চান্দিনা উপজেলা

চান্দিনা উপজেলা (কুমিল্লা জেলা) আয়তন: ২০১.০১ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°২১´ থেকে ২৩°৩১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫১´ থেকে ৯১°০৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে দাউদকান্দি, মুরাদনগর ও দেবীদ্বার উপজেলা, দক্ষিণে বরুড়া ও কচুয়া উপজেলা, পূর্বে বুড়িচঙ্গ, কুমিল্লা আদর্শ সদর ও বরুড়া উপজেলা, পশ্চিমে দাউদকান্দি ও কচুয়া (চাঁদপুর) উপজেলা।

জনসংখ্যা ৩৫০২৭৩; পুরুষ ১৬৫৮৭৪, মহিলা ১৮৪৩৯৯। মুসলিম ৩২৬৬৭২, হিন্দু ২৩৫৫০, বৌদ্ধ ৭, খ্রিস্টান ৮ এবং অন্যান্য ৩৬।

জলাশয় কালিছড়ি ও বাটাখাসি নদী, কার্জন খাল ও ঘুগড়ার বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন চান্দিনা থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৩ ১২১ ২২৩ ৪৮৪৭১ ৩০১৮০২ ১৭৪২ ৪৯.১১ (২০০১) ৪৯.৭
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড সংখ্যা মহল্লা সংখ্যা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৩.২৩ (২০০১) ১৯ ৪৬৮২৩ ২৭৩২ (২০০১) ৫৯.৩
পৌরসভার বাইরে উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
০.৭৫ (২০০১) ১৬৪৮ ২০৬৫ (২০০১) ৬১.৪
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
এতবারপুর ৪৭ ১৭৬৪ ৩৭৩৫ ৪২০৬ ৪৪.৪
কেরান খাল ১৩ ২৪১১ ৮২২৭ ৮৬৭২ ৫৭.৬
গল্লাই ৫৫ ৫০২৪ ১৪২২৭ ১৬০৫৮ ৪৪.১
জোয়াগ ৩১ ৩৪৭৪ ১১৩৫৮ ১৩৪৯৫ ৫৪.১
দোল্লাই নবাবপুর ৬৩ ২৫১৫ ১০৬৯৩ ১২৫২২ ৫২.৬
বরকইট ৩৯ ৩৯০০ ১১৫৮৩ ১২৯৬৮ ৪৬.০
বরকরই ২৩ ৩৭৩১ ১১২৯২ ১২৭৬৯ ৫৭.০
বারেরা ১৫ ১৬৭৮ ৮৫৪৯ ৯৭৩৪ ৪৯.৬
বাটাখাশি ৮৭ ৩৬৭০ ৯২৪৪ ১০৪৭৮ ৪৭.৪
মহিচাইল ২০ ৩৬৭৩ ১০৬০১ ১১৯৪০ ৫০.৭
মাইজখারা ৭৯ ৭৫২০ ২১০৪৫ ২৩১৩১ ৪৯.৮
মাধাইয়া ৭১ ৩৫২৪ ১৩১২৯ ১৩৮৩২ ৪৯.৬
সুহিলপুর ৯৪ ৩৫২১ ৯৪৫৭ ১০৫০৫ ৪২.১

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ রাজকাচারি, কালীমন্দির (চান্দিনা), হযরত হোবরে আলী শাহ (র.) মাযার (আড়িখোলা)।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ১৪০০ পাকসেনা আত্মসমর্পণ করে। ১২ ডিসেম্বর পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘটিত কটতলা লড়াইয়ে ৭ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাছাড়া চান্দিনার ফাউই নামক স্থানে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘটিত লড়াইয়ে ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং প্রায় ২৩ জন আহত হন। উপজেলায় ২টি বধ্যভূমি (পুইরা পুল, চান্দিনা উচ্চ বিদ্যালয় হতে পূর্বদিকে এবং চান্দিনা হাসপাতালের পশ্চিম-উত্তর কোণে) এবং ৩টি স্থানে (কাশিমপুর শ্মশান ঘাট, বাড়ই পাড়া, কংগাই বড়বাড়ি) গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।

বিস্তারিত দেখুন চান্দিনা উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি,ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৩।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫১.০%; পুরুষ ৫১.৫%, মহিলা ৫০.৬%। কলেজ ৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১৬, মাদ্রাসা ৪৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কৈলাইন তুলপাই উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), চান্দিনা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৬), দোল্লাই নবাবপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৯), মাধাইয়া বাজার ছাদিম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৩), বিশ্বাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১৬), মাধাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৩০), পশ্চিম বেলাশহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৩৫), বরকহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৩৯), চান্দিনা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৪০), খিরাসার মোহনপুর দাখিল মাদ্রাসা (১৯৮৭)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৫২, লাইব্রেরি ৪, সিনেমা হল ১, নাট্যমঞ্চ ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৬.৭১%, অকৃষি শ্রমিক ২.৪৬%, ব্যবসা ১৪.০৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৫৪%, চাকরি ৮.২৪%, নির্মাণ ১.১৩%, ধর্মীয় সেবা ০.৪৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৩.৯১% এবং অন্যান্য ৮.৪৮%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৫.১৭%, ভূমিহীন ৩৪.৮৩%। শহরে ৪৫.৯৫% এবং গ্রামে ৬৭.৮২% পরিবারের কৃষিজমি আছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, সরিষা, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি পাট, মসুরি, তিল, তিসি, কাউন, পিয়াজ, রসুন, তামাক, আখ।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১০, হাঁস-মুরগি ৩৬, দুগ্ধখামার ১৩।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১২২.৯৪ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৩৪.৫৮ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪৭১.২৬ কিমি। কালভার্ট ২৪০।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা টেক্সটাইল মিল, রাইস মিল, আটাকল, তেলকল, হিমাগার।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, সূচিশিল্প  বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৯। চান্দিনা হাট, মাধাইয়া হাট, নবাবপুর হাট, বদরপুর হাট; দোল্লাই নবাবপুর বাজার, মহিচাইল বাজার, রসুলপুর বাজার, রামমোহন বাজার, কৈলাইন বাজার; বড়ইয়া কৃষ্ণপুর আড়ং মেলা, পিহর মেলা, মধ্যমতলা মেলা ও মাধাইয়া মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য খদ্দর কাপড়, ময়দা, আলু।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৬৬.৩% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৩.৪%, ট্যাপ ১.৫% এবং অন্যান্য ৫.১%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা উপজেলার ৭৮.৩% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৮.৩% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩.৪% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নাই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, পরিবার-পরিকল্পনা কেন্দ্র ১২, হাসপাতাল ২, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার-কল্যাণ কেন্দ্র ২, ক্লিনিক ৬, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা।  [মো. মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো;  চান্দিনা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন  ২০০৭।