খান, মাহফুজুর রহমান

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৭:২৪, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ ("right|thumbnail|200px|মাহফুজুর রহমান খান '''খান, মাহফুজুর রহমান''' (১৯৪৯-২০১৯) জাতীয় চলচিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রগ্রাহক, অভিনেতা, প্রযোজক। তিনি ১৯৪৯ সালের ১০ই মে ঢাকার লালব..." দিয়ে পাতা তৈরি)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
মাহফুজুর রহমান খান

খান, মাহফুজুর রহমান (১৯৪৯-২০১৯) জাতীয় চলচিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রগ্রাহক, অভিনেতা, প্রযোজক। তিনি ১৯৪৯ সালের ১০ই মে ঢাকার লালবাগের চকবাজারস্থ হাকিম হাবিবুর রহমান খান সড়কে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর দাদা হাকিম হাবিবুর রহমান খানের নামানুসারে লালবাগের এ সড়কের নামকরণ করা হয়। তাঁর পিতার নাম হাকিম ইরতিজা-উর-রহমান খান। ৬ ভাই ৩ বোনের মধ্যে মাহফুজুর রহমান খান ছিলেন সবার বড়। তাঁর চাচা ইরতিফা-উর-রহমান খান বিশ শতকের ৬০ থেকে ৮০-র দশকে বাংলা চলচ্চিত্রের একজন খ্যাতনামা পরিচালক এবং প্রযোজক ছিলেন। এছাড়া বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক আবু নুর মোহাম্মদ এহতেশামুর রহমান ও মুস্তাফিজুর রহমান ভ্রাতৃদ্বয় ছিলেন তার ফুফাতো ভাই। এক কথায় সাংস্কৃতিক পরিম-লে মাহফুজুর রহমান খানের জন্ম।

মাহফুজুর রহমান খান স্কুলে অধ্যয়নকালে চিত্রগ্রহণে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এ সময় বাবার ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে চিত্রগ্রহণে তাঁর হাতেখড়ি হয়। চিত্রগ্রহণ শেখার জন্য তিনি চলচ্চিত্র পরিচালক জহির রায়হানের নির্মণাধীন সিনেমা 'লেট দেয়ার বি লাইট'-এর সেটে গিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি চিত্রগ্রাহক ও পরিচালক আবদুল বারী চৌধুরী এবং আবদুল লতিফ বাচ্চুর সেটে গিয়ে চিত্রগ্রহণের বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করেন। একই সময়ে তিনি আবদুল লতিফ বাচ্চুর শিষ্যত্ব লাভ করেন। তাঁর অধীনে সহকারী চিত্রগ্রাহক হিসেবে ১৯৭০ সালে দর্পচুর্ণ এবং ১৯৭১ সালে 'স্বরলিপি' চলচিত্রে কাজ করেন।

মাহফুজুর রহমান খান ১৯৭২ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এ বছরই তিনি প্রধান চিত্রগ্রাহক হিসেবে এবং নায়করূপে অভিনয় জীবন শুরু করেন। তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্রগুলো হলো= আবদুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত 'জল্লাদের দরবার' (১৯৭২), আলমগীর কুমকুম পরিচালিত 'আমার জন্মভূমি' (১৯৭৩), মুস্তাফিজুর রহমান পরিচালিত 'আলো-ছায়া' (১৯৭৪), দিলীপ বিশ্বাস পরিচালিত 'দাবী' (১৯৭৪), প্রফেসর নুরুল আলম পরিচালিত 'চলো ঘর বাঁধি' (১৯৭৪), সিরাজুল ইসলাম ভূইয়া পরিচালিত 'একালের নায়ক' (১৯৭৫) প্রভৃতি। অভিনয় জীবনে খ্যাতি লাভ করলেও এ কাজে তিনি একনিষ্ঠ হতে পারেননি। ক্রমান্বয়ে তিনি চিত্রগ্রহণের দিকে ঝুঁকে পড়েন।

