গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা (গাইবান্ধা জেলা)  আয়তন: ৪৬০.৪২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°২০´ থেকে ২৫°১৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°১১´ থেকে ৮৯°৩২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ঘোড়াঘাট ও পলাশবাড়ী উপজেলা, দক্ষিণে সোনাতলা ও শিবগঞ্জ (নবাবগঞ্জ) উপজেলা, পূর্বে সাঘাটা ও পলাশবাড়ী উপজেলা, পশ্চিমে পাঁচবিবি ও কালিয়া উপজেলা। উপজেলার এক-চতুর্থাংশ বরেন্দ্রভূমি।

জনসংখ্যা ৫১৪৬৯৬; পুরুষ ২৫৫৬৩৯, মহিলা ২৫৯০৫৭। মুসলিম ৪৭৭৭২৭, হিন্দু ৩২৮৩৯, বৌদ্ধ ১, খ্রিস্টান ২৭৯৭ এবং অন্যান্য ১৩৩২। এ উপজেলায় সাঁওতাল, মারান্ডি, প্রভৃতি জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় করতোয়া, বাঙ্গালী, নলুয়া প্রধান নদী এবং সাত বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন ১৮২১ সালের ১৫ এপ্রিল গোবিন্দগঞ্জ বগুড়া জেলার অর্ন্তভুক্ত হয় এবং ১৫ আগস্ট ভবানীগঞ্জ মহকুমার অন্তর্ভূক্ত হয়। গোবিন্দগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৯১২ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে। ১৯৯৮ সালে গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভা গঠন করা হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৭ ৩২৩ ৩৭৩ ৩৮৪১৫ ৪৭৬২৮১ ১১১৮ ৫৪.৮ ৪১.৬
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৪.৪৭ ২২ ৩৮৪১৫ ২৬৫৫ ৫৪.৮
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কাঁটাবাড়ী ৩৯ ৮২৩৬ ১৪৪১২ ১৪৪১২ ৪১.১
কামদিয়া ৩৩ ৯২২২ ১২৮১৩ ১২৭৩১ ৪২.৪
কামারদহ ২৭ ৫৯৬৫ ১৫২১৩ ১৫৫৯৩ ৪০.৫
কোচাশহর ৪৪ ৫০৩০ ১৬১০৯ ১৫৯১৩ ৪৫.০
গুমানিগঞ্জ ১৬ ৬৩৫৩ ১২২২৩ ১২৮৪৭ ৫৩.৬
তালুক কানুপুর ৯৪ ৭৯৯৪ ১৭৩৩১ ১৮১৬৭ ৩১.৫৯ (২০০১)
দরবস্ত ১০ ৮৪৮৬ ২১৬৯২ ২২০৩৭ ৩৮.০
নাকাই ৫৫ ৬১৭০ ১৪১৯১ ১৪৭২৮ ৩৬.২
ফুলবাড়ী ১১ ৩৯১৩ ৯২৬১ ৯৪৮৪ ৩৬.১
মহিমাগঞ্জ ৫০ ৫৯০৭ ১৮৫২৬ ১৮২৬৫ ৪৪.৪
রাখালবুরুজ ৬৭ ৫৪৩৪ ১৩০৮১ ১৩২৯২ ৪৩.৩
রাজাহার ৬১ ৬৩২৩ ৯২০৯ ৯৭৫৮ ৪১.২
শাখাহার ৮৩ ৮৩৯৭ ১৩১০৭ ১৩০১৭ ৪৪.২
শালমারা ৭২ ৫১১৪ ১২০৫৮ ১২০৯৪ ৪০.৫
শিবপুর ৮৯ ৩৭৭০ ১১১৫৫ ১১০৩৩ ৩৭.৩৭ (২০০১)
সাপমারা ৭৮ ৭০৫৩ ৯৩২৮ ৯৫২০ ৪৬.৮
হরিরামপুর ২২ ৬৭৫৮ ১৬৫৬৮ ১৭১১৩ ৩৬.৫

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ বর্ধনকুঠি জমিদার বাড়ীর ধ্বংসাবশেষ, প্রদ্যুৎকুমার কুঠিবাড়ি, মাস্তা মসজিদ, সুন্দইল মসজিদ, ফুলাহার মসজিদ, বাসুদেব মন্দির (১২৪৯ বঙ্গাব্দ), কামদিয়ার বিরাট নগর, রাজা বিরাটের রাজপ্রাসাদের মূল ভবনের ধ্বংসাবশেষ ও ফাসিতলার মাস্তা মসজিদ।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ ছাত্র জনতা করতোয়া নদীর উপর অবস্থিত কাটাখালি ব্রিজ ধ্বংস করার সময় পাকসেনাদের গুলিবর্ষণে আব্দুল মান্নান (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এস এম হলের ক্রীড়া সম্পাদক), বাবলু মোহন্ত, বাবু দত্ত সহ ৭ জন প্রাণ হারান। এই ঘটনার পর পাকসেনারা ব্রিজের আশে পাশের গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দেয়। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস মুক্তিযোদ্ধারা গোবিন্দগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। গোবিন্দগঞ্জ-সাঘাটা থানার মিলনস্থল ত্রিমোহিনীর যুদ্ধে ২৭ জন পাকসেনা নিহত হয়, ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। উপজেলায় হরিরামপুর ইউনিয়নের পাখিয়া গ্রামে ১টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।

