চট্টগ্রাম আদালত ভবন

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২০:৩২, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

চট্টগ্রাম আদালত ভবন  পরীর পাহাড়ের উপরে ১৮৯২-৯৮ সালে ইন্দো-ব্রিটিশ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত একটি উপনিবেশিক স্থাপত্যকীর্তি। ইউরোপীয় ও মুগল ঐতিহ্যের সম্মিলিত ধারায় লোকজ নানা অলঙ্করণ আরোপ করে বিশেষ এই স্থাপত্যশৈলীর অবতারণা হয় অবিভক্ত বাংলায়। জনদাবীর পরিপ্রেক্ষিতে শতাব্দীর প্রাচীন আদালত ভবনের পশ্চিমাংশ সম্প্রতি সংস্কার করা হলেও পুরাকীর্তি আইনের আওতায় আনা হয় নি এই প্রত্নসম্পদ।

মুগল মসজিদ স্থাপত্যের গভীর প্রভাব পড়েছে দালানটির ভূমি নকশায়। নির্মাণ-স্থলের সাংস্থানিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করেছে পরিকল্পনার অন্যান্য প্রায়োগিক দিক। মূল দালানটি আয়তাকার এবং পূর্ব-পশ্চিম বিন্যস্ত-এর পূর্ব প্রান্তে আড়াআড়ি যুক্ত আছে উত্তর-দক্ষিণ বিন্যস্ত একটি সংযোজিত অংশ।

পাহাড়ি ভূমির উচ্চতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে দ্বিতল এই ভবনের পূর্ব অংশের উত্তর প্রান্ত রূপ নিয়েছে ত্রিতলে। ভবনের এই অংশেই রয়েছে পূর্ব দিক থেকে পথিকদের প্রবেশের জন্য সুঅলঙ্কৃত মূল তোরণটি-নীচে রাস্তা থেকে অনেক ধাপ সিঁড়ি বেয়ে এখানে আসতে হয়। তোরণের সজ্জায় ব্যবহূত হয়েছে আলঙ্কারিক খাঁজযুক্ত গোলাকার ছিদ্র এবং এর উভয় দিকে উদগত নকশায় পত্রালঙ্কারের স্টাকৌ, চতুর্কেন্দ্রিক গথিক তোরণ, অভিক্ষিপ্ত পোড়ামাটির পদ্ম, ব্যাপক পরিচিত ইউরোপীয় প্যাডিম্যান্ট, গর্ভক্ষেত্র এবং কুলঙ্গি, এবং অন্যান্য আকারের দেশি ও বিদেশি মটিফ ও আকৃতি। মূল দালানের পশ্চিম অংশ কিছু দক্ষিণ দিকে টানা-পূর্ব অংশের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে। নির্মাতার তীক্ষ্ণ সফল সজাগতা ছিল ভবনটির প্রতি তলের মেঝের সমতা রক্ষায়। দ্বিতলের বারান্দার মেঝে পাথরের খন্ডাংশে নির্মিত।

চট্টগ্রাম আদালত ভবন

দালানটির ফ্যাসাদ মূলত মনোহর সজ্জায় অনেক ভাবে বিন্যস্ত নানা আকৃতির তোরণের সারি। তোরণের কীলক আকার অনেক ভার বহনে সক্ষম। দালানের নীচ তলার বারান্দায় প্রত্যেকটি সরল তোরণ ধারণ করছে উপর তলার এক একটি জোড়া তোরণ, মাঝে তিনটি করবেল্ড তোরণসহ। ছাদ থেকে বৃষ্টির জল নিষ্কাশনের চৌকো নল কার্নিসের ভেতর দিয়ে বসানো আছে দু’প্রস্ত তোরণের মাঝে। উভয় পাশের বর্গাকৃতি মিনারগুলোর মাথায় বসানো চিলেঘরের ছাদ সাজানো হয়েছে মুগল শৈলীর ছোট ছোট গম্বুজ এবং কিউপোলা দিয়ে। দালানটির দক্ষিণ ফ্যাসাদে দু’পাশের কেন্দ্রে পথিকদের জন্য রয়েছে আরও দু’টি তোরণ-সজ্জিত প্রবেশ পথ-এর অলঙ্করণে ব্যবহূত হয়েছে বিশাল এক সরল তোরণের গর্ভক্ষেত্র, ভেতরে একটি জোড়া তোরণের মধ্যভাগে সরু মিনার এবং উপরে গোলাকার ছিদ্র। স্থাপত্যিক অলংকরণে পোড়া ইটের বিন্যাসও মনোহারী। ভবনটিতে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এবং জেলা জজের কার্যালয় রয়েছে। ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য পরীর পাহাড়ের শীর্ষে অবস্থিত প্রাচীন এই ভবন এবং এর সন্নিহিত এলাকা অত্যন্ত আকর্ষণীয়। [শামসুল হোসাইন]