কুসুম্বা মসজিদ

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৯:৪৫, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

কুসুম্বা মসজিদ  আত্রাই নদীর পশ্চিমতীরস্থ নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার অন্তর্গত কুসুম্বা গ্রামের নাম অনুসারে পরিচিত। প্রাচীর দিয়ে ঘেরা আঙ্গিনার ভেতরে মসজিদটি অবস্থিত। এ আঙ্গিনায় প্রবেশের জন্য রয়েছে  আকর্ষণীয় একটি প্রবেশদ্বার যেখানে প্রহরীদের দাঁড়ানোর জায়গা রয়েছে। বাংলায় আফগানদের শাসন আমলে শূর বংশের শেষ দিকের শাসক গিয়াসউদ্দীন বাহাদুর শাহ-এর রাজত্বকালে জনৈক সুলায়মান মসজিদটি নির্মাণ করেন। তিনি সম্ভবত একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। পূর্বদিকের কেন্দ্রীয় প্রবেশদ্বারের উপরে স্থাপিত আরবিতে (শুধু নির্মাতা শব্দটি ফারসিতে) উৎকীর্ণ শিলালিপি অনুসারে এ মসজিদের নির্মাণকাল ৯৬৬ হিজরি (১৫৫৮-৫৯ খ্রি.)। মসজিদটি শূর আমলে নির্মিত হলেও এ মসজিদে উত্তর ভারতে ইতঃপূর্বে বিকশিত শূর স্থাপত্যের প্রভাব মোটেই দেখা যায় না, বরং এটি বাংলার স্থাপত্য রীতিতেই নির্মিত। ইটের গাঁথুনি, সামান্য বক্র কার্নিশ এবং সংলগ্ন অষ্টকোণাকৃতির পার্শ্ববুরুজ প্রভৃতি এ রীতির পরিচায়ক বৈশিষ্ট্যাবলি। এ মসজিদ ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক সংরক্ষিত।

মসজিদটির মূল গাঁথুনি ইটের তৈরী হলেও এর বাইরের দেওয়ালের সম্পূর্ণ অংশ এবং ভেতরের দেওয়ালে পেন্ডেন্টিভের খিলান পর্যন্ত পাথর দিয়ে আবৃত। এর স্তম্ভ, ভিত্তিমঞ্চ, মেঝে এবং পাশের দেওয়ালের জালি নকশা পাথরের তৈরী। আয়তাকার এ মসজিদ তিনটি ‘বে’ এবং দুটি ‘আইলে’ বিভক্ত। পূর্ব দিকে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণে একটি করে প্রবেশপথ রয়েছে। কেন্দ্রীয় মিহরাবটি পশ্চিম দেওয়াল থেকে সামান্য অভিক্ষিপ্ত।

অভ্যন্তরভাগের পশ্চিম দেওয়ালে (কিবলা দেওয়ালে) দক্ষিণ-পূর্ব দিকের এবং মাঝের প্রবেশপথ বরাবর মেঝের সমান্তরালে দুটি মিহরাব আছে। তবে উত্তর-পশ্চিম কোণের ‘বে‘তে অবস্থিত মিহরাবটি একটি উচু প্লাটফর্মের মধ্যে স্থাপিত। পূর্বদিকে স্থাপিত একটি সিঁড়ি দিয়ে এ প্লাটফর্মে উঠা যায়।

কুসুম্বা মসজিদ, নওগাঁ

মিহরাবগুলি খোদাইকৃত পাথরের নকশা দিয়ে ব্যাপকভাবে অলংকৃত। এগুলিতে রয়েছে বহুখাজ বিশিষ্ট খিলান। সূক্ষ্ম কারুকার্য খচিত পাথরের তৈরী স্তম্ভের উপর স্থাপিত এ খিলানগুলির শীর্ষে রয়েছে কলস মোটিফের অলংকরণ। স্তম্ভগুলির গায়ে রয়েছে ঝুলন্ত শিকল ঘন্টার নকশা। মিহরাবের ফ্রেমে রযেছে প্রায় সর্পিল আকারে খোদিত আঙ্গুর গুচ্ছ ও লতার নকশা। এ ছাড়া রয়েছে প্রায় বিন্দুর আকার ধারণকারী কলস, বৃক্ষলতা ও গোলাপ নকশা। প্লাটফর্মের প্রান্তেও রয়েছে আঙ্গুর লতার অলংকরণ। আর এ প্লাটফর্মের ভারবহনকারী খিলানের স্প্যান্ড্রিল এবং মসজিদের কিবলা দেওয়াল জুড়ে রয়েছে গোলাপ নকশা।

ভূমি নকশা, কুসুম্বা মসজিদ
কেন্দ্রীয় মিহরাব, কুসুম্বা মসজিদ

বাইরের দেওয়ালে আস্তরণ হিসেবে ব্যবহূত পাথরগুলি অমসৃণ এবং এতে রয়েছে গভীর খোদাইকার্য। বাইরের দিকে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন অলংকরণ গুলি ছাঁচে ঢালা। এগুলি দেওয়াল গাত্রকে উচু নিচু অংশে বিভক্ত করেছে। এ ছাড়া বক্র কার্নিশ জুড়ে, পাশ্ববুরুজগুলিকে ঘিরে, কার্নিশের নিচে অনুরূপ অলঙ্করন বিস্তৃত। পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণ দেওয়ালের গায়ে আয়তাকার খোপ নকশাকে ঘিরে ফ্রেম হিসেবে ছাঁচে ঢালা অলংকরণ রয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রবেশপথের খিলানের স্প্যান্ড্রিল ছোট ছোট কলস ও গোলাপ নকশায় পরিপূর্ণ। উত্তর ও দক্ষিণ দেওয়ালে রয়েছে জালি ঢাকা জানালা।  [পারভীন হাসান]

গ্রন্থপঞ্জি  Ahmad Hasan Dani, Muslim Architecture in Bengal, Dacca, 1961; Catherine B Asher, 'Inventory of Key Monuments', in George Michell (ed), Islamic Heritage of Bengal, Paris: UNESCO, 1984.