কিশোরগঞ্জ জেলা

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৬:০৩, ৬ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Robot: Automated text replacement (-\|\s''জনসংখ্যা''\s\|\| +| জনসংখ্যা ||))

কিশোরগঞ্জ জেলা (ঢাকা বিভাগ)  আয়তন:  ২৭৩১.২১ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°০২´ থেকে ২৪°৩৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩৫´ থেকে ৯১°১৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ জেলা, দক্ষিণ নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা, পূর্বে সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ  জেলা, পশ্চিমে ময়মনসিংহ ও গাজীপুর জেলা।

জনসংখ্যা ২৫৯৪৯৫৪; পুরুষ ১৩২০১১৭, মহিলা ১২৭৪৮৩৭। মুসলিম ২৪৩২৬৬৪, হিন্দু ১৬০৪৯২, বৌদ্ধ ২৫৬, খ্রিস্টান ১১ এবং অন্যান্য ১৫৩১।

জলাশয় প্রধান নদী: পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ ও মেঘনা, কালনী, ঘোড়াউতরা, ধনু নদী।

প্রশাসন ১৮৬০ সালে কিশোরগঞ্জ বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার একটি মহকুমা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৮৪ সালে এটি জেলায় রূপান্তরিত হয়। কিশোরগঞ্জ পৌরসভা গঠিত হয় ১৮৬৯ সালে।

জেলা
আয়তন(বর্গ কিমি) উপজেলা পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম
২৭৩১.২১ ১৩ ১০৫ ৯৫৩ ১৭৯৪ ৩৫৬৯৪১ ২২৩৮০১৩ ৯৫০ ৩৮.৩
জেলার অন্যান্য তথ্য
উপজেলা নাম আয়তন(বর্গ কিমি) পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
অষ্টগ্রাম ৩০০.৪৪ - ৫৯ ৮২ ১৪৫৫৫২ ৪৮৪ ৩৭.৪
ইটনা ৫০৩.৪০ - ৯৩ ১২৮ ১৫১১৫৭ ৩০০ ২৪.৮
কটিয়াদী ২২১.৮৮ - ১০ ৯৭ ১৭০ ২৮২২৯৭ ১২৭২ ৩৭.৯
করিমগঞ্জ ২০০.৫২ - ১১ ৮৫ ১৯৬ ২৫৮২৬৬ ১২৮৮ ৩৫.৮
কিশোরগঞ্জ সদর ১৯৩.৭৩ ১১ ১১০ ২০৭ ৩৪৮৩৮২ ১৭৯৮ ৪৮.৪
কুলিয়ারচর ১০৪.০১ ৪৬ ৯৭ ১৫৬৫৯২ ১৫০৫ ৪১.৩
তাড়াইল ১৩৬.৮৮ - ৭৫ ১১৪ ১৫৩৬৬৫ ১১২৩ ৩৩.৩
নিকলি ২১৪.৪০ - ৪৩ ১২৫ ১২০১০৫ ৫৬০ ২৩.৯
পাকুন্দিয়া ১৮০.৫২ - ১০ ৯৭ ১৭২ ২৩৭২১৮ ১৩১৪ ৪৮.২
বাজিতপুর ১৯১.৯০ ১১ ৮৪ ১৮৮ ২১০৩৭৫ ১০৯৬ ৩৪.৬
ভৈরব ১৩৯.৩২ ৩২ ৮৪ ২৪৭১৬৬ ১৭৭৪ ৪০.৭
মিটামইন ২২২.৯২ - ৫৯ ১৩৩ ১২২২০০ ৫৪৮ ৩১.৯
হোসেনপুর ১২১.২৯ - ৭৩ ৯৮ ১৬১৯৭৯ ১৩৩৫ ৩৬.৬

