চক্রবর্তী, অমিয়: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''চক্রবর্তী, অমিয়''' (১৯০১-১৯৮৬)  কবি, গবেষক ও শিক্ষাবিদ। জন্ম ১০ এপ্রিল, ১৯০১ শ্রীরামপুর, হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ। তাঁর পিতা দ্বিজেশচন্দ্র চক্রবর্তী আসামের গৌরীপুর রাজ্যের দীউয়ান ছিলেন। অমিয় চক্রবর্তী পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস (১৯২১) করে শান্তিনিকেতনের গবেষণা বিভাগে যোগদান করেন। পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ (১৯২৬) করেন। পরে তিনি রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন (১৯২৬-১৯৩৩)। তিনি ১৯৩৩ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কাজে যোগ দেন এবং ১৯৩৭ সালে সে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিফিল ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৪০ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যাপনা করেন। ১৯৪৮-১৯৭৭ সাল পর্যন্ত তিনি সপরিবারে আমেরিকায় বসবাস করেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি ১৯৪৮ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত হাওয়ার্ড, বস্টন ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক প্রাচ্য ধর্ম ও সাহিত্যে অধ্যাপনা কাজে নিয়োজিত ছিলেন। কবি ইয়েটস, জর্জ বার্নাড’শ, আলবার্ট আইনস্টাইন, রবার্টফ্রস্ট, আলবার্ট সোয়ইটজর, বোরিস পান্তেরনাক, পাবলো কাসালস্ প্রমুখ বিশ্ববরেণ্য লেখকদের সঙ্গে তাঁর ছিল অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। প্রায় সব ক’টি মহাদেশের অসংখ্য দেশে নানাবিধ কর্মসূত্রে তিনি ভ্রমণ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে বক্তৃতা দিয়েছেন। এ কারণে অমিয় চক্রবর্তীর কবিতায় আন্তর্জাতিক বিশ্বপরিবেশের অনেক ভৌগোলিক স্থানের নাম, বর্ণনা ও চিত্র লক্ষ করার মতো। তার কবিতা বিশ্বময়তাকে ধারণ করেছে; এটি তার কবিতাকে দিয়েছে বিশিষ্টতা। এ ছাড়া তাঁর কবিতায় আছে এ অঞ্চলের চিরায়ত বিষয় মরমী সুর ও আধ্যাত্মিকতা।
[[Image:ChakravartyAmiya.jpg|thumbnail|300px|right|অমিয় চক্রবর্তী]]
'''চক্রবর্তী, অমিয়''' (১৯০১-১৯৮৬)  কবি, গবেষক ও শিক্ষাবিদ। জন্ম ১০ এপ্রিল, ১৯০১ শ্রীরামপুর, হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ। তাঁর পিতা দ্বিজেশচন্দ্র চক্রবর্তী আসামের গৌরীপুর রাজ্যের দীউয়ান ছিলেন। অমিয় চক্রবর্তী পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ পাস (১৯২১) করে শান্তিনিকেতনের গবেষণা বিভাগে যোগদান করেন। পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন ও সাহিত্যে এম.এ ডিগ্রি লাভ (১৯২৬) করেন। পরে তিনি রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন (১৯২৬-১৯৩৩)। তিনি ১৯৩৩ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কাজে যোগ দেন এবং ১৯৩৭ সালে সে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিফিল ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৪০ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যাপনা করেন। ১৯৪৮-১৯৭৭ সাল পর্যন্ত তিনি সপরিবারে আমেরিকায় বসবাস করেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি ১৯৪৮ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত হাওয়ার্ড, বস্টন ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক প্রাচ্য ধর্ম ও সাহিত্যে অধ্যাপনা কাজে নিয়োজিত ছিলেন। কবি ইয়েটস, জর্জ বার্নাড’শ, আলবার্ট আইনস্টাইন, রবার্টফ্রস্ট, আলবার্ট সোয়ইটজর, বোরিস পান্তেরনাক, পাবলো কাসালস্ প্রমুখ বিশ্ববরেণ্য লেখকদের সঙ্গে তাঁর ছিল অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। প্রায় সব ক’টি মহাদেশের অসংখ্য দেশে নানাবিধ কর্মসূত্রে তিনি ভ্রমণ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে বক্তৃতা দিয়েছেন। এ কারণে অমিয় চক্রবর্তীর কবিতায় আন্তর্জাতিক বিশ্বপরিবেশের অনেক ভৌগোলিক স্থানের নাম, বর্ণনা ও চিত্র লক্ষ করার মতো। তার কবিতা বিশ্বময়তাকে ধারণ করেছে; এটি তার কবিতাকে দিয়েছে বিশিষ্টতা। এ ছাড়া তাঁর কবিতায় আছে এ অঞ্চলের চিরায়ত বিষয় মরমী সুর ও আধ্যাত্মিকতা।


অমিয় চক্রবর্তী তাঁর জীবনের প্রথম দিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিকট-সান্নিধ্যে এসেছিলেন। তিরিশের পঞ্চকবির মধ্যে তিনি অন্যতম একজন। অন্য চারজন হলেন জীবনানন্দ দাশ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বুদ্ধদেব বসু ও বিষ্ণু দে। আধুনিক কবিতায় ভাব, দর্শন ও রসের ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ সংযোজন ঘটিয়েছেন।
অমিয় চক্রবর্তী তাঁর জীবনের প্রথম দিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিকট-সান্নিধ্যে এসেছিলেন। তিরিশের পঞ্চকবির মধ্যে তিনি অন্যতম একজন। অন্য চারজন হলেন জীবনানন্দ দাশ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বুদ্ধদেব বসু ও বিষ্ণু দে। আধুনিক কবিতায় ভাব, দর্শন ও রসের ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ সংযোজন ঘটিয়েছেন।

০৬:৩২, ২ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

অমিয় চক্রবর্তী

চক্রবর্তী, অমিয় (১৯০১-১৯৮৬)  কবি, গবেষক ও শিক্ষাবিদ। জন্ম ১০ এপ্রিল, ১৯০১ শ্রীরামপুর, হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ। তাঁর পিতা দ্বিজেশচন্দ্র চক্রবর্তী আসামের গৌরীপুর রাজ্যের দীউয়ান ছিলেন। অমিয় চক্রবর্তী পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ পাস (১৯২১) করে শান্তিনিকেতনের গবেষণা বিভাগে যোগদান করেন। পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন ও সাহিত্যে এম.এ ডিগ্রি লাভ (১৯২৬) করেন। পরে তিনি রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন (১৯২৬-১৯৩৩)। তিনি ১৯৩৩ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কাজে যোগ দেন এবং ১৯৩৭ সালে সে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিফিল ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৪০ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যাপনা করেন। ১৯৪৮-১৯৭৭ সাল পর্যন্ত তিনি সপরিবারে আমেরিকায় বসবাস করেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি ১৯৪৮ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত হাওয়ার্ড, বস্টন ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক প্রাচ্য ধর্ম ও সাহিত্যে অধ্যাপনা কাজে নিয়োজিত ছিলেন। কবি ইয়েটস, জর্জ বার্নাড’শ, আলবার্ট আইনস্টাইন, রবার্টফ্রস্ট, আলবার্ট সোয়ইটজর, বোরিস পান্তেরনাক, পাবলো কাসালস্ প্রমুখ বিশ্ববরেণ্য লেখকদের সঙ্গে তাঁর ছিল অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। প্রায় সব ক’টি মহাদেশের অসংখ্য দেশে নানাবিধ কর্মসূত্রে তিনি ভ্রমণ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে বক্তৃতা দিয়েছেন। এ কারণে অমিয় চক্রবর্তীর কবিতায় আন্তর্জাতিক বিশ্বপরিবেশের অনেক ভৌগোলিক স্থানের নাম, বর্ণনা ও চিত্র লক্ষ করার মতো। তার কবিতা বিশ্বময়তাকে ধারণ করেছে; এটি তার কবিতাকে দিয়েছে বিশিষ্টতা। এ ছাড়া তাঁর কবিতায় আছে এ অঞ্চলের চিরায়ত বিষয় মরমী সুর ও আধ্যাত্মিকতা।

অমিয় চক্রবর্তী তাঁর জীবনের প্রথম দিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিকট-সান্নিধ্যে এসেছিলেন। তিরিশের পঞ্চকবির মধ্যে তিনি অন্যতম একজন। অন্য চারজন হলেন জীবনানন্দ দাশ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বুদ্ধদেব বসু ও বিষ্ণু দে। আধুনিক কবিতায় ভাব, দর্শন ও রসের ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ সংযোজন ঘটিয়েছেন।

অমিয় চক্রবর্তীর কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ১৫; তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই কবিতাবলী (১৯২৪-২৫)। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থ: উপহার (১৯২৭), খসড়া (১৯৩৮), এক মুঠো (১৯৩৯), মাটির দেয়াল (১৯৪২), অভিজ্ঞান বসন্ত (১৯৪৩), পারাপার (১৯৫৩), পালাবদল (১৯৫৫), ঘরে ফেরার দিন (১৯৬১), হারানো অর্কিড (১৯৬৬), পুষ্পিত ইমেজ (১৯৬৭), অমরাবতী (১৯৭২), অনিঃশেষ (১৯৭৬), নতুন কবিতা (১৯৮০), চলো যাই (১৯৬২), সাম্প্রতিক (১৯৬৩)। তাছাড়া ইংরেজি ভাষায় রচিত তাঁর ৯টি বই রয়েছে। কবিতার জন্য তিনি বহু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: ইউনেস্কো পুরস্কার (১৯৬০), ভারতীয় ন্যাশনাল একাডেমী পুরস্কার। বিশ্ব ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ‘দেশিকোত্তম’ (১৯৬৩) এবং ভারত সরকার ‘পদ্মভূষণ’ (১৯৭০) উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯৮৬ সালের ১২জুন শান্তিনিকেতনে তাঁর মৃত্যু হয়।  [শওকত হোসেন]