গেজেটিয়ার অব বেঙ্গল

গেজেটিয়ার অব বেঙ্গল  সাধারণভাবে স্থান নামের তালিকা বুঝায়। যেমন, ইন্ডিয়ান গেজেটিয়ার। কিন্তু উনিশ শতকের বাংলার জেলা গেজেটিয়ারের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ছিল। এখানে সব রকম তথ্যই পাওয়া যেত, শুধু স্থান নামই নয়, সে সাথে স্থানের ভৌগোলিক বিবরণ ও ইতিহাসও স্থান পেয়েছিল। দুখন্ডে প্রকাশিত ওয়াল্টার হ্যামিল্টনের ইস্ট ইন্ডিয়া গেজেটিয়ার (লন্ডন, ১৮২৮) অস্বাভাবিক সাফল্য লাভ করে। এতে ভৌগোলিক, দৈশিক (topographical), পরিসাংখ্যিক ও ঐতিহাসিক বিবরণ ছিল। ব্যবসায় বাণিজ্যে নিয়োজিত সকল ইউরোপীয় বণিক এটিকে নির্দেশিকা গ্রন্থ হিসেবে ব্যবহার করত। এর সাফল্যই ফ্রান্সিস বুকাননের জিওগ্রাফিক্যাল, স্ট্যাটিস্টিক্যাল অ্যান্ড হিস্টরিক্যাল ডেস্ক্রিপশন অব দি ডিস্ট্রিক্ট অর জিলা অব দিনাজপুর (কলকাতা, ১৮৩৩), এম. মার্টিনের ইস্টার্ন ইন্ডিয়া (১৮৩৩) এবং টেলরের টপোগ্রাফি অব ঢাকা (১৮৪০) গ্রন্থগুলি লেখকের মৃত্যুর পর প্রকাশের ক্ষেত্রে উৎসাহিত করে। বেশ কিছুসংখ্যক সাধারণ লেখকও জেলার ওপর তথ্যসম্বলিত গ্রন্থ রচনা করেন। এগুলি জমিদার, তালুকদার, ইজারাদার, নায়েব, গোমস্তাদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তারা এগুলি সংগ্রহ করতেন, কারণ এগুলিতে সামন্ত এস্টেট ও এগুলির স্বত্বাধিকারীদের পারিবারিক ইতিহাস লিপিবদ্ধ থাকত। বেভারীজের গেজেটিয়ার অব বাকরগঞ্জ জেলা গেজেটিয়ার লিখন ধারায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। স্ট্যাটিসটিক্যাল অ্যাকাউন্ট অব বেঙ্গল  (লন্ডন, ১৮৭৬) প্রকাশের পর প্রশাসন স্বতন্ত্র জেলা গেজেটিয়ার প্রস্ত্ততের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। ১৮৮০-এর দশকে সার্ভে এবং বন্দোবস্তের দলিলের ওপর ভিত্তি করে জেলা গেজেটিয়ার প্রস্ত্ততের একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ফলশ্রুতিতে বিশ শতকের প্রথম চতুর্থাংশে বাংলার প্রায় সব জেলার গেজেটিয়ার প্রকাশিত হয়। গেজেটিয়ারগুলি প্রশাসক এবং পন্ডিতদের জন্য এখনও বেশ উপযোগী। ১৯৪৭ সালের বিভক্তির পরও জেলা গেজেটিয়ার দফতরটি অবলুপ্ত হয়ে যায় নি। জেলা গেজেটিয়ারের সংস্করণ ও এর প্রস্ত্ততির জন্য বাংলাদেশ সরকারের একটি অধিদপ্তর আছে। তবে বর্তমানের জেলা গেজেটিয়ারের অধিদপ্তরটি সাংগঠনিকভাবে ও কার্যসম্পাদনের ক্ষেত্রে এর অতীতের ছায়া মাত্র। [সিরাজুল ইসলাম]