চৌধুরী, কাইয়ুম: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

("right|thumbnail|200px|কাইয়ুম চৌধুরী '''চৌধুরী, কাইয়ুম''' (১৯৩২-২০১৪) একজন বাংলাদেশী খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী। তিনি এদেশের প্রথম প্রজন্মের চিত্রশিল্পী। প্রচ্ছদ শিল্পী হিসেবে..." দিয়ে পাতা তৈরি)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১৪ নং লাইন: ১৪ নং লাইন:
২০১৪ সালের ৩০শে নভেম্বর এই দেশবরেণ্য শিল্পী মৃত্যুবরণ করেন।  [হামিদুজ্জামান খান]
২০১৪ সালের ৩০শে নভেম্বর এই দেশবরেণ্য শিল্পী মৃত্যুবরণ করেন।  [হামিদুজ্জামান খান]


[[Chowdhury, Qayyum]]
[[en: Chowdhury, Qayyum]]

১৬:৩৬, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

কাইয়ুম চৌধুরী

চৌধুরী, কাইয়ুম (১৯৩২-২০১৪) একজন বাংলাদেশী খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী। তিনি এদেশের প্রথম প্রজন্মের চিত্রশিল্পী। প্রচ্ছদ শিল্পী হিসেবে তাঁর অবস্থান সবার উপরে। তাঁর অসাধারণ টাইপোগ্রাফী এই দেশে অসংখ্য বইয়ের প্রচ্ছদ হয়ে চিত্রকলার স্থান পেয়েছে। চিত্রশিল্পী হিসেবেও তিনি সমানভাবে জনপ্রিয় ছিলেন। কাইয়ুম চৌধুরীর জন্ম ১৯৩২ সালের ৯ই মে ফেনী জেলায়। তখন তাঁর পূর্বপুরুষের পারিবারিক জৌলুশ ফুরিয়ে গেলেও পরিবারটিতে টিকে ছিল শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক চর্চা। পিতা আবদুল কুদ্দুস চৌধুরী ছিলেন সমবায় বিভাগের পরিদর্শক। পরে তিনি সমবায় ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মা সরফুন্নিসা চৌধুরানী। কাইয়ুম চৌধুরীর বাবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল সঙ্গীতশিল্পী শচীন দেব বর্মনসহ অনেক সঙ্গীত শিল্পীর। আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের সঙ্গে ছিল তাদের পারিবারিক যোগাযোগ। পত্রিকা ও বই পড়া এবং সঙ্গীতের প্রতি পিতার আগ্রহের ফলে এই দুয়ের প্রতি কাইয়ুম চৌধুরী শৈশব থেকেই অনুরাগী হন। এই বিষয়গুলো তাঁর সৌন্দর্যবোধ ও রুচিশীল মানস গঠনে সহায়ক হয়। বাবার চাকরির সূত্রে কাইয়ুম চৌধুরী থেকেছেন দেশের অনেক অঞ্চলে। দেশের নানান জায়গার প্রকৃতি ও মানুষ দেখে কিশোর কাইয়ুম সমৃদ্ধ হয়েছেন।

তিনি ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯৪৯ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ১৯৪৮ সালে ঢাকায় চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করলে তার পরের বছর ১৯৪৯ সালে তিনি ঐ প্রতিষ্ঠানে কলাশিক্ষায় ভর্তি হন। তাঁর শিক্ষক ছিলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, শিল্পগুরু সফিউদ্দিন আহমেদ, পটুয়া কামরুল হাসানের মত বিশ^বরেণ্য শিল্পীরা। তাঁদের ব্যাচের ছিলেন মূর্তজা বশীর, রশীদ চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ। তাদের নিয়ে শিল্প-সাহিত্য চর্চায় মেতে ওঠেন। প্রথম ব্যাচের ছাত্র আমিনুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর ছিল ঘনিষ্ঠতা। প্রথম প্রজন্মের এই শিল্পীরা মিলেই এদেশের মানুষের রুচি পরিবর্তনের কার্যে ব্রত হন। ১৯৫১-৫২ সালে তাঁরা ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের লিটন হলে আয়োজন করেন চিত্র প্রদর্শনীর। এটাই ছিল এদেশের সর্বপ্রথম চিত্র প্রদর্শনী। ঘোড়াগাড়ি চড়ে দর্শকবৃন্দ এসে টিকেট কেটে দেখেছেন সেই প্রদর্শনী। ঐ প্রদর্শনীতে কাইয়ুম চৌধুরীর ছবি স্থান পায়।

