কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা (নোয়াখালী)

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা (নোয়াখালী জেলা)  আয়তন: ৩৮০.৯৫ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৩৭´ থেকে ২২°৫৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°১০´ থেকে ৯১°৩১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে সেনবাগ ও দাগনভুঁইয়া উপজেলা, দক্ষিণে নোয়াখালী সদর, সুবর্ণচর ও সন্দ্বীপ উপজেলা, পূর্বে সোনাগাজী এবং মিরসরাই উপজেলা, পশ্চিমে নোয়াখালী সদর ও কবিরহাট উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৫০৫৭৯; পুরুষ ১২০০৮৮, মহিলা ১৩০৪৯১। মুসলিম ২৩৫৮০২, হিন্দু ১৪৭৪৮, খ্রিস্টান ১১, বৌদ্ধ ১২ এবং অন্যান্য ৬।

জলাশয় ছোট ফেনী নদী ও সন্দ্বীপ চ্যানেল।

প্রশাসন কোম্পানীগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৮৮৮ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ২ জুলাই ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১ (বসুরহাট) ৩৬ ৪৫ ২৯৮৭৭ ২২০৭০২ ৬৫৮ ৬২.৫ ৪৯.৮
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৬.৮৫ ১১ ২৯৮৭৭ ৪৩৬২ ৬২.৫
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
চর এলাহি ১০ ৪৫২১৪ ১৩৮৮০ ১৩৫৭০ ২৫.৫
চর কাঁকড়া ৩৫ ৫০৯৬ ১৬৮৫৬ ১৮৯৩৮ ৫৩.৬
চর পার্বতী ৪৭ ৪০৩৪ ১৪৬৩০ ১৭০৩৫ ৫১.৭
চর ফকিরা ১১ ১১১৭৪ ১২৬৫৮ ১৩৬৫২ ৫১.০
চর হাজারি ২৩ ৩৬৩৭ ১১৮৯৫ ১৩০১৬ ৪৮.২
মুসাপুর ৫৯ ১৪৯৪৮ ১০৬৭১ ১১৩১০ ৪৯.৭
রামপুর ৭১ ৪৬৬২ ১০৭১১ ১১৯২৪ ৫৭.০
সিরাজপুর ৮৩ ৩৬১৬ ১৩৯৮৭ ১৫৯৬৯ ৫৮.৯

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ কালীমুর্তি (অষ্টাদশ শতাব্দি), মুগল আমলের ঈদাগাজী মসজিদ (চর হাজারি)।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর উপজেলার বাঞ্ছারাম রোডের স্লুইসগেটের পূর্বপাশে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই হয়। উক্ত লড়াইয়ে ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাছাড়াও পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি খণ্ড লড়াই হয়। এ সকল লড়াইয়ে সদর বিএলএফ কমান্ডার অহিদুর রহমান অদুদসহ ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। কোম্পানীগঞ্জের ১৬নং স্লুইসগেইট সংলগ্ন স্থানে ১টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।

বিস্তারিত দেখুন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ২।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৪২, মন্দির ১০। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: বুড়ি মসজিদ (বসুরহাট), জগন্নাথবাড়ি মন্দির (চর হাজারি)।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫১.৩%; পুরুষ ৫১.৫%, মহিলা ৫১.২%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বসুরহাট এ এইচ সি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১১), বামনী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), বসুরহাট ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯২৩), বামনী আছিরিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯১৫)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী অনিয়মিত সাপ্তাহিক: নোয়াখালী কণ্ঠ এবং আজকের যোগাযোগ।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ২২,  লাইব্রেরি ৬,  সিনেমা হল ১, খেলার মাঠ ২৬।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৭.৮১%, অকৃষি শ্রমিক ৩.১৬%, শিল্প ০.৭৯%, ব্যবসা ১৩.৮৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.০৩%, চাকরি ২১.৮১%, নির্মাণ ১.০৯%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৭.৫৯% এবং অন্যান্য ৯.৫০%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৭.২৪%, ভূমিহীন ৪২.৭৬%। শহরে ৬০.৬৫% এবং গ্রামে ৫৬.৮৭% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, আখ, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি পাট, চীনাবাদাম, তিল, তিসি, সরিষা, ডাল।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, নারিকেল, বরই, কালো জাম।

মৎস্য, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগির খামার  মৎস্য ১৬, হ্যাচারি ১, গবাদিপশু ১৬৭, হাঁস-মুরগি ১৩৯।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১০৬ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৭ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৭০ কিমি; রেলপথ ২৩ কিমি; নৌপথ ৩৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পালকি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ময়দা কল, তেল কল, বরফ কল, ওয়েল্ডিং, বিড়ি কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, বুননশিল্প, চারু ও কারুশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ, কাঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৮। বসুরহাট, তাল মোহাম্মদ হাট, আবু মাঝির হাট, তালেব মোহাম্মদের হাট, চৌধুরী বাজার, বাংলাবাজার ও নতুন বাজার এবং ১ মাঘে অনুষ্ঠিত নলদিয়া মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, নারিকেল, কলা, কুমড়া, সুপারি, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৬০.৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯২.৫%, ট্যাপ ০.৯% এবং অন্যান্য উৎস ৬.৬%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে সহনীয়মাত্রার আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা উপজেলার ৭৬.৪% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৯.৯% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩.৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার-পরিকল্পনা কেন্দ্র ৭, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, ক্লিনিক ২০, বাংলাদেশ ডায়বেটিক সমিতি ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ  ১৮৭৬ সালের ৩১ অক্টোবর এবং ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর জলোচ্ছ্বাসে উপজেলার বহুসংখ্যক  লোকের প্রাণহানির ঘটনাসহ গবাদিপশু, ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা এলআরডিএ।  [নুরুদ্দিন জগলুল]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন  ২০০৭।