কেদার রায়: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
(Text replacement - "\[মুয়ায্যম হুসায়ন খান\]" to "[মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]")
 
৮ নং লাইন: ৮ নং লাইন:
১৬০২ খ্রিস্টাব্দে মানসিংহ কেদার রায়ের বিরুদ্ধে এক বাহিনী প্রেরণ করে তাঁকে সম্রাট আকবরের আনুগত্য স্বীকারে বাধ্য করেন। ১৬০৩ খ্রিস্টাব্দে আরাকানের মগদের বিশাল নৌবহর জলপথে ঢাকা অভিমুখে আক্রমণ পরিচালনা করে এবং ত্রিমোহনীতে মুগল দুর্গের উপর তীব্র আক্রমন চালায়। কিন্তু মুগল বাহিনী তাদের তাড়া করলে সংঘর্ষে বহুসংখ্যক মগ নিহত হয়। এ সময় কেদার রায় তাঁর নৌবাহিনী নিয়ে মগদের সঙ্গে যোগ দেন এবং শ্রীনগরে মুগল সেনাঘাঁটি আক্রমণ করেন। বিক্রমপুরের অনতিদূরে দুপক্ষে তুমুল যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে কেদার রায় আহত ও বন্দি হন। বন্দী অবস্থায় তাঁকে রাজা মানসিংহের নিকট নেওয়ার পরপরই তাঁর মৃত্যু হয় (মার্চ ১৬০৩)।
১৬০২ খ্রিস্টাব্দে মানসিংহ কেদার রায়ের বিরুদ্ধে এক বাহিনী প্রেরণ করে তাঁকে সম্রাট আকবরের আনুগত্য স্বীকারে বাধ্য করেন। ১৬০৩ খ্রিস্টাব্দে আরাকানের মগদের বিশাল নৌবহর জলপথে ঢাকা অভিমুখে আক্রমণ পরিচালনা করে এবং ত্রিমোহনীতে মুগল দুর্গের উপর তীব্র আক্রমন চালায়। কিন্তু মুগল বাহিনী তাদের তাড়া করলে সংঘর্ষে বহুসংখ্যক মগ নিহত হয়। এ সময় কেদার রায় তাঁর নৌবাহিনী নিয়ে মগদের সঙ্গে যোগ দেন এবং শ্রীনগরে মুগল সেনাঘাঁটি আক্রমণ করেন। বিক্রমপুরের অনতিদূরে দুপক্ষে তুমুল যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে কেদার রায় আহত ও বন্দি হন। বন্দী অবস্থায় তাঁকে রাজা মানসিংহের নিকট নেওয়ার পরপরই তাঁর মৃত্যু হয় (মার্চ ১৬০৩)।


আরা ফুলবাড়িয়ায় কেদার রায়ের পরিবারের আদি বাসস্থল অদ্যপি চিহ্নিত করা যায়। এখানে একটি উঁচু বিস্তৃত ভিটা এখনও কেদার বাড়ি নামে পরিচিত। আরা ফুলবাড়িয়ায় কেদার রায় কর্তৃক খনিত একটি দিঘি এখনও বর্তমান। কেদার রায়ের অগ্রজ চাঁদ রায়ের সময়ে খনিত অপর একটি দিঘিও টিকে আছে। চাঁদ রায়ের এক দাসীর নামে দিঘিটির নামকরণ হয় ‘কেশব মা কা দিঘি’। শ্রীপুর জমিদারদের নির্মিত সর্বাধিক সুবিদিত স্থাপত্য নিদর্শন সুউচ্চ রাজবাড়ি মঠ। একসময় পদ্মার তীরে যেখান থেকে শ্রীপুর শহর শুরু হয় তার অনতিদূরেই নির্মিত হয়েছিল মঠটি। এই সুউচ্চ মঠটি কয়েক মাইল দূর থেকেও পরিদৃষ্ট হতো।  [মুয়ায্যম হুসায়ন খান]
আরা ফুলবাড়িয়ায় কেদার রায়ের পরিবারের আদি বাসস্থল অদ্যপি চিহ্নিত করা যায়। এখানে একটি উঁচু বিস্তৃত ভিটা এখনও কেদার বাড়ি নামে পরিচিত। আরা ফুলবাড়িয়ায় কেদার রায় কর্তৃক খনিত একটি দিঘি এখনও বর্তমান। কেদার রায়ের অগ্রজ চাঁদ রায়ের সময়ে খনিত অপর একটি দিঘিও টিকে আছে। চাঁদ রায়ের এক দাসীর নামে দিঘিটির নামকরণ হয় ‘কেশব মা কা দিঘি’। শ্রীপুর জমিদারদের নির্মিত সর্বাধিক সুবিদিত স্থাপত্য নিদর্শন সুউচ্চ রাজবাড়ি মঠ। একসময় পদ্মার তীরে যেখান থেকে শ্রীপুর শহর শুরু হয় তার অনতিদূরেই নির্মিত হয়েছিল মঠটি। এই সুউচ্চ মঠটি কয়েক মাইল দূর থেকেও পরিদৃষ্ট হতো।  [মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]


[[en:Kedar Rai]]
[[en:Kedar Rai]]