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি  ১৯৭১ সালের জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে পাকসেনারা নিকলি উপজেলার শ্বশানঘাটে প্রায় অর্ধশত নিরীহ লোককে হত্যা করে। ১৪ আগস্ট কুলিয়ারচর উপজেলায় পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ৪ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং ২৮ জন রাজাকার অস্ত্রসহ মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট আত্মসমর্পণ করে। ৩ সেপ্টেম্বর পাকসেনারা স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় অষ্টগ্রামের ইকরদিয়া গ্রামে ৩৫ জন লোককে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ৫ সেপ্টেম্বর একই উপজেলার সাভিয়ানগর গ্রামে পাকসেনারা আরও ২৫ জন লোককে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ৬ সেপ্টেম্বর নিকলি উপজেলার গুরুই গ্রামে পাকসেনারা ২৫ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। ১৯ অক্টোবর নিকলি উপজেলায় পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ২০ অক্টোবর নিকলি শত্রুমুক্ত হয়। ২৬ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা বাজিতপুর উপজেলা শত্রুমুক্ত করে। ১ নভেম্বর পাকসেনারা মিটামইন উপজেলার ধুবাজুরা গ্রামের ১৮ জন এবং তেলিখাই গ্রামের ৩ জন লোককে হত্যা করে। ১৮ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা হোসেনপুর থানা এলাকায় একটি সেতু ডিনামাইটের সাহায্যে উড়িয়ে দেয় এবং রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করে রাইফেলসহ ১৪ জন রাজাকারকে বন্দি করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদলের বরইতলায় পাকসেনারা ৩৬০ জন নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। ভৈরব উপজেলার হালগড়া নামক স্থানে পাকসেনারা তিন শতাধিক লোককে হত্যা করে এবং ১৩ ডিসেম্বর পাকসেনারা ভৈরব রেলসেতুটি বিধ্বস্ত করে দেয়। হোসেনপুর থানায় মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ৩৯ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং এ অভিযানে প্রচুর গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় করিমগঞ্জ উপজেলার কাজলা, আয়লা, সাকুয়া, বালিয়াবাড়ি প্রভৃতি স্থানে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই সংঘটিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন বধ্যভূমি ১১ (কিশোরগঞ্জ সদর ৭, নিকলি ১, মিটামইন ১, হোসেনপুর ১, বাজিতপুর ১); গণকবর ১ (ইটনা); শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ ১ (কিশোরগঞ্জ সদর); স্মৃতিফলক ১ (হোসেনপুর); ভাস্কর্য ১ (ভৈরব বাসস্ট্যান্ড); স্মৃতিসৌধ ১ (ভৈরব)।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৮.৩%; পুরুষ ৪১.৩%, মহিলা ৩৫.১%। বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ২, কলেজ ১৮, টেকনিক্যাল কলেজ ৩, হোমিওপ্যাথিক কলেজ ১, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১১৪, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৯২, কমিউনিটি বিদ্যালয় ১৩, কিন্ডার গার্টেন ১৯, স্যাটেলাইট স্কুল ৪, মাদ্রাসা ১৪৪, মক্তব ৩৩৫। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজ (১৯৪৩), সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৬৯), কিশোরগঞ্জ ওয়ালী নেওয়াজ খাঁন কলেজ (১৯৮২), আলহাজ্ব আবদুল কুদ্দুস হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (২০০২), জঙ্গলবাড়ি হাই স্কুল (১৮৬২), কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮১), বাজিতপুর হাফেজ আঃ রাজ্জাক পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯০), জাওয়ার উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৩), আগরপুর জি,সি, উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৭), কোদালিয়া  সহরুল্লাহ ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১০), আচমিতা জর্জ ইনস্টিটিউশন (১৯১২), বনগ্রাম আনন্দ কিশোর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১২), আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৬), সরারচর শিবনাথ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), ভৈরব কে,বি, পাইলট হাই স্কুল (১৯১৯), হোসেনপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২০), মঙ্গলবাড়ীয়া কামিল মাদ্রাসা (১৮০২), টুটিয়ারচর মাজহারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা (১৯০৩), তারাকান্দি ফাজিল মাদ্রাসা (১৯১৯), আউলিয়া পাড়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২১), গোবরিয়া ই, ইউ ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২৩), বিরবরুলা আদর্শ দাখিল মাদ্রাসা (১৯২৮), মাধখলা ফাজিল (স্নাতক) মাদ্রাসা (১৯২৯)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬০.১৮%, অকৃষি শ্রমিক ৪.২৭%, শিল্প ০.৮৭%, ব্যবসা ১৫.২৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.১২%, নির্মাণ ১.১৯%, ধর্মীয় সেবা ০.২৩%, চাকরি ৫.২৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৮৮% এবং অন্যান্য ৮.৭৩%।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী বর্তমান: দৈনিক: আজকের দেশ (১৯৯২), শতাব্দীর কণ্ঠ (২০০১), আজকের সারাদিন (২০০৪), কিশোরগঞ্জ (২০০৬), গৃহকোণ; সাপ্তাহিক: আলোর মেলা (২০০৩), দৃশ্যপট’ ৭১ (২০০৩), আলোকিত কিশোরগঞ্জ (২০০৫); মাসিক: ভাটির দর্পণ, উন্মেষ, মজলুমের ডাক, বাজিতপুর সমাচার; ত্রৈমাসিক দূত; সাময়িকী: সৃষ্টি (১৯৮৬), শুভেচ্ছা, সূর্যতপা ও অনির্বাণ। অবলুপ্ত: দৈনিক: প্রাত্যাহিক চিত্র (১৯৯৭), একুশে কাগজ; সাপ্তাহিক: আর্যগৌরব (১৯০৪), কিশোরগঞ্জ বার্তাবহ (১৯২৪), কিশোরগঞ্জ বার্তা (১৯৪৬), কান্ডারী (১৯৭২), কিশোরগঞ্জ বার্তা (১৯৭৪), জনবার্তা (১৯৮৪), প্রকাশ (১৯৮৫), শুরুক (১৯৮৬), দূরবীন (১৯৮৬), প্রতিভা (১৯৫২), গ্রামবাংলা (১৯৮৫), সকাল (১৯৮৮), কিশোরগঞ্জ বার্তা (১৯৯১), কিশোরগঞ্জ পরিক্রমা (১৯৯১), মনিহার (১৯৯১), কিশোরগঞ্জ সংবাদ (১৯৯১), কিশোরগঞ্জ প্রবাহ (১৯৯১), কথাবার্তা (১৯৯২), ‘বিবরণী’ কুলিয়ারচর স্মারক সংখ্যা (১৯৯৩), নিরপেক্ষ অরুণিমা, দিনের গান, উজান স্রোত, দিশারী, গ্রাম বাংলা ও মফস্বলচিত্র; পাক্ষিক: নতুন পত্র (১৯৬২), নতুন দেশ (১৯৮১), নরসুন্দা (১৯৮১), ভৈরব; মাসিক: আখতার (উর্দু, ১৯২৬), আল হাসান (১৯৯২), ন্যায়দন্ড (১৯৯৬)। এছাড়াও রয়েছে কিশোরগঞ্জ বুলেটিন ও নবঅঙ্কুর, সাময়িকী: সূচনা (১৯৯০), স্বাধীন বার্তা (১৯৯৮), ঈসা খান (১৯৮৮-১৯৯১), সাহসের পদাবলী (১৯৯২)।

