খালিদ, সৈয়দ আবদুল্লাহ

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৬:৫৪, ৮ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ ("right|thumbnail|200px|সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ '''খালিদ, সৈয়দ আবদুল্লাহ''' (১৯৪২- ২০১৭) ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী। সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ ১৯৪২ সালে সিলেট শহরের কাজী-ইলিয়াসে এক সম্ভ্..." দিয়ে পাতা তৈরি)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ

খালিদ, সৈয়দ আবদুল্লাহ (১৯৪২- ২০১৭) ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী। সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ ১৯৪২ সালে সিলেট শহরের কাজী-ইলিয়াসে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সৈয়দ আহমদ মুজতবা ছিলেন একজন প-িত, অনুসন্ধিৎসু ও সংস্কৃতিমনা ব্যক্তি। তার বাবা চেয়েছিলেন, ছেলে যেন তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ধর্মীয় বিষয়ে সুপ-িত হয়। কিন্তু সেই ছেলে হলো একজন চিত্রশিল্পী, এমনকি শেষাবধি একজন দেশশ্রেষ্ঠ ভাস্কর।

শিল্প ও নৈপুণ্যের জন্য তাঁর তৃষ্ণা অন্বেষণে বেরিয়ে পড়ার আগে, খালিদের শৈশব এবং কৈশোরের একটা ভালো সময় কেটেছে সিলেটের পরিমন্ডলে। একজন জন্মগত নেতার সমস্ত অনন্যসাধারণ প্রতিভা তাঁর মধ্যে ছিল, তবে তাঁর প্রকৃত আবেগ ছিল চিত্রকলায়।

খালিদ কাঠকয়লা ব্যবহার করে তার পরিবারের পুরনো জরাজীর্ণ বাড়ি, ‘ভাটিপাড়া ঘর’-এর দেয়ালে প্রচুর ছবি আঁকেন। সমস্ত দেয়াল জুড়ে গ্রাফিতি এবং প্যাটার্নের মতো সমস্ত ধরনের ছবি এবং নকশা ছিল। সিলেটের সুবিদবাজার থেকে শুরু করে, যেখানে তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়েছিল, তিনি শিল্প ও কারুশিল্পে শীর্ষস্থান অর্জন করেন। সেই কোমল বয়সে তিনি ঈদ কার্ড, জন্মদিনের কার্ড তৈরি করে বন্ধুদের কাছে পাঠাতেন। তাঁর প্রতিভা দেখে চাচাতো ভাই ও শ্যালক হাবিবুর রহমান খান তাঁকে ঢাকায় নিয়ে আসেন এবং তাদের পলাশী ব্যারাকে একটি ছোট রেলের বগিতে থাকার ব্যবস্থা হয়।

ঢাকার নবাবপুর স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশনের পর খালিদ ঢাকা আর্ট কলেজে ভর্তি হন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের একটি উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তিনি ১৯৬৯ সালে আর্ট কলেজ (বর্তমানে চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ছাত্র ইউনিয়নের ভিপি হিসেবে খালিদ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে গণআন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। অল্প সময়ের জন্য খালিদ ঢাকা আর্ট কলেজের শিক্ষক ছিলেন। তিনি ১৯৭৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণীতে ফাইন আর্টসে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর একই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ২০১২ সালে অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।

সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ প্রধানত তাঁর গৌরবান্বিত কর্ম ‘অপরাজেয় বাংলা’-এর জন্য সর্বমহলে খ্যাত। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে অবস্থিত। তাঁর উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্মের মধ্যে রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস কারখানা প্রাঙ্গণে ‘অঙ্কুর’ শহীদ মিনার, রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন কেন্দ্রের প্রাঙ্গনে ‘আবহমান বাংলা’ ম্যুরাল, চাঁদপুরে অবস্থিত ‘অঙ্গীকার’ শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এবং 'দৈনিক ইত্তেফাকের' সম্মেলন কক্ষে টেরাকোটা রিলিফ ম্যুরাল ‘টয়লিং মাসেস’। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্যগুলি হলো ‘ইটারনাল বেঙ্গল’, ‘ডলফিন’ এবং ‘মা ও শিশু’।

সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ তিনবার একক প্রদর্শনী করেন এবং ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত দ্বিতীয় জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনীতে তিনি প্রথম পুরস্কার লাভ করেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি জাতীয় পর্যায়ের প্রদর্শনীর জন্য বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী কর্তৃক বিচারক হিসেবে মনোনীত হন। ১৯৮৭ সালে তিনি ভারতের মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী পোড়ামাটির সার্ক কর্মশালার দলনেতা হিসেবে নিযুক্ত হন। বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি পর্যায়ে সংগ্রহে তাঁর শিল্পকর্ম দেখা যায়। সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ ২০১২ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে ভাস্কর্য বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের অধ্যাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ সরকার একটি স্মারক ডাকটিকিট (১৯৯০-৯১) এবং একটি রৌপ্যমুদ্রা (১৯৯৮) প্রচলন করে, যাতে খালিদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য ‘অপরাজেয় বাংলা’ দেখানো হয়। শিল্পকলা ও ভাস্কর্যে অবদানের জন্য তিনি ২০১৪ সালে ‘শিল্পকলা পদক’ এবং ২০১৭ সালে ‘একুশে পদক’-এর মতো মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার লাভ করেন।

সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ ২০শে মে ২০১৭ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রেখে যান। [গোবিন্দ চক্রবর্তী]]