চিলমারী উপজেলা

চিলমারী উপজেলা (কুড়িগ্রাম জেলা) আয়তন: ২২৪.৯৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°২৬´ থেকে ২৫°৪০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং  ৮৯°৩৮´ থেকে ৮৯°৪৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে উলিপুর উপজেলা, দক্ষিণে চর রাজিবপুর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে রৌমারী এবং চর রাজিবপুর উপজেলা, পশ্চিমে উলিপুর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা।

জনসংখ্যা ১২২৮৪১; পুরুষ ৫৯৪১৪, মহিলা ৬৩৪২৭। মুসলিম ১১৬৫৫৩, হিন্দু ৬১৮৯, খ্রিস্টান ২ এবং অন্যান্য ৯৭।

জলাশয় প্রধান নদ-নদী: ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা। উদনার বিল, চাচলার বিল, মাগুড়ার বিল, শৌলধুকরীর বিল, হরিন্যার বন্দ ও পেদি থেওয়ার বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন চিলমারী থানা গঠিত হয় ১৮৫০ সালে এবং ১৯৮৩ সালের ১৫ এপ্রিল থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৪৮ ১৩৩ ৪৫২১৫ ৭৭৬২৬ ৫৪৬ ৪৫.৫ ৩৬.২
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২৮.০৯ ৪৫২১৫ ১৬১০ ৪৫.৫
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
অষ্টমীর চর ১১ ১৮৫২৮ ৮৬৮১ ৯০২০ ২৩.৫
চিলমারী ২৩ ৬৬৫৪ ৩৪১৮ ৩৪৮৪ ৩২.৭
থানাহাট ৮৩ ৬০২০ ১৮৮৫৭ ১৯৬২০ ৫০.৪
নয়ারহাট ৪৭ ১২৮৪৫ ৫০৬৯ ৫৪৫০ ২৪.২
রমনা ৫৯ ৫১৬১ ১৩৬৮৪ ১৫০৪৫ ৪১.২
রাণীগঞ্জ ৭১ ৬৩৮১ ৯৭০৫ ১০৮০৮ ৪০.৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ (মুগল আমল), কালী মন্দির ও শিব মন্দির।

ঐতিহাসিক ঘটনা বিংশ শতাব্দির শুরুতে উপজেলার বেশসংখ্যক ব্যক্তি ব্রিটিশ বিরোধী স্বরাজ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। এদের মধ্যে আবদুল মজিদ, পরেশচন্দ্র মল্লিক ও নরেনকুমার ঠাকুরের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয়। পরেশচন্দ্র মল্লিক ধরা পড়েন এবং আন্দামানে নির্বাসিত হন।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২০ মে পাকসেনারা এ অঞ্চলের ৩০ জনকে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে হত্যা করে। ১৯৭১ সালের ১৭ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম চাঁদের নেতৃত্বে ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে পাকবাহিনীর লড়াই হয়। এ লড়াইয়ে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং চিলমারী থানা মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদীর পাড়ে একটি বধ্যভূমি রয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন চিলমারী উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৩।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ১৪৫, মন্দির ১০। উল্লেখযোগ্য ধমীয় প্রতিষ্ঠান: তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ (মুগল আমল), কালী মন্দির ও শিব মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৯.৭%; পুরুষ ৪২.৮%, মহিলা ৩৬.৯%। কলেজ ৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৬, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮৬, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২, ভোকেশনাল স্কুল ৩, মাদ্রাসা ৩০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: চিলমারী ডিগ্রি কলেজ (১৯৮৫), চিলমারী মহিলা ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৫), গোলাম হাবিব মহিলা ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৫), চিলমারী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৩), থানাহাট এ.ইউ.পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৭), থানাহাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৯), বালাবাড়ী হাট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৮), কেডি ওয়ারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৪৬), থানাহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৪০), রাজারভিটা ইসলামী ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৪৯), কাঁচকোল খামার সকিনা ইসলামিক দাখিল মাদ্রাসা (১৯৮১)।

স্থানীয় পত্রপত্রিকা  সাপ্তাহিক: জনপ্রাণ।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ১৫, লাইব্রেরি ৪, সিনেমা হল ১, সাংস্কৃতিক সংগঠন ৪, খেলার মাঠ ৬।

বিনোদন কেন্দ্র  রমনা ঘাট।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৭.৮৫%, অকৃষি শ্রমিক ৫.১৭%, শিল্প ০.৩৮%, ব্যবসা ৯.৩৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.২৩%, চাকরি ৬.৮১%, নির্মাণ ১.০১%, ধর্মীয় সেবা ০.০৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২২% এবং অন্যান্য ৭.৮৬%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৯.৪৮%, ভূমিহীন ৫০.৫২%। শহরে ৪১.৯৫% এবং গ্রামে ৫৪.০৩% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, সরিষা, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি আলু, অড়হর।

প্রধান ফল-ফলাদিব আম, কাঁঠাল, জাম, পেঁপে, কলা, পেয়ারা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগীর খামার  গবাদিপশু ৯, হাঁস-মুরগী ১৬।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৫.৭৬ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২.২৮ কিমি, কাঁচারাস্তা ১১৩.৯ কিমি; নৌপথ ১৭ কিমি; রেলপথ ৩.৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ওয়েল্ডিং, স‘মিল, ধানকল প্রভৃতি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, পাটশিল্প, বুননশিল্প, নকসী কাঁথা, কাঠের কাজ, বাঁশের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৬, মেলা ৪। কাঁচকোল হাট, রাণীগঞ্জ হাট, বালাবাড়ী হাট, জোড়গাছ হাট এবং অষ্টমী মেলা, বালাবাড়ী মেলা, বারুনী মেলা ও দুর্গাপূজার মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  পাট।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২৩.৩% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.২%, ট্যাপ ০.১% এবং অন্যান্য ৩.৭%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৫৮.৩% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৫.৯% পরিবার অস্বাস্থাকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৫.৮% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক ৩, মাতৃসদন ১, ছিন্নমুকুল কর্তৃক পরিচালিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, কমিউনিটি ক্লিনিক ১২।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৭৪ সালের বন্যায় এ অঞ্চলে লোকের সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, কারিতাস, গ্রাম উন্নয়ন সংস্থা। [মোঃ আবদুল হাকিম]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; চিলমারী উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।