.এ ও বি.এল পাস করেন।

বিনোদ বিহারী চৌধুরী ১৯৩০ সালে কংগ্রেস চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া ১৯৪০-১৯৪৬ সময়ে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস নির্বাহী কমিটির সদস্য থাকার পাশাপাশি ১৯৪৬ সালে তিনি কংগ্রেস চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৮ সালে তিনি পূর্ব বাংলার আইন পরিষদে জাতীয় কংগ্রেস দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। বিনোদ বিহারী চৌধুরী ছিলেন একজন খাঁটি বিপ্লবী ও দেশপ্রেমিক। অসম্প্রদায়িকতা ছিল তাঁর জীবন-আদর্শ। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান সামরিক আইন জারির মাধ্যমে সব রাজনৈতিক দল বেআইনি ঘোষণা করলে, রাজনীতি থেকে তিনি অবসর নেন। এরপূর্বে তিনি ১৯৩৯ সালে একটি দৈনিক পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৪০ সালে চট্টগ্রাম কোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত হন। অবশেষে, তিনি তাঁর দীর্ঘ কর্মময়জীবনে শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত বিনোদ বিহারী চৌধুরী প্রায় ১৫ বছর জেলে জীবন কাটান।

বিপ্লবীদের দলে নাম লেখানোর অল্পদিনের মধ্যেই বিনোদবিহারী চৌধুরী মাস্টারদা সূর্যসেনের প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন। ১৯৩০ সালের ঐতিহাসিক অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সময় বিপ্লবীরা টেলিগ্রাফ অফিস ধ্বংস করেন। দামপাড়া পুলিশ লাইনে অস্ত্রের গুদাম ছিল; সেটিও তাঁরা দখলে নেন। মাস্টারদা সূর্যসেনের দলে আরও যাঁরা ছিলেন তাঁদের মধ্যে হিমাংশু সেন, অনন্তসিংহ, গণেশ ঘোষ ও আনন্দ গুপ্তের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৩০ সালের এ ঘটনার পর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন জঙ্গিরূপ ধারণ করে। বিপ্লবীদের চট্টগ্রাম দখলের কয়েক দিনের ব্যবধানে ব্রিটিশ সৈন্যরা শক্তি সঞ্চয় করে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বিনোদ বিহারীরাও বীরত্বের সঙ্গে জালালাবাদ পাহাড়ে যুদ্ধ চালিয়ে যান। জালালাবাদ যুদ্ধ ছিল বিনোদ বিহারী চৌধুরীর প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ। আহত অবস্থায় যুদ্ধ চালিয়ে যান। এ যুদ্ধে তাদের ১২ জন সহকর্মী শাহাদাতবরণ করেন।

গৃহবন্দী থেকে মুক্তি পেয়ে বিনোদ বিহারী চৌধুরী চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত ‘পাঞ্চজন্য’ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। পাশাপাশি চট্টগ্রাম আদালতে আইন পেশায় যুক্ত হন এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দিয়ে শুরু করেন সক্রিয় রাজনৈতিক জীবন। বিনোদ বিহারী বলতেন, ‘ভীরুতা, কাপুরুষতা পাপ। মনের মধ্যে সাহস রেখো’। বিনোদ বিহারীর স্ত্রী নাম বিভা দাশ চৌধুরী। তিনি ২০০৯ সালের ২৯শে ডিসেম্বর পরলোকগমন করেন।

ব্রিটিশ, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এই তিন পর্বে যত অন্যায়, অপশাসন ও মানবতাবিরোধী কর্মকা- ঘটেছে, সবটাতেই বিনোদ বিহারী ছিলেন প্রতিবাদে সোচ্চার, লড়াকু সৈনিক। কর্মকীর্তির স্বীকৃতি হিসেবে ‘একুশে পদক’সহ রাষ্ট্রীয় নানা সম্মাননা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সংবর্ধনা লাভ করেন তিনি। ২০০১ সালে তিনি রাষ্ট্রীয় ‘স্বাধীনতা পদক’ প্রাপ্ত হন। ২০১১ সালে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি তাঁকে সম্মানসূচক সদস্য পদ ও সংবর্ধনা প্রদান করে। সারাজীবনের সঞ্চয়, ছাত্র-শুভাকাক্সক্ষী, ব্যাংক, সংস্থা ও সরকার প্রদত্ত সম্মাননার অর্থে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে ট্রাস্ট ফান্ড প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি দুই লক্ষ টাকা দান করেন। ২০১১ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ-এ চালু করেন মাস্টারদা সূর্যসেন ট্রাস্ট ফান্ড।

২০১৩ সালের ১০ই এপ্রিল তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। [সাব্বীর আহমেদ]