কালুরঘাট সেতু

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৯:৩৭, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

কালুরঘাট সেতু কর্ণফুলি নদীর উপর স্থাপিত একটি পুরাতন রেল ও সড়ক সেতু যা একসময় চট্টগ্রাম বিভাগের দক্ষিণাংশকে দেশের অবশিষ্টাংশের সঙ্গে সংযোগ রক্ষার একমাত্র উপায় হিসেবে বিবেচিত ছিল। ১৯৩০ সালে  কর্ণফুলি নদীর উপর দিয়ে জানালীহাট এবং গোমদান্দী রেলস্টেশনের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে স্টিল কাঠামোর উপর নির্মিত একটি সাধারণ সেতু হিসেবে কালুরঘাট সেতুটি তৈরি করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ২৩৯ মিটার। চট্টগ্রাম ও দোহাজারী থানার মধ্যে ট্রেন চলাচলের উদ্দেশ্যে ১৯৩১ সালে সেতুটি উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের একত্রিশ বছর পর ১৯৬২ সালে জনগণের দুর্ভোগ বিবেচনা করে সেতুটিতে পাটাতন স্থাপন ও কার্পেটিং করে এটিকে রেলসেতুর পাশাপাশি একটি সড়ক সেতুতে রূপান্তর করা হয়।

তেরটি বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের স্প্যান যার প্রত্যেকটিতে রয়েছে ৪৫.৭২ মিটার স্টিলের গার্ডার, বারোটি ৩০.৪৮ মিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট পিলার, পাঁচটি ২৪.৩৮ মিটার দৈর্ঘ্যের ও একটি ১২.১৯ মিটার দৈর্ঘ্যের পাটাতন ধরনের স্প্যান এবং ৪.৮৮ মিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট বারোটি কড়ি দ্বারা এ সেতু গঠিত। সেতুর চট্টগ্রাম প্রান্তে এবং দোহাজারী প্রান্তে অভিগমন সড়কদুটির দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ১৭১ মিটার ও ১৫০ মিটার। কর্ণফুলি নদীর উপর একটি পূর্ণাঙ্গ সড়ক সেতু নির্মিত না হওয়া পর্যন্ত মাত্র ৩.০৫ মিটার সংকীর্ণ পরিসরের এ কালুরঘাট সেতু সর্বোচ্চ ১০ মে টন ভারবিশিষ্ট যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় এবং সেতুতে যানবাহন চলাচলের গতিসীমা বেঁধে দেওয়া হয় ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১৬ কিমি।


কালুরঘাট সেতু


১৯৮৯ সালে  কর্ণফুলি সেতু (শাহ্ আমানত সেতু) নির্মিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কালুরঘাট সেতুটিই ছিল কর্ণফুলি নদীর উপর দিয়ে সড়ক যোগাযোগের একমাত্র উপায়। শাহ্ আমানত সেতু নির্মিত হওয়ার ফলে সড়ক যোগাযোগে দূরত্ব ও সময় দুইই হ্রাসের ক্ষেত্রে এক ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ সেতু চালু হওয়ার মাত্র দশ বছরের মাথায় সেতুর কাঠের পাটাতনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল এবং ক্ষয় হয়ে যাওয়ায় এটিকে ভারি যানবাহন চলাচলের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে বর্তমানে যানবাহনগুলিকে কর্ণফুলি নদী পারাপারের জন্য আগের পুরানো কালুরঘাট সেতুটিই ব্যবহার করতে হচ্ছে। তদুপরি, এ সেতুর উপর দিয়ে একমুখী যান চলাচল সেতুর উভয় প্রান্তে অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি করে। এ সমস্যা লাঘবের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ৩ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বিগত ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শাহ্ আমানত সেতুর কাছে ফিরিঙ্গি বাজারে কর্ণফুলি সেতুতে ফেরি চলাচলের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু এ সার্ভিস সার্বক্ষণিক নয়, নদীতে জোয়ারের সময় অর্থাৎ সারাদিনে শুধু দু দফা ফেরি চলাচল করে এবং ফেরির আকার ছোট হওয়ায় একবারে কেবল ৬টি যান পারাপার করতে পারে।

কালুরঘাট সেতুর স্বত্তাধিকারী প্রতিষ্ঠান  বাংলাদেশ রেলওয়ে সেতুর উপর দিয়ে সড়ক যান চলাচলের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিবছর সেতুটি ইজারা দিয়ে থাকে এবং ২০০২ সালে এ নিলাম ডাকের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি টাকা। ২০১০ সালে এই নিলাম ডাকের পরিমাণ ২ কোটি টাকার উপরে গিয়েছে। কালুরঘাট সেতুটি ছাড়াও বাংলাদেশ রেলওয়ের আরও দুটি রেল-সড়ক সেতু রয়েছে এবং দুটিই দেশের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত- একটি লালমনিরহাট জেলায়  তিস্তা নদীর উপর এবং অন্যটি দিনাজপুর জেলায় কাঞ্চন নদীর উপর। যদিও পশ্চিমাঞ্চলের এ দুটি সেতুর তুলনায় পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত কালুরঘাট সেতুটি আকৃতিতে ক্ষুদ্রতর তা সত্ত্বেও উপযোগিতা এবং রাজস্ব আদায় বিবেচনায় বাংলাদেশ রেলওয়ে কালুরঘাট সেতুটিকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথকে কক্সবাজার পর্যন্ত সম্প্রসারণের জন্য ইতোমধ্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। সেসঙ্গে কর্তৃপক্ষ সেতুটির সংস্কার ও সম্প্রসারণের বিষয়ে সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে।  [মাসুদ হাসান চৌধুরী]