চান্দ্রব্যাকরণ

চান্দ্রব্যাকরণ  সংস্কৃত ব্যাকরণগ্রন্থ। এর রচয়িতা চন্দ্রাচার্য বা  চন্দ্রগোমী। এর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ভর্তৃহরির (৭ম শতকের মধ্যভাগ) বাক্যপদীয় গ্রন্থে।

চান্দ্রব্যাকরণের মূল ভিত্তি পাণিনির অষ্টাধ্যায়ী। এর সংস্কার সাধন করাই ছিল মূলত চন্দ্রগোমীর উদ্দেশ্য। তিনি পাণিনির বৈদিক সূত্রগুলি বর্জন করেন, তবে নিজের ধাতুপাঠে কিছু কিছু বৈদিক ধাতু অন্তর্ভুক্ত করেন। যে চৌদ্দটি মাহেশ্বরসূত্রে  সংস্কৃত বর্ণমালা বিধৃত, তিনি তা তেরোটি সূত্রে কমিয়ে আনেন। পাণিনির কতগুলি প্রত্যাহার (একটি অক্ষরে বহু বর্ণের নির্দেশ) চান্দ্রব্যাকরণে বাদ দেওয়া হয়েছে এবং কতগুলি নতুন গঠিত হয়েছে। উচ্চারণ সৌকর্যের জন্য পাণিনির অনেক সূত্র চন্দ্রাচার্য রূপান্তরিত করেন। তাছাড়া আঠারোটি সূত্র তিনি নতুন সংযোজন করেন এবং সেগুলি জয়াদিত্য ও বামনের (৭ম শতকের মধ্যভাগ) কাশিকা গ্রন্থে সন্নিবিষ্ট হয়েছে।

অধুনালব্ধ চান্দ্রব্যাকরণ ছটি অধ্যায়ে বিভক্ত। প্রতিটি অধ্যায়ে চারটি করে পাদ আছে এবং মোট সূত্রসংখ্যা পাণিনির ৩৯৮১-এর পরিবর্তে ৩০৯৯টি। এ ব্যাকরণে কোনো পারিভাষিক শব্দ নেই, তাই একে বলা হয় ‘অসংজ্ঞকং ব্যাকরণম্’।

চান্দ্রব্যাকরণের অঙ্গগ্রন্থ হলো উণাদি সূত্রাবলী (তিন পাদে বিভক্ত), ধাতুপাঠ (দশ খন্ডে বিভক্ত), লিঙ্গানুশাসন, উপসর্গবৃত্তি (যার তিববতীয় সংস্করণ পাওয়া যায়), বর্ণসূত্রাবলী (যা পাণিনীয় শিক্ষার সমতুল) এবং পরিভাষা সূত্রসমূহ। চান্দ্রব্যকারণের অসংখ্য টীকা রচিত হয়েছিল, যার অনেকগুলি তিববতে অনূদিত ও প্রচারিত হয়। সিংহলে আনুমানিক ১২০০ খ্রিস্টাব্দে বালবোধ নামে এর একটি টীকা খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। [প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়]