চাঁদপুর সদর উপজেলা

চাঁদপুর সদর উপজেলা (চাঁদপুর জেলা)  আয়তন: ৩০৮.৭৭ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°০৭´ থেকে ২৩°২০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩৪´ থেকে ৯০°৪৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে মতলব দক্ষিণ ও মতলব উত্তর  উপজেলা, দক্ষিণে হাইমচর ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে ভেদরগঞ্জ উপজেলা (শরিয়তপুর জেলা)।

জনসংখ্যা ৪৬৫৯১৯; পুরুষ ২২৬৯৫৯, মহিলা ২৩৮৯৬০। মুসলিম ৪৩৮৮০৭, হিন্দু ২৬২৮৬, বৌদ্ধ ৭৫, খ্রিস্টান ২৬৫ এবং অন্যান্য ৪৮৬। এ উপজেলায় টিপরা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী:লোয়ার মেঘনা, ডাকাতিয়া এবং সাতবাড়িয়া বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে। পৌরসভা গঠিত হয় ১৮৯৭ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৪ ১৩৬ ১১২ ১৭১০৬৫ ২৯৪৮৫৪ ১৫০৯ ৬৬.৫৮ (২০০১) ৪৯.৭
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১০.৫৯ (২০০১) ১৫ ১২১ ১৫৯০২১ ৮৬৩০ (২০০১) ৬৭.৪
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৫.৫৮ (২০০১) ১২০৪৪ ৩০৭৭ (২০০১) ৫৯.০
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আশিকাটি ১৮ ২৮২৫ ১১৩৭০ ১২৬৪৫ ৬০.৬
ইব্রাহিমপুর ৬৩ ১১৮০৫ ৭০২০ ৫৯৬৩ ২৬.০
কল্যাণপুর ২০ ৫৬৩৭ ৬৯১৮ ৭৯৪২ ৬২.১
চন্দ্রা ৫৪ ৩৭৩৮ ১২৯৬৮ ১৪৮১৫ ৪৪.৭
তারপুর ৯৪ ২৫০১ ৫৮০৩ ৬২৪১ ৫৯.০
বাঘাদি ২২ ৩৩৯৮ ১৫৪১৭ ১৬৭৪৬ ৫০.৩
বালিয়া ২৭ ৪৪২২ ১৪১৪৮ ১৬৩৭৯ ৫১.৮
বিষ্ণুপুর ৩১ ৭৪৬৭ ১২৪২৪ ১৫২০৭ ৫০.১
মইশাদী ৬৭ ১৯১৪ ৭১৪৯ ৭৮৮১ ৫৫.১
রাজরাজেশ্বর ৭৬ ১১৬৩০ ৭৫৩১ ৭৩৬৬ ১৫.৮
রামপুর ৮৫ ৩০২৫ ১০১৮৬ ১১৭০৬ ৬৬.২
শাকুয়া ৯০ ৩৩৮১ ২০০৫৭ ১৯৫৭১ ৪৭.২
শাহ মাহমুদপুর ৮১ ৩৩৮৬ ১১৮৪৮ ১৩০০৮ ৫৫.০
হানারচর ৫৮ ৪৮৪২ ৪৩২১ ৪২৬৮ ৩৫.৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ বেগম মসজিদ (১৮১২), কালীবাড়ী মন্দির (১৮৭৮), মঠখোলার মঠ।

ঐতিহাসিক ঘটনা ১৯২০ সালে আসামের চা বাগানের কুলিরা ব্রিটিশ বাগান মালিকদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। প্রায় ২০ হাজার চা বাগান কুলি কলকাতার পথে চাঁদপুর স্টিমার ঘাটে সমবেত হয়। ইংরেজ সরকার কুলিদের গতিরোধ করার জন্য চাঁদপুর স্টীমার ঘাটে এক হত্যাযজ্ঞ চালায়। এই হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ করেন চাঁদপুরের গান্ধী হিসেবে পরিচিত হরদয়াল নাগ। এ প্রতিবাদ আন্দোলন সমগ্র অবিভক্ত ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চাঁদপুরে আসেন মহাত্মা গান্ধী, মওলানা শওকত আলী, মওলানা মোহাম্মদ আলী, চিত্তরঞ্জন দাশ, সুভাশ চন্দ্র বসু প্রমুখ।

মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের সময় চাঁদপুর সদর থানা ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল। এই উপজেলার ওয়ারলেস বাজার, আশিকাটি বাজার, আকন্দহাট মজুমদার বাড়ি, বাগাদী বাজার প্রভৃতি স্থানে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকগুলো যুদ্ধ হয়। মেঘনা নদীতে যুদ্ধ এবং ডাকাতিয়া নদীতে নৌকমান্ডো অপারেশন দু’টি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ‘অঙ্গীকার’ নামে একটি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন চাঁদপুর সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৩।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৬৪৪, মাযার ২, মন্দির ৫, গির্জা ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান : বেগম মসজিদ, পুরান বাজার মসজিদ, খাজা আহম্মদ সাহেবের মাযার (ইসলামপুর), কালীবাড়ী মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৬.১%; পুরুষ ৫৫.৪%, মহিলা ৫৬.৬%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: চাঁদপুর সরকারি কলেজ (১৯৪৬), চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ ১৯৬৪, পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজ, হাসান আলী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় (সাবেক জুবিলী স্কুল ১৮৮৫), বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৯), হরিনা-চালিতাতলী এডওয়ার্ড ইনস্টিটিউশন (১৯০১), চাঁদপুর রূপসা আহমদীয়া হাইস্কুল (১৯১৩), গনি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৭), ডি.এন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২০), হরিসভা মধুসূদন হাইস্কুল (১৯২১), পুরানবাজার এম.এইচ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২১), খেরুদিয়া দেলোয়ার হোসেন হাইস্কুল ও কলেজ (১৯২৫), সাহাতলী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৭), মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা বিদ্যালয় (১৯৬১), শাহতলী আলীয়া মাদ্রাসা (১৮৯৯)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক পত্রিকা: চাঁদপুর বার্তা, চাঁদপুর প্রবাহ, চাঁদপুর কণ্ঠ, চাঁদপুর দর্পণ, দৈনিক চাঁদপুর জমিন, দৈনিক চাঁদপুর সংবাদ। অবলুপ্ত: নববঙ্গ, ভারত হিতৈষী, রক্তপলাশ, রক্তিম সূর্য।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৮১, লাইব্রেরি ৫, সিনেমা হল ৩, নাট্যদল ১৩, মহিলা সংগঠন ৪, সরকারি শিশু সদন ১, পার্ক ২, স্টেডিয়াম ১। উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান: বর্ণচোরা (১৯৭৩, নাট্যদল), উদয়ন মহিলা কমপ্লেক্স (মহিলা সংগঠন)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৩.৪০%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৪৮%, শিল্প ১.৫৪%, ব্যবসা ২০.৪৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৪৪%, চাকরি ১৩.২৮%, নির্মাণ ২.৭৫%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ২.১৯% অন্যান্য ১৮.০৮%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৬.০৪%, ভূমিহীন ৫৩.৯৬। শহরে ৩১.৭৫% এবং গ্রামে ৫০.৬৫% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আখ, পাট, আলু, গম।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, কাউন, তিসি, চিনা, সরিষা।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, তাল, নারিকেল, পেয়ারা, পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি প্রভৃতি খামার রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২২৯ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৮ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৯৩ কিমি; রেলপথ ১৬ কিমি; নৌপথ ৫০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা পাটকল, অ্যালুমিনিয়াম শিল্প, রাসায়নিক কারখানা, ম্যাচ ফ্যাক্টরি, চাল কল, আটা কল, বরফকল, ওয়েল্ডিং প্রভৃতি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, শীতল পাটি শিল্প, বুনন শিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ  প্রভৃতি।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৮, মেলা ৫। উল্লেখযোগ্য হাটবাজার ও মেলা: বাবুরহাট, মহামায়া, আখনের হাট, শাহতলী, কানুদি, ছোট সুন্দর, চান্দ্রা, বাঘড়া, কামরাঙ্গা, সফরমালী হাট এবং মঠখোলা শিব বাড়ির মেলা ও মহামায়ার মেলা।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, আখ, পাট ও পাটজাত দ্রব্য।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৭১.২% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৬৯.৯%, ট্যাপ ২২.০% এবং অন্যান্য ৮.১%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭৪.৭% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২২.৩% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩.০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই। স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ৭, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, দাতব্য চিকিৎসালয় ১, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১৪, মাতৃসদন ২।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, কেয়ার। [সাঈদ আহম্মেদ খান]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যাণ ব্যুরো; চাঁদপুর সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন।