গৌরনদী উপজেলা

গৌরনদী উপজেলা (বরিশাল জেলা)  আয়তন: ১৫০.৫৪ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৫৩´ থেকে ২৩°০৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০৮´ থেকে ৯০°২২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কালকিনি, দক্ষিণে উজিরপুর, পূর্বে বাবুগঞ্জ, মুলাদী ও কালকিনি উপজেলা, পশ্চিমে আগৈলঝারা ও কোটালিপাড়া উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৮৮৫৮৬; পুরুষ ৯২২০৯, মহিলা ৯৬৩৭৭। মুসলিম ১৫৮৯৮৪, হিন্দু ২৭৮৬৯, বৌদ্ধ ৪৫, খ্রিস্টান ১৬৮৪ এবং অন্যান্য ৪।

জলাশয় প্রধান নদী: আড়িয়াল খাঁ, নুন্দা ও অগরপুল।

প্রশাসন গৌরনদী থানা গঠিত হয় ১৮০৬ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮২ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১০৮ ১০৯ ৪২৪৩৮ ১৪৬১৪৮ ১২৫৩ ৬৮.৯ ৫৮.৬
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৬.৮৩ ২০ ৪২৪৩৮ ২৫২২ ৬৮.৯
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
খাঞ্জাপুর ৫৫ ৫৫৬৩ ১৩০৫৭ ১৩৫৯৮ ৫২.২
চাঁদশি ৩৮ ১৬৮৩ ৪৭৬০ ৫০৬১ ৬১.৯
নলচিরা ৭১ ৫৭৮৭ ১১১২৩ ১২৩৬৭ ৬২.৮
বাটাজোর ৩১ ৪৯৮২ ১০৮৮৭ ১১১৪৩ ৬৩.৯
বারথি ২৩ ৪৮৪৭ ১২৭১৩ ১৩০০৭ ৫২.২
মাহিলারা ৬৩ ৩১৪৪ ৭৩৩১ ৭৮৭৬ ৬৩.৯
শরিকল ৯৪ ৬২৬৫ ১১১৩৩ ১২০৯২ ৫৮.৪

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ আল্লাহর মসজিদ (কসবা)।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ৯ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা গৌরনদী থানা আক্রমণ করেন। পাকবাহিনী গৌরনদী কলেজের পিছনে ও ত্রিমোহনীতে বেশসংখ্যক নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যাসহ ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এছাড়াও এ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘটিত একাধিক লড়াইয়ে আট শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

বিস্তারিত দেখুন গৌরনদী উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৩।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী গৌরনদী পত্রিকা।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ১৭০, মন্দির ২০৫, গির্জা ৬। উল্লেখযোগ্য ধমীয় প্রতিষ্ঠান: আল্লাহর মসজিদ (কসবা)।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৬০.৯%; পুরুষ ৬২.৬%, মহিলা ৫৯.৩%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: গৌরনদী কলেজ (১৯৬৪), নলচিড়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১১), বারথি তারা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯০৫), গৌরনদী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পালরদী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শরিকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, টরকী বন্দর ভিক্টোরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মেধাকুল বিএনএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পিংলাকাঠি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৮২), হরিসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৮৫), রামসিদ্ধি বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৯৫), বাটাজোর অশ্বিনীকুমার ইনস্টিটিউশন।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১৫, ক্লাব ২২, সিনেমা হল ২, সার্কাস দল ১, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ১, খেলার মাঠ ১৩, নাট্যদল ২।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫১.৫৯%, অকৃষি শ্রমিক ২.৮৪%, শিল্প ১.৮২%, ব্যবসা ১৮.৯৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৪৮%, চাকরি ৯.৭৫%, নির্মাণ ২.৩২%, ধর্মীয় সেবা ০.২৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৩.৫০% এবং অন্যান্য ৪.৪৯%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৯.৮৪%, ভূমিহীন ৪০.১৬%। শহরে ৫৪.৯৫% ও গ্রামে ৭৫.৮৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, পান, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, পাট, সরিষা, কলাই, আমন ধান।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, জাম, তাল, নারিকেল, পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার হাঁস-মুরগি ৩৫, গবাদিপশু ১২, মৎস্য ৩৮, হ্যাচারি ৪।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১১৯ কিমি, আধা-পাকা রাস্তা ৫৩ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৭৫ কিমি; নৌপথ ২১৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, দুলকি।

শিল্প ও কলকারখানা ধানকল, আটাকল, বরফকল, চিড়াকল, স’মিল, ওয়েল্ডিং, বিড়িকারখানা, ব্যাটের কারখানা প্রভৃতি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশের কাজ প্রভৃতি।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৩, মেলা ৮। টরকীর হাট, কসবার গরুর হাট, মাহিলারার হাট এবং কবিরাজ বাড়ির মেলা (চাঁদশি),  পৌষ সংক্রান্তির মেলা (বাটাজোর) ও মনসার মেলা (গৈলা) উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, পান, কলা, দধি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫৭.৪% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৭.১%, ট্যাপ ১.৩% এবং অন্যান্য উৎস ১.৬%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা উপজেলার ৮৬.০% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৩.১% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ০.৯% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা  স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৭, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৪।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৭৩৭ ও ১৭৬৩ সালের ঝড় ও ভূমিকম্পে এই অঞ্চলের নদ-নদী ও ভূ-প্রকৃতির পরিবর্তন হয়েছে। ১৭৬৯, ১৭৮৭, ১৮২২, ১৮৬৪ ও ১৮৭৬ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে অনেক জনপদ ধ্বংস হয়। তাছাড়া ১৮৭৬, ১৮৮২, ১৯০৯, ১৯১৯, ১৯৪১, ১৯৫৮, ১৯৬১, ১৯৬৫, ১৯৭০, ১৯৮৮ ও ১৯৯৬ সালের ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে উপজেলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, কারিতাস, আশা, প্রশিকা, সিসিডিবি। [মো. মিজানুর রহমান]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; গৌরনদী  উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।