চৌধুরী, ফজলুল কাদের: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Image:ChaudhuryFazlulQuader.jpg|thumb|400px|right|ফজলুল কাদের চৌধুরী]]
'''চৌধুরী, ফজলুল কাদের''' (১৯১৯-১৯৭৩)  রাজনীতিক। ১৯১৯ সালের ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম জেলার গহীরা গ্রামে তাঁর জন্ম। ফজলুল কাদের চৌধুরী কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ল’ কলেজ থেকে বিএল ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪১ সালে তিনি অল ইন্ডিয়া মুসলিম স্টুডেন্ট ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি নির্বাচিত হন এবং ১৯৪২ সালে ভারতীয় নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হন। তিনি মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং ১৯৪৩ সালে চট্টগ্রাম জেলা শাখার সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। ফজলুল কাদের চৌধুরী পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি মুসলিম লীগ চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। এ পদে থাকা অবস্থায়ই তিনি ১৯৫৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পূর্ববাংলা প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরিষদ-সদস্য নির্বাচিত হন। অবশ্য পরে তিনি মুসলিম লীগের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন।
'''চৌধুরী, ফজলুল কাদের''' (১৯১৯-১৯৭৩)  রাজনীতিক। ১৯১৯ সালের ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম জেলার গহীরা গ্রামে তাঁর জন্ম। ফজলুল কাদের চৌধুরী কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ল’ কলেজ থেকে বিএল ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪১ সালে তিনি অল ইন্ডিয়া মুসলিম স্টুডেন্ট ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি নির্বাচিত হন এবং ১৯৪২ সালে ভারতীয় নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হন। তিনি মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং ১৯৪৩ সালে চট্টগ্রাম জেলা শাখার সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। ফজলুল কাদের চৌধুরী পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি মুসলিম লীগ চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। এ পদে থাকা অবস্থায়ই তিনি ১৯৫৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পূর্ববাংলা প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরিষদ-সদস্য নির্বাচিত হন। অবশ্য পরে তিনি মুসলিম লীগের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন।


ফজলুল কাদের চৌধুরী ১৯৬২ সালে  [[মৌলিক গণতন্ত্র|মৌলিক গণতন্ত্র]]  ব্যবস্থায় পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আইয়ুব খানের মন্ত্রিসভায় (১৯৬২) পরপর কৃষি ও পূর্তমন্ত্রী, শিক্ষা ও তথ্যমন্ত্রী এবং শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ছিলেন (১৯৬৩)। কনভেনশন  [[মুসলিম লীগ|মুসলিম লীগ]] প্রতিষ্ঠায় (১৯৬২) তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এবং দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। জাতীয় পরিষদের কোনো সদস্য মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হলে তাঁর সদস্যপদ বাতিল হবে, সুপ্রিম কোর্টের এমন একটি রায়ের ফলে (১৯৬৩) এসেম্বলিতে তাঁর সদস্যপদ বাতিল হয় (মে ১৯৬৩)। ১৯৬৩ সালের ২৮ অক্টোবর তিনি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ওই  বছর অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে পুনরায় তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২৯ নভেম্বর পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার নির্বাচিত হন। মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থায় ১৯৬৫ সালে পুনরায় তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। দলীয় স্বার্থবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে ১৯৬৬ সালে তাঁকে মুসলিম লীগ (কনভেনশন) থেকে বহিষ্কার করা হয়। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব সরকারের পতনের পর কনভেনশন মুসলিম লীগ বিভক্ত হলে ফজলুল কাদের দলের এক অংশের সভাপতি নির্বাচিত হন।
ফজলুল কাদের চৌধুরী ১৯৬২ সালে  [[মৌলিক গণতন্ত্র|মৌলিক গণতন্ত্র]]  ব্যবস্থায় পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আইয়ুব খানের মন্ত্রিসভায় (১৯৬২) পরপর কৃষি ও পূর্তমন্ত্রী, শিক্ষা ও তথ্যমন্ত্রী এবং শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ছিলেন (১৯৬৩)। কনভেনশন  [[মুসলিম লীগ|মুসলিম লীগ]] প্রতিষ্ঠায় (১৯৬২) তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এবং দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। জাতীয় পরিষদের কোনো সদস্য মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হলে তাঁর সদস্যপদ বাতিল হবে, সুপ্রিম কোর্টের এমন একটি রায়ের ফলে (১৯৬৩) এসেম্বলিতে তাঁর সদস্যপদ বাতিল হয় (মে ১৯৬৩)। ১৯৬৩ সালের ২৮ অক্টোবর তিনি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ওই  বছর অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে পুনরায় তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২৯ নভেম্বর পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার নির্বাচিত হন। মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থায় ১৯৬৫ সালে পুনরায় তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। দলীয় স্বার্থবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে ১৯৬৬ সালে তাঁকে মুসলিম লীগ (কনভেনশন) থেকে বহিষ্কার করা হয়। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব সরকারের পতনের পর কনভেনশন মুসলিম লীগ বিভক্ত হলে ফজলুল কাদের দলের এক অংশের সভাপতি নির্বাচিত হন।
[[Image:ChaudhuryFazlulQuader.jpg|thumb|400px|right|ফজলুল কাদের চৌধুরী]]