লোকসংস্কৃতি ময়মনসিংহ গীতিকার এক বিশাল ভান্ডার কিশোরগঞ্জ জেলা। মৈয়মনসিংহ গীতিকার পালাসমূহের মধ্যে ‘মহুয়া’, ‘মলুয়া’, ‘চন্দ্রাবতী’ ও ‘দস্যু কেনারাম’ এ বর্ণিত গ্রাম-হাওর-বিল কিশোরগঞ্জ জেলার অন্তর্ভূক্ত। ভাটিয়ালি গান এ জেলার মাঝি-মল্লার কণ্ঠ থেকেই উৎসরিত। এ জেলার মেয়েলী গীত, লোক কিসসা, লোককাহিনী, লোকবিশ্বাস, পালাগান, প্রবাদ-প্রবচন, ধাঁধা, শিলুক, ছড়া ইত্যাদি বাংলা সাহিত্যে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। মন্দির-মসজিদে শিরনি-ভোগ দেওয়া, বিভিন্ন বস্ত্ততে দুগ্ধস্নান, বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে, খড়ের ভোলা পুড়িয়ে মশামাছির মুখ পোড়ানো, কলেরা বসন্ত রোগে ঝাঁড় ফুঁক দেওয়া, গৃহপালিত পশুর শনিরদশা, ফসল রক্ষার জন্য হিরালীর মন্ত্র পাঠ ইত্যাদি লোকসংস্কার এ জেলায় প্রচলিত রয়েছে। এ জেলার নিকলি ও বাজিতপুরের নৌকাবাইচের ঐতিহ্য অতি প্রাচীন। এছাড়া কাবাডি, গোল্লাছুট, হাডুডু, ঘোড়দৌড়, কানামাছি, লাঠিখেলা, কুস্তি, ডাংগুটি, নৌকাবাইচ, গরুদৌড়, ষোলঘুটি, বাঘবন্দি, জোড়-বিজো, বনভোজন, তোফাভাতি ইত্যাদি এ অঞ্চলে এখনও প্রচলিত। বিভিন্ন নাট্যগোষ্ঠীর নাট্যচর্চাও এখানে পরিলক্ষিত হয়।

গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও পর্যটন স্থান  বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য মৈত্রীসেতু (ভৈরব), ভৈরব রেলসেতু (ভৈরব), শোলাকিয়া ঈদগাহ (কিশোরগঞ্জ সদর), মেঘনা নদীর তীরের বোটানিক্যাল গার্ডেন (ভৈরব)।  [হাকিম আরিফ]

আরও দেখুন সংশ্লিষ্ট উপজেলা ।

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কিশোরগঞ্জ জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; কিশোরগঞ্জ জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।