খান, আজম

আজম খান

খান, আজম (১৯৫০-২০১১)  পপসম্রাট নামে খ্যাত জনপ্রিয় লোকসঙ্গিত শিল্পী, মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আজিমপুরের এক সরকারি কোয়ার্টারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান। বাবা আফতাব উদ্দিন খান ছিলেন সরকারের সচিবালয়ের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা; মা জোবেদা বেগম একজন সংগীত শিল্পী। শৈশব থেকেই আজম খানের সংগীতের প্রতি অনুরাগ পরিলক্ষিত হয়। নিজ আগ্রহ ও মায়ের অনুপ্রেরণায় তিনি নিয়মিত সংগীতচর্চা অব্যাহত রাখেন। তিনি ছিলেন ক্রান্তি শিল্পিগোষ্ঠীর একজন সদস্য। উক্ত শিল্পিগোষ্ঠীর সদস্যরূপে তিনি পাকিস্তানি শোষণকে বিষয় করে গণসংগীত গেয়ে গণআন্দোলনকে বেগবান করতে ভূমিকা রাখেন। ২১ বছর বয়সে তিনি ২নং সেক্টরের (২নং সেক্টরের সদর দপ্তর ছিল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার সোনামুড়া মহকুমার অনুচ্চ পাহাড়ি এলাকা মেলাঘর) সেক্টর কমান্ডার কর্নেল খালেদ মোশাররফের গ্রুপে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। তিনি যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, গুলশান, ক্যান্টনমেন্টসহ বেশ কয়েকটি এলাকার গেরিলা অপারেশনে যোগদান করেন। তাঁর নেতৃত্বে সংঘটিত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অপারেশন হলো ‘অপারেশন তিতাস’।

১৯৭২ সালে তিনি উচ্চারণ নামে একটি ব্যান্ডদল গঠন করে পপজগতে যাত্রা শুরু করেন। পশ্চিমা ধাঁচের পপগানে দেশজ বিষয় সংযোজন তিনি বাংলা পপ গানের জগতে এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে আবির্ভুত হন। বৈশিষ্ট্যপূর্ণ এবং অসাধারণ জনপ্রিয় এই নতুন ধারার গানের স্রষ্টা হিসেবে শ্রোতাদের নিকট তিনি পপগুরু, পপসম্রাট প্রভৃতি নামে নন্দিত হন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে তাঁর গাওয়া এত সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে ও চার কালেমা সাক্ষি দেবে-গান দুটি অসাধারণ জনপ্রিয়তা লাভ করে। পরে ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’, ‘রেল লাইনের ওই বস্তিতে’, ‘আসি আসি বলে তুমি আর এলে না’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘হারিয়ে গেছে খুঁজে পাব না’ প্রভৃতি গানগুলো দীর্ঘ সময় শ্রোতাদের মাতিয়ে রাখে। ১৯৮২ সালে এক যুগ নামে তাঁর প্রথম অডিও ক্যাসেট বের হয়। তাঁর একক অ্যালবাম সংখ্যা ১৭ এবং দ্বৈত ও মিশ্র অ্যালবাম ২৫টির অধিক।

তাছাড়া তিনি কয়েকটি চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেছেন। ১৯৮৬ সালে হীরামন নাটকে ও ২০০৩ সালে গডফাদার নামে একটি বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।

স্বাধীনতাযুদ্ধে এবং সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি অনেক সম্মাননা ও পুরস্কার লাভ করেন। এর মধ্যে হলিউড থেকে ডিস্কো রেকর্ডিংয়ের সৌজন্যে ১৯৯৩ সালে বেস্ট পপ সিঙ্গার অ্যাওয়ার্ড, টেলিভিশন দর্শক পুরস্কার ২০০২, কোকাকোলা গোল্ড বোটলসহ লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড, কাউন্সিল অব আরবান গেরিলা ঢাকা ’৭১ ও রেডিও টুডের পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা লাভ করেন। ৫ জুন ২০১১ সালে তাঁর মৃত্যু হয়।  [শামীমা আক্তার]