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয়দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে সংগঠিত বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বিরোধী ছিলেন ফজলুল কাদের চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে দখলদার পাকবাহিনীর সঙ্গে সর্বাত্বক সহযোগিতা করেন। চট্টগ্রামে রাজাকার বাহিনী ও শান্তি কমিটি গঠনে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় ১৯৭৩ সালের ১৮ জুলাই তাঁর মৃত্যু হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয়দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে সংগঠিত বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বিরোধী ছিলেন ফজলুল কাদের চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে দখলদার পাকবাহিনীর সঙ্গে সর্বাত্বক সহযোগিতা করেন। চট্টগ্রামে রাজাকার বাহিনী ও শান্তি কমিটি গঠনে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় ১৯৭৩ সালের ১৮ জুলাই তাঁর মৃত্যু হয়।

০৭:৩১, ২৩ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

ফজলুল কাদের চৌধুরী

চৌধুরী, ফজলুল কাদের (১৯১৯-১৯৭৩)  রাজনীতিক। ১৯১৯ সালের ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম জেলার গহীরা গ্রামে তাঁর জন্ম। ফজলুল কাদের চৌধুরী কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ল’ কলেজ থেকে বিএল ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪১ সালে তিনি অল ইন্ডিয়া মুসলিম স্টুডেন্ট ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি নির্বাচিত হন এবং ১৯৪২ সালে ভারতীয় নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হন। তিনি মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং ১৯৪৩ সালে চট্টগ্রাম জেলা শাখার সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। ফজলুল কাদের চৌধুরী পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি মুসলিম লীগ চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। এ পদে থাকা অবস্থায়ই তিনি ১৯৫৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পূর্ববাংলা প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরিষদ-সদস্য নির্বাচিত হন। অবশ্য পরে তিনি মুসলিম লীগের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন।

ফজলুল কাদের চৌধুরী ১৯৬২ সালে  মৌলিক গণতন্ত্র  ব্যবস্থায় পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আইয়ুব খানের মন্ত্রিসভায় (১৯৬২) পরপর কৃষি ও পূর্তমন্ত্রী, শিক্ষা ও তথ্যমন্ত্রী এবং শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ছিলেন (১৯৬৩)। কনভেনশন  মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠায় (১৯৬২) তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এবং দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। জাতীয় পরিষদের কোনো সদস্য মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হলে তাঁর সদস্যপদ বাতিল হবে, সুপ্রিম কোর্টের এমন একটি রায়ের ফলে (১৯৬৩) এসেম্বলিতে তাঁর সদস্যপদ বাতিল হয় (মে ১৯৬৩)। ১৯৬৩ সালের ২৮ অক্টোবর তিনি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ওই  বছর অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে পুনরায় তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২৯ নভেম্বর পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার নির্বাচিত হন। মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থায় ১৯৬৫ সালে পুনরায় তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। দলীয় স্বার্থবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে ১৯৬৬ সালে তাঁকে মুসলিম লীগ (কনভেনশন) থেকে বহিষ্কার করা হয়। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব সরকারের পতনের পর কনভেনশন মুসলিম লীগ বিভক্ত হলে ফজলুল কাদের দলের এক অংশের সভাপতি নির্বাচিত হন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয়দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে সংগঠিত বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বিরোধী ছিলেন ফজলুল কাদের চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে দখলদার পাকবাহিনীর সঙ্গে সর্বাত্বক সহযোগিতা করেন। চট্টগ্রামে রাজাকার বাহিনী ও শান্তি কমিটি গঠনে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় ১৯৭৩ সালের ১৮ জুলাই তাঁর মৃত্যু হয়।

ফজলুল কাদের চৌধুরী তাঁর নিজ জেলায় বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা এবং বিভিন্ন সমাজকল্যাণ ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করেন।  [মুয়ায্যম হুসায়ন খান]