বিস্তারিত দেখুন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৩।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৭৩০, মাযার ১০, মন্দির ১৫০, গির্জা ১, তীর্থস্থান ৫।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪২.৬%; পুরুষ ৪৫.৮%, মহিলা ৩৯.৫%। কলেজ ৮, কারিগরি কলেজ ১, আইন কলেজ ১, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৭২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৩৯, মাদ্রাসা ১৫৩।  উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : গোবিন্দগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ (১৯৬৫), কামদিয়া নূরুল হক ডিগ্রী কলেজ (১৯৭২), মহিমাগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ (১৯৭২), গোবিন্দগঞ্জ মহিলা কলেজ (১৯৯১),  গোবিন্দগঞ্জ বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১২), কামদিয়া দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২১), গোবিন্দগঞ্জ বি.এম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪০), রংপুর চিনিকল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬২), বিরাট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৪), শহরগাছি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭১), মহিমাগঞ্জ আলিয়া মাদ্রাসা (১৯৩৭)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক বাঙ্গালী, দৈনিক কাটাখালী, সাপ্তাহিক রাজা বিরাট, সাপ্তাহিক কাটাখালী (অনিয়মিত), সাপ্তাহিক খোলা হাওয়া (অনিয়মিত), সাপ্তাহিক মতিঝিল (অবলুপ্ত)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ২০, লাইব্রেরি ১, থিয়েটার গ্রুপ ৩, সিনেমা হল ৬, মহিলা সংগঠন ২২, যাত্রাপার্টি ১০, সাহিত্য সংগঠন ৭।

দর্শনীয় স্থান বর্ধনকুঠি জমিদার বাড়ি, কামদিয়ার বিরাট নগর প্রভৃতি।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি  ৬৬.৯২%, অকৃষি শ্রমিক ২.১১%, ব্যবসা ১১.৮৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৫.২৮%, চাকরি ০.১৫%, নির্মাণ ০.৯৩%, ধর্মীয়  সেবা ০.১৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৪% এবং অন্যান্য ১২.৪৯%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৯.৪৩%, ভূমিহীন ৪০.৫৭%। শহরে ৪৬.৩২% এবং গ্রামে ৬০.৩৮% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, ভুট্টা, আখ, গম, আলু, সরিষা, পিঁয়াজ, মরিচ, রসুন, কচু, পটল, পেপেঁ, তরমুজ।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি আউশ ধান, তামাক, মিষ্টিআলু।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, নারিকেল, পেঁপে, বাংগী, তরমুজ।

মৎস, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার  গবাদিপশু ৭০, হাঁস-মুরগি ৫০।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৯৪ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১২ কিমি, কাঁচারাস্তা ৮৬০ কিমি; রেলপথ ১২ কিমি ।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, সোয়ারী, ঘোড়ার গাড়ী।

শিল্প ও কলকারখানা চিনিকল, ময়দাকল, বরফকল, মুদ্রণশিল্প, হোসিয়ারী কারখানা প্রভৃতি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁত শিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ, শিকা শিল্প, পাটি ও মাদুর শিল্প, কাঠের কাজ প্রভৃতি।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৭, মেলা ৫। গোলাপবাগ হাট, বৈরাগী হাট, ফাঁসিতলা হাট, চাঁদপাড়া হাট, সাহেবগঞ্জ হাট, বাগদা হাট, বিরাট হাট, চরকতলা হাট, হরিতলা হাট, নাকাই হাট, রথের বাজার হাট, ক্রোড়গাছা হাট, মহিমাগঞ্জ হাট এবং গোবিন্দগঞ্জ বৈশাখী মেলা, কুঠিবাড়ি বারুনী মেলা, ফুলনার বারুনী মেলা ও মহিমাগঞ্জ মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, চাল, আলু, কলা, চিনি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসুচির আওতাধীন। তবে ৩২.৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.৪%, ট্যাপ ০.৯% এবং অন্যান্য ৩.৭%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা ২৯.৭% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৮.৩% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে । ৩২.০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১৭, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৫, চক্ষু হাসপাতাল ১।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, স্বনির্ভর, ঠেংগামারা মহিলা সবুজ সংঘ, অংকুর, সোর্স, ব্রীজ, অগ্নিবীণা।  [বিষ্ণু নন্দী]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।