১৬:২৫, ১৭ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

কেদার রায়  বিক্রমপুরের জমিদার এবং বাংলার বিখ্যাত বারো ভুঁইয়াদের অন্যতম। কথিত আছে যে, তিনি সম্ভবত পনেরো শতকের গোড়ার দিকে কর্ণাট থেকে আগত এবং বিক্রমপুরের আরা ফুলবাড়িয়ায় বসতি স্থাপনকারী জনৈক নিম রায়ের বংশধর। নিম রায় ছিলেন কায়স্থ হিন্দু। সম্ভবত তিনিই ছিলেন এ বংশের প্রথম ভুঁইয়া এবং পুরুষানুক্রমে ‘ভূইয়া’ উপাধি ধারণের সপক্ষে তৎকালীন শাসকের মঞ্জুরিও তিনি লাভ করেছিলেন। কেদার রায় ছিলেন যাদব রায়ের পুত্র। তাঁর রাজধানী ছিল কালীগঙ্গা নদীর তীরবর্তী শ্রীপুরে।

বিপুলসংখ্যক রণতরীর অধিকারী কেদার রায় একটি সুশিক্ষিত নৌবাহিনী গড়ে তোলেন। তিনি কতিপয় ভাগ্যান্বেষী পর্তুগিজকে তাঁর রণতরীর অধ্যক্ষ নিয়োগ করেন। এঁদের মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন কার্ভালো।

কেদার রায় ঈসা খান মসনদ-ই-আলার সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখেন এবং তাঁর সঙ্গে মিলিতভাবে মুগলদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন। ইংল্যান্ডের রানী এলিজাবেথ কর্তৃক সম্রাট আকবরের দরবারে প্রেরিত দূত রালফ ফিচ উল্লেখ করেছেন যে, তাঁর শ্রীপুর সফরকালে (১৫৮৬) তথাকার শাসক আকবরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হন। কুতলু লোহানীর (উড়িষ্যার লোহানী রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা) বংশের আফগান নেতাদের সঙ্গে কেদার রায়ের সখ্যতা ছিল। তিনি খাজা সুলায়মান লোহানীর সহযোগিতায় মুগল দুর্গাধিপতির নিকট থেকে ভূষণা দুর্গ দখল করেন (১৫৯৩) এবং ১৫৯৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এ দুর্গ স্বীয় অধিকারে রাখেন। ওই বছরই দুর্জন সিংহের নেতৃত্বে মুগল বাহিনী ভূষনা দুর্গ আক্রমন করে। মুগল অবরোধকালে দুর্গের অভ্যন্তরে কামানের গোলা বিস্ফোরণে সুলায়মান লোহানী নিহত হন এবং কেদার রায় আহত হন। কেদার রায় পালিয়ে সোনারগাঁয়ে ঈসা খানের নিকট আশ্রয় গ্রহণ করেন (জুন ১৫৯৬)।

১৬০২ খ্রিস্টাব্দে মানসিংহ কেদার রায়ের বিরুদ্ধে এক বাহিনী প্রেরণ করে তাঁকে সম্রাট আকবরের আনুগত্য স্বীকারে বাধ্য করেন। ১৬০৩ খ্রিস্টাব্দে আরাকানের মগদের বিশাল নৌবহর জলপথে ঢাকা অভিমুখে আক্রমণ পরিচালনা করে এবং ত্রিমোহনীতে মুগল দুর্গের উপর তীব্র আক্রমন চালায়। কিন্তু মুগল বাহিনী তাদের তাড়া করলে সংঘর্ষে বহুসংখ্যক মগ নিহত হয়। এ সময় কেদার রায় তাঁর নৌবাহিনী নিয়ে মগদের সঙ্গে যোগ দেন এবং শ্রীনগরে মুগল সেনাঘাঁটি আক্রমণ করেন। বিক্রমপুরের অনতিদূরে দুপক্ষে তুমুল যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে কেদার রায় আহত ও বন্দি হন। বন্দী অবস্থায় তাঁকে রাজা মানসিংহের নিকট নেওয়ার পরপরই তাঁর মৃত্যু হয় (মার্চ ১৬০৩)।

আরা ফুলবাড়িয়ায় কেদার রায়ের পরিবারের আদি বাসস্থল অদ্যপি চিহ্নিত করা যায়। এখানে একটি উঁচু বিস্তৃত ভিটা এখনও কেদার বাড়ি নামে পরিচিত। আরা ফুলবাড়িয়ায় কেদার রায় কর্তৃক খনিত একটি দিঘি এখনও বর্তমান। কেদার রায়ের অগ্রজ চাঁদ রায়ের সময়ে খনিত অপর একটি দিঘিও টিকে আছে। চাঁদ রায়ের এক দাসীর নামে দিঘিটির নামকরণ হয় ‘কেশব মা কা দিঘি’। শ্রীপুর জমিদারদের নির্মিত সর্বাধিক সুবিদিত স্থাপত্য নিদর্শন সুউচ্চ রাজবাড়ি মঠ। একসময় পদ্মার তীরে যেখান থেকে শ্রীপুর শহর শুরু হয় তার অনতিদূরেই নির্মিত হয়েছিল মঠটি। এই সুউচ্চ মঠটি কয়েক মাইল দূর থেকেও পরিদৃষ্ট হতো।  [মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]