গফরগাঁও উপজেলা

গফরগাঁও উপজেলা (ময়মনসিংহ জেলা)  আয়তন: ৩৯৮.৩০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°১৫´ থেকে ২৪°৩৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°২৭´ থেকে ৯০°৩৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ত্রিশাল ও নান্দাইল উপজেলা, দক্ষিণে কাপাসিয়া ও শ্রীপুর উপজেলা, পূর্বে হোসেনপুর ও পাকুন্দিয়া উপজেলা, পশ্চিমে ত্রিশাল, ভালুকা ও শ্রীপুর উপজেলা।

জনসংখ্যা ৪৩০৭৪৬; পুরুষ ২১০৬২৪, মহিলা ২২০১২২। মুসলিম ৪২৪২২৮, হিন্দু ৬১৫২, বৌদ্ধ ৬, খ্রিস্টান ১৭ এবং অন্যান্য ৩৪৩।

জলাশয় প্রধান নদী: পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও কাওরাইদ। রাওনা বিল, তালতলা বিল, সুবি বিল, মুলাপলিয়া বিল, বারগুপ বিল ও হোয়ারা বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন গফরগাঁও থানা গঠিত হয় ১৮৯৭ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৫ ১৯৯ ২১৪ ৪২৬৪১ ৩৮৮১০৫ ১০৮১ ৫৪.৮ (২০০১) ৪৯.৩
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৫.৩৯ (২০০১) ১৯ ২৯৩২৫ ৪০৭০ (২০০১) ৬৭.৭
পৌরসভার বাইরে উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৬.৮২ (২০০১) ১৩৩১৬ ১৬২২ (২০০১) ৬০.২
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
উস্থি ৯৪ ৪৮৬২ ১১০৬০ ১১৭৭৬ ৪৯.৮
গফরগাঁও ২৫ ৫৫৮৪ ১৪১৩১ ১৪৪৫৪ ৬৪.০
চর আলগি ১২ ৭৯৬৯ ১৪৩২০ ১৪৫২৮ ৩০.৮
টেংগাব ৮৮ ৮৩৯৭ ১৪০০৭ ১৫৩৫৮ ৪৯.৬
দত্তের বাজার ১৮ ৮৩৯৭ ১৪৮৩৮ ১৫৮৫১ ৪৭.৯
নিগাইর ৫০ ৮৭৮৯ ১৭১৫৪ ১৭৬৯০ ৪৯.৬
পৈঠাল ৫৬ ৬৪৭১ ১১৮১৫ ১২৫০৫ ৫১.৬
পাঁচবাগ ৬৩ ৬৮৪০ ১৩৬৮১ ১৪৩১০ ৪২.৩
বড়বাড়িয়া ১১ ৩৬৬৫ ৮৭১০ ৯৪৬১ ৪৬.৮
মশাখালী ৪৪ ৭৭১৮ ১৩৮৮১ ১৪৭৩৭ ৪৭.৪
যশোরা ৩১ ৫৪৪০ ১২২২৪ ১২৮৯৭ ৪৩.৬
রসুলপুর ৬৯ ৪৫৮৬ ১১৩৯৬ ১২০৪৭ ৩৮.৯
রাওনা ৭৫ ৭০৩২ ১২৯১৩ ১৩১৪১ ৪৭.০
লংগাইর ৩৭ ৬৭১০ ১১২৪৫ ১১৯১১ ৪৬.৭
সালটিয়া ৮২ ৪৬৩০ ১৪৫৫৮ ১৪৮২২ ৫৮.৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ কালু শাহের মাযার ও দিঘি, দুই সতীনের দিঘি (পঞ্চদশ শতাব্দী), দিঘির পাড় মসজিদ (১৩৯২ খ্রি.), লক্ষ্মী নারায়ণ জিউর মন্দির (১৩৩৫ বঙ্গাব্দ), শিবগঞ্জ কালী মন্দির (সুলতানী আমল)।

ঐতিহাসিক ঘটনা ১৭৬৬ সালের ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলনে গফরগাঁয়ের দুবাষিয়া গ্রামে সন্ন্যাসীদের একটি আস্তানা ও মাদারের দরগাহ ছিল। ১৮০০ সালে আরাতুন নামে এক আর্মেনীয় গঁফরগাও শহরে প্রথম নীলকুঠি স্থাপন করেন। নীলকরদের অত্যাচার থেকে মুক্তির লক্ষ্যে এখানে নীলকর বিরোধী আন্দোলন সংঘটিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল পাকবাহিনীর দুটি জঙ্গি বিমান গফরগাঁও শহরের উপর মেশিনগান দিয়ে গুলি করে। এতে ১৭ জন নিরীহ লোক প্রাণ হারায় এবং শতাধিক আহত হয়। উপজেলার বাশিয়া, কন্যামন্ডল, সুতারচাপর, চরবাড়িয়া, শিলার বাজার ও নিগুয়ারী-নগরপাড়ায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। উপজেলার গফরগাঁও বাজার সংলগ্ন লঞ্চঘাট ও চর আলগি ইউনিয়নে ২টি বধ্যভূমি আছে; উপজেলায় ১টি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন গফরগাঁও উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৩।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৬১২, মন্দির ১২, মাযার ৩। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: দিঘির পাড় গিয়াসউদ্দীন আযম শাহের মসজিদ, গফরগাঁও স্টেশন মসজিদ, গয়েশপুর বাজার জামে মসজিদ, সুতার চাপ জামে মসজিদ, পাঁচবাগ জামে মসজিদ, আঠারোদানা শেখবাড়ি মসজিদ, মলমল সরকারবাড়ী মসজিদ, সতরবাড়ী মিঞাবাড়ী মসজিদ, লক্ষ্মী নারায়ণ জিউর মন্দির, শিবগঞ্জ কালী মন্দির ।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৯.৩%; পুরুষ ৪৯.১%, মহিলা ৪৯.৪%। কলেজ ৮, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৭৭, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩২৯, কমিউনিটি বিদ্যালয় ২৬। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ধলা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৩), গফরগাঁও ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০২), বিরই তালতলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০২), কান্দিপাড়া আস্কর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৬), শিবগঞ্জ বি. দাস উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৫), ধানীখোলা ওসমানীয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৬), পাঁচবাগ ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২১), মাইজবাড়ী দাখিল মাদ্রাসা (১৯১৮),।

পত্র-পত্রিকা  অবলুপ্ত: অনির্বান, পৌষ, অগ্নিশীলা (মাসিক), আমাদের কাগজ (ত্রৈমাসিক)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৮০, লাইব্রেরি ৬, সিনেমা হল ৭, থিয়েটার গ্রুপ ১, গ্রামীণ সমাজ কল্যাণ প্রকল্প ৪৮।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৪.১৪%, অকৃষি শ্রমিক ৩.২৪%, শিল্প ০.৪৭%, ব্যবসা ১১.৩৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৭৫%, চাকরি ৭.৫৯%, নির্মাণ ১.০৫%, ধর্মীয় সেবা ০.২৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.১৯% এবং অন্যান্য ৭.৯৬%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৭.৫৬%, ভূমিহীন ৩২.৪৪%। গ্রামে ৬৮.৯৮% এবং শহরে ৪৯.৮১% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, আলু, বাদাম, সরিষা, আখ, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল।

প্রধান ফল-ফলাদিব আম, কাঁঠাল, জাম, লিচু, পেঁপে, কলা।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১২৯ কিমি, কাঁচারাস্তা ১০৭৯ কিমি; নৌপথ ১২ কিমি; রেলপথ ২৩ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ধানকল, আটাকল, বরফকল, তেলকল, স’মিল, ছাপাখানা, সাবান কারখানা প্রভৃতি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প, লৌহশিল্প, সূচিশিল্প, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ প্রভৃতি।

হাটবাজার, মেলা  হাটবাজার ৫৭। সালটিয়া বাজার, দত্তের বাজার এবং মুখীর মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, পাট।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪৩.১% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯০.৫%, ট্যাপ ২.২% এবং অন্যান্য ৭.৩% ।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা উপজেলার ৪১.২% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৬.৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১২.২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পল্লিচিকিৎসা কেন্দ্র ৪, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৯।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৫৪ ও ১৯৫৫ সালের বন্যায় গফরগাঁওয়ের প্রায় তিনচতুর্থাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায় এবং বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, এসএসএস।  [শফিকুল কাদির]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো;  গফরগাঁও উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা রিপোর্ট ২০০৭।