কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা

কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা (কুমিল্লা জেলা)  আয়তন: ১৪২.৭২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°২৪´ থেকে ২৩°৩১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°০৩´ থেকে ৯১°১৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বুড়িচং উপজেলা ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, দক্ষিণে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা, পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য এবং পশ্চিমে চান্দিনা ও বরুড়া উপজেলা।

জনসংখ্যা ৫৩২৪১৯; পুরুষ ২৭০১৬৯, মহিলা ২৬২২৫০। মুসলিম ৪৯৭০৮৫, হিন্দু ৩৪৬৩১, বৌদ্ধ ৪৫৯, খ্রিস্টান ১৯৬ এবং অন্যান্য ৪৮।

জলাশয় প্রধান নদী: গোমতী।

প্রশাসন ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লা সদর উপজেলাকে ২০০৫ সালে পুর্নগঠিত করে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা নামে নতুন নামকরণ করা হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৪৬ ১৯৩ ২৯৬০১০ ২৩৬৪০৯ ৩৭৩০ ৬৩.২৬ (২০০১) ৫৬.৮
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১১.৪৭ (২০০১) ১৮ ৪৮ ২৩৫৪২৩ ১৪৫১৮ (২০০১) ৭৫.৮
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজার সংখ্যা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৪৭.১৮ (২০০১) ১৫ ৬০৫৮৭ ২৩৬৮ (২০০১) ৬০.৩
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আম্রতলী ২২ ৫৫৭৮ ১৮৯২৬ ২০৬৯২ ৫৮.১
উত্তর দুর্গাপুর ৯৪ ২২১৪ ২৭৭৩০ ২৭১৮৩ ৬১.৪
জগন্নাথপুর ৬৫ ৪৬৩৮ ২৬৫২৩ ২৭১৬৮ ৫০.০
দক্ষিণ দুর্গাপুর ৫১ ২২৫৩ ২৮০৬২ ২৫৭৪৪ ৬১.৭
পাঁচথুবি ৯০ ৫৮৩১ ২৩৬৭৯ ২৪৯১৩ ৫৯.৪
কালির বাজার ৬৮ ৫৭৫৪ ২২১৪৫ ২৪২৩১ ৫৪.১

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ ময়নামতি জাদুঘর, ধর্মসাগর দিঘি, আনন্দ বিহার, জগন্নাথ মন্দির, রানীর কুঠি, টাউন হল, শাহসুজা মসজিদ, বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও রাজরাজেশ্বরী কালীবাড়ি।

মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন এবং সর্বস্তরের মানুষ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাকসেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। এসব যুদ্ধের মধ্যে আমড়াতলী ও পাঁচথুরি গ্রাম এবং কংসতলার যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। উপজেলার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সামনে ১টি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ২।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২২০, মন্দির ৩৫, গির্জা ৩।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৬৫.৭%; পুরুষ ৬৭.৩%, মহিলা ৬৪.২%। মেডিকেল কলেজ ১, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ১, কলেজ ১১, কারিগরি কলেজ ৮, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৭৪, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০১, মাদ্রাসা ১৫। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ (১৮৯৯), কুমিল্লা সরকারি কলেজ, কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ, কুমিল্লা ঈশ্বর পাঠশালা (১৯১৪), রামমালা ছাত্রাবাস (১৯১৬), নিবেদিতা প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১৯)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক পত্রিকা ৩; সাপ্তাহিক পত্রিকা ৭।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৫, ক্লাব ৪, জাদুঘর ১, সিনেমা হল ৪, খেলার মাঠ ৫১, স্টেডিয়াম ১, মিলনায়তন ১, রেজিস্টার্ড সাংস্কৃতিক সংগঠন ৬৭।

উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান   কুমিল্লা ক্যান্টমেন্ট, ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান, কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (বার্ড)।

দর্শনীয় স্থান শালবন বিহার, ময়নামতি জাদুঘর, শচীন দেববর্মনের বসতবাড়ি, ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাড়ি।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ১৮.৬৭%, অকৃষি শ্রমিক ২.৫৬%, শিল্প ২.০৫%, ব্যবসা ২৩.৫৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৯.৭৩%, চাকরি ২২.১৭%, নির্মাণ ৩.১৪%, ধর্মীয় সেবা ০.২০%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৩.২১% এবং অন্যান্য ১৪.৭০%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৬.৬৯%, ভূমিহীন ৫৩.৩১%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি পাট, সূর্যমুখী, বাদাম, কাউন, তিসি, অড়হর।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, নারিকেল, কলা, কাঁঠাল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১৭১, কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র ১, পশুসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্র ১, নার্সারি ২১।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৭৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৪৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৪১ কিমি; নদীপথ ৯৫ কিমি; রেলপথ ১১ কিমি; রেলস্টেশন ১।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা কাপড়ের কল, পাট কল, করাত কল, জুতা তৈরির কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প,  সেলাই, নকশি কাঁথা, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ, কাঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা ১৫। চক বাজার, নিউমার্কেট, কুমিল্লা টাউন হল মেলা ও কালীবাড়ি মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   মিষ্টি,  রসমালাই, ময়দা, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৯৭.৩% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৬৫.৯%, ট্যাপ ৩০.০% এবং অন্যান্য ৪.১%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৮০.৫% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৮.৬% পরিবার অস্বাস্থাকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ০.৯% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৩, হাসপাতাল ৪৪, ক্লিনিক ১৪, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৬।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, ভিশন ২০০০।  [গৌরাঙ্গ চন্দ্র ধর]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।