তৎকালীন পূর্ববঙ্গের ঢাকায় সরকারি এই চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে তিনি ১৯৫৪ সালে শিল্পকলা শিক্ষা সম্পন্ন করেন। ছাত্রজীবন থেকেই দেশের প্রতি অনুগত থেকে কাজ করেছেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। তিনি ভূমিকা রেখেছেন ভাষা আন্দোলনে। ১৯৭১ সালে ১৬ই মার্চ পাকিস্তানি হানাদারাদের বিরুদ্ধে ‘স্বাধীনতা মিছিল’ আয়োজন করে চারু ও কারুশিল্পী সংগ্রাম পরিষদ। তখন পরিষদের যুগ্ম-আহবায়ক ছিলেন কাইয়ুম চৌধুরী এবং মুর্তজা বশীর। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের নেতৃত্বে শহীদ মিনার থেকে স্বাধীনতা মিছিল বের হয়ে বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে শেষ হয়। কাইয়ুম চৌধুরী আমৃত্যু যুক্ত ছিলেন প্রগতিশীল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে।

তিনি ১৯৫৭ সালে সরকারি চারুকলা ইনস্টিটিউটে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তিন বছর পর সে চাকরি ছেড়ে ১৯৬০ সালে নকশাবিদ হিসেবে যোগ দেন বিসিক-এর নকশা কেন্দ্রে। পরের বছরই সে চাকরি ছেড়ে অবজার্ভার গ্রুপ অব পাকলিকেশনে চিফ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি আবার ঢাকার সরকারি চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে (চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিবর্তিত নাম) যোগদান করেন। এই প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে চারুকলা অনুষদে পরিণত হয় ও সেখানে থেকে তিনি ১৯৯৪ সালে অধ্যাপক হিসেবে অবসরগ্রহণ করেন। পরে সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষাদান অব্যাহত রাখেন ২০০২ সাল পর্যন্ত। এসব চাকরির বাইরে তিনি সম্পাদনা ও শিল্প নির্দেশনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সন্ধানী প্রকাশনী এবং মাওলা ব্রাদার্সের তিনি ছিলেন নিয়মিত প্রচ্ছদশিল্পী। প্রচ্ছদে তিনি নতুন ধারার সৃষ্টি করেছেন। দৈনিক পত্রিকাগুলোর ঈদ সংখ্যা এবং বিশেষ সংখ্যার প্রচ্ছদশিল্পী হিসেবে কাইয়ুম চৌধুরীর কাজ ছিল সবার পছন্দ। তিনি বহু পত্রিকা ও বিজ্ঞাপণী সংস্থার শিল্পী উপদেষ্টা ছিলেন। সকল কাজের পাশাপাশি তিনি ছবি এঁকেছেন নিয়মিত। সকল মাধ্যমে তিনি এঁকেছেন অসংখ্য ছবি। তাঁর ক্যানভাসের প্রধান বিষয় ছিল গ্রামীণ সমাজ এবং মুক্তিযুদ্ধ। পরিণয় সূত্রে তিনি আবদ্ধ হন শিল্পী তাহেরা খানমের সঙ্গে। চারুকলায় মেয়েদের প্রথম ব্যাচে পাঁচজন শিক্ষার্থী ভর্তি হন। তাদের একজন ছিলেন তাহেরা খানম।

ছাত্রজীবন শেষ হওয়ার কয়েক বছর পরেই ১৯৬১ সালে কাইয়ুম চৌধুরী জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। সে বছরই লাহোরে অনুষ্ঠিত নিখিল পাকিস্তান শিল্পকলা প্রদর্শনীতে বটম শীর্ষক ছবির জন্য তিনি প্রথম পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬৬ সালে পঞ্চম তেহরান বাইএনিয়ালে রাজকীয় দরবার পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৭ সালে শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃক কাইয়ুম চৌধুরীর প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। সে বছরই তিনি শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। দীর্ঘ জীবনে তাঁর একক প্রদর্শনী হয়েছে বহুসংখ্যক। তাঁর চিত্রকর্ম সংরক্ষিত আছে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ জাতীয় চিত্রশালা, বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, বঙ্গভবন, বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, এশিয়াটিক সোসাইটি আর্ট গ্যালারি, মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্ট এবং সাও পাওলো, ব্রাজিলসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যাক্তি পর্যায়ের সংগ্রহে।

অবসর গ্রহণ করার পর তিনি আজিমপুর এবং গাজী ভবনে প্রতিষ্ঠিত দুটি স্টুডিওতে ছবি আঁকায় ব্যস্ত ছিলেন। তিনি সারাজীবন ছবি এঁকেছেন। কাইয়ুম চৌধুরী একজন সমাজ সচেতন শিল্পী ছিলেন। তিনি সুলতান ফাউন্ডেশন কর্তৃক ২০০১ সালে স্বর্ণপদকে ভূষিত হন। শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮৬ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন।

২০১৪ সালের ৩০শে নভেম্বর এই দেশবরেণ্য শিল্পী মৃত্যুবরণ করেন। [হামিদুজ্জামান খান]