চিতলমারী উপজেলা

চিতলমারী উপজেলা (বাগেরহাট জেলা)  আয়তন: ১৯১.৯৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৩৩´ থেকে ২২°৪১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০১´ থেকে ৯০°১৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা, দক্ষিণে কচুয়া (বাগেরহাট) ও বাগেরহাট সদর উপজেলা, পূর্বে নাজিরপুর উপজেলা, পশ্চিমে মোল্লাহাট, ফকিরহাট ও বাগেরহাট সদর উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৩৮৮১০; পুরুষ ৬৯৪১৬, মহিলা ৬৯৩৯৪। মুসলিম ৯২৭৩৯, হিন্দু ৪৬০০৩, খ্রিস্টান ৫৮, বৌদ্ধ ২ এবং অন্যান্য ৮।

জলাশয় মধুমতি, কালীগঙ্গা, বলেশ্বর, চিত্রা ও নলুয়া নদী  এবং লরার খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন চিতলমারী থানা গঠিত হয় ১৯৮১ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ৭ নভেম্বর ১৯৮৩।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৫৫ ১২৪ ১২৭২ ১৩৭৫৩৮ ৭২৩ ৭৩.৮ ৫৬.০
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
০.৮৯ ১২৭২ ১৪২৯ ৭৩.৮
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কলাতলা ৬৬ ৬০৭১ ১০৪৯৬ ১০৮৯২ ৫৫.২
চর বানিয়ারী ১৫ ৫২১২ ৭৫০৬ ৭৪০৪ ৬১.৫
চিতলমারী ৩১ ১৩৬৩০ ১৪৩৭১ ১৩৬৯৫ ৫৭.১
বড়বাড়ীয়া ১৯ ৭৮৫৬ ১৩৭১৫ ১৪০০১ ৫৬.৭
শিবপুর ৭৯ ৩৫৫৬ ৬৩২০ ৬৩৪৮ ৫৫.৪
সন্তোষপুর ৬৩ ৪৮৩৫ ৭৯১৩ ৭৮৭১ ৫১.৩
হিজলা ৪৭ ৫৭৮৯ ৯০৯৫ ৯১৮৩ ৫৫.৪

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্ন সম্পদ  দুর্গাপুর শিবমঠ (চর বানিয়ারী)।

ঐতিহাসিক ঘটনা উপজেলার হিজলা ইউনিয়নে ইংরেজ নীলকুঠিতে বুকের উপর ভারি পাথর চাপা দিয়ে নীল-বিদ্রোহীদের শাস্তি দেত্তয়া হতো।

মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী রাজাকারদের সহযোগিতায় খালিশাখালী ও বাবুগঞ্জ বাজারে হিন্দুদের উপর নির্যাতন চালায় এবং দুই শতাধিক নিরীহ লোককে হত্যা করে। উপজেলার সন্তোষপুরে ১টি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন চিতলমারী উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৩।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান চিতলমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, বারাসিয়া খানকা শরীফ জামে মসজিদ, আড়ুয়াখালি আলিয়া মাদ্রাসা জামে মসজিদ, বাংলাদেশ সেবাশ্রম মন্দির (গোড়ানালুয়া), বোয়ালিয়া দুর্গা মন্দির উল্লেখযোগ্য।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৬.২%; পুরুষ ৫৭.৫%, মহিলা ৫৪.৯%। কলেজ ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৩, মাদ্রাসা ৮। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কালিদাস বড়াল স্মৃতি মহাবিদ্যালয়, এস এম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৫), চরলাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৪), বড়বাড়ীয়া হাটখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১২), বড়বাড়ীয়া রহমানিয়া ফাজিল মাদ্রাসা।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী প্রজন্ম (অবলুপ্ত), শেকড়, শিমুল, পূর্বাচল, কড়া নাড়ে, সমৃদ্ধি।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৮, সিনেমা হল ১, নাট্যদল ২, ক্লাব ১২৩, খেলার মাঠ ৩০।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৬.২৭%, অকৃষি শ্রমিক ১.৩০%, শিল্প ০.৪৩%, ব্যবসা ১০.৭৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৩৯%, চাকরি ৫.৯৪%, নির্মাণ ০.৭১%, ধর্মীয় সেবা ০.৩১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২০% এবং অন্যান্য ২.৬৯%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৭৪.১৮%, ভূমিহীন ২৫.৮২%। শহরে ৮৬.৫৭% এবং গ্রামে ৭৪.০৩% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, পাট, ডাল, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তামাক, আমন ধান।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, কলা, পেঁপে, নারিকেল, সুপারি, তরমুজ।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৫৪০০ (চিংড়ী), গবাদিপশু ২৪, হাঁস-মুরগি ১০।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৪৯ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২৩ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪০৩ কিমি; নৌপথ ১৭০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন গরুর গাড়ি, পাল্কি।

শিল্প ও কলকারখানা ফ্লাওয়ার মিল, রাইস মিল, অয়েল মিল, আইস ফ্যাক্টরি।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২১, মেলা ১৫। শৈলদহ বাজার, খাসের হাট এবং চর ডাকাতিয়া বারুনি মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  চামড়া, চাল, কলা, নারিকেল, সুপারি, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৫.৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯১.৩%, ট্যাপ ০.৩% এবং অন্যান্য ৮.৪%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬৫.৩% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৩.০% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১.৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৭, হাসপাতাল ১।

এনজিও ব্র্যাক, প্রদীপন,  আশা, কেয়ার, ওয়ার্ল্ড ভিশন। [বিভাষ দাস]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; চিতলমারী উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।