কুমির

কুমির

কুমির (Crocodile)  Crocodylia বর্গের Crocodylidae গোত্রের বৃহদাকার জলজ সরীসৃপ। এদের ১৩টি প্রজাতির অধিকাংশই প্রধানত পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধের উষ্ণমন্ডলের প্রাণী। কুমির নামটি সাধারণত ব্যাপক অর্থে ব্যবহূত হয়, কেননা কুমির বলতে অ্যালিগেটর (alligator) এবং ঘড়িয়ালকেও (gharial) বোঝায়। বাংলাদেশে এক প্রজাতির  ঘড়িয়াল (Gavialis gangeticus) ও দুই প্রজাতির প্রকৃত কুমির, লোনাপানির কুমির (Crocodylus porosus) ও স্বাদুপানির কুমির (Crocodylus palustris) রয়েছে।

লোনাপানির বা মোহনার কুমির  শাবক ও অল্প বয়সীদের শরীরের নিচের দিক হালকা হলুদ-জলপাই রঙের, পিঠের দিকে সর্বত্র কালো রঙের অজস্র ফোঁটা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পিঠের দিক কালচে হয়ে ওঠে, নিচের অংশগুলি হালকা রং ধরে। প্রতিটি চোখের সামনের ফুলানো অস্থিময় একটি অংশ নাকের ডগার স্ফীতির কাছাকাছি পর্যন্ত প্রসারিত। পশ্চাৎ করোটির কুঁজ সুগঠিত নয় অথবা অনুপস্থিত। ঘাড়ের কুঁজগুলি গুচ্ছবদ্ধ। পিঠের ১৬-১৭টি মজবুত অাঁশ পাশাপাশি ও ৬-৭টি লম্বালম্বি সারিতে থাকে। দেহের দৈর্ঘ্য ১০ মিটার পর্যন্ত হয়, সাধারণত ৫.৫ মিটার। এরা স্বাদুপানির কুমিরের তুলনায় বেশিক্ষণ পানিতে থাকে, এমনকি সাগরেও। পানি থেকে উঠে ম্যানগ্রোভ বনের ধারে দিনের বেলা শুয়ে থাকে।

প্রধানত মৎস্যভোজী, তবে বড় বড় স্তন্যপায়ীও শিকার করে। যৌন মিলন হয় শীতকালে। ডিম পাড়ে মে মাসে। প্রজনন ঋতুতে স্ত্রী কুমির আগাছা ও মাটি দিয়ে প্রায় ৫৭ সেমি উঁচু ও ২ মিটার চওড়া ডিবির মতো বাসা তৈরি করে। ডিমের সংখ্যা ২০-৭২ (গড়ে ৫০), উপ্তিকাল ৮০-৯০ দিন। বাংলাদেশের নদীমোহনা ও সুন্দরবনের উপকূলে এদের বাস। আবাসস্থল ধ্বংস ও ব্যাপক শিকারের জন্যই এরা বিপন্ন। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পাপুয়া নিউগিনি ও অস্ট্রেলিয়াতে এরা বিস্তৃত।

স্বাদুপানির কুমির  বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে বিলুপ্ত, কয়েকটি রয়েছে বাগেরহাটের হযরত খান জাহান আলীর দরগাহর দিঘিতে। লোনাপানি ও স্বাদুপানির কুমির দৃশ্যত অভিন্ন এবং প্রাকৃতিক অবস্থানে শনাক্ত করা কঠিন। [মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম]

আরও দেখুন ঘড়িয়াল