প্রধান চিত্রগ্রাহক হিসেবে মাহফুজুর রহমান খানের প্রথম চলচ্চিত্র আবুল বাশার চুন্নু পরিচালিত 'কাঁচের স্বর্গ' (১৯৭৩)। পরবর্তী সময়ে তিনি কথাশিল্পী হুমায়ুন আহমেদসহ অনেক পরিচালকের শতাধিক ছবি চিত্রায়ন করেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- 'ঝুমকা', 'আমার জন্মভূমি', 'অভিযান', 'চাঁপা ডাঙ্গার বউ', 'মহানায়ক', 'সহযাত্রী', 'জোকার', 'ভেজা চোখ', 'চাষীর মেয়ে', 'জন্ম-মৃত্যু', 'কালো গোলাপ', 'পোকা মাকড়ের ঘরবসতি', 'শ্রাবণ মেঘের দিন', 'দুই দুয়ারী', 'চন্দ্রকথা', 'আমার আছে জল', 'মেঘলা আকাশ', 'হাজার বছর ধরে', 'স্বপ্ন ডানায়', 'বৃত্তের বাইরে', 'দরিয়া পাড়ের দৌলতি', 'চন্দ্রগ্রহণ', 'ঘেটু পুত্র কমলা', 'এক কাপ চা', 'চার সতীনের ঘর', 'আমার দেশের মাটি', 'পদ্ম পাতার জল', 'একাত্তরের মা জননী' প্রভৃতি। চলচ্চিত্র চিত্রায়নের জন্য তিনি ভারত, নেপাল, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশ ভ্রমণ করেন।

মাহফুজুর রহমান খান একাধিক চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন। সেগুলো হলো- শিবলী সাদিকের 'নীতিবান', 'দুর্ণাম', 'সম্মান', শাহ আলম কিরণের 'কৈফিয়ত'। মাহফুজুর রহমান খান ১৯৮৩ সালে 'প্রিন্সেস টিনা খান' চলচ্চিত্র চিত্রায়নের জন্য বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কার লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি আরো কয়েকবার এ পুরস্কারে ভূষিত হন।

নায়ক রাজ রাজ্জাক পরিচালিত 'অভিযান' (১৯৮৪) চলচ্চিত্রের জন্য চিত্রগ্রাহক বিভাগে মাহফুজুর রহমান খান প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। পরবর্তীকালে আজহারুল ইসলাম খানের 'সহযাত্রী' (১৯৮৭), আখতারুজ্জামনের 'পোকা মাকড়ের ঘর বসতি' (১৯৯৬), হুমায়ুন আহমেদের 'শ্রাবণ মেঘের দিন' (১৯৯৯), 'দুই দুয়ারী' (২০০০), 'আমার আছে জল' (২০০৮) ও 'ঘেটুঁপুত্র কমলা' (২০১২), কোহিনুর আক্তার সুচন্দার 'হাজার বছর ধরে' (২০০৫), গোলাম রাব্বানী বিপ্লবের 'বৃত্তের বাইরে' (২০০৯) চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি 'হাজার বছর ধরে' চলচ্চিত্রের জন্য মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার এবং এম আবদুস সামাদ স্মৃতি সম্মাননা (২০১৫) লাভ করেন। ১৯৮৩ সালের বাচসাস পুরস্কার ছিল তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনের টার্নিং পয়েন্ট। এরপর আর তাঁকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

মাহফুজুর রহমান খান ১৯৭৮ সালে শিক্ষাবিদ নিরাফাত আলম শিপ্রার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। নিরাফাত আলম শিপ্রা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০০১ সালের ২৭শে আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। স্ত্রীর মৃত্যুর পর নিঃসঙ্গ মাহফুজুর রহমান খান চিত্র জগতটাকেই সংসার হিসেবে বেছে নেন। ২০১৯ সালের ৬ই ডিসেম্বর মাহফুজুর রহমান খান পরলোক গমন করেন। মাহফুজুর রহমান খান দম্পতি নিঃসন্তান ছিলেন। [মনিরুজ্জামান শাহীন]