খোন্দকার, মোকাররম হোসেন

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২০:১১, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

খোন্দকার, মোকাররম হোসেন (১৯২২-১৯৭২)  শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী। ফরিদপুরে জন্ম। তিনি বরিশাল জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক,  জগন্নাথ কলেজ থেকে আই.এসসি এবং  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নশাস্ত্রে বি.এসসি (সম্মান) ও এম.এসসি ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি ইংল্যান্ডের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

মোকাররম হোসেন ১৯৪৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে একজন প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ১৯৪৯ সালে রিডার ও ১৯৬০ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ১৯৫৪ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিনি একাধারে বিভাগীয় চেয়ারম্যান এবং বিজ্ঞান অনুষদের ডীন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মোকাররম হোসেন রসায়নশাস্ত্রের প্রধানত অজৈব ও বিশ্লেষণী (analytical) রসায়ন, মণিক প্রবর্ধন (mineral processing) ও প্রক্রিয়াজাতকরণ, পাট ও সেলুলোজ রসায়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে গবেষণাকর্ম পরিচালনা করেন। তিনি ঘন অবস্থা রসায়ন (solid state chemistry), বিশেষত ঘন অবস্থা বিক্রিয়ার কৌশল এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যসমূহ, ধাতব বোরেট, ঘন ম্যাট্রিক্সের ওপর গ্যাসের বিশোষণ ও অবস্থান্তর, ধাতব অক্সালেটসমূহের সালফারীকরণ এবং গ্রাফাইট-সালফার যৌগ নিয়ে গবেষণা করেন। স্ফটিক আকার ধাতব বোরেট উৎপাদনের অভিনব কৌশল উদ্ভাবন, জটিল এবং পারস্পরিকভাবে ব্যাতিচারী মিশ্রণ থেকে ধাতব আয়ন নির্ধারণ করার বিশ্লেষণাত্মক পদ্ধতি নির্ণয় এবং দেশিয় পদার্থ থেকে নতুন ধরনের আয়ন বিনিময়কারীর উন্নয়ন সাধন করেন। তিনি মণিক প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বিভিন্ন প্রকারের মণিক, বিশেষ করে সালফারিত মণিক, যেমন- আয়রন পাইরাইট, স্টিবনাইট, ক্রোমাইট, বক্সাইট ইত্যাদির নতুন নতুন ব্যবহার উদ্ভাবনের জন্য সেসকল মণিকের বিক্রিয়া; মৌলিক সালফার ও হাইড্রোজেন সালফাইড পুনরুদ্ধার, সিনথেটিক ফেরাইট, মণিক থেকে তামা এবং এন্টিমনি জাতীয় ধাতু নিষ্কাশনের তড়িৎ প্রণালী প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করেন। পাটের নব নব ব্যবহার উদ্ভাবনে মোকাররম হোসেন খোন্দকারের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। বিশেষ করে, তুলা ও পাট সেলুলোজের জারণধর্মী, ফস্ফরিলিয়েশন ও নাইট্রেশন বিক্রিয়া এবং কার্বক্সিমিথাইল সেলুলোজ উৎপাদন কর্মকান্ড তিনি পরিচালনা করেন। দেশিয় ও আন্তর্জাতিক প্রায় শতাধিক গবেষণা জার্নালে তাঁর গবেষণা প্রবন্ধসমূহ প্রকাশিত হয়েছে।

অধ্যাপক খোন্দকার রয়াল ইনস্টিটিউট অব কেমিস্ট্রি অব গ্রেট ব্রিটেন, রয়াল সোসাইটি অফ আর্টস, লন্ডন এবং পাকিস্তান একাডেমী অব সায়েন্সেস-এর ফেলো ছিলেন। তিনি রয়াল ইনস্টিটিউট অব কেমিস্ট্রি, পাকিস্তান-এর চেয়ারম্যান ছিলেন। সোসাইটি অব কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি, লন্ডন; কাউন্সিল অব পাকিস্তান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স, ন্যাশনাল কমিটি ফর দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব ক্রিস্টালোগ্রাফি, প্যান-ইন্ডিয়ান ওসেন সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন, পার্মানেন্ট কাউন্সিল অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেস অন করোনেশন এবং পাকিস্তান সেন্ট্রাল জুট কমিটির সদস্য হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমীর কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের রসায়ন পরিভাষা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

স্বীয় প্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ মোকাররম হোসেন রাজা কালী নারায়ণ স্কলার উপাধিতে ভূষিত হন। ভৌত বিজ্ঞানে গবেষণার জন্য মোকাররম হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক, পাকিস্তান একাডেমী অব সায়েন্সেস থেকে একাডেমী স্বর্ণপদক (১৯৬৭), বাংলাদেশ সরকারের স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (মরণোত্তর, ১৯৭৩) লাভ করেন। রসায়ন বিজ্ঞানে মোকাররম হোসেন খোন্দকার-এর অবদানকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক রসায়ন বিভাগে ‘অধ্যাপক খোন্দকার চেয়ার’ প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং নবনির্মিত বিজ্ঞান ভবনের নাম মোকাররম হোসেন খোন্দকার-এর নামানুসারে ‘মোকাররম হোসেন বিজ্ঞান ভবন’ করা হয়। তিনি ১৯৭২ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

[মোঃ মাহ্বুব মোর্